অর্ণব সান্যাল
নারীর অর্জনে এ দেশে অভিনন্দনের বন্যা বয়ে যায়। অন্তত মার্ক জাকারবার্গের তৈরি নীলের দুনিয়ায় তো অবশ্যই। সেখানে রং–বেরঙে কৃত্রিম ফুল সুবাসের দ্যোতনা ছড়ায়। কিন্তু এ দেশে সেই একই দুনিয়ায় একজন নারী যদি তার হেনস্তার খবর প্রকাশ করেন, তখন কী হয়? সেই নারীর পাশে কি দল–মত নির্বিশেষে দাঁড়ানো হয় আদৌ? অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পুরুষালি মন ঠিক ওই সময়টায় তার কুৎসিত চেহারা দেখাতে উৎসুক হয়ে ওঠে। নইলে কি আর এ বঙ্গে দিনের পর দিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বিবমিষা জাগায়!
সদ্যই বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয় পেয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতায় এই মার্চ মাসে আমরা আরও উদ্বেল। ফেসবুকে অভিনন্দনের তোড়ে আলোচনায় বাঘ ও বাঘিনীর তুলনা। কেউ বলছেন, এ এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। কেউ আবার নারীদের অর্জনে নিজেদের গর্বের কথা প্রকাশ করছেন ছবি ও ভিডিও দিয়ে। আর কেউ কেউ বলে যাচ্ছেন টিপ্পনী কেটে, ‘পুরুষেরা ২৩ বছর আগে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল। নারীরা আজ। এ থেকে প্রমাণিত এ দেশের নারীরা ২৩ বছর পিছিয়ে...।’ সেই সঙ্গে আছে অট্টহাসির ইমোজি।
নারীর এমন অর্জনের ঠিক আগের রাতে আরেকটি ফেসবুক পোস্টে চোখ আটকে গেল। তাতে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। তাতে দেখা যায় গণপরিবহনে একজন নারী শারীরিকভাবে আঘাত করছেন একজন পুরুষকে। কারণ হলো, ওই পুরুষ অযাচিতভাবে তাঁকে স্পর্শ করেছেন ভিড়ের সুযোগ নিয়ে। ওই নারীর অভিযোগ, ধরা পড়ার পর এবং এ নিয়ে চিৎকার–চেঁচামেচি করার পরও কোনো পুরুষ সহযাত্রী এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি। প্রতিবাদে সমর্থনও করেননি কেউ খুব একটা। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার নসিহত অনেকেই দিয়েছেন। এবং নিশ্চিতভাবেই ওই ব্যক্তি যখন শশব্যস্ত হয়ে বাস থেকে নেমে গেলেন, কেউ তার পথরোধ করে দাঁড়াননি। এ হেন ঘটনার শিকার নারীর ফেসবুক পোস্টের মন্তব্য, ‘সোসাইটি কখনো কোনো মেয়ের পাশে দাঁড়াবে, সেটা আমি আশাও করি না।’
নিশ্চিতভাবেই ওই নারী আমাদের এই বিদ্যমান অতীব পুরুষতান্ত্রিক সমাজকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, অভিযোগগুলো কি অযৌক্তিক? রাজধানী শহরে গণপরিবহনের হাল বেগতিক দীর্ঘদিন ধরেই। এসব বাসে নিজের মানুষদের উঠতে বাধাই দেওয়া হয় বেশির ভাগ সময়। তার কারণও তিক্ত অভিজ্ঞতা। ভেবে দেখুন একবার, এ সমাজে একজন পুরুষ, আরেক পুরুষের নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় তার প্রিয়জনকে গণপরিবহনে উঠতে দিচ্ছেন না! এবং এ সমাজে এমন শঙ্কার আবহ এতটাই ‘স্বাভাবিক’ বলে ধরে নেওয়া হয় যে, সেটি সবচেয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়। প্রিয় নারীদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলেই তাদের চোখে দেখতে পাওয়া যায় সীমাহীন ঘৃণা। ওই ঘৃণার বস্তু হয়েও দিব্যি আমরা এই শহরে ও কথিত ‘সভ্য’ সমাজে দিনাতিপাত করে যাই অবিরত। তাহলে চামড়া আসলে কার মোটা, গন্ডারের নাকি আমাদের?
আমাদের চামড়া কেন এত দিনেও স্পর্শকাতর হলো না, তার কারণটাও ঘটনার শিকার নারীর কথাতেই পাওয়া যায়। গণপরিবহনের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি পোস্টে লিখেছেন, ‘...কেউ সাপোর্ট তো দূরের কথা, উল্টা বলসে থামতে, বলসে আপা সিন ক্রিয়েট কইরেন না, অনেক হইসে...।’ কেউ কেউ নাকি ওই নারীকে থামানোর জন্য বেশ চেষ্টা করেছিলেন। আর ওইসব পুরুষ সহযাত্রীদের কাছে এর প্রতিকারের নিদান ছিল, ‘মাফ চেয়ে নেমে যাওয়া’। সকল নারী নিপীড়নের ঘটনাতেই এমন উদাহরণ দেখা যায়। নিপীড়কের পক্ষ নিয়ে কোনো না কোনো পুরুষ দোষ লঘু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে তৎপর হয়ে ওঠেন। তখন নারীর প্রতিবাদ হয়ে ওঠে ‘সিন ক্রিয়েট’। তার কিছু সময় পরই হয়তো ভিকটিম ব্লেইমিংও শুরু হয়ে যায়। কারণ প্রচলিত আছে, আক্রমণই সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মরক্ষা। সে কারণে ঘটনার শিকারকে কাঠগড়ায় তুলতে পারলেই লঘু হয়ে পড়ে শিকারির অপরাধ। এভাবেই দিনে দিনে এ সমাজে শুধুই ‘প্রিডেটর’–এর ভাবমূর্তি অর্জন করেছে পুরুষেরা।
এসব থেকে স্পষ্ট যে, পুরুষেরা সব সময়ই এসব নিপীড়ন ধামাচাপা দিতে বেশি আগ্রহী। নিজের কদর্য রূপের মুখোমুখি না হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সেটাই তাদের কাছে জায়েজ বলে মনে হয়। কিন্তু ওই জায়েজ কাজ করতে গিয়ে মনুষ্যত্বের আদালতে যে নাজায়েজ হতে হচ্ছে প্রতিদিন, তা কি খেয়াল থাকে? জবাব হলো, একেবারেই ‘না’। কারণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের আসল রূপ দেখে তা শোধরানোর ইচ্ছা এ সমাজের অনেক পুরুষেরই নেই। কে আর যেচে আয়নায় নিজের সুন্দর মুখশ্রীর বদলে জান্তব মূর্তি দেখতে চায় বলুন!
এমন ঘটনা শুধু গণপরিবহনেই ঘটে না। ঘটে দেশের সর্বত্র। কোথাও বাদ নেই। প্রিয়জনদের এ-সংক্রান্ত কিছু অভিজ্ঞতা শুনেছিলাম। ধরুন, একজন নারী একটি রিকশায় একা যাচ্ছেন। তাঁকে হেনস্তা করার জন্য আছেন ওই রিকশার চালক, বা পাশ দিয়ে যাওয়া অন্য রিকশার চালক, বা অন্য রিকশার পুরুষ যাত্রীরা। তারা এমন সব নোংরা মন্তব্য করে যেতে থাকেন, যা শুনলে যে কারও বিদ্যমান সমাজের একটি অংশের ওপর থেকে শ্রদ্ধা উঠে যেতে বাধ্য। ওই বিবমিষাবোধ জাগানোর দায়িত্বটি পুরোপুরি পুরুষদেরই করায়ত্ত। আবার অনেক সময় যানজটে আটকে থাকা নারীদের শরীরে অযাচিত স্পর্শ আসে রিকশার পেছনে থাকা খোলা অংশ থেকে। অর্থাৎ, স্রেফ রাস্তা পার হওয়ার সময় একজন বিকৃত পুরুষ একজন নারীকে নিপীড়ন করে যান। খুব জানতে ইচ্ছে করে অযাচিত স্পর্শ করা ওই হাত ও নোংরা মন্তব্যের ডালি সাজিয়ে বসা মুখ নিয়ে বিকৃত পুরুষটি নীড়ে ফিরে কী করেন? ওই মুখ দিয়েই কি কন্যাকে ‘মামণি’ বলে ডাকেন, মাকে ‘আম্মু’ বলে সম্বোধন করেন? নিশ্চয়ই করেন কখনো না কখনো। মা-বোনও প্রেয়সী কারও না কারও থাকেই। কী দুর্ভাগ্য, তারা জানতেও পারছেন না একজন নিপীড়ক পুরুষ তাদের আলিঙ্গন বা সম্বোধনের ক্ষেত্রে নিজের বিকৃত অঙ্গকেই ব্যবহার করছেন প্রতিনিয়ত! জানলে হয়তো সেই সব নারীর হৃদয়ে বিবমিষাবোধ সীমা ছাড়াত।
গণপরিবহনে ওই নারী তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া নিপীড়নের প্রতিবাদ জানিয়েছেন কড়াভাবেই। কেউ কেউ হয়তো লেজ দেখিয়ে বলবেন, ‘এভাবে শারীরিকভাবে আঘাত করা উচিত হয়নি।’ তাদের উদ্দেশে বলি, ফেসবুকে অযথা কমেন্ট বা চায়ের আড্ডায় নৈতিকতার চর্চা না করে বরং চারপাশের পুরুষদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে ফেলুন। একটু কঠিন বটে, তবে নিয়ত চেষ্টা করলে আপনাদের প্রিয় নারীরাই এতে উপকৃত হবেন। নিপীড়নের অপমানে গুমরে কেঁদে উঠতে হবে না তাদের। মানসিক ও শারীরিকভাবে চূড়ান্ত অপমানেই তো মানুষের কান্না পায়। আর সেই কান্না প্রায় সময়ই বাইরে থেকে দেখা যায় না, ভেতরেই থাকে।
এই তো কয়েক দিন হলো, আমরা দেশব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করেছি ঘটা করে। কাছের নারীদের হয়তো শুভেচ্ছাও জানিয়েছি অনেকে। এসবের বেশির ভাগটাই যে মেকি নয়, সেটি প্রমাণের দায়িত্ব আসলে পুরুষদেরই। আর তার জন্য নিজের নোংরা নিপীড়ক মানসিকতা বদলের বিকল্প নেই। এর জন্য স্রেফ পুরুষদের মাথা, হাত, চোখ ও মুখকে ‘সভ্য’ রাখতে হবে। তবেই হয়তো সমাজের একটি অংশের প্রতি আরেক অংশের হিমালয়সমান ঘৃণা গলতে শুরু করতে পারে। নইলে নারীদের অর্জনে অভিনন্দন জানানোতে শুধু কিলোবাইটই খরচ হবে, অপমানে নীল ক্রন্দনে পাশে থাকাটা হবে না।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
নারীর অর্জনে এ দেশে অভিনন্দনের বন্যা বয়ে যায়। অন্তত মার্ক জাকারবার্গের তৈরি নীলের দুনিয়ায় তো অবশ্যই। সেখানে রং–বেরঙে কৃত্রিম ফুল সুবাসের দ্যোতনা ছড়ায়। কিন্তু এ দেশে সেই একই দুনিয়ায় একজন নারী যদি তার হেনস্তার খবর প্রকাশ করেন, তখন কী হয়? সেই নারীর পাশে কি দল–মত নির্বিশেষে দাঁড়ানো হয় আদৌ? অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পুরুষালি মন ঠিক ওই সময়টায় তার কুৎসিত চেহারা দেখাতে উৎসুক হয়ে ওঠে। নইলে কি আর এ বঙ্গে দিনের পর দিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বিবমিষা জাগায়!
সদ্যই বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয় পেয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতায় এই মার্চ মাসে আমরা আরও উদ্বেল। ফেসবুকে অভিনন্দনের তোড়ে আলোচনায় বাঘ ও বাঘিনীর তুলনা। কেউ বলছেন, এ এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। কেউ আবার নারীদের অর্জনে নিজেদের গর্বের কথা প্রকাশ করছেন ছবি ও ভিডিও দিয়ে। আর কেউ কেউ বলে যাচ্ছেন টিপ্পনী কেটে, ‘পুরুষেরা ২৩ বছর আগে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল। নারীরা আজ। এ থেকে প্রমাণিত এ দেশের নারীরা ২৩ বছর পিছিয়ে...।’ সেই সঙ্গে আছে অট্টহাসির ইমোজি।
নারীর এমন অর্জনের ঠিক আগের রাতে আরেকটি ফেসবুক পোস্টে চোখ আটকে গেল। তাতে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। তাতে দেখা যায় গণপরিবহনে একজন নারী শারীরিকভাবে আঘাত করছেন একজন পুরুষকে। কারণ হলো, ওই পুরুষ অযাচিতভাবে তাঁকে স্পর্শ করেছেন ভিড়ের সুযোগ নিয়ে। ওই নারীর অভিযোগ, ধরা পড়ার পর এবং এ নিয়ে চিৎকার–চেঁচামেচি করার পরও কোনো পুরুষ সহযাত্রী এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি। প্রতিবাদে সমর্থনও করেননি কেউ খুব একটা। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার নসিহত অনেকেই দিয়েছেন। এবং নিশ্চিতভাবেই ওই ব্যক্তি যখন শশব্যস্ত হয়ে বাস থেকে নেমে গেলেন, কেউ তার পথরোধ করে দাঁড়াননি। এ হেন ঘটনার শিকার নারীর ফেসবুক পোস্টের মন্তব্য, ‘সোসাইটি কখনো কোনো মেয়ের পাশে দাঁড়াবে, সেটা আমি আশাও করি না।’
নিশ্চিতভাবেই ওই নারী আমাদের এই বিদ্যমান অতীব পুরুষতান্ত্রিক সমাজকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, অভিযোগগুলো কি অযৌক্তিক? রাজধানী শহরে গণপরিবহনের হাল বেগতিক দীর্ঘদিন ধরেই। এসব বাসে নিজের মানুষদের উঠতে বাধাই দেওয়া হয় বেশির ভাগ সময়। তার কারণও তিক্ত অভিজ্ঞতা। ভেবে দেখুন একবার, এ সমাজে একজন পুরুষ, আরেক পুরুষের নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় তার প্রিয়জনকে গণপরিবহনে উঠতে দিচ্ছেন না! এবং এ সমাজে এমন শঙ্কার আবহ এতটাই ‘স্বাভাবিক’ বলে ধরে নেওয়া হয় যে, সেটি সবচেয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়। প্রিয় নারীদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলেই তাদের চোখে দেখতে পাওয়া যায় সীমাহীন ঘৃণা। ওই ঘৃণার বস্তু হয়েও দিব্যি আমরা এই শহরে ও কথিত ‘সভ্য’ সমাজে দিনাতিপাত করে যাই অবিরত। তাহলে চামড়া আসলে কার মোটা, গন্ডারের নাকি আমাদের?
আমাদের চামড়া কেন এত দিনেও স্পর্শকাতর হলো না, তার কারণটাও ঘটনার শিকার নারীর কথাতেই পাওয়া যায়। গণপরিবহনের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি পোস্টে লিখেছেন, ‘...কেউ সাপোর্ট তো দূরের কথা, উল্টা বলসে থামতে, বলসে আপা সিন ক্রিয়েট কইরেন না, অনেক হইসে...।’ কেউ কেউ নাকি ওই নারীকে থামানোর জন্য বেশ চেষ্টা করেছিলেন। আর ওইসব পুরুষ সহযাত্রীদের কাছে এর প্রতিকারের নিদান ছিল, ‘মাফ চেয়ে নেমে যাওয়া’। সকল নারী নিপীড়নের ঘটনাতেই এমন উদাহরণ দেখা যায়। নিপীড়কের পক্ষ নিয়ে কোনো না কোনো পুরুষ দোষ লঘু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে তৎপর হয়ে ওঠেন। তখন নারীর প্রতিবাদ হয়ে ওঠে ‘সিন ক্রিয়েট’। তার কিছু সময় পরই হয়তো ভিকটিম ব্লেইমিংও শুরু হয়ে যায়। কারণ প্রচলিত আছে, আক্রমণই সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মরক্ষা। সে কারণে ঘটনার শিকারকে কাঠগড়ায় তুলতে পারলেই লঘু হয়ে পড়ে শিকারির অপরাধ। এভাবেই দিনে দিনে এ সমাজে শুধুই ‘প্রিডেটর’–এর ভাবমূর্তি অর্জন করেছে পুরুষেরা।
এসব থেকে স্পষ্ট যে, পুরুষেরা সব সময়ই এসব নিপীড়ন ধামাচাপা দিতে বেশি আগ্রহী। নিজের কদর্য রূপের মুখোমুখি না হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সেটাই তাদের কাছে জায়েজ বলে মনে হয়। কিন্তু ওই জায়েজ কাজ করতে গিয়ে মনুষ্যত্বের আদালতে যে নাজায়েজ হতে হচ্ছে প্রতিদিন, তা কি খেয়াল থাকে? জবাব হলো, একেবারেই ‘না’। কারণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের আসল রূপ দেখে তা শোধরানোর ইচ্ছা এ সমাজের অনেক পুরুষেরই নেই। কে আর যেচে আয়নায় নিজের সুন্দর মুখশ্রীর বদলে জান্তব মূর্তি দেখতে চায় বলুন!
এমন ঘটনা শুধু গণপরিবহনেই ঘটে না। ঘটে দেশের সর্বত্র। কোথাও বাদ নেই। প্রিয়জনদের এ-সংক্রান্ত কিছু অভিজ্ঞতা শুনেছিলাম। ধরুন, একজন নারী একটি রিকশায় একা যাচ্ছেন। তাঁকে হেনস্তা করার জন্য আছেন ওই রিকশার চালক, বা পাশ দিয়ে যাওয়া অন্য রিকশার চালক, বা অন্য রিকশার পুরুষ যাত্রীরা। তারা এমন সব নোংরা মন্তব্য করে যেতে থাকেন, যা শুনলে যে কারও বিদ্যমান সমাজের একটি অংশের ওপর থেকে শ্রদ্ধা উঠে যেতে বাধ্য। ওই বিবমিষাবোধ জাগানোর দায়িত্বটি পুরোপুরি পুরুষদেরই করায়ত্ত। আবার অনেক সময় যানজটে আটকে থাকা নারীদের শরীরে অযাচিত স্পর্শ আসে রিকশার পেছনে থাকা খোলা অংশ থেকে। অর্থাৎ, স্রেফ রাস্তা পার হওয়ার সময় একজন বিকৃত পুরুষ একজন নারীকে নিপীড়ন করে যান। খুব জানতে ইচ্ছে করে অযাচিত স্পর্শ করা ওই হাত ও নোংরা মন্তব্যের ডালি সাজিয়ে বসা মুখ নিয়ে বিকৃত পুরুষটি নীড়ে ফিরে কী করেন? ওই মুখ দিয়েই কি কন্যাকে ‘মামণি’ বলে ডাকেন, মাকে ‘আম্মু’ বলে সম্বোধন করেন? নিশ্চয়ই করেন কখনো না কখনো। মা-বোনও প্রেয়সী কারও না কারও থাকেই। কী দুর্ভাগ্য, তারা জানতেও পারছেন না একজন নিপীড়ক পুরুষ তাদের আলিঙ্গন বা সম্বোধনের ক্ষেত্রে নিজের বিকৃত অঙ্গকেই ব্যবহার করছেন প্রতিনিয়ত! জানলে হয়তো সেই সব নারীর হৃদয়ে বিবমিষাবোধ সীমা ছাড়াত।
গণপরিবহনে ওই নারী তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া নিপীড়নের প্রতিবাদ জানিয়েছেন কড়াভাবেই। কেউ কেউ হয়তো লেজ দেখিয়ে বলবেন, ‘এভাবে শারীরিকভাবে আঘাত করা উচিত হয়নি।’ তাদের উদ্দেশে বলি, ফেসবুকে অযথা কমেন্ট বা চায়ের আড্ডায় নৈতিকতার চর্চা না করে বরং চারপাশের পুরুষদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে ফেলুন। একটু কঠিন বটে, তবে নিয়ত চেষ্টা করলে আপনাদের প্রিয় নারীরাই এতে উপকৃত হবেন। নিপীড়নের অপমানে গুমরে কেঁদে উঠতে হবে না তাদের। মানসিক ও শারীরিকভাবে চূড়ান্ত অপমানেই তো মানুষের কান্না পায়। আর সেই কান্না প্রায় সময়ই বাইরে থেকে দেখা যায় না, ভেতরেই থাকে।
এই তো কয়েক দিন হলো, আমরা দেশব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করেছি ঘটা করে। কাছের নারীদের হয়তো শুভেচ্ছাও জানিয়েছি অনেকে। এসবের বেশির ভাগটাই যে মেকি নয়, সেটি প্রমাণের দায়িত্ব আসলে পুরুষদেরই। আর তার জন্য নিজের নোংরা নিপীড়ক মানসিকতা বদলের বিকল্প নেই। এর জন্য স্রেফ পুরুষদের মাথা, হাত, চোখ ও মুখকে ‘সভ্য’ রাখতে হবে। তবেই হয়তো সমাজের একটি অংশের প্রতি আরেক অংশের হিমালয়সমান ঘৃণা গলতে শুরু করতে পারে। নইলে নারীদের অর্জনে অভিনন্দন জানানোতে শুধু কিলোবাইটই খরচ হবে, অপমানে নীল ক্রন্দনে পাশে থাকাটা হবে না।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৫ মিনিট আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৩ মিনিট আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৩১ মিনিট আগেশেখ হাসিনার পতিত স্বৈরাচারী সরকার সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি প্রশংসনীয় গতিতে বাড়ার গল্প সাজিয়ে শাসন করেছে। মাথাপিছু জিডিপি প্রকৃতপক্ষে একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট। এটার সবচেয়ে মারাত্মক সীমাবদ্ধতা হলো, এটা একটা গড়, যেটা স্বল্পসংখ্যক ধনী এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন-মধ্যবিত্ত
১ দিন আগে