মোস্তফা তানিম
আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং অন্যান্য মানুষের মধ্যে কূটনামি দেখানোটা, আর তার মাধ্যমে হাস্যরস তৈরি করাই শামসের ক্ষেত্রে প্রধান। বিষয়গুলো চারদিকে দেখাই যায়, কিন্তু এর ভেতরে যে হাস্যরস তিনি দিতে পারেন, সেটা অনবদ্য।
আমি ফেসবুকে কয়েকজনের ভিডিও দেখি। কেউ দেখতে বলেনি। ফেসবুক একের পর এক সাজেশন হিসেবে দেখাতে থাকে। সহজে আমি এসবে আটকে যাই না। কিন্তু কিছু কিছু বেশ উপভোগ্য। বলা যায়, নতুন ধারার বিনোদন। সেটা তাদের অভিনয় বা মেকিং ইত্যাদির জন্য শুধু নয়; বরং বিষয়বস্তু ও ভাষার জন্য। সেই অর্থে এ-ও এক সাহিত্য। অর্থাৎ, কাউকে এটা লিখতে হয়েছে। সেই থিমের মধ্যে, ডায়ালগের মধ্যে মুনশিয়ানা আছে, হাস্যরস আছে এবং এ ক্ষেত্রে যিনি অভিনয় করছেন, তিনিই কথাগুলো লিখছেন। গানের ক্ষেত্রে আমি সব সময় কথার গুরুত্ব দিই। বাণীই সুরকে সাথি করে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তো, গানের সেই গীতিকার তো একজন সাহিত্যিকই। সেই সাহিত্য যত উৎকৃষ্ট, আমার কাছে গানও তত উৎকৃষ্ট।
খেয়াল করে দেখবেন, যত বড় অভিনয়শিল্পীই হোক না কেন, সংলাপ জোরালো না হলে কিছুতেই জমে না। আমরা প্রায়ই নাটক-সিনেমার সংলাপের জন্য অভিনয়শিল্পীদের কৃতিত্ব দিয়ে থাকি, তাঁরা যে নাটকটি লেখেননি, সেটা জানার পরেও। এমনও মনে হয়, ওই মানুষটি এ ধরনের সংলাপ নিজেও দিতে পারতেন। অবশ্য একই সঙ্গে নাট্যকার এবং অভিনয়শিল্পীও তো হয়। সেখানেই মণিকাঞ্চন যোগ।
তাদের কী নামে ডাকা যায়, জানি না। ‘ভাইরাল ভিডিও’ নিশ্চয়ই ক্যাটাগরি হতে পারে না। এই ভিডিওগুলোর ক্ষেত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তিনিই সেটা লিখেছেন। আইডিয়াটা তাঁদের নিজস্ব। তাঁদের বিষয়টা এ জন্যই ভিন্ন, এখানে নাট্যকার আর নাট্যাভিনেতা এক মানুষ। তারপর কারও কারও ক্ষেত্রে সবকিছুই এককভাবে করা হয়, ডিরেকশন দেওয়া থেকে কস্টিউম এবং বিভিন্ন চরিত্র থাকলে সবগুলোয় একজনই অভিনয় করছেন।
প্রথমে আসি ‘ভাইসাব’ বলে একজনের কথায়। তিনি সেভাবে অভিনয় করেন না, সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে গল্প বানিয়ে বলেন, অথবা সত্যটাই নিজের ভাষায় বলেন। পরীমণির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর একটি ভিডিও ছিল চমৎকার। পরীমণির অভিযোগ, তাঁকে আটক করতে আসা মানুষগুলোর একেক জনের একেক চেহারা। সেই বিষয়ে ভাইসাব বলছেন, কিন্তু সবার যদি এক রকম চেহারা হতো তাহলে পরীমণি জিন-ভূত মনে করে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যেতেন।
এভাবে বলতে পারাটাই ক্যারিশমা। সেই ভিডিওটি হাস্যরসে ভরপুর ছিল, সেগুলোর মধ্যে বুদ্ধির ছাপও মেলে। তিনি আঞ্চলিক ভাষায় এবং গ্রামের প্রেক্ষাপটে ভিডিওগুলো করেন। সবগুলো যে খুব উপভোগ্য হয় তা নয়, তবে অনেকগুলোই আমি উপভোগ করেছি।
তারপর আসি ‘রাবা’র প্রসঙ্গে। খুব ভালো অভিনয় এবং কণ্ঠস্বরের দারুণ ওঠানামা, যাকে বলে ডেলিভারি। কথাবার্তাগুলো খুব মজার। তাঁর কথাগুলো টুকরো টুকরো, একেক লাইনেই একেকটা থিম। যেমন ডিপ্রেসড কারও উদ্দেশে টেনে টেনে বলছেন, ‘আ... বার...’, অথবা খুব সিরিয়াসলি তাকে বলছেন, ‘আচ্ছা, তুমি এসব নিজে নিজে বানাও—না?’ এ রকম বিভিন্ন সংলাপ। যেটা শুনলেই বিপদে অন্য মানুষের উপদেশ এবং রিঅ্যাকশনগুলোর কথা আপনার মনে পড়ে যাবে। তার আরেকটায় আছে, বিয়ের পরদিনের একক অভিনয়, এক-দুই লাইনের সব কথা। যেমন ‘আমার ননদ আমাকে সকাল ৯টায় ঘুম থেকে উঠায় দিছে।...ন...য়...টায়!!!! আমি বারোটার আগে কোনো দিন ঘুম থেকে উঠছি?’
প্রতিটি সংলাপের সঙ্গে মিলিয়ে অভিব্যক্তি। মনে হবে বিষয়গুলো সত্যিই ঘটেছে এবং এগুলো তার মনের কথা।
অবশ্য তিনি এগুলো নিজেই লিখেছেন কি না, তা ভিডিওতে বলা থাকে না।
তারপর শামসের ভিডিওগুলো, যেগুলো ‘থটস অব শামস’ নামে প্রচারিত। এই ভিডিওগুলোই আমার সবচেয়ে প্রিয়। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং অন্যান্য মানুষের মধ্যে কূটনামি দেখানোটা, আর তার মাধ্যমে হাস্যরস তৈরি করাই তাঁর ক্ষেত্রে প্রধান। বিষয়গুলো চারদিকে দেখাই যায়, কিন্তু এর ভেতরে যে হাস্যরস তিনি দিতে পারেন, সেটা অনবদ্য। বলব, এর মধ্যে বেশ গভীরতাও আছে। তিনি বিভিন্ন চরিত্রে একাই অভিনয় করেন এবং প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে বিশেষত্ব রাখেন। মনে হবে না যে একজন মানুষই সব করছেন। পুরুষ চরিত্র, শিশু চরিত্র, প্রায় কিছুই বাদ নেই। এ ক্ষেত্রে তিনি শুধু পোশাকে নয়, গলার স্বর এবং সংলাপের ধরন বা চরিত্রটির মুদ্রাদোষের মধ্যেও বিশেষত্ব আনছেন। যেমন প্রতিবেশী নারীর মুদ্রাদোষ ‘ও বাবাগো’ বলা। তাঁর সবচেয়ে ভালো করা চরিত্রটি হচ্ছে মায়ের চরিত্র। সেখানে মা-মেয়ের কথোপকথনের সময় তাঁকে সম্পূর্ণই দুটো আলাদা মানুষ মনে হয়। মায়ের চরিত্রে হালকা কূটনামিটা চোখের চাউনি, হাসিতে এবং ডেলিভারিতে চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে।
এই ভিডিওগুলোর একটি পর্ব কোভিড লকডাউনের সময় ভাইরাল হয়। সেটা ছিল রসুন নিয়ে। কথাগুলো এমন ছিল, তবে কুমিল্লার আঞ্চলিক ভাষায়।
আমার মেয়ে বলে বেড়ায় আমরা নাকি অতিসাধারণ বংশ। দেখাচ্ছি, আমরা সাধারণ বংশ! তারপর তিনি একটা স্টিলের আলমারি খোলেন, সেখানে গয়নার বাক্স বের করে তার ভেতরে রসুনের তৈরি মালা দেখান। বলেন, আমরা সাধারণ বংশ? সাধারণ বংশে এইগুলা থাকে? আমরা যে কী বংশ, তা মানুষের কাছে বলে বেড়াই না। বললে মানুষ ভাববে ছোটলোক।
তখন রসুনের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কাজেই সেটাকে সম্পদ বিবেচনায় তিনি বিষয়টি সাজিয়েছেন। সংলাপ, অভিনয়, ডেলিভারি—সব মিলিয়ে খুবই উপভোগ্য ছিল। সেই থেকে সামনে পেলে তার পর্বগুলো দেখেছি। দুয়েকটা যে ঝুলে যায় না, তা নয়; তবে বেশির ভাগই প্রভূত আনন্দ দেয়। যেমন মায়ের কাছে ছোটবেলার গল্প শোনার যে ঝক্কি। সে কীভাবে বাসের মধ্যে বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছিল, প্রথম দিকে আনন্দদায়ক মনে হলেও বিষয়টা শেষে মেয়ের জন্য ডিসগাস্টিং হয়ে যাচ্ছে, এসব নিয়েই দুই পর্ব তিনি করেছেন সম্প্রতি। দুটোই চমৎকার। একটি বিষয়, মা-ও যে মেয়েকে হিংসা করতে পারেন, প্যারা দিতে পারেন, সেটা বেশ সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। আর এসব যে হয় না, তা তো নয়। ক্লাস সিক্সের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে যাওয়ার দুঃস্বপ্নটা দশে দশ।
সবশেষে বলি ‘অমিস মিউজিক্যালি’র কথা। সেটা কনটেন্ট নয়, শুধুই অভিনয়। তবে অদ্ভুত ধরনের অভিনয়। অন্য কোনো ভাইরাল হওয়া বাস্তব ভিডিও, সাক্ষাৎকার, এগুলোর সঙ্গে সঙ্গে সে অভিনয় করে। সেই ভিডিওর শুধু শব্দটা থাকে, দেখা যায় তাকে। যেন সে-ই বলছে। যেমন দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর কয়েকটি সাক্ষাৎকারে সে ঠোঁট মিলিয়ে অভিনয় করেছে। গানের সঙ্গেও করেছে। এটাকে ‘মকারি’ বলব না। সে বক্তব্যটির এক্সপ্রেশনটা যেভাবে দেয়, সেটা মারাত্মক। তবে তার মাত্রাতিরিক্ত ব্যাপারস্যাপার আছে, পাগলামির ভাবও আছে, যা সবার কাছে ভালো না-ও লাগতে পারে। প্রথম শর্ত হচ্ছে, মূল ভিডিওটা দেখা থাকতে হবে।
ওপরের বর্ণনাগুলো, বিশেষত ডায়ালগগুলো আমি স্মৃতি থেকে লিখেছি। কাজেই সামান্য এদিক-ওদিক হতেই পারে।
এই কয়েকজনের বিষয়ে লিখব বলে আগেই ভেবে রেখেছিলাম। দেখলাম শামস তাঁর কনটেন্টের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁকে অভিনন্দন। বাকি সবাইকে অভিনন্দন তাঁদের বুদ্ধিদীপ্ত এবং মজার মজার ভিডিও উপহার দেওয়ার জন্য। আর অন্য যাঁরা এমন বুদ্ধিদীপ্ত ভিডিও বানাচ্ছেন কিন্তু আমার দেখার সুযোগ হয়নি, তাঁদেরও অভিনন্দন।
মোস্তফা তানিম, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ
আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং অন্যান্য মানুষের মধ্যে কূটনামি দেখানোটা, আর তার মাধ্যমে হাস্যরস তৈরি করাই শামসের ক্ষেত্রে প্রধান। বিষয়গুলো চারদিকে দেখাই যায়, কিন্তু এর ভেতরে যে হাস্যরস তিনি দিতে পারেন, সেটা অনবদ্য।
আমি ফেসবুকে কয়েকজনের ভিডিও দেখি। কেউ দেখতে বলেনি। ফেসবুক একের পর এক সাজেশন হিসেবে দেখাতে থাকে। সহজে আমি এসবে আটকে যাই না। কিন্তু কিছু কিছু বেশ উপভোগ্য। বলা যায়, নতুন ধারার বিনোদন। সেটা তাদের অভিনয় বা মেকিং ইত্যাদির জন্য শুধু নয়; বরং বিষয়বস্তু ও ভাষার জন্য। সেই অর্থে এ-ও এক সাহিত্য। অর্থাৎ, কাউকে এটা লিখতে হয়েছে। সেই থিমের মধ্যে, ডায়ালগের মধ্যে মুনশিয়ানা আছে, হাস্যরস আছে এবং এ ক্ষেত্রে যিনি অভিনয় করছেন, তিনিই কথাগুলো লিখছেন। গানের ক্ষেত্রে আমি সব সময় কথার গুরুত্ব দিই। বাণীই সুরকে সাথি করে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তো, গানের সেই গীতিকার তো একজন সাহিত্যিকই। সেই সাহিত্য যত উৎকৃষ্ট, আমার কাছে গানও তত উৎকৃষ্ট।
খেয়াল করে দেখবেন, যত বড় অভিনয়শিল্পীই হোক না কেন, সংলাপ জোরালো না হলে কিছুতেই জমে না। আমরা প্রায়ই নাটক-সিনেমার সংলাপের জন্য অভিনয়শিল্পীদের কৃতিত্ব দিয়ে থাকি, তাঁরা যে নাটকটি লেখেননি, সেটা জানার পরেও। এমনও মনে হয়, ওই মানুষটি এ ধরনের সংলাপ নিজেও দিতে পারতেন। অবশ্য একই সঙ্গে নাট্যকার এবং অভিনয়শিল্পীও তো হয়। সেখানেই মণিকাঞ্চন যোগ।
তাদের কী নামে ডাকা যায়, জানি না। ‘ভাইরাল ভিডিও’ নিশ্চয়ই ক্যাটাগরি হতে পারে না। এই ভিডিওগুলোর ক্ষেত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তিনিই সেটা লিখেছেন। আইডিয়াটা তাঁদের নিজস্ব। তাঁদের বিষয়টা এ জন্যই ভিন্ন, এখানে নাট্যকার আর নাট্যাভিনেতা এক মানুষ। তারপর কারও কারও ক্ষেত্রে সবকিছুই এককভাবে করা হয়, ডিরেকশন দেওয়া থেকে কস্টিউম এবং বিভিন্ন চরিত্র থাকলে সবগুলোয় একজনই অভিনয় করছেন।
প্রথমে আসি ‘ভাইসাব’ বলে একজনের কথায়। তিনি সেভাবে অভিনয় করেন না, সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে গল্প বানিয়ে বলেন, অথবা সত্যটাই নিজের ভাষায় বলেন। পরীমণির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর একটি ভিডিও ছিল চমৎকার। পরীমণির অভিযোগ, তাঁকে আটক করতে আসা মানুষগুলোর একেক জনের একেক চেহারা। সেই বিষয়ে ভাইসাব বলছেন, কিন্তু সবার যদি এক রকম চেহারা হতো তাহলে পরীমণি জিন-ভূত মনে করে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যেতেন।
এভাবে বলতে পারাটাই ক্যারিশমা। সেই ভিডিওটি হাস্যরসে ভরপুর ছিল, সেগুলোর মধ্যে বুদ্ধির ছাপও মেলে। তিনি আঞ্চলিক ভাষায় এবং গ্রামের প্রেক্ষাপটে ভিডিওগুলো করেন। সবগুলো যে খুব উপভোগ্য হয় তা নয়, তবে অনেকগুলোই আমি উপভোগ করেছি।
তারপর আসি ‘রাবা’র প্রসঙ্গে। খুব ভালো অভিনয় এবং কণ্ঠস্বরের দারুণ ওঠানামা, যাকে বলে ডেলিভারি। কথাবার্তাগুলো খুব মজার। তাঁর কথাগুলো টুকরো টুকরো, একেক লাইনেই একেকটা থিম। যেমন ডিপ্রেসড কারও উদ্দেশে টেনে টেনে বলছেন, ‘আ... বার...’, অথবা খুব সিরিয়াসলি তাকে বলছেন, ‘আচ্ছা, তুমি এসব নিজে নিজে বানাও—না?’ এ রকম বিভিন্ন সংলাপ। যেটা শুনলেই বিপদে অন্য মানুষের উপদেশ এবং রিঅ্যাকশনগুলোর কথা আপনার মনে পড়ে যাবে। তার আরেকটায় আছে, বিয়ের পরদিনের একক অভিনয়, এক-দুই লাইনের সব কথা। যেমন ‘আমার ননদ আমাকে সকাল ৯টায় ঘুম থেকে উঠায় দিছে।...ন...য়...টায়!!!! আমি বারোটার আগে কোনো দিন ঘুম থেকে উঠছি?’
প্রতিটি সংলাপের সঙ্গে মিলিয়ে অভিব্যক্তি। মনে হবে বিষয়গুলো সত্যিই ঘটেছে এবং এগুলো তার মনের কথা।
অবশ্য তিনি এগুলো নিজেই লিখেছেন কি না, তা ভিডিওতে বলা থাকে না।
তারপর শামসের ভিডিওগুলো, যেগুলো ‘থটস অব শামস’ নামে প্রচারিত। এই ভিডিওগুলোই আমার সবচেয়ে প্রিয়। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং অন্যান্য মানুষের মধ্যে কূটনামি দেখানোটা, আর তার মাধ্যমে হাস্যরস তৈরি করাই তাঁর ক্ষেত্রে প্রধান। বিষয়গুলো চারদিকে দেখাই যায়, কিন্তু এর ভেতরে যে হাস্যরস তিনি দিতে পারেন, সেটা অনবদ্য। বলব, এর মধ্যে বেশ গভীরতাও আছে। তিনি বিভিন্ন চরিত্রে একাই অভিনয় করেন এবং প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে বিশেষত্ব রাখেন। মনে হবে না যে একজন মানুষই সব করছেন। পুরুষ চরিত্র, শিশু চরিত্র, প্রায় কিছুই বাদ নেই। এ ক্ষেত্রে তিনি শুধু পোশাকে নয়, গলার স্বর এবং সংলাপের ধরন বা চরিত্রটির মুদ্রাদোষের মধ্যেও বিশেষত্ব আনছেন। যেমন প্রতিবেশী নারীর মুদ্রাদোষ ‘ও বাবাগো’ বলা। তাঁর সবচেয়ে ভালো করা চরিত্রটি হচ্ছে মায়ের চরিত্র। সেখানে মা-মেয়ের কথোপকথনের সময় তাঁকে সম্পূর্ণই দুটো আলাদা মানুষ মনে হয়। মায়ের চরিত্রে হালকা কূটনামিটা চোখের চাউনি, হাসিতে এবং ডেলিভারিতে চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে।
এই ভিডিওগুলোর একটি পর্ব কোভিড লকডাউনের সময় ভাইরাল হয়। সেটা ছিল রসুন নিয়ে। কথাগুলো এমন ছিল, তবে কুমিল্লার আঞ্চলিক ভাষায়।
আমার মেয়ে বলে বেড়ায় আমরা নাকি অতিসাধারণ বংশ। দেখাচ্ছি, আমরা সাধারণ বংশ! তারপর তিনি একটা স্টিলের আলমারি খোলেন, সেখানে গয়নার বাক্স বের করে তার ভেতরে রসুনের তৈরি মালা দেখান। বলেন, আমরা সাধারণ বংশ? সাধারণ বংশে এইগুলা থাকে? আমরা যে কী বংশ, তা মানুষের কাছে বলে বেড়াই না। বললে মানুষ ভাববে ছোটলোক।
তখন রসুনের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কাজেই সেটাকে সম্পদ বিবেচনায় তিনি বিষয়টি সাজিয়েছেন। সংলাপ, অভিনয়, ডেলিভারি—সব মিলিয়ে খুবই উপভোগ্য ছিল। সেই থেকে সামনে পেলে তার পর্বগুলো দেখেছি। দুয়েকটা যে ঝুলে যায় না, তা নয়; তবে বেশির ভাগই প্রভূত আনন্দ দেয়। যেমন মায়ের কাছে ছোটবেলার গল্প শোনার যে ঝক্কি। সে কীভাবে বাসের মধ্যে বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছিল, প্রথম দিকে আনন্দদায়ক মনে হলেও বিষয়টা শেষে মেয়ের জন্য ডিসগাস্টিং হয়ে যাচ্ছে, এসব নিয়েই দুই পর্ব তিনি করেছেন সম্প্রতি। দুটোই চমৎকার। একটি বিষয়, মা-ও যে মেয়েকে হিংসা করতে পারেন, প্যারা দিতে পারেন, সেটা বেশ সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। আর এসব যে হয় না, তা তো নয়। ক্লাস সিক্সের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে যাওয়ার দুঃস্বপ্নটা দশে দশ।
সবশেষে বলি ‘অমিস মিউজিক্যালি’র কথা। সেটা কনটেন্ট নয়, শুধুই অভিনয়। তবে অদ্ভুত ধরনের অভিনয়। অন্য কোনো ভাইরাল হওয়া বাস্তব ভিডিও, সাক্ষাৎকার, এগুলোর সঙ্গে সঙ্গে সে অভিনয় করে। সেই ভিডিওর শুধু শব্দটা থাকে, দেখা যায় তাকে। যেন সে-ই বলছে। যেমন দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর কয়েকটি সাক্ষাৎকারে সে ঠোঁট মিলিয়ে অভিনয় করেছে। গানের সঙ্গেও করেছে। এটাকে ‘মকারি’ বলব না। সে বক্তব্যটির এক্সপ্রেশনটা যেভাবে দেয়, সেটা মারাত্মক। তবে তার মাত্রাতিরিক্ত ব্যাপারস্যাপার আছে, পাগলামির ভাবও আছে, যা সবার কাছে ভালো না-ও লাগতে পারে। প্রথম শর্ত হচ্ছে, মূল ভিডিওটা দেখা থাকতে হবে।
ওপরের বর্ণনাগুলো, বিশেষত ডায়ালগগুলো আমি স্মৃতি থেকে লিখেছি। কাজেই সামান্য এদিক-ওদিক হতেই পারে।
এই কয়েকজনের বিষয়ে লিখব বলে আগেই ভেবে রেখেছিলাম। দেখলাম শামস তাঁর কনটেন্টের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁকে অভিনন্দন। বাকি সবাইকে অভিনন্দন তাঁদের বুদ্ধিদীপ্ত এবং মজার মজার ভিডিও উপহার দেওয়ার জন্য। আর অন্য যাঁরা এমন বুদ্ধিদীপ্ত ভিডিও বানাচ্ছেন কিন্তু আমার দেখার সুযোগ হয়নি, তাঁদেরও অভিনন্দন।
মোস্তফা তানিম, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
৪ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৫ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
৫ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৫ ঘণ্টা আগে