মহিউদ্দিন খান মোহন
মাঠপর্যায়ের প্রশাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মধ্যে ক্ষমতার টানাপোড়েন গোড়া থেকেই চলে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলেও নির্বাহী কর্মকর্তারা তাঁদের খুব একটা পাত্তা দিতে চান না। তাঁরা উপজেলার সব কার্যক্রমে নিজেরা কর্তৃত্ব করতে চান। ফলে উপজেলার চেয়ারম্যানরা হয়ে পড়েছেন ‘উজিরে খামোখা’।
বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে নিরসন না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে করা এক রিটের শুনানি শেষে গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট উপজেলা পরিষদ আইনের বিধানাবলি যথাযথভাবে কার্যকর করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আদেশে বলা হয়েছে, উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কাগজপত্র ও নথি অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রজ্ঞাপন জারি করারও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আইনে উপজেলার চেয়ারম্যানদের ইউএনওর ওপরে স্থান দিলেও কার্যত ইউএনওরা তা মানেন না। তাঁরা প্রায় সব ক্ষেত্রে নিজেদের কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করেন। এ সম্পর্কে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ আইনে সরকারের ১৭টি বিভাগকে স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই সব দপ্তরের কাজ বাস্তবায়নে ইউএনওকে সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে পরিপত্র জারি করেন। ফলে দেশের সব উপজেলায় সব কাজে ইউএনওরা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আর চেয়ারম্যানরা উপদেষ্টা হওয়ার ফলে কার্যত তাঁদের কোনো ভূমিকা সেখানে নেই। পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পরিপত্রের মাধ্যমে ১৪০টি কমিটি তৈরি করে এগুলোর সভাপতি ও আহ্বায়ক করেছে ইউএনওদের। অথচ আইন অনুযায়ী এগুলোর দায়িত্ব পাওয়ার কথা নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন চিঠি ও কাগজপত্রে ইউএনওরা উপজেলা পরিষদের স্থলে ‘উপজেলা প্রশাসন’ নাম ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ পত্রিকাটিকে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সচিবদের হয়তো এ আইন সম্পর্কে জানা নেই। তাই তাঁরা পরিপত্র জারি করে ইউএনওদের কমিটির প্রধান করেছেন। একই বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, উপজেলা পরিষদে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম চলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আইনের কিছু বিষয় ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে আবার অনেক কিছু বাদ দিয়ে আইনটাকে দুর্বল করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এসব সমস্যা সরকারকেই সমাধান করতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনা সরকারকেই প্রতিপালন করতে হবে। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই সব কাজ কমিটির প্রধানের ক্ষমতাবলে ইউএনও নিয়ন্ত্রণ করছেন। ইউএনও পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও মূলত তাঁরাই আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। এটি আইন ও সংবিধানের লঙ্ঘন।
বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই। কেননা, রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে। সেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যদি ক্ষমতার দ্বন্দ্ব লেগে থাকে, তাহলে কাজ যেমন বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনি উন্নয়ন গতিও হবে শ্লথ। তা ছাড়া, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি আমলার মধ্যকার দ্বন্দ্ব কী ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি সরকারের জন্য সৃষ্টি করতে পারে, তা আমরা অতিসম্প্রতি বরিশালের ঘটনায় প্রত্যক্ষ করেছি। একটি বিষয় অস্বীকার করা যাবে না যে, আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র এখনো ঔপনিবেশিক মানসিকতায় আচ্ছন্ন। তাঁরা নিজেদের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী না ভেবে প্রভু ভাবতে ভালোবাসেন। তাই তাঁরা স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ধর্তব্যের মধ্যে আনতে চান না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপদ্রব মনে করেন। তাঁদের এ উন্নাসিকতা দেশের রাষ্ট্রিক কার্যক্রমকে গণমুখী করার ক্ষেত্রে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাষ্ট্রের মালিক জনগণ–কথাটি আমরা প্রায়ই শুনি। সংবিধানের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে জনগণকে সেই মালিকানা দেওয়ার কথা স্পষ্ট করেই বলা আছে। কিন্তু সে মালিকানা এখন কাজির গরুতে পরিণত হয়েছে; যার অস্তিত্ব গোয়ালে নেই, আছে খাতায়। প্রশাসন এখন আর গণমুখী কিংবা জনবান্ধব নেই। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাত্রাতিরিক্ত আমলানির্ভরতা এ জন্য দায়ী। ডিসি-ইউএনওরা এখন জেলা-উপজেলার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তাঁদের আচরণ কোনো কোনো সময় এতটাই সীমা লঙ্ঘন করে যে, মনে হয় তাঁরা ভুলে যান বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র। এখানে জনগণ সবার ওপরে। এর সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় সংবিধান দ্বারা। যাঁরা এখানে বসবাস করবেন, চাকরিবাকরি করবেন, তাঁদের সাংবিধানিক আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্রের পক্ষে আইনের প্রয়োগ ঘটায় সরকার। সে সরকারকে নির্বাচিত হতে হয় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। তাঁদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার পরিচালনা করেন। সেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের এভাবে অবজ্ঞা-উপেক্ষা করে ইউএনওদের সর্বেসর্বা বানিয়ে সচিবদের পরিপত্র জারি প্রকারান্তরে সাংবিধানিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলা যায়।
সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, সরকারের কতিপয় ভুল সিদ্ধান্ত আমলাদের মধ্যে একধরনের অহমিকার জন্ম দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা করোনাকালে ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব সাংসদদের পরিবর্তে সচিবদের ওপর ন্যস্ত করার বিষয়টিকে তুলে ধরতে চান। তাঁরা বলেন, একটি রাজনৈতিক সরকার যখন আমলাতন্ত্রের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন আমলাদের বাড়বাড়ন্ত মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তার মানে এই নয় যে, রাষ্ট্রযন্ত্রে আমলাদের কোনো প্রয়োজন নেই। অবশ্যই আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অঙ্গ। আমলাতন্ত্রকে আমরা গাড়ির ইঞ্জিনের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। গাড়িকে চলমান রেখে গন্তব্যে পৌঁছাতে ইঞ্জিনের অপরিহার্যতা অস্বীকার করা যাবে না। তবে সে গাড়ি যাতে সাবলীল গতিতে এগিয়ে যেতে পারে, সে জন্য ইঞ্জিনের নিয়ন্ত্রণ চালকের হাতে থাকা বাঞ্ছনীয়।
এর ব্যত্যয় ঘটলে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। এখানে রাজনীতিক বা জনপ্রতিনিধিরা গাড়িচালক এবং তাঁদের হাতেই থাকতে হবে স্টিয়ারিং। আর সে স্টিয়ারিং যাতে তাঁদের হাতে থাকে, সে জন্য রয়েছে সংবিধানরূপী ম্যানুয়েল। ওখানেই নির্ধারণ করে দেওয়া আছে কার কী দায়িত্ব, কাকে কোথায় থামতে হবে, কে কত দূর যেতে পারবেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, সেই বিধিবিধান কেউই মানতে চান না। উপজেলা চেয়ারম্যানরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখার বিষয়টি নিয়ে সরব ছিলেন। সরকার তথা রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাতে তেমন গা করেছেন বলে মনে হয় না। অথচ রাজনৈতিক সরকার হিসেবে বিষয়টির সুরাহা করা তাদের উচিত ছিল। রাজনীতিকেরা বক্তৃতা-বিবৃতিতে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার কথা বলে থাকেন। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ তাঁরা কখনোই নেননি। ফলে নির্বাচিতদের নির্বাসিত হওয়ার আশঙ্কা দিন দিন প্রবল হয়ে উঠছে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
মাঠপর্যায়ের প্রশাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মধ্যে ক্ষমতার টানাপোড়েন গোড়া থেকেই চলে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হলেও নির্বাহী কর্মকর্তারা তাঁদের খুব একটা পাত্তা দিতে চান না। তাঁরা উপজেলার সব কার্যক্রমে নিজেরা কর্তৃত্ব করতে চান। ফলে উপজেলার চেয়ারম্যানরা হয়ে পড়েছেন ‘উজিরে খামোখা’।
বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে নিরসন না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে করা এক রিটের শুনানি শেষে গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট উপজেলা পরিষদ আইনের বিধানাবলি যথাযথভাবে কার্যকর করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আদেশে বলা হয়েছে, উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কাগজপত্র ও নথি অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রজ্ঞাপন জারি করারও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আইনে উপজেলার চেয়ারম্যানদের ইউএনওর ওপরে স্থান দিলেও কার্যত ইউএনওরা তা মানেন না। তাঁরা প্রায় সব ক্ষেত্রে নিজেদের কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করেন। এ সম্পর্কে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ আইনে সরকারের ১৭টি বিভাগকে স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই সব দপ্তরের কাজ বাস্তবায়নে ইউএনওকে সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে পরিপত্র জারি করেন। ফলে দেশের সব উপজেলায় সব কাজে ইউএনওরা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আর চেয়ারম্যানরা উপদেষ্টা হওয়ার ফলে কার্যত তাঁদের কোনো ভূমিকা সেখানে নেই। পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পরিপত্রের মাধ্যমে ১৪০টি কমিটি তৈরি করে এগুলোর সভাপতি ও আহ্বায়ক করেছে ইউএনওদের। অথচ আইন অনুযায়ী এগুলোর দায়িত্ব পাওয়ার কথা নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন চিঠি ও কাগজপত্রে ইউএনওরা উপজেলা পরিষদের স্থলে ‘উপজেলা প্রশাসন’ নাম ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ পত্রিকাটিকে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সচিবদের হয়তো এ আইন সম্পর্কে জানা নেই। তাই তাঁরা পরিপত্র জারি করে ইউএনওদের কমিটির প্রধান করেছেন। একই বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, উপজেলা পরিষদে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম চলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আইনের কিছু বিষয় ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে আবার অনেক কিছু বাদ দিয়ে আইনটাকে দুর্বল করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এসব সমস্যা সরকারকেই সমাধান করতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনা সরকারকেই প্রতিপালন করতে হবে। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই সব কাজ কমিটির প্রধানের ক্ষমতাবলে ইউএনও নিয়ন্ত্রণ করছেন। ইউএনও পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও মূলত তাঁরাই আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। এটি আইন ও সংবিধানের লঙ্ঘন।
বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই। কেননা, রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে। সেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যদি ক্ষমতার দ্বন্দ্ব লেগে থাকে, তাহলে কাজ যেমন বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনি উন্নয়ন গতিও হবে শ্লথ। তা ছাড়া, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি আমলার মধ্যকার দ্বন্দ্ব কী ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি সরকারের জন্য সৃষ্টি করতে পারে, তা আমরা অতিসম্প্রতি বরিশালের ঘটনায় প্রত্যক্ষ করেছি। একটি বিষয় অস্বীকার করা যাবে না যে, আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র এখনো ঔপনিবেশিক মানসিকতায় আচ্ছন্ন। তাঁরা নিজেদের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী না ভেবে প্রভু ভাবতে ভালোবাসেন। তাই তাঁরা স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ধর্তব্যের মধ্যে আনতে চান না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপদ্রব মনে করেন। তাঁদের এ উন্নাসিকতা দেশের রাষ্ট্রিক কার্যক্রমকে গণমুখী করার ক্ষেত্রে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাষ্ট্রের মালিক জনগণ–কথাটি আমরা প্রায়ই শুনি। সংবিধানের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে জনগণকে সেই মালিকানা দেওয়ার কথা স্পষ্ট করেই বলা আছে। কিন্তু সে মালিকানা এখন কাজির গরুতে পরিণত হয়েছে; যার অস্তিত্ব গোয়ালে নেই, আছে খাতায়। প্রশাসন এখন আর গণমুখী কিংবা জনবান্ধব নেই। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাত্রাতিরিক্ত আমলানির্ভরতা এ জন্য দায়ী। ডিসি-ইউএনওরা এখন জেলা-উপজেলার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তাঁদের আচরণ কোনো কোনো সময় এতটাই সীমা লঙ্ঘন করে যে, মনে হয় তাঁরা ভুলে যান বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র। এখানে জনগণ সবার ওপরে। এর সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় সংবিধান দ্বারা। যাঁরা এখানে বসবাস করবেন, চাকরিবাকরি করবেন, তাঁদের সাংবিধানিক আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্রের পক্ষে আইনের প্রয়োগ ঘটায় সরকার। সে সরকারকে নির্বাচিত হতে হয় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। তাঁদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার পরিচালনা করেন। সেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের এভাবে অবজ্ঞা-উপেক্ষা করে ইউএনওদের সর্বেসর্বা বানিয়ে সচিবদের পরিপত্র জারি প্রকারান্তরে সাংবিধানিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলা যায়।
সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, সরকারের কতিপয় ভুল সিদ্ধান্ত আমলাদের মধ্যে একধরনের অহমিকার জন্ম দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা করোনাকালে ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব সাংসদদের পরিবর্তে সচিবদের ওপর ন্যস্ত করার বিষয়টিকে তুলে ধরতে চান। তাঁরা বলেন, একটি রাজনৈতিক সরকার যখন আমলাতন্ত্রের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন আমলাদের বাড়বাড়ন্ত মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তার মানে এই নয় যে, রাষ্ট্রযন্ত্রে আমলাদের কোনো প্রয়োজন নেই। অবশ্যই আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অঙ্গ। আমলাতন্ত্রকে আমরা গাড়ির ইঞ্জিনের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। গাড়িকে চলমান রেখে গন্তব্যে পৌঁছাতে ইঞ্জিনের অপরিহার্যতা অস্বীকার করা যাবে না। তবে সে গাড়ি যাতে সাবলীল গতিতে এগিয়ে যেতে পারে, সে জন্য ইঞ্জিনের নিয়ন্ত্রণ চালকের হাতে থাকা বাঞ্ছনীয়।
এর ব্যত্যয় ঘটলে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। এখানে রাজনীতিক বা জনপ্রতিনিধিরা গাড়িচালক এবং তাঁদের হাতেই থাকতে হবে স্টিয়ারিং। আর সে স্টিয়ারিং যাতে তাঁদের হাতে থাকে, সে জন্য রয়েছে সংবিধানরূপী ম্যানুয়েল। ওখানেই নির্ধারণ করে দেওয়া আছে কার কী দায়িত্ব, কাকে কোথায় থামতে হবে, কে কত দূর যেতে পারবেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, সেই বিধিবিধান কেউই মানতে চান না। উপজেলা চেয়ারম্যানরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখার বিষয়টি নিয়ে সরব ছিলেন। সরকার তথা রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাতে তেমন গা করেছেন বলে মনে হয় না। অথচ রাজনৈতিক সরকার হিসেবে বিষয়টির সুরাহা করা তাদের উচিত ছিল। রাজনীতিকেরা বক্তৃতা-বিবৃতিতে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার কথা বলে থাকেন। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ তাঁরা কখনোই নেননি। ফলে নির্বাচিতদের নির্বাসিত হওয়ার আশঙ্কা দিন দিন প্রবল হয়ে উঠছে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
২১ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১ দিন আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১ দিন আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১ দিন আগে