বিজন সাহা
প্রায় তিন সপ্তাহ ভোলগা তীরের বিভিন্ন শহর ঘুরে দুবনা ফিরলাম। এর মধ্যে বলতে গেলে টিভি দেখা বা খবর শোনা হয়নি। যদিও আমি বিভিন্ন দেশের খবর নিই ইন্টারনেট থেকে, এ দেশের খবর একই সঙ্গে টিভি থেকেও জানার চেষ্টা করি। ১৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার পার্লামেন্ট ইলেকশন। এ দেশের অর্ধেকের বেশি বড় বড় শহর ঘুরেও মাঝেমধ্যে দু-একটা পোস্টার বাদে আর কিছুই চোখে পড়ল না, যা কিনা আসন্ন নির্বাচনের আভাস দেয়। আমার সাথি দিলীপ ব্যানার্জি, যিনি নিজে একজন সাংবাদিক, বুঝতেই পারেননি যে এখানে একটা ইলেকশন হবে। অথচ বিশ্বরাজনীতিতে রাশিয়া অন্যতম প্রধান একটা দেশ। মিটিং বা মিছিলের অস্তিত্ব ছিল না কোথাও। লোকজনও জটলা করে এ নিয়ে আলোচনা করছিল না। সারা বছর যেমন, তেমনি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চারদিকে। সবাই নিজ নিজ কাজকর্মে ব্যস্ত। শুধু বাসায় ফিরে দেখি টিভিতে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে তাঁদের সমর্থন করার আহ্বান জানাচ্ছেন নেতারা।
ইতিমধ্যে অগ্রিম ভোট নেওয়া শুরু হয়েছে। যেসব এলাকায় যাওয়া কষ্টসাপেক্ষ, যেমন সাইবেরিয়া আর উত্তরের বিভিন্ন এলাকায়, যেখানে হাতে গোনা কয়েকজন লোক এখন হরিণ বা অন্যান্য পশু চরাচ্ছেন বা পোলার স্টেশনে আছেন, হেলিকপ্টারে করে তাঁদের কাছে ব্যালট পেপার ও বাক্স নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা করছে ইলেকশন কমিশন। তবে এটা নতুন কিছু নয়। এ দেশে প্রত্যন্ত এলাকার লোকদের জন্য এটা বরাবরই করা হয়। তা ছাড়া, যাঁরা অসুস্থ, হাসপাতালে আছেন বা বাড়িতে শয্যাশায়ী, তাঁদের জন্যও আছে আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট এলাকায় নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন সদস্য এসব লোকের কাছে যান ব্যালট পেপার আর বাক্স নিয়ে। সেখানে তাঁরা ভোট দেন। ভোট গণনা করা হয় অন্যান্য ভোটের সঙ্গে একই দিনে।
মানুষ যাতে ভিড় না করে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য এবার ভোট হবে তিন দিন। আর যদি কেউ ভোটকেন্দ্রে যেতে না চান, তিনি ভোট দেবেন অনলাইনে। এ জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতের আগেই অনলাইনে অ্যাপ্লিকেশন করার কথা বলা হয়েছিল। তারপরও লোকজনকে ভোট দিতে আগ্রহী করার জন্য আছে বিভিন্ন লটারি। সেখানে গাড়িসহ বিভিন্ন পুরস্কার থাকবে। আর ভোটের দিন কেন্দ্রে তো যাকে বলে মেলা মেলা ভাব। কিন্তু এই যে এত আয়োজন, তারপরও মানুষের ভোটের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ নেই। অনেকেই যাবেন। কিন্তু আমাদের দেশে যেমন এ নিয়ে খুব আলাপ-আলোচনা হয়, চায়ের টেবিলে টর্নেডো ঘুরে বেড়ায়, সে রকম কিছু নেই এখানে।
১৯৮৩ থেকে এ দেশে অনেক নির্বাচন দেখেছি, তবে শুধু ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট ইলেকশন ছাড়া আর কখনো তেমন আলোচনা দেখিনি। একসময় এখানে সবার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যেত, আর সেই প্রতিদ্বন্দ্বী যদি প্রথম বা দ্বিতীয় হতেন, তবে ভোটের রেজাল্ট বাতিল করে নতুন নির্বাচন ডাকতে হতো। যত দূর মনে আছে ভ্লাদিভস্তকে ১৩ বার নির্বাচন করেও কোনো সমাধানে আসা যায়নি। এরপর ব্যালট পেপার থেকে ওটা একেবারেই উঠিয়ে দেওয়া হয়, যাতে দেশ ক্ষমতাশূন্য অবস্থায় না থাকে। রাজনীতির প্রতি মানুষের উদাসীনতা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাই তো যত বেশি সম্ভব মানুষকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার এই প্রচেষ্টা। ইচ্ছে করেই এ দেশে কোন পার্টির কেমন সম্ভাবনা, সে কথায় যাচ্ছি না। মনে হচ্ছে দেশের কথা, যেখানে ভোট নিয়ে কত জল্পনা-কল্পনা, কত আবেগ অথচ মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে না পেরে নিরাশ হয়ে ফিরে আসেন। আর এসবের ফলে মানুষের মধ্যে ভোটের প্রতি একধরনের অনীহা তৈরি হয়।
লেখক: গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা, রাশিয়া
প্রায় তিন সপ্তাহ ভোলগা তীরের বিভিন্ন শহর ঘুরে দুবনা ফিরলাম। এর মধ্যে বলতে গেলে টিভি দেখা বা খবর শোনা হয়নি। যদিও আমি বিভিন্ন দেশের খবর নিই ইন্টারনেট থেকে, এ দেশের খবর একই সঙ্গে টিভি থেকেও জানার চেষ্টা করি। ১৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার পার্লামেন্ট ইলেকশন। এ দেশের অর্ধেকের বেশি বড় বড় শহর ঘুরেও মাঝেমধ্যে দু-একটা পোস্টার বাদে আর কিছুই চোখে পড়ল না, যা কিনা আসন্ন নির্বাচনের আভাস দেয়। আমার সাথি দিলীপ ব্যানার্জি, যিনি নিজে একজন সাংবাদিক, বুঝতেই পারেননি যে এখানে একটা ইলেকশন হবে। অথচ বিশ্বরাজনীতিতে রাশিয়া অন্যতম প্রধান একটা দেশ। মিটিং বা মিছিলের অস্তিত্ব ছিল না কোথাও। লোকজনও জটলা করে এ নিয়ে আলোচনা করছিল না। সারা বছর যেমন, তেমনি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চারদিকে। সবাই নিজ নিজ কাজকর্মে ব্যস্ত। শুধু বাসায় ফিরে দেখি টিভিতে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে তাঁদের সমর্থন করার আহ্বান জানাচ্ছেন নেতারা।
ইতিমধ্যে অগ্রিম ভোট নেওয়া শুরু হয়েছে। যেসব এলাকায় যাওয়া কষ্টসাপেক্ষ, যেমন সাইবেরিয়া আর উত্তরের বিভিন্ন এলাকায়, যেখানে হাতে গোনা কয়েকজন লোক এখন হরিণ বা অন্যান্য পশু চরাচ্ছেন বা পোলার স্টেশনে আছেন, হেলিকপ্টারে করে তাঁদের কাছে ব্যালট পেপার ও বাক্স নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা করছে ইলেকশন কমিশন। তবে এটা নতুন কিছু নয়। এ দেশে প্রত্যন্ত এলাকার লোকদের জন্য এটা বরাবরই করা হয়। তা ছাড়া, যাঁরা অসুস্থ, হাসপাতালে আছেন বা বাড়িতে শয্যাশায়ী, তাঁদের জন্যও আছে আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট এলাকায় নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন সদস্য এসব লোকের কাছে যান ব্যালট পেপার আর বাক্স নিয়ে। সেখানে তাঁরা ভোট দেন। ভোট গণনা করা হয় অন্যান্য ভোটের সঙ্গে একই দিনে।
মানুষ যাতে ভিড় না করে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য এবার ভোট হবে তিন দিন। আর যদি কেউ ভোটকেন্দ্রে যেতে না চান, তিনি ভোট দেবেন অনলাইনে। এ জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতের আগেই অনলাইনে অ্যাপ্লিকেশন করার কথা বলা হয়েছিল। তারপরও লোকজনকে ভোট দিতে আগ্রহী করার জন্য আছে বিভিন্ন লটারি। সেখানে গাড়িসহ বিভিন্ন পুরস্কার থাকবে। আর ভোটের দিন কেন্দ্রে তো যাকে বলে মেলা মেলা ভাব। কিন্তু এই যে এত আয়োজন, তারপরও মানুষের ভোটের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ নেই। অনেকেই যাবেন। কিন্তু আমাদের দেশে যেমন এ নিয়ে খুব আলাপ-আলোচনা হয়, চায়ের টেবিলে টর্নেডো ঘুরে বেড়ায়, সে রকম কিছু নেই এখানে।
১৯৮৩ থেকে এ দেশে অনেক নির্বাচন দেখেছি, তবে শুধু ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট ইলেকশন ছাড়া আর কখনো তেমন আলোচনা দেখিনি। একসময় এখানে সবার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যেত, আর সেই প্রতিদ্বন্দ্বী যদি প্রথম বা দ্বিতীয় হতেন, তবে ভোটের রেজাল্ট বাতিল করে নতুন নির্বাচন ডাকতে হতো। যত দূর মনে আছে ভ্লাদিভস্তকে ১৩ বার নির্বাচন করেও কোনো সমাধানে আসা যায়নি। এরপর ব্যালট পেপার থেকে ওটা একেবারেই উঠিয়ে দেওয়া হয়, যাতে দেশ ক্ষমতাশূন্য অবস্থায় না থাকে। রাজনীতির প্রতি মানুষের উদাসীনতা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাই তো যত বেশি সম্ভব মানুষকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার এই প্রচেষ্টা। ইচ্ছে করেই এ দেশে কোন পার্টির কেমন সম্ভাবনা, সে কথায় যাচ্ছি না। মনে হচ্ছে দেশের কথা, যেখানে ভোট নিয়ে কত জল্পনা-কল্পনা, কত আবেগ অথচ মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে না পেরে নিরাশ হয়ে ফিরে আসেন। আর এসবের ফলে মানুষের মধ্যে ভোটের প্রতি একধরনের অনীহা তৈরি হয়।
লেখক: গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা, রাশিয়া
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৫ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৬ ঘণ্টা আগে