মযহারুল ইসলাম বাবলা
ধর্মকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যবহার করতেও ছাড়ে না। মুখে অসাম্প্রদায়িকতার আওয়াজ তুললেও ক্ষমতার মোহে সবই জায়েজ করে নেয়। ক্ষমতা, একমাত্র ক্ষমতার মোহেই তথাকথিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতি নীতি-আদর্শের ধার ধারে না। তথাকথিত বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে ধর্মযোগ বা ধর্মের ব্যবহার নতুন বিষয় নয়। যুগ-যুগান্তর ধরে শাসকেরা উদ্দেশ্যমূলক ধর্মকে ক্ষমতায় টিকে থাকার অভিপ্রায়ে ব্যবহার করে আসছেন। আমাদের উপমহাদেশের রাজনীতির দিকে তাকালেই সেটা মোটাদাগে ধরা পড়বে। জাতীয়তাবাদী মহাত্মা গান্ধী চরমভাবে অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। তাঁর চরম শত্রুও তাঁকে সাম্প্রদায়িক বলতে পারবে না। তবে তিনি কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন না। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে সম্পৃক্ত করেছিলেন; অর্থাৎ ধর্ম এবং রাজনীতিকে যুগলবন্দী করেছিলেন। সেটা আত্মঘাতী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক দেশভাগ এবং হিন্দুত্ববাদীদের হাতে তাঁর নৃশংস হত্যা, সেটাই প্রমাণ করে। উপমহাদেশ বিভক্তির মূলে সর্বাধিক ক্রিয়াশীল ছিল ধর্ম। ধর্মকে উপলক্ষ করেই দেশভাগ সম্পন্ন হয়েছিল। দুই জাতির মোড়কে প্রধান দুই ভ্রাতৃপ্রতিম সম্প্রদায়ের উচ্ছেদ, বিচ্ছেদ, উৎপাটন এবং নৃশংস দাঙ্গায় সম্পন্ন হয়েছিল মর্মান্তিক দেশভাগ।
পাকিস্তান ও ভারত সৃষ্টিতে ধর্মকেই অবলম্বন করা হয়েছিল। মুসলিম-অধ্যুষিত পাকিস্তানে জাতিভেদ সামনে আসেনি ওই ধর্মের টানেই। বহুজাতি ও ধর্মাবলম্বীর ভারতে নিজ নিজ ধর্ম ও জাতীয়তাকে ‘ভারতীয় জাতীয়তার’ কুশলী বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়েছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রাধীনে ব্যতিক্রম বাঙালি জাতি। জাতি পরিচয় বিলুপ্তি মেনে নেয়নি। ধর্মীয় পরিচয়কে অতিক্রম করে ভাষা-সংস্কৃতির বিভেদ-বৈষম্যে শুরু এবং শেষ পরিণতিতে পৃথক রাষ্ট্রের অভ্যুদয়, স্বাধীন বাংলাদেশ। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ কেবল ধর্মনিরপেক্ষ ছিল না। স্বাধীন দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিও ছিল নিষিদ্ধ। যেটি ভারত কিংবা পাকিস্তান কোনো রাষ্ট্রেই নেই। ১৯৭৪ সালে ভারত ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানভুক্ত করলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেনি। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সচল এবং সক্রিয় থাকায় ক্রমাগত তীব্রতর হয়ে ভারতের শাসনভার এখন ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলের করতলগত। নির্বাচনের মাধ্যমে পরপর দুবার ধর্মভিত্তিক বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসীন। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে তারা ক্ষমতায়। বাস্তবতা হচ্ছে বহু ভাষাভাষী ও সম্প্রদায়ের দেশ ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র বাস্তবায়ন যে সম্ভব নয়, এ সত্যটি বিজেপি সরকার ভালো করেই জানে। তাই বলে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক নৃশংসতা কিন্তু থেমে নেই। বহুত্ববাদকে ভেঙে একক হিন্দুত্ববাদী অপতৎপরতা চলছে দেশজুড়ে। গো-রক্ষার নামে সাম্প্রদায়িক নৃশংস বর্বরতা অবিরাম ঘটে চলেছে।
মহাত্মা গান্ধী গো-রক্ষার জন্য নানাবিধ কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। খেলাফতের সঙ্গে চুক্তি করে অকপটে বলেছেন, মুসলমানদের ছুরির কবল থেকে গো-মাতাকে রক্ষায় তিনি ওই চুক্তি করেছিলেন। গো-রক্ষার প্রচার-প্রচারণায় সারা ভারত চষে বেড়িয়েছেন। গান্ধী অহিংসায় বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি বলেছেন, গো-রক্ষার নামে হিংসার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেছেন, তিনি নিজে গো-সেবা করলেও, আমিষাশী মুসলমান ও খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ যারা গো-মাংস খায়, তাদের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। এ কাজ অন্যায়। তিনি স্বীকার করতেন এবং বলেছেন, ভারতবর্ষ কেবল হিন্দুদের দেশ নয়। এ দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের প্রত্যেকের নিজস্বতাকে সম্মান করতে হবে। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ওপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করে চলেছে। অর্ডিন্যান্স পর্যন্ত জারি করেছে। যেটি ভারতের জাতির জনক গান্ধীর আদর্শ ও নীতির সম্পূর্ণ বিরোধী।
আপাতদৃষ্টিতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সঙ্গে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস দলের মতপার্থক্য ভিন্ন বলেই মনে করা হয়। অনেকে কংগ্রেসকে ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবেও গণ্য করে। অথচ এই কংগ্রেস দলের শাসনামলেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছিল। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের বিপরীতে কংগ্রেস সরকার তখন মৌলবাদীদের ঘৃণিত অপকীর্তির তামাশা দেখেছিল মাত্র। স্বীয় কর্তব্য পালনে পুরোমাত্রায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল কংগ্রেস সরকার। সে দায় বা অভিযোগ থেকে কংগ্রেসের পরিত্রাণের উপায় নেই। বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে কেন্দ্র করে সহিংস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দায়ও কংগ্রেস সরকারের ওপরই বর্তায়। সে দায় কংগ্রেসকে বহন করতেই হবে।
প্রবল পরাক্রম বিজেপিকে রুখতে কলকাতায় বিজেপিবিরোধী ব্রিগেড মাঠে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি ব্যতীত সব রাজনৈতিক দল বিজেপি ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে লড়ার ডাক দিয়েছিল। কংগ্রেস বলেছে, নির্বাচনে নয়, নির্বাচন-পরবর্তী ঐক্যের কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিবিরোধী জোট গঠনে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিজেপি জোটে শামিল হয়ে বিনিময়ে হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী। আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে শূন্য অবস্থান থেকে বিজেপির রাজ্য ক্ষমতা লাভ মমতার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ক্রমাগত শক্তি বৃদ্ধি ঘটছে। কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের অবস্থান তলানিতে ঠেকেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মমতার প্রতিপক্ষ বিজেপি ঠেকানোর ভূমিকা নেওয়া খুবই স্বাভাবিক। নিজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ রাখতে বিজেপি ঠেকানো ছাড়া তাঁর গতি নেই। ক্ষয়িষ্ণু বামফ্রন্টকে আর প্রতিপক্ষ মনে করার কারণ নেই। তৃণমূলের প্রতিপক্ষ কংগ্রেস কিংবা বামফ্রন্ট নয়, বিজেপি।
আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। জেনারেল জিয়ার সামরিক সরকার সেটা বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। পাশাপাশি শাসনতন্ত্রের চার মূল স্তম্ভের দুই স্তম্ভ সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধান থেকে বিদায় করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় অপর সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ প্রবর্তন করেছিলেন ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’। এরশাদ-পরবর্তী অসামরিক শাসকেরা সেটার পরিবর্তন তো পরের কথা, সাংবিধানিক স্বীকৃতি পর্যন্ত দিয়েছেন। এমনকি সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক ধারা পাল্টে সাম্প্রদায়িক ধারাগুলো সংবিধানভুক্ত পর্যন্ত করেছেন। একাত্তরের ঘাতক দল জামায়াতে ইসলামী এখন চূড়ান্ত পতনের প্রহর গুনছে বটে, তবে হেফাজতিদের প্রবল উত্থান ঘটেছে সরকারি মদদে। হেফাজত গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থায় আস্থা ও বিশ্বাস রাখে না। তলোয়ার হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলই তাদের লক্ষ্য। হেফাজতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করে সাম্প্রদায়িক শিক্ষার নানা উপকরণ যুক্ত করা হয়েছে। হেফাজতিদের যেরূপ আশকারা দেওয়া হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে বর্তমান সরকারের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে হেফাজতে ইসলাম আবির্ভূত হলে নিশ্চয় অবাক হব না। যেহেতু সরকারবিরোধী দল হিসেবে সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে এখন কার্যত কোনো দলের সক্রিয়তা নেই।
বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী রাজনীতি মূলত ক্ষমতারই রাজনীতি। ক্ষমতাই একমাত্র লক্ষ্য। ওই লক্ষ্য পূরণে হেন অপকীর্তি নেই, যেটা করতে তারা পিছপা হয় না। ধর্মকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যবহার করতেও ছাড়ে না। মুখে অসাম্প্রদায়িকতার আওয়াজ তুললেও ক্ষমতার মোহে সবই জায়েজ করে নেয়। ক্ষমতা, একমাত্র ক্ষমতার মোহেই তথাকথিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতি নীতি-আদর্শের ধার ধারে না। কবি নজরুল ‘মানুষ’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘হায়রে ভজনালয় তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গায়ে স্বার্থের জয়’। জাতীয়তাবাদী শাসকদের ক্ষেত্রে অমনটা অনায়াসে বলা যায়।
ধর্মকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যবহার করতেও ছাড়ে না। মুখে অসাম্প্রদায়িকতার আওয়াজ তুললেও ক্ষমতার মোহে সবই জায়েজ করে নেয়। ক্ষমতা, একমাত্র ক্ষমতার মোহেই তথাকথিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতি নীতি-আদর্শের ধার ধারে না। তথাকথিত বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে ধর্মযোগ বা ধর্মের ব্যবহার নতুন বিষয় নয়। যুগ-যুগান্তর ধরে শাসকেরা উদ্দেশ্যমূলক ধর্মকে ক্ষমতায় টিকে থাকার অভিপ্রায়ে ব্যবহার করে আসছেন। আমাদের উপমহাদেশের রাজনীতির দিকে তাকালেই সেটা মোটাদাগে ধরা পড়বে। জাতীয়তাবাদী মহাত্মা গান্ধী চরমভাবে অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। তাঁর চরম শত্রুও তাঁকে সাম্প্রদায়িক বলতে পারবে না। তবে তিনি কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন না। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে সম্পৃক্ত করেছিলেন; অর্থাৎ ধর্ম এবং রাজনীতিকে যুগলবন্দী করেছিলেন। সেটা আত্মঘাতী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক দেশভাগ এবং হিন্দুত্ববাদীদের হাতে তাঁর নৃশংস হত্যা, সেটাই প্রমাণ করে। উপমহাদেশ বিভক্তির মূলে সর্বাধিক ক্রিয়াশীল ছিল ধর্ম। ধর্মকে উপলক্ষ করেই দেশভাগ সম্পন্ন হয়েছিল। দুই জাতির মোড়কে প্রধান দুই ভ্রাতৃপ্রতিম সম্প্রদায়ের উচ্ছেদ, বিচ্ছেদ, উৎপাটন এবং নৃশংস দাঙ্গায় সম্পন্ন হয়েছিল মর্মান্তিক দেশভাগ।
পাকিস্তান ও ভারত সৃষ্টিতে ধর্মকেই অবলম্বন করা হয়েছিল। মুসলিম-অধ্যুষিত পাকিস্তানে জাতিভেদ সামনে আসেনি ওই ধর্মের টানেই। বহুজাতি ও ধর্মাবলম্বীর ভারতে নিজ নিজ ধর্ম ও জাতীয়তাকে ‘ভারতীয় জাতীয়তার’ কুশলী বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়েছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রাধীনে ব্যতিক্রম বাঙালি জাতি। জাতি পরিচয় বিলুপ্তি মেনে নেয়নি। ধর্মীয় পরিচয়কে অতিক্রম করে ভাষা-সংস্কৃতির বিভেদ-বৈষম্যে শুরু এবং শেষ পরিণতিতে পৃথক রাষ্ট্রের অভ্যুদয়, স্বাধীন বাংলাদেশ। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ কেবল ধর্মনিরপেক্ষ ছিল না। স্বাধীন দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিও ছিল নিষিদ্ধ। যেটি ভারত কিংবা পাকিস্তান কোনো রাষ্ট্রেই নেই। ১৯৭৪ সালে ভারত ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানভুক্ত করলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেনি। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সচল এবং সক্রিয় থাকায় ক্রমাগত তীব্রতর হয়ে ভারতের শাসনভার এখন ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলের করতলগত। নির্বাচনের মাধ্যমে পরপর দুবার ধর্মভিত্তিক বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসীন। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে তারা ক্ষমতায়। বাস্তবতা হচ্ছে বহু ভাষাভাষী ও সম্প্রদায়ের দেশ ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র বাস্তবায়ন যে সম্ভব নয়, এ সত্যটি বিজেপি সরকার ভালো করেই জানে। তাই বলে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক নৃশংসতা কিন্তু থেমে নেই। বহুত্ববাদকে ভেঙে একক হিন্দুত্ববাদী অপতৎপরতা চলছে দেশজুড়ে। গো-রক্ষার নামে সাম্প্রদায়িক নৃশংস বর্বরতা অবিরাম ঘটে চলেছে।
মহাত্মা গান্ধী গো-রক্ষার জন্য নানাবিধ কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। খেলাফতের সঙ্গে চুক্তি করে অকপটে বলেছেন, মুসলমানদের ছুরির কবল থেকে গো-মাতাকে রক্ষায় তিনি ওই চুক্তি করেছিলেন। গো-রক্ষার প্রচার-প্রচারণায় সারা ভারত চষে বেড়িয়েছেন। গান্ধী অহিংসায় বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি বলেছেন, গো-রক্ষার নামে হিংসার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেছেন, তিনি নিজে গো-সেবা করলেও, আমিষাশী মুসলমান ও খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ যারা গো-মাংস খায়, তাদের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। এ কাজ অন্যায়। তিনি স্বীকার করতেন এবং বলেছেন, ভারতবর্ষ কেবল হিন্দুদের দেশ নয়। এ দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের প্রত্যেকের নিজস্বতাকে সম্মান করতে হবে। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ওপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করে চলেছে। অর্ডিন্যান্স পর্যন্ত জারি করেছে। যেটি ভারতের জাতির জনক গান্ধীর আদর্শ ও নীতির সম্পূর্ণ বিরোধী।
আপাতদৃষ্টিতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সঙ্গে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস দলের মতপার্থক্য ভিন্ন বলেই মনে করা হয়। অনেকে কংগ্রেসকে ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবেও গণ্য করে। অথচ এই কংগ্রেস দলের শাসনামলেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছিল। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের বিপরীতে কংগ্রেস সরকার তখন মৌলবাদীদের ঘৃণিত অপকীর্তির তামাশা দেখেছিল মাত্র। স্বীয় কর্তব্য পালনে পুরোমাত্রায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল কংগ্রেস সরকার। সে দায় বা অভিযোগ থেকে কংগ্রেসের পরিত্রাণের উপায় নেই। বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে কেন্দ্র করে সহিংস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দায়ও কংগ্রেস সরকারের ওপরই বর্তায়। সে দায় কংগ্রেসকে বহন করতেই হবে।
প্রবল পরাক্রম বিজেপিকে রুখতে কলকাতায় বিজেপিবিরোধী ব্রিগেড মাঠে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি ব্যতীত সব রাজনৈতিক দল বিজেপি ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে লড়ার ডাক দিয়েছিল। কংগ্রেস বলেছে, নির্বাচনে নয়, নির্বাচন-পরবর্তী ঐক্যের কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিবিরোধী জোট গঠনে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিজেপি জোটে শামিল হয়ে বিনিময়ে হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী। আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে শূন্য অবস্থান থেকে বিজেপির রাজ্য ক্ষমতা লাভ মমতার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ক্রমাগত শক্তি বৃদ্ধি ঘটছে। কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের অবস্থান তলানিতে ঠেকেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মমতার প্রতিপক্ষ বিজেপি ঠেকানোর ভূমিকা নেওয়া খুবই স্বাভাবিক। নিজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ রাখতে বিজেপি ঠেকানো ছাড়া তাঁর গতি নেই। ক্ষয়িষ্ণু বামফ্রন্টকে আর প্রতিপক্ষ মনে করার কারণ নেই। তৃণমূলের প্রতিপক্ষ কংগ্রেস কিংবা বামফ্রন্ট নয়, বিজেপি।
আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। জেনারেল জিয়ার সামরিক সরকার সেটা বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। পাশাপাশি শাসনতন্ত্রের চার মূল স্তম্ভের দুই স্তম্ভ সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধান থেকে বিদায় করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় অপর সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ প্রবর্তন করেছিলেন ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’। এরশাদ-পরবর্তী অসামরিক শাসকেরা সেটার পরিবর্তন তো পরের কথা, সাংবিধানিক স্বীকৃতি পর্যন্ত দিয়েছেন। এমনকি সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক ধারা পাল্টে সাম্প্রদায়িক ধারাগুলো সংবিধানভুক্ত পর্যন্ত করেছেন। একাত্তরের ঘাতক দল জামায়াতে ইসলামী এখন চূড়ান্ত পতনের প্রহর গুনছে বটে, তবে হেফাজতিদের প্রবল উত্থান ঘটেছে সরকারি মদদে। হেফাজত গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থায় আস্থা ও বিশ্বাস রাখে না। তলোয়ার হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলই তাদের লক্ষ্য। হেফাজতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করে সাম্প্রদায়িক শিক্ষার নানা উপকরণ যুক্ত করা হয়েছে। হেফাজতিদের যেরূপ আশকারা দেওয়া হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে বর্তমান সরকারের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে হেফাজতে ইসলাম আবির্ভূত হলে নিশ্চয় অবাক হব না। যেহেতু সরকারবিরোধী দল হিসেবে সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে এখন কার্যত কোনো দলের সক্রিয়তা নেই।
বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী রাজনীতি মূলত ক্ষমতারই রাজনীতি। ক্ষমতাই একমাত্র লক্ষ্য। ওই লক্ষ্য পূরণে হেন অপকীর্তি নেই, যেটা করতে তারা পিছপা হয় না। ধর্মকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যবহার করতেও ছাড়ে না। মুখে অসাম্প্রদায়িকতার আওয়াজ তুললেও ক্ষমতার মোহে সবই জায়েজ করে নেয়। ক্ষমতা, একমাত্র ক্ষমতার মোহেই তথাকথিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতি নীতি-আদর্শের ধার ধারে না। কবি নজরুল ‘মানুষ’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘হায়রে ভজনালয় তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গায়ে স্বার্থের জয়’। জাতীয়তাবাদী শাসকদের ক্ষেত্রে অমনটা অনায়াসে বলা যায়।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
২০ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
২০ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
২০ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
২০ ঘণ্টা আগে