মো. শাহজাহান বাবুল
সবচেয়ে জরুরি যা দরকার, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য একটা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং তৈরি করা। এ জন্য রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বেছে নিতে পারে বাংলাদেশ। এটা ক্রিয়েটিভ ও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারও করতে হবে।
প্রকৃতির লীলাভূমি বাংলাদেশের মতো এমন ঋতুবৈচিত্র্য পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। সবুজে ভরা বন-জঙ্গল, গাছপালা, লতাপাতা, নদী-নালা, হাওর-বাঁওড়—এ যেন স্রষ্টার অফুরন্ত দান, এক আশীর্বাদ। প্রকৃতির এমন আশীর্বাদময় চোখজুড়ানো সবুজভূমি যেন পর্যটকদের আহ্বান জানায়। সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটকেরা এই আহ্বানে কতখানি সাড়া দেবেন, সেটা অবশ্য নির্ভর করে কিছু বিষয়ের ওপর।
ইকোট্যুরিজম
বাংলাদেশের প্রকৃতি, মাটি ও লোকালয়ের সাধারণ মানুষের আন্তরিকতা–এককথায় বলতে গেলে ভরপুর। আনন্দ ও অকৃত্রিম সুখপিপাসু পর্যকটদের যা আকর্ষণ করে। আমার চল্লিশ বছরের আমেরিকার পর্যটনশিল্পের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, ইকোট্যুরিজম বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণদ্বার উন্মুক্ত করে রেখেছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশে ইকোট্যুরিজম সেমিনারে যাওয়ার সুবাদে আমি দেখেছি ওই সব দেশের ঐতিহ্যবাহী সুভেনিয়র, ঘর সাজানোর তৈজসপত্র বা হোম ডেকোর ট্যুরিস্টরা কিনে নিয়ে যান স্মৃতি হিসেবে। বাংলাদেশও এই সুযোগ নিতে পারে। এটা বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। যেসব দেশ ইকোট্যুরিজমে এগিয়ে, তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টির ওপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ইকোট্যুরিজমটি পরিবেশন করতে হবে।
হাওর ট্যুরিজম
বাংলাদেশে বিশাল বিশাল সব হাওর রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে হাওর এলাকার বিস্তীর্ণ জলরাশি পানিতে থইথই করে। টাঙ্গুয়ার হাওর, নিকলী হাওর, নলুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওরসহ কত যে হাওর রয়েছে এ দেশে! এসব হাওর অনায়াসে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হতে পারে।
অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম
রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। পাহাড়, সমুদ্র, নদী ঘিরে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম গড়ে তুলতে পারলে দেশে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে ব্যাপকভাবে।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাহাড় রয়েছে। আর তিন হাজার ফুটের বেশি উচ্চতার পাহাড় রয়েছে ১২টি। এসব পাহাড় ঘিরে হাইকিং, ট্র্যাকিং, ক্লাইম্বিং, মাউন্টেনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে তীব্র খরস্রোতা পাহাড়ি নদীতেও।
রিলিজিয়াস ট্যুরিজম
বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধসভ্যতার অনেক মসজিদ, মন্দির, বৌদ্ধবিহার ও পুরোনো সভ্যতার নিদর্শন আছে। এসব সুপ্রাচীন নিদর্শন পৃথিবীর অনেক দেশেই বিরল। এশিয়ারই বিভিন্ন দেশ সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচারণার মাধ্যমে পর্যটক আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে রিলিজিয়াস ট্যুরিজমের মাধ্যমে। এই সুযোগ বাংলাদেশও নিতে পারে অনায়াসে।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুরিজম
সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে রয়েছে বিশাল বুনো অঞ্চল। আর এই বুনো অঞ্চলকে আফ্রিকান দেশগুলোর ওপেন সাফারির আদলে করা গেলে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে, ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুরিজমের অপার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশেও।
ব্যাক ওয়াটার ট্যুরিজম
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল, ছোট ছোট নদী-নালা, জলাশয়, দিঘি। এগুলোর সৌন্দর্য ও প্রাচুর্য কাজে লাগিয়ে প্রকৃতির এই আশীর্বাদকে সম্ভাবনাময় ব্যাক ওয়াটার ট্যুরিজম গড়ে তোলা যেতে পারে। যেমনভাবে ব্যাক ওয়াটার ট্যুরিজমে এগিয়ে রয়েছে কেরালা, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ ও শ্রীলঙ্কা।
মাইস ট্যুরিজম
মিটিংস, ইনসেনটিভ, কনভেনশন ও এক্সিবিশন- এসব মিলে সংক্ষেপে মাইস। আন্তর্জাতিক মেলা, প্রদর্শনী, আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ, রাষ্ট্রীয় ও ব্যবসায়িক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পর্যটনই হচ্ছে মাইস ট্যুরিজম। ব্যবসাকেন্দ্রিক পর্যটনের এ নতুন ধারাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অনেক দেশ পর্যটনশিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ভরপুর, সেখানে মাইস ট্যুরিজমের সম্ভাবনা অনেক বেশি। পর্যটন করপোরেশন ও প্রাইভেট ট্যুর কোম্পানিগুলো চুক্তি করে বাংলাদেশে মাইস ট্যুরিজম সম্প্রসারণ করতে পারে।
পর্যটনশিল্পের চ্যালেঞ্জ
বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা, হোটেল রিসোর্টের সেবার মান, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করতে হবে। কারণ দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার পর্যটকদের কেবল মুগ্ধই করবে না, বাংলাদেশের জনপ্রিয় খাবারগুলোকে আন্তর্জাতিক ফুড মার্কেটে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিতও করবে।
ইংরেজিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভাষায় পর্যটন ট্যুর গাইড প্রকাশ করা দরকার। আর দরকার দেশে একটা আন্তর্জাতিক মানের ট্যুরিজম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। দেশি বা প্রবাসীদের নিয়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে হতে পারে এ বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে গবেষণা, আধুনিক ট্যুরিজম, ট্রেন্ড, আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, খাদ্য ও বিদেশি টুরিস্টদের উন্নত সেবা দেওয়ার জন্য তরুণ-তরুণীদের ট্যুর গাইডের ট্রেনিং কোর্স থাকবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতের ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির জন্য ও প্রবাসে ট্যুরিজম মার্কেটের জন্যও কোর্স থাকবে।
বিপণন ও প্রচার
পৃথিবীর যে দেশ বিপণন ও প্রচারে যত এগিয়ে, সেই দেশে পর্যটকের আনাগোনা তত বেশি। তবে বিপণন ও প্রচার হতে হবে সৃজনশীল এবং উপস্থাপনা হতে হবে ব্যতিক্রম। ইকোট্যুরিজমের আন্তর্জাতিক প্রচারে আমাদের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যৌথ সমন্বয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির ভালো দিকগুলো আন্তর্জাতিক মানের উপস্থাপনায় বিভিন্ন ভাষায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূতাবাসের মাধ্যমে প্রচার করতে পারে। বাংলাদেশের প্যানোরামা ক্রিয়েটরের ডকুমেন্টারিকে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, খাদ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তারা খুব সুন্দর করে উপস্থাপনা করেছে, যা আন্তর্জাতিক মানের। পর্যটন করপোরেশন এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। প্যানোরামা ক্রিয়েটরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করে ওই সব দেশের ভাষা অনুযায়ী আমাদের দূতাবাসগুলো ওই দেশের পর্যটনশিল্পের সঙ্গে কাজ করতে পারে। আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য নিয়ে ফুড ফেস্টিভ্যাল করতে পারে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নদী-হাওর-বাঁওড়, সংস্কৃতি, নৃত্য, গান, খাদ্য সম্পর্কে ইকোট্যুরিজমের পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।
আন্তর্জাতিক ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, আন্তমহাদেশীয় ক্রুজশিপ ও রেলওয়েতে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যটকেরা বাংলাদেশকে জানতে পারবেন। আর সবচেয়ে জরুরি যা দরকার, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য একটা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং তৈরি করা। এ জন্য রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বেছে নিতে পারে বাংলাদেশ। এটা ক্রিয়েটিভ ও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারও করতে হবে।
এই সবকিছু সঠিকভাবে ও সময়মতো কার্যকর করলেই তবে আমরা প্রচুর পর্যটক আকর্ষণ করতে পারব।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কুটিরশিল্প গবেষক
সবচেয়ে জরুরি যা দরকার, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য একটা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং তৈরি করা। এ জন্য রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বেছে নিতে পারে বাংলাদেশ। এটা ক্রিয়েটিভ ও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারও করতে হবে।
প্রকৃতির লীলাভূমি বাংলাদেশের মতো এমন ঋতুবৈচিত্র্য পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। সবুজে ভরা বন-জঙ্গল, গাছপালা, লতাপাতা, নদী-নালা, হাওর-বাঁওড়—এ যেন স্রষ্টার অফুরন্ত দান, এক আশীর্বাদ। প্রকৃতির এমন আশীর্বাদময় চোখজুড়ানো সবুজভূমি যেন পর্যটকদের আহ্বান জানায়। সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটকেরা এই আহ্বানে কতখানি সাড়া দেবেন, সেটা অবশ্য নির্ভর করে কিছু বিষয়ের ওপর।
ইকোট্যুরিজম
বাংলাদেশের প্রকৃতি, মাটি ও লোকালয়ের সাধারণ মানুষের আন্তরিকতা–এককথায় বলতে গেলে ভরপুর। আনন্দ ও অকৃত্রিম সুখপিপাসু পর্যকটদের যা আকর্ষণ করে। আমার চল্লিশ বছরের আমেরিকার পর্যটনশিল্পের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, ইকোট্যুরিজম বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণদ্বার উন্মুক্ত করে রেখেছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশে ইকোট্যুরিজম সেমিনারে যাওয়ার সুবাদে আমি দেখেছি ওই সব দেশের ঐতিহ্যবাহী সুভেনিয়র, ঘর সাজানোর তৈজসপত্র বা হোম ডেকোর ট্যুরিস্টরা কিনে নিয়ে যান স্মৃতি হিসেবে। বাংলাদেশও এই সুযোগ নিতে পারে। এটা বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। যেসব দেশ ইকোট্যুরিজমে এগিয়ে, তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টির ওপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ইকোট্যুরিজমটি পরিবেশন করতে হবে।
হাওর ট্যুরিজম
বাংলাদেশে বিশাল বিশাল সব হাওর রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে হাওর এলাকার বিস্তীর্ণ জলরাশি পানিতে থইথই করে। টাঙ্গুয়ার হাওর, নিকলী হাওর, নলুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওরসহ কত যে হাওর রয়েছে এ দেশে! এসব হাওর অনায়াসে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হতে পারে।
অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম
রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। পাহাড়, সমুদ্র, নদী ঘিরে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম গড়ে তুলতে পারলে দেশে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে ব্যাপকভাবে।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাহাড় রয়েছে। আর তিন হাজার ফুটের বেশি উচ্চতার পাহাড় রয়েছে ১২টি। এসব পাহাড় ঘিরে হাইকিং, ট্র্যাকিং, ক্লাইম্বিং, মাউন্টেনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে তীব্র খরস্রোতা পাহাড়ি নদীতেও।
রিলিজিয়াস ট্যুরিজম
বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধসভ্যতার অনেক মসজিদ, মন্দির, বৌদ্ধবিহার ও পুরোনো সভ্যতার নিদর্শন আছে। এসব সুপ্রাচীন নিদর্শন পৃথিবীর অনেক দেশেই বিরল। এশিয়ারই বিভিন্ন দেশ সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচারণার মাধ্যমে পর্যটক আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে রিলিজিয়াস ট্যুরিজমের মাধ্যমে। এই সুযোগ বাংলাদেশও নিতে পারে অনায়াসে।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুরিজম
সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে রয়েছে বিশাল বুনো অঞ্চল। আর এই বুনো অঞ্চলকে আফ্রিকান দেশগুলোর ওপেন সাফারির আদলে করা গেলে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে, ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুরিজমের অপার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশেও।
ব্যাক ওয়াটার ট্যুরিজম
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল, ছোট ছোট নদী-নালা, জলাশয়, দিঘি। এগুলোর সৌন্দর্য ও প্রাচুর্য কাজে লাগিয়ে প্রকৃতির এই আশীর্বাদকে সম্ভাবনাময় ব্যাক ওয়াটার ট্যুরিজম গড়ে তোলা যেতে পারে। যেমনভাবে ব্যাক ওয়াটার ট্যুরিজমে এগিয়ে রয়েছে কেরালা, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ ও শ্রীলঙ্কা।
মাইস ট্যুরিজম
মিটিংস, ইনসেনটিভ, কনভেনশন ও এক্সিবিশন- এসব মিলে সংক্ষেপে মাইস। আন্তর্জাতিক মেলা, প্রদর্শনী, আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ, রাষ্ট্রীয় ও ব্যবসায়িক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পর্যটনই হচ্ছে মাইস ট্যুরিজম। ব্যবসাকেন্দ্রিক পর্যটনের এ নতুন ধারাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অনেক দেশ পর্যটনশিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ভরপুর, সেখানে মাইস ট্যুরিজমের সম্ভাবনা অনেক বেশি। পর্যটন করপোরেশন ও প্রাইভেট ট্যুর কোম্পানিগুলো চুক্তি করে বাংলাদেশে মাইস ট্যুরিজম সম্প্রসারণ করতে পারে।
পর্যটনশিল্পের চ্যালেঞ্জ
বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা, হোটেল রিসোর্টের সেবার মান, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করতে হবে। কারণ দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার পর্যটকদের কেবল মুগ্ধই করবে না, বাংলাদেশের জনপ্রিয় খাবারগুলোকে আন্তর্জাতিক ফুড মার্কেটে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিতও করবে।
ইংরেজিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভাষায় পর্যটন ট্যুর গাইড প্রকাশ করা দরকার। আর দরকার দেশে একটা আন্তর্জাতিক মানের ট্যুরিজম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। দেশি বা প্রবাসীদের নিয়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে হতে পারে এ বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে গবেষণা, আধুনিক ট্যুরিজম, ট্রেন্ড, আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, খাদ্য ও বিদেশি টুরিস্টদের উন্নত সেবা দেওয়ার জন্য তরুণ-তরুণীদের ট্যুর গাইডের ট্রেনিং কোর্স থাকবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতের ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির জন্য ও প্রবাসে ট্যুরিজম মার্কেটের জন্যও কোর্স থাকবে।
বিপণন ও প্রচার
পৃথিবীর যে দেশ বিপণন ও প্রচারে যত এগিয়ে, সেই দেশে পর্যটকের আনাগোনা তত বেশি। তবে বিপণন ও প্রচার হতে হবে সৃজনশীল এবং উপস্থাপনা হতে হবে ব্যতিক্রম। ইকোট্যুরিজমের আন্তর্জাতিক প্রচারে আমাদের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যৌথ সমন্বয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির ভালো দিকগুলো আন্তর্জাতিক মানের উপস্থাপনায় বিভিন্ন ভাষায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূতাবাসের মাধ্যমে প্রচার করতে পারে। বাংলাদেশের প্যানোরামা ক্রিয়েটরের ডকুমেন্টারিকে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, খাদ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তারা খুব সুন্দর করে উপস্থাপনা করেছে, যা আন্তর্জাতিক মানের। পর্যটন করপোরেশন এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। প্যানোরামা ক্রিয়েটরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করে ওই সব দেশের ভাষা অনুযায়ী আমাদের দূতাবাসগুলো ওই দেশের পর্যটনশিল্পের সঙ্গে কাজ করতে পারে। আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য নিয়ে ফুড ফেস্টিভ্যাল করতে পারে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নদী-হাওর-বাঁওড়, সংস্কৃতি, নৃত্য, গান, খাদ্য সম্পর্কে ইকোট্যুরিজমের পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।
আন্তর্জাতিক ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, আন্তমহাদেশীয় ক্রুজশিপ ও রেলওয়েতে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যটকেরা বাংলাদেশকে জানতে পারবেন। আর সবচেয়ে জরুরি যা দরকার, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য একটা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং তৈরি করা। এ জন্য রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বেছে নিতে পারে বাংলাদেশ। এটা ক্রিয়েটিভ ও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারও করতে হবে।
এই সবকিছু সঠিকভাবে ও সময়মতো কার্যকর করলেই তবে আমরা প্রচুর পর্যটক আকর্ষণ করতে পারব।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কুটিরশিল্প গবেষক
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৭ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৭ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৮ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৮ ঘণ্টা আগে