মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী, আওয়ামীবিরোধী, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে গোপনে এবং প্রকাশ্যেও তৎপর হয়ে ওঠার যথেষ্ট নজির আছে। কখনো কখনো সরকার উৎখাতেরও চেষ্টা করা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সংঘাতেও এরা লিপ্ত হয়েছে। সেই তালিকা যথেষ্ট দীর্ঘ। মোটাদাগে কয়েকটি উল্লেখ করছি। ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদলের কিছু ক্যাডারকে ঢাকায় এনে আরব বসন্তের প্রভাবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সম্মুখে রাস্তায় অবস্থান গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
সরকারের চোখে ধুলা দেওয়ার জন্য সমাবেশের নামকরণ করা হয়েছিল ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ’। রাতেই টের পেয়ে সরকার ঢাকায় এসে পৌঁছানো বাসগুলো জব্দ করে ফেলে। ফলে ঢাকায় তাহরির স্কয়ারের আদলে রাস্তায় অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতকে ব্যবহার করে ঢাকায় ৬ মে তারিখে সরকারি স্থাপনা, বায়তুল মোকাররম, সচিবালয়সহ সর্বত্র রাস্তায় অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনার পেছনে ছিল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। সেটিও ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার পেছনেও ছিল সরকার উৎখাতের আরেকটি পরিকল্পনা। ২০১৫ সালে ৯৩ দিন হরতাল-অবরোধ করেও সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা ছিল। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজানের হত্যাকাণ্ড জঙ্গিদের সরাসরি অংশগ্রহণে ঘটলেও এর প্রতি মৌন সমর্থন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের অপ্রকাশিত থাকেনি। জঙ্গিদের প্রতি সরকারবিরোধী বেশ কয়েকটি দলের মৌন সমর্থন আগাগোড়াই লক্ষ করা গেছে। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে হেফাজত এবং প্রধান বিরোধী দল সমান্তরালভাবে সরকার উৎখাতে যার যার অবস্থান থেকে সময় বেঁধে দিয়েছিল। ২০২১ সালের ২৬ ও ২৮ মার্চে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘটিত তাণ্ডব, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিহত করা ইত্যাদির মধ্যেও ছিল সরকার উৎখাতের নেপথ্যের এবং প্রকাশ্যে রাজনীতি করা বিরোধীদের বোঝাপড়া। সেটি তাদের কথা ও কাজেই বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কোনো একটি উপলক্ষ সামনে থাকলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন মিত্রশক্তির নড়েচড়ে ওঠার লক্ষণ রাজনীতিসচেতন যেকোনো পর্যবেক্ষকেরই দৃষ্টিতে পড়ে।
আফগানিস্তানে তালেবান শক্তি ক্ষমতায় ফিরে আসতে যাচ্ছে, সেটি ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি দোহায় মার্কিন ও তালেবানের চুক্তি স্বাক্ষরের পর অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বছর জো বাইডেন সরকার দ্রুত মার্কিন সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়ার পর তালেবান কাবুল দখল করে নিতে সময় বেশি নেয়নি। তালেবানের ক্ষমতায় আরোহণের এমন দৃশ্য আমাদের দেশের রাজনীতিতে সরকারবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী ও যুদ্ধাপরাধীদের বেশ পুলকিত করেছে। এটি বিশেষত প্রবাসে বসে যেসব উগ্রবাদী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব প্রচার-প্রচারণা ও অপপ্রচার দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছিল, তাদের মধ্যে ‘নতুন প্রাণের’ যেন সঞ্চার করেছিল। তারা বাংলাদেশেও আফগানিস্তানের মতো পরিবর্তনের কেউ কেউ নিশ্চয়তা, আবার কেউ কেউ হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
একসময় যারা ‘আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান’ স্লোগান দিয়ে ঢাকায় মিছিল করেছিল, তাদের এখন প্রকাশ্যে মিছিল করতে হচ্ছে না। সুদূর প্রবাসে বসে ফেসবুক, ইউটিউবে রাত-দিন তাদের উদগ্র বাসনা প্রচার করতে কোনো বাধা নেই। তারা তা করেই চলছে। দেশের অভ্যন্তরে তাদের ছোট-বড় নানা পকেট-গ্রুপ এসব প্রচার-প্রচারণাকে নানা ফেক আইডি থেকে ছড়িয়ে দেওয়ার ‘পবিত্র দায়িত্ব’ পালন করে চলছে। তাতে মোবাইল হাতে নিলেই অনেকেই আফগান তালেবানের এ দেশীয় দোসর-সমর্থকদের উদ্দীপনা দেখতে অনেকটাই বাধ্য হচ্ছে। কাবুলের ঘটনায় কেউ কেউ বেশ রোমাঞ্চিত হয়েই আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। সম্প্রতি বেশ কিছু জঙ্গি নেতা-কর্মী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। এমনকি একজন নারী কর্মীও ৪০-এর অধিক ফেক আইডি থেকে এসব প্রচার-প্রচারণায় নারী-পুরুষদের সংগঠিত করার কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বেশ কিছু জঙ্গি কর্মী অনেক দিন থেকেই গোপনে সংগঠিত হচ্ছিল। তাদেরই একটি গ্রুপ ময়মনসিংহের খাগডহরে ধরা পড়ে। তারা অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। অতীতেও এদের কোনো কোনো দলের ব্যাংক ডাকাতিসহ নানা ধরনের ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে। মূলত তাদের অস্ত্র কেনা, তৈরি করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া, নিজেদের গোপন আস্তানায় থাকা-খাওয়ার অর্থ সংগ্রহে তারা ডাকাতিতে যুক্ত হয়েছে। একসময় অবশ্য তাদের দেশি বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর কাছ থেকে অর্থপ্রাপ্তি সহজ ছিল। বিদেশ থেকে তাদের টাকাপয়সা ব্যাংক ও হুন্ডির মাধ্যমে সহজেই পাওয়া যেত। এখন হয়তো পুলিশি নজরদারির কারণে কিছুটা আড়ালে-আবডালে হচ্ছে।
জঙ্গিরা ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জিহাদ করতে ‘আল্লাহর রাস্তায়’ নিজেদের উৎসর্গ করেছে—এমন ধারণাই সমাজে প্রচারিত হচ্ছে। সুতরাং ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির ঘটনায় এরা যুক্ত হবে—এমনটি সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীরা হয়তো সহজে আস্থায় নেবে না—এমন অবস্থান থেকেই তারা অর্থ আদায়ে ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ধরা না পড়লে হয়তো অনেকে বিশ্বাস করতে চাইতেন না। কিন্তু উগ্র সশস্ত্র পন্থার যেকোনো রাজনীতির ক্ষেত্রে ব্যাংক ডাকাতির নজির একেবারেই বেনজির নয়।
সর্বহারারাও একসময় এ দেশে ব্যাংক ডাকাতির মতো ঘটনায় জড়িত হয়েছিল। ওদের এবং এদের লক্ষ্যে ভিন্নতা থাকলেও অর্থের প্রয়োজনীয়তা পূরণে তাদের উভয়কেই ব্যাংক ডাকাতির পথেই হাঁটতে হয়েছে। জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এমদাদুল হক পাঁচটি গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, পৌনে ৩ লাখ টাকা, রাসায়নিক দ্রব্য, দেশে তৈরি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। এ ধরনের বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা এই সময়ে বেশ গোপনে চলছে বলে আভাস-ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের সাজা হয়েছে তাদের কারও কারও সন্তানেরা দেশের বাইরে অবস্থান করে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নানাভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। তারা বিপুল অর্থ দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের মামলার প্রধান কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বিদেশে বসে এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানিয়েছেন।
গত কয়েক মাসে সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর এবং অনেকের বাড়িঘর, সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটিয়েছে। এটি অবশ্য দীর্ঘদিন থেকেই দখলদার নানা গোষ্ঠী করে আসছে। এর ফলে দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার যেভাবে ঘটছে, তার সুযোগ উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নিতে পেরেছে। সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাস নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রভাবে বিনা বিচারে জেলে আটক আছেন। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা দেশের অন্যত্রও অহরহ ঘটছে। এর ফলে জঙ্গিবাদী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ক্রমেই জায়গা করে নিচ্ছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি সেই সুযোগ নেওয়ার জন্য করোনার এই পরিস্থিতিতে নতুন করে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। আফগান ইস্যুতে জঙ্গিরা নড়েচড়ে উঠছে।
করোনা সংক্রমণ কমে আসার লক্ষণ দেখে সরকারবিরোধীরাও সমান্তরালভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি রাজনীতিসচেতন মহলকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেই সামনের দিনগুলোতে পা ফেলতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী, আওয়ামীবিরোধী, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে গোপনে এবং প্রকাশ্যেও তৎপর হয়ে ওঠার যথেষ্ট নজির আছে। কখনো কখনো সরকার উৎখাতেরও চেষ্টা করা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সংঘাতেও এরা লিপ্ত হয়েছে। সেই তালিকা যথেষ্ট দীর্ঘ। মোটাদাগে কয়েকটি উল্লেখ করছি। ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদলের কিছু ক্যাডারকে ঢাকায় এনে আরব বসন্তের প্রভাবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সম্মুখে রাস্তায় অবস্থান গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
সরকারের চোখে ধুলা দেওয়ার জন্য সমাবেশের নামকরণ করা হয়েছিল ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ’। রাতেই টের পেয়ে সরকার ঢাকায় এসে পৌঁছানো বাসগুলো জব্দ করে ফেলে। ফলে ঢাকায় তাহরির স্কয়ারের আদলে রাস্তায় অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতকে ব্যবহার করে ঢাকায় ৬ মে তারিখে সরকারি স্থাপনা, বায়তুল মোকাররম, সচিবালয়সহ সর্বত্র রাস্তায় অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনার পেছনে ছিল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। সেটিও ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার পেছনেও ছিল সরকার উৎখাতের আরেকটি পরিকল্পনা। ২০১৫ সালে ৯৩ দিন হরতাল-অবরোধ করেও সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা ছিল। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজানের হত্যাকাণ্ড জঙ্গিদের সরাসরি অংশগ্রহণে ঘটলেও এর প্রতি মৌন সমর্থন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের অপ্রকাশিত থাকেনি। জঙ্গিদের প্রতি সরকারবিরোধী বেশ কয়েকটি দলের মৌন সমর্থন আগাগোড়াই লক্ষ করা গেছে। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে হেফাজত এবং প্রধান বিরোধী দল সমান্তরালভাবে সরকার উৎখাতে যার যার অবস্থান থেকে সময় বেঁধে দিয়েছিল। ২০২১ সালের ২৬ ও ২৮ মার্চে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘটিত তাণ্ডব, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিহত করা ইত্যাদির মধ্যেও ছিল সরকার উৎখাতের নেপথ্যের এবং প্রকাশ্যে রাজনীতি করা বিরোধীদের বোঝাপড়া। সেটি তাদের কথা ও কাজেই বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কোনো একটি উপলক্ষ সামনে থাকলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন মিত্রশক্তির নড়েচড়ে ওঠার লক্ষণ রাজনীতিসচেতন যেকোনো পর্যবেক্ষকেরই দৃষ্টিতে পড়ে।
আফগানিস্তানে তালেবান শক্তি ক্ষমতায় ফিরে আসতে যাচ্ছে, সেটি ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি দোহায় মার্কিন ও তালেবানের চুক্তি স্বাক্ষরের পর অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বছর জো বাইডেন সরকার দ্রুত মার্কিন সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়ার পর তালেবান কাবুল দখল করে নিতে সময় বেশি নেয়নি। তালেবানের ক্ষমতায় আরোহণের এমন দৃশ্য আমাদের দেশের রাজনীতিতে সরকারবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী ও যুদ্ধাপরাধীদের বেশ পুলকিত করেছে। এটি বিশেষত প্রবাসে বসে যেসব উগ্রবাদী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব প্রচার-প্রচারণা ও অপপ্রচার দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছিল, তাদের মধ্যে ‘নতুন প্রাণের’ যেন সঞ্চার করেছিল। তারা বাংলাদেশেও আফগানিস্তানের মতো পরিবর্তনের কেউ কেউ নিশ্চয়তা, আবার কেউ কেউ হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
একসময় যারা ‘আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান’ স্লোগান দিয়ে ঢাকায় মিছিল করেছিল, তাদের এখন প্রকাশ্যে মিছিল করতে হচ্ছে না। সুদূর প্রবাসে বসে ফেসবুক, ইউটিউবে রাত-দিন তাদের উদগ্র বাসনা প্রচার করতে কোনো বাধা নেই। তারা তা করেই চলছে। দেশের অভ্যন্তরে তাদের ছোট-বড় নানা পকেট-গ্রুপ এসব প্রচার-প্রচারণাকে নানা ফেক আইডি থেকে ছড়িয়ে দেওয়ার ‘পবিত্র দায়িত্ব’ পালন করে চলছে। তাতে মোবাইল হাতে নিলেই অনেকেই আফগান তালেবানের এ দেশীয় দোসর-সমর্থকদের উদ্দীপনা দেখতে অনেকটাই বাধ্য হচ্ছে। কাবুলের ঘটনায় কেউ কেউ বেশ রোমাঞ্চিত হয়েই আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। সম্প্রতি বেশ কিছু জঙ্গি নেতা-কর্মী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। এমনকি একজন নারী কর্মীও ৪০-এর অধিক ফেক আইডি থেকে এসব প্রচার-প্রচারণায় নারী-পুরুষদের সংগঠিত করার কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বেশ কিছু জঙ্গি কর্মী অনেক দিন থেকেই গোপনে সংগঠিত হচ্ছিল। তাদেরই একটি গ্রুপ ময়মনসিংহের খাগডহরে ধরা পড়ে। তারা অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। অতীতেও এদের কোনো কোনো দলের ব্যাংক ডাকাতিসহ নানা ধরনের ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে। মূলত তাদের অস্ত্র কেনা, তৈরি করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া, নিজেদের গোপন আস্তানায় থাকা-খাওয়ার অর্থ সংগ্রহে তারা ডাকাতিতে যুক্ত হয়েছে। একসময় অবশ্য তাদের দেশি বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর কাছ থেকে অর্থপ্রাপ্তি সহজ ছিল। বিদেশ থেকে তাদের টাকাপয়সা ব্যাংক ও হুন্ডির মাধ্যমে সহজেই পাওয়া যেত। এখন হয়তো পুলিশি নজরদারির কারণে কিছুটা আড়ালে-আবডালে হচ্ছে।
জঙ্গিরা ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জিহাদ করতে ‘আল্লাহর রাস্তায়’ নিজেদের উৎসর্গ করেছে—এমন ধারণাই সমাজে প্রচারিত হচ্ছে। সুতরাং ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির ঘটনায় এরা যুক্ত হবে—এমনটি সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীরা হয়তো সহজে আস্থায় নেবে না—এমন অবস্থান থেকেই তারা অর্থ আদায়ে ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ধরা না পড়লে হয়তো অনেকে বিশ্বাস করতে চাইতেন না। কিন্তু উগ্র সশস্ত্র পন্থার যেকোনো রাজনীতির ক্ষেত্রে ব্যাংক ডাকাতির নজির একেবারেই বেনজির নয়।
সর্বহারারাও একসময় এ দেশে ব্যাংক ডাকাতির মতো ঘটনায় জড়িত হয়েছিল। ওদের এবং এদের লক্ষ্যে ভিন্নতা থাকলেও অর্থের প্রয়োজনীয়তা পূরণে তাদের উভয়কেই ব্যাংক ডাকাতির পথেই হাঁটতে হয়েছে। জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এমদাদুল হক পাঁচটি গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, পৌনে ৩ লাখ টাকা, রাসায়নিক দ্রব্য, দেশে তৈরি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। এ ধরনের বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা এই সময়ে বেশ গোপনে চলছে বলে আভাস-ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের সাজা হয়েছে তাদের কারও কারও সন্তানেরা দেশের বাইরে অবস্থান করে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নানাভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। তারা বিপুল অর্থ দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের মামলার প্রধান কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বিদেশে বসে এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানিয়েছেন।
গত কয়েক মাসে সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর এবং অনেকের বাড়িঘর, সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটিয়েছে। এটি অবশ্য দীর্ঘদিন থেকেই দখলদার নানা গোষ্ঠী করে আসছে। এর ফলে দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার যেভাবে ঘটছে, তার সুযোগ উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নিতে পেরেছে। সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাস নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রভাবে বিনা বিচারে জেলে আটক আছেন। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা দেশের অন্যত্রও অহরহ ঘটছে। এর ফলে জঙ্গিবাদী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ক্রমেই জায়গা করে নিচ্ছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি সেই সুযোগ নেওয়ার জন্য করোনার এই পরিস্থিতিতে নতুন করে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। আফগান ইস্যুতে জঙ্গিরা নড়েচড়ে উঠছে।
করোনা সংক্রমণ কমে আসার লক্ষণ দেখে সরকারবিরোধীরাও সমান্তরালভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি রাজনীতিসচেতন মহলকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেই সামনের দিনগুলোতে পা ফেলতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৬ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৬ ঘণ্টা আগে