সামছুল আলম
ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। বাঙালির অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু এ মাছ যুগ যুগ ধরে দেশের মানুষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নিরাপদ আমিষ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
ইলিশ দেশের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। ইলিশের সহনশীল উৎপাদন বজায় রাখার লক্ষ্যে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মা ইলিশ রক্ষা পেলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর এ লক্ষ্যে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর (১৯ আশ্বিন থেকে ৯ কার্তিক, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ) পর্যন্ত মোট ২২ দিন দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমায় মা ইলিশ ধরা নিষেধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে নিষিদ্ধকালীন এই ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দেশে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বসাধারণ, বিশেষ করে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ইলিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, আড়তদার, বরফকল মালিক, বোট মালিক, দাদনদার এবং ভোক্তাসহ সবাইকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধকরণ করা। একই সঙ্গে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেওয়া। আর এই প্রচারের কাজটি সর্বাধিক করে থাকে মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর। দেশে ইলিশের অভয়াশ্রম রয়েছে (পাঁচটিতে মার্চ-এপ্রিল মাছ ধরা বন্ধ) ছয়টি, যার মোট আয়তন ৪৩২ কিমি। আর ছয়টি অভয়াশ্রম হলো বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর। বাংলাদেশে ইলিশের প্রজননক্ষেত্রের চারটি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে; যা প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকাজুড়ে রয়েছে। চারটি পয়েন্ট হলো মিরসরাই, চট্টগ্রামের মায়ানি, তজুমদ্দিন ও ভোলার পশ্চিমে সৈয়দ আওলিয়া, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজারের উত্তর কুতুবদিয়া এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও লতাচাপালী পয়েন্ট।
এ ছাড়া সব নদ-নদীতে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। ২০২১ সালে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে দেশের ৩৮টি জেলা ও ১৭৪টি উপজেলাকে। নিষেধাজ্ঞা আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। বর্তমানে ইলিশ ধরায় সরাসরি দেশের প্রায় ৬ লাখ জেলে নিয়োজিত। প্রধান প্রজনন মৌসুমে পরিবারপ্রতি ২০ কেজি হারে ভিজিএফ দেওয়া হচ্ছে। ২০২১ সালে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারে ১১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ইলিশ প্রজননের ক্ষেত্রে চন্দ্রনির্ভর আবর্তন অনুসরণ করে। প্রতিবছর আশ্বিন মাসের প্রথম উদিত চাঁদের পূর্ণিমার আগের ৪ দিন, পরের ১৭ দিন এবং পূর্ণিমার দিনসহ মোট ২২ দিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১১ দিন, ২০১৫ সালে ১৫ দিন নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও ২০১৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়। ইলিশ মূলত সারা বছর কমবেশি ডিম ছাড়লেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হচ্ছে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এই সময়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়ে।
মা ইলিশ বলতে প্রজননক্ষম পরিপক্ব স্ত্রী ইলিশ মাছ বোঝায়। ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় শতকরা ৮৬ ভাগ আহরণ করা হয় এ দেশে। ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে
স্বীকৃতি পায়; যা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের বিষয়।
বৈচিত্র্যময় জীবন ইলিশের। ইলিশ প্রধানত সামুদ্রিক মাছ হলেও প্রজননকালীন এ মাছ ডিম ছাড়ার জন্য বেছে নেয় স্বাদু পানির উজানকে। এ সময় ইলিশ দৈনিক প্রায় ৭১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। প্রজননের উদ্দেশ্যে ইলিশ প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার উজানে পাড়ি দিতে সক্ষম। সাগর থেকে ইলিশ যত ভেতরের দিকে আসে, ততই শরীর থেকে লবণ কমে যায়। এতে স্বাদ বাড়ে ইলিশের। বাংলাদেশে প্রতিবছর ৯-১০ শতাংশ হারে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার জাটকা আহরণও নিষিদ্ধ করেছে। এর সময়সীমা ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। মৎস্য সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির ছোট জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকে। জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের ভিজিএফ খাদ্যসহায়তা ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মোট ৪ মাস প্রদান করা হয়। ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে প্রতি অর্থবছরে সরকার বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২ কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার টন, সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে; যা দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ। এর চলতি বাজারমূল্য প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের ২০০২ থেকে ২০১৮ সালে ইলিশের জোগান যেখানে ৫৬ শতাংশ কমেছে, সেখানে বাংলাদেশে ১৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জাটকা আজ মেঘনা থেকে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমায় বিস্তৃতি লাভ করেছে। গত ১০ বছরের ব্যবধানে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৬৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা ফলাফল বলছে, ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১৭৪টি উপজেলার আশপাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীতে এই মাছ পাওয়া যাচ্ছে। পদ্মার শাখা নদী মহানন্দা থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেদির হাওরেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, একটি ইলিশ একসঙ্গে কমপক্ষে ৩ লাখ ও সর্বোচ্চ ২১ লাখ ডিম ছাড়ে। এসব ডিমের ৭০-৮০ শতাংশ ফুটে রেণু ইলিশ হয়। এর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে, যা পরে ইলিশে রূপান্তরিত হয়।
ইলিশ দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি ছাড়াও ইলিশের নুডলস, স্যুপ ও পাউডার তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে ইতিমধ্যে তা বাজারজাতকরণ শুরু হয়েছে। ইলিশ শুধু জাতীয় মাছই নয়, অর্থনীতিতেও রয়েছে এর বিরাট অবদান। পরিসংখ্যান মতে, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১২ শতাংশ (যার আনুমানিক অর্থমূল্য ৮ হাজার ১২৫ কোটি টাকা) আসে ইলিশ থেকে। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান শতকরা ১ ভাগ। পৃথিবীর সব দেশেই এ মাছের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ইলিশ মাছ রপ্তানি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। যদি প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা ও জাটকা নিধন বন্ধ থাকে, তাহলে ২১ থেকে ২৪ হাজার কোটি নতুন পরিপক্ব ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে বছরে সাত হাজার কোটি টাকা মূল্যের ইলিশের বাজার সৃষ্টি সম্ভব হবে বাংলাদেশে। এতে অর্থের প্রবাহ বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান; যা নিঃসন্দেহে দেশের গোটা অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করে তুলবে। পাশাপাশি দেশে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ হবে।
ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। বাঙালির অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু এ মাছ যুগ যুগ ধরে দেশের মানুষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নিরাপদ আমিষ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
ইলিশ দেশের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। ইলিশের সহনশীল উৎপাদন বজায় রাখার লক্ষ্যে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মা ইলিশ রক্ষা পেলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর এ লক্ষ্যে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর (১৯ আশ্বিন থেকে ৯ কার্তিক, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ) পর্যন্ত মোট ২২ দিন দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমায় মা ইলিশ ধরা নিষেধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে নিষিদ্ধকালীন এই ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দেশে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বসাধারণ, বিশেষ করে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ইলিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, আড়তদার, বরফকল মালিক, বোট মালিক, দাদনদার এবং ভোক্তাসহ সবাইকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধকরণ করা। একই সঙ্গে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেওয়া। আর এই প্রচারের কাজটি সর্বাধিক করে থাকে মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর। দেশে ইলিশের অভয়াশ্রম রয়েছে (পাঁচটিতে মার্চ-এপ্রিল মাছ ধরা বন্ধ) ছয়টি, যার মোট আয়তন ৪৩২ কিমি। আর ছয়টি অভয়াশ্রম হলো বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর। বাংলাদেশে ইলিশের প্রজননক্ষেত্রের চারটি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে; যা প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকাজুড়ে রয়েছে। চারটি পয়েন্ট হলো মিরসরাই, চট্টগ্রামের মায়ানি, তজুমদ্দিন ও ভোলার পশ্চিমে সৈয়দ আওলিয়া, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজারের উত্তর কুতুবদিয়া এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও লতাচাপালী পয়েন্ট।
এ ছাড়া সব নদ-নদীতে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। ২০২১ সালে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে দেশের ৩৮টি জেলা ও ১৭৪টি উপজেলাকে। নিষেধাজ্ঞা আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। বর্তমানে ইলিশ ধরায় সরাসরি দেশের প্রায় ৬ লাখ জেলে নিয়োজিত। প্রধান প্রজনন মৌসুমে পরিবারপ্রতি ২০ কেজি হারে ভিজিএফ দেওয়া হচ্ছে। ২০২১ সালে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারে ১১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ইলিশ প্রজননের ক্ষেত্রে চন্দ্রনির্ভর আবর্তন অনুসরণ করে। প্রতিবছর আশ্বিন মাসের প্রথম উদিত চাঁদের পূর্ণিমার আগের ৪ দিন, পরের ১৭ দিন এবং পূর্ণিমার দিনসহ মোট ২২ দিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১১ দিন, ২০১৫ সালে ১৫ দিন নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও ২০১৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়। ইলিশ মূলত সারা বছর কমবেশি ডিম ছাড়লেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হচ্ছে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এই সময়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়ে।
মা ইলিশ বলতে প্রজননক্ষম পরিপক্ব স্ত্রী ইলিশ মাছ বোঝায়। ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় শতকরা ৮৬ ভাগ আহরণ করা হয় এ দেশে। ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে
স্বীকৃতি পায়; যা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের বিষয়।
বৈচিত্র্যময় জীবন ইলিশের। ইলিশ প্রধানত সামুদ্রিক মাছ হলেও প্রজননকালীন এ মাছ ডিম ছাড়ার জন্য বেছে নেয় স্বাদু পানির উজানকে। এ সময় ইলিশ দৈনিক প্রায় ৭১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। প্রজননের উদ্দেশ্যে ইলিশ প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার উজানে পাড়ি দিতে সক্ষম। সাগর থেকে ইলিশ যত ভেতরের দিকে আসে, ততই শরীর থেকে লবণ কমে যায়। এতে স্বাদ বাড়ে ইলিশের। বাংলাদেশে প্রতিবছর ৯-১০ শতাংশ হারে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার জাটকা আহরণও নিষিদ্ধ করেছে। এর সময়সীমা ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। মৎস্য সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির ছোট জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকে। জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের ভিজিএফ খাদ্যসহায়তা ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মোট ৪ মাস প্রদান করা হয়। ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে প্রতি অর্থবছরে সরকার বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২ কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার টন, সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে; যা দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ। এর চলতি বাজারমূল্য প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের ২০০২ থেকে ২০১৮ সালে ইলিশের জোগান যেখানে ৫৬ শতাংশ কমেছে, সেখানে বাংলাদেশে ১৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জাটকা আজ মেঘনা থেকে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমায় বিস্তৃতি লাভ করেছে। গত ১০ বছরের ব্যবধানে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৬৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা ফলাফল বলছে, ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১৭৪টি উপজেলার আশপাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীতে এই মাছ পাওয়া যাচ্ছে। পদ্মার শাখা নদী মহানন্দা থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেদির হাওরেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, একটি ইলিশ একসঙ্গে কমপক্ষে ৩ লাখ ও সর্বোচ্চ ২১ লাখ ডিম ছাড়ে। এসব ডিমের ৭০-৮০ শতাংশ ফুটে রেণু ইলিশ হয়। এর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে, যা পরে ইলিশে রূপান্তরিত হয়।
ইলিশ দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি ছাড়াও ইলিশের নুডলস, স্যুপ ও পাউডার তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে ইতিমধ্যে তা বাজারজাতকরণ শুরু হয়েছে। ইলিশ শুধু জাতীয় মাছই নয়, অর্থনীতিতেও রয়েছে এর বিরাট অবদান। পরিসংখ্যান মতে, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১২ শতাংশ (যার আনুমানিক অর্থমূল্য ৮ হাজার ১২৫ কোটি টাকা) আসে ইলিশ থেকে। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান শতকরা ১ ভাগ। পৃথিবীর সব দেশেই এ মাছের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ইলিশ মাছ রপ্তানি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। যদি প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা ও জাটকা নিধন বন্ধ থাকে, তাহলে ২১ থেকে ২৪ হাজার কোটি নতুন পরিপক্ব ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে বছরে সাত হাজার কোটি টাকা মূল্যের ইলিশের বাজার সৃষ্টি সম্ভব হবে বাংলাদেশে। এতে অর্থের প্রবাহ বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান; যা নিঃসন্দেহে দেশের গোটা অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করে তুলবে। পাশাপাশি দেশে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ হবে।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৮ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৮ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৮ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৮ ঘণ্টা আগে