সৌমিত জয়দ্বীপ
আমরা যারা আশিতে জন্মে নব্বইয়ের দশকে বড় হয়েছি কিংবা নব্বই বা তার পরে জন্মে আজও বড় হচ্ছে যে প্রজন্ম, তাদের শৈশব-কৈশোরের মহামূল্যবান সব স্মৃতি জমা করে রেখেছে একেকটা শুক্রবার। শুক্রবারের বিকল্প কোন বার/দিন/দিবস আমাদের জীবনে আসলে আসেনি।
আমাদের পূর্ব প্রজন্মের নিশ্চয়ই মনে আছে, ব্রিটিশ আমলের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানেও সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল রোববার। ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউল হক শুক্রবারকে পাকিস্তানের সাপ্তাহিক ছুটির দিন বানান। প্রায় ২০ বছর পরে, ১৯৯৬-৯৭ সালে নেওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় গিয়ে শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে, দিনটিকে অর্ধেক কার্যদিবসে রূপান্তর করেন। এখন পাকিস্তানে সাপ্তাহিক ছুটি শনি-রোববার।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে, অনেক বছর রোববারই সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল। কিন্তু জেনারেল এরশাদ পপুলিস্ট পলিটিকসের চাল চাললেন। সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ফলে মসনদ বাঁচাতে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বানানোর পাশাপাশি শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিণত করলেন। এরশাদের মসনদ টেকেনি, কিন্তু এসব উদ্দেশ্যমূলক উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রায় ‘অমরত্ব’ পেয়ে গেছে!
এসব আশির দশকের কথা, আমাদের প্রজন্ম এসব দেখেনি। তবে, ইতিহাস শুনে আমরা বড় হয়েছি। আর এখন দেখছি এসব অসৎ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উদ্যোগের খাণ্ডবদাহন!
এরশাদ-পতনের বেশ কয়েক বছর পরের ঘটনা। খালেদা জিয়াও তাঁর প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ সমাপ্ত করেছেন। সময়টা ১৯৯৬-৯৭ সাল, শেখ হাসিনার প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বের কাল।
বাংলাদেশে তখন গাঁইগুঁই চলছিল আন্তর্জাতিক বাজারের কথা মাথায় রেখে রোববারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন করতে। ব্যবসায়ীদের তুমুল চাপ ছিল তাঁর সরকারের ওপর। রোববারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণার ঝুঁকি তিনি নেননি। তবে, দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণাও তাঁর সরকারের জন্য কোনো মধুর স্মৃতি বয়ে আনেনি। তুমুল বাধার মুখে, বিশেষত প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিবাদে, দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন সরকার।
বিরোধী দল হিসেবে বাধা দিলেও, ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে খালেদা জিয়ার সরকারই তাদের ওই আমলের মেয়াদ শেষের আগে আগে প্রজ্ঞাপন দিয়ে শুক্র-শনি দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করে; যা আজও বলবৎ। তখনো রোববারকে সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণার চাপ ছিল ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে। সরকার স্বভাবতই ঝুঁকি নেয়নি।
২.
এই লেখার উদ্দেশ্য কোন দিন বাংলাদেশের সাপ্তাহিক ছুটি হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে আলোকপাত করা নয়। উদ্দেশ্য নস্টালজিক হওয়া। সঙ্গে ফিরে দেখা, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম!’
আমরা যারা আশিতে জন্মে নব্বইয়ের দশকে বড় হয়েছি কিংবা নব্বই বা তার পরে জন্মে আজও বড় হচ্ছে যে প্রজন্ম, তাদের শৈশব-কৈশোরের মহামূল্যবান সব স্মৃতি জমা করে রেখেছে একেকটা শুক্রবার। শুক্রবারের বিকল্প কোন বার/দিন/দিবস আমাদের জীবনে আসলে আসেনি।
শুক্রবার শুধু জুমার নামাজের দিন ছিল না আমাদের শৈশব-কৈশোরে। আমাদের খেলাধুলা, আড্ডা, পাড়ায়-পাড়ায় ক্রিকেট-ফুটবলের লড়াই, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিটিভির বাংলা ছবি আর বাড়িতে সপরিবারে ভালো কিছু খাওয়ার আয়োজন—সবই তো ছিল শুক্রবারকে কেন্দ্র করে।
ঠিক শুক্রবারকে কেন্দ্র করে না অবশ্য। দুপুরের খাওয়া বাদে, শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছিল বাউণ্ডুলে হওয়ার মেয়াদ। বাড়ির বাইরে যা কিছু করি, সবকিছুই আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ করে বাড়ি ফিরতে হবে। কথা পরিষ্কার। এই যে এত চমৎকার একটা ‘অ্যালার্ম ক্লক’ ঠিক হয়ে গিয়েছিল সাংস্কৃতিকভাবে, তার তো কোনো ধর্মীয় পরিচয় ছিল না।
এমন শুক্রবারের বদলে হুট করে রোববার সাপ্তাহিক ছুটি চলে এলে মানতে কষ্ট হতো। অ্যালার্ম ক্লকটা ভেঙে গেলে মন আহত হতো হয়তো!
অন্য কোনো দিবসে সরকারি ছুটি পড়লে, বাড়িতে ফেরার সময় ঠিক বেলা ১টা, আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। স্কুল-কলেজ খোলা থাকার বাকি দিনগুলোতেও অ্যালার্ম ক্লক হিসেবে কাজ করত মুয়াজ্জিনের আজান। সন্ধ্যা হয়েছে কি হয়নি, সেটা ইস্যু না। ইস্যু হলো আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রণে ভঙ্গ দিয়ে বাড়ি ফিরে পড়তে বসতে হবে। এর সঙ্গে একটা সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ধর্মের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
পরীক্ষার চাপ চলে এলে, ভোরে ঘুম থেকে ওঠা ছিল আবশ্যিক কর্তব্য। আহা, দূর থেকে কী গভীর সুরে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ ভেসে আসত। আজানের সুরে ঘুম ভাঙত, তারপর পড়তে বসতাম। ধর্মের কোনো যোগ এতে ছিল না।
দেশের বাইরে গিয়ে শুক্রবার খুঁজেছি, রোববারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়েছে। আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়েছে। কারণ সাংস্কৃতিক অভ্যাস।
এসব হলো স্মৃতি। নস্টালজিয়া। যে দেশেই থাকি বাকি জীবন, জীবনের অংশ হয়ে যাওয়া এসব স্মৃতিকে নিজের সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই লালন করব। আগেও যেমন করেছি, এখন যেমনটা করছি বলেই, এ লেখা লিখছি।
৩.
এমন এক দেশে কী ভয়ংকর বর্বর উল্লাস ধর্মের উন্মাদনার নামে! ছেচল্লিশ-সাতচল্লিশের বর্বরতা, একাত্তরের বিহ্বলতা আমরা উতরাতে পারিনি। কথা ছিল, বাংলাদেশ সেই রাষ্ট্র হবে যেখানে লঘু-গুরু থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। আর কোনো সাতচল্লিশ বা একাত্তর হবে না। অথচ উপমহাদেশের রাজনীতির ক্লেদজ পথ আমরা উত্তীর্ণ হতে পারলাম না। এত বছর ধরে আজানের সুর ও সময়কে আপন মনে করে জীবনযাপন করল যে ভিনধর্মী পড়শি, বন্ধু, স্বজন...তাদেরই আজ শিকার হতে হচ্ছে সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের!
আশ্চর্যজনকভাবে, দুর্বলের প্রতি সবলের এই আক্রমণকেও বলে দেওয়া হচ্ছে ‘দাঙ্গা’, যেখানে দুর্বলের আক্রান্ত হওয়া ছাড়া মঞ্চে আর কোনো ভূমিকাই নেই! দাঙ্গা হয় দুটি সমান-সমান পক্ষে। এ দেশে ‘দাঙ্গার ইতিহাস’ শেষতক পাড়া বনাম পাড়া, গ্রাম বনাম গ্রামের এলাকাবাসীর মধ্যকার দেশীয় অস্ত্রের মহড়ায় গিয়ে থেমে যাবে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কোথায়!
দাঙ্গা হওয়ার আশঙ্কা নেই এ দেশে, শান্তিতে থাকুন। আর পারলে, সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনুন। আমি ঠিক জানি না, শান্তি ফেরানোর কথা ঠিক কার উদ্দেশ্যে বললাম। নিশ্চয়ই কোনো শক্তিমান এ দেশের নিপীড়িত মানুষদের দিকে করুণাপাত্র হাতে নিয়ে মুখ তুলে তাকাবেন কোনো একদিন! শান্তি ফিরুক বাংলাদেশে। আহা, শান্তি!
৪.
শান্তি নেই বলেই শুক্রবারগুলো এলে এখন এত আতঙ্ক লাগে! এখন সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে একদম নতজানু, পদপিষ্ট আমাদের স্মৃতিবিজড়িত মহানন্দময় শুক্রবারগুলো।
আহা, আমাদের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত শুক্রবার, সন্ধ্যা আর ভোরের আজান! আমাদের সময়ানুবর্তিতা ধরে রাখার সদা তটস্থ সে ঘড়ি শান্তিতে ঘুমাক। মধুর স্মৃতি বলতে আজ
ওইটুকুই সম্বল!
লেখক: সৌমিত জয়দ্বীপ, লেখক ও গবেষক
আমরা যারা আশিতে জন্মে নব্বইয়ের দশকে বড় হয়েছি কিংবা নব্বই বা তার পরে জন্মে আজও বড় হচ্ছে যে প্রজন্ম, তাদের শৈশব-কৈশোরের মহামূল্যবান সব স্মৃতি জমা করে রেখেছে একেকটা শুক্রবার। শুক্রবারের বিকল্প কোন বার/দিন/দিবস আমাদের জীবনে আসলে আসেনি।
আমাদের পূর্ব প্রজন্মের নিশ্চয়ই মনে আছে, ব্রিটিশ আমলের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানেও সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল রোববার। ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউল হক শুক্রবারকে পাকিস্তানের সাপ্তাহিক ছুটির দিন বানান। প্রায় ২০ বছর পরে, ১৯৯৬-৯৭ সালে নেওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় গিয়ে শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে, দিনটিকে অর্ধেক কার্যদিবসে রূপান্তর করেন। এখন পাকিস্তানে সাপ্তাহিক ছুটি শনি-রোববার।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে, অনেক বছর রোববারই সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল। কিন্তু জেনারেল এরশাদ পপুলিস্ট পলিটিকসের চাল চাললেন। সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ফলে মসনদ বাঁচাতে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বানানোর পাশাপাশি শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিণত করলেন। এরশাদের মসনদ টেকেনি, কিন্তু এসব উদ্দেশ্যমূলক উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রায় ‘অমরত্ব’ পেয়ে গেছে!
এসব আশির দশকের কথা, আমাদের প্রজন্ম এসব দেখেনি। তবে, ইতিহাস শুনে আমরা বড় হয়েছি। আর এখন দেখছি এসব অসৎ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উদ্যোগের খাণ্ডবদাহন!
এরশাদ-পতনের বেশ কয়েক বছর পরের ঘটনা। খালেদা জিয়াও তাঁর প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ সমাপ্ত করেছেন। সময়টা ১৯৯৬-৯৭ সাল, শেখ হাসিনার প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বের কাল।
বাংলাদেশে তখন গাঁইগুঁই চলছিল আন্তর্জাতিক বাজারের কথা মাথায় রেখে রোববারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন করতে। ব্যবসায়ীদের তুমুল চাপ ছিল তাঁর সরকারের ওপর। রোববারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণার ঝুঁকি তিনি নেননি। তবে, দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণাও তাঁর সরকারের জন্য কোনো মধুর স্মৃতি বয়ে আনেনি। তুমুল বাধার মুখে, বিশেষত প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিবাদে, দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন সরকার।
বিরোধী দল হিসেবে বাধা দিলেও, ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে খালেদা জিয়ার সরকারই তাদের ওই আমলের মেয়াদ শেষের আগে আগে প্রজ্ঞাপন দিয়ে শুক্র-শনি দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করে; যা আজও বলবৎ। তখনো রোববারকে সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণার চাপ ছিল ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে। সরকার স্বভাবতই ঝুঁকি নেয়নি।
২.
এই লেখার উদ্দেশ্য কোন দিন বাংলাদেশের সাপ্তাহিক ছুটি হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে আলোকপাত করা নয়। উদ্দেশ্য নস্টালজিক হওয়া। সঙ্গে ফিরে দেখা, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম!’
আমরা যারা আশিতে জন্মে নব্বইয়ের দশকে বড় হয়েছি কিংবা নব্বই বা তার পরে জন্মে আজও বড় হচ্ছে যে প্রজন্ম, তাদের শৈশব-কৈশোরের মহামূল্যবান সব স্মৃতি জমা করে রেখেছে একেকটা শুক্রবার। শুক্রবারের বিকল্প কোন বার/দিন/দিবস আমাদের জীবনে আসলে আসেনি।
শুক্রবার শুধু জুমার নামাজের দিন ছিল না আমাদের শৈশব-কৈশোরে। আমাদের খেলাধুলা, আড্ডা, পাড়ায়-পাড়ায় ক্রিকেট-ফুটবলের লড়াই, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিটিভির বাংলা ছবি আর বাড়িতে সপরিবারে ভালো কিছু খাওয়ার আয়োজন—সবই তো ছিল শুক্রবারকে কেন্দ্র করে।
ঠিক শুক্রবারকে কেন্দ্র করে না অবশ্য। দুপুরের খাওয়া বাদে, শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছিল বাউণ্ডুলে হওয়ার মেয়াদ। বাড়ির বাইরে যা কিছু করি, সবকিছুই আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ করে বাড়ি ফিরতে হবে। কথা পরিষ্কার। এই যে এত চমৎকার একটা ‘অ্যালার্ম ক্লক’ ঠিক হয়ে গিয়েছিল সাংস্কৃতিকভাবে, তার তো কোনো ধর্মীয় পরিচয় ছিল না।
এমন শুক্রবারের বদলে হুট করে রোববার সাপ্তাহিক ছুটি চলে এলে মানতে কষ্ট হতো। অ্যালার্ম ক্লকটা ভেঙে গেলে মন আহত হতো হয়তো!
অন্য কোনো দিবসে সরকারি ছুটি পড়লে, বাড়িতে ফেরার সময় ঠিক বেলা ১টা, আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। স্কুল-কলেজ খোলা থাকার বাকি দিনগুলোতেও অ্যালার্ম ক্লক হিসেবে কাজ করত মুয়াজ্জিনের আজান। সন্ধ্যা হয়েছে কি হয়নি, সেটা ইস্যু না। ইস্যু হলো আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রণে ভঙ্গ দিয়ে বাড়ি ফিরে পড়তে বসতে হবে। এর সঙ্গে একটা সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ধর্মের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
পরীক্ষার চাপ চলে এলে, ভোরে ঘুম থেকে ওঠা ছিল আবশ্যিক কর্তব্য। আহা, দূর থেকে কী গভীর সুরে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ ভেসে আসত। আজানের সুরে ঘুম ভাঙত, তারপর পড়তে বসতাম। ধর্মের কোনো যোগ এতে ছিল না।
দেশের বাইরে গিয়ে শুক্রবার খুঁজেছি, রোববারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়েছে। আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়েছে। কারণ সাংস্কৃতিক অভ্যাস।
এসব হলো স্মৃতি। নস্টালজিয়া। যে দেশেই থাকি বাকি জীবন, জীবনের অংশ হয়ে যাওয়া এসব স্মৃতিকে নিজের সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই লালন করব। আগেও যেমন করেছি, এখন যেমনটা করছি বলেই, এ লেখা লিখছি।
৩.
এমন এক দেশে কী ভয়ংকর বর্বর উল্লাস ধর্মের উন্মাদনার নামে! ছেচল্লিশ-সাতচল্লিশের বর্বরতা, একাত্তরের বিহ্বলতা আমরা উতরাতে পারিনি। কথা ছিল, বাংলাদেশ সেই রাষ্ট্র হবে যেখানে লঘু-গুরু থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। আর কোনো সাতচল্লিশ বা একাত্তর হবে না। অথচ উপমহাদেশের রাজনীতির ক্লেদজ পথ আমরা উত্তীর্ণ হতে পারলাম না। এত বছর ধরে আজানের সুর ও সময়কে আপন মনে করে জীবনযাপন করল যে ভিনধর্মী পড়শি, বন্ধু, স্বজন...তাদেরই আজ শিকার হতে হচ্ছে সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের!
আশ্চর্যজনকভাবে, দুর্বলের প্রতি সবলের এই আক্রমণকেও বলে দেওয়া হচ্ছে ‘দাঙ্গা’, যেখানে দুর্বলের আক্রান্ত হওয়া ছাড়া মঞ্চে আর কোনো ভূমিকাই নেই! দাঙ্গা হয় দুটি সমান-সমান পক্ষে। এ দেশে ‘দাঙ্গার ইতিহাস’ শেষতক পাড়া বনাম পাড়া, গ্রাম বনাম গ্রামের এলাকাবাসীর মধ্যকার দেশীয় অস্ত্রের মহড়ায় গিয়ে থেমে যাবে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কোথায়!
দাঙ্গা হওয়ার আশঙ্কা নেই এ দেশে, শান্তিতে থাকুন। আর পারলে, সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনুন। আমি ঠিক জানি না, শান্তি ফেরানোর কথা ঠিক কার উদ্দেশ্যে বললাম। নিশ্চয়ই কোনো শক্তিমান এ দেশের নিপীড়িত মানুষদের দিকে করুণাপাত্র হাতে নিয়ে মুখ তুলে তাকাবেন কোনো একদিন! শান্তি ফিরুক বাংলাদেশে। আহা, শান্তি!
৪.
শান্তি নেই বলেই শুক্রবারগুলো এলে এখন এত আতঙ্ক লাগে! এখন সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে একদম নতজানু, পদপিষ্ট আমাদের স্মৃতিবিজড়িত মহানন্দময় শুক্রবারগুলো।
আহা, আমাদের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত শুক্রবার, সন্ধ্যা আর ভোরের আজান! আমাদের সময়ানুবর্তিতা ধরে রাখার সদা তটস্থ সে ঘড়ি শান্তিতে ঘুমাক। মধুর স্মৃতি বলতে আজ
ওইটুকুই সম্বল!
লেখক: সৌমিত জয়দ্বীপ, লেখক ও গবেষক
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৪ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৪ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৪ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৪ ঘণ্টা আগে