অর্ণব সান্যাল
দেশে একসময় শুধু ‘জি’ ছিল। এরপর জি-র সংখ্যা ক্রমে বেড়েছে। টু থেকে থ্রি, থ্রি থেকে ফোর। এবার এল ফাইভ। কিন্তু সংখ্যার ক্রম বাড়লেও আমাদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি কি বাড়ল? নাকি আক্ষরিক উন্নয়নের বদলে শুধু সংখ্যার মিনার বানানোতেই আনন্দ?
টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিতে ফাইভ-জি বলতে বোঝায় পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। এটি মূলত ফোর-জি নেটওয়ার্কের উত্তরসূরি। প্রায় দুই বছর আগ থেকেই ফাইভ-জি প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। এখন ক্রমে বিশ্বব্যাপী ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের গ্রাহক বাড়ছে। বর্তমানে তা বাংলাদেশেও শুরু হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফাইভ-জি পুরোপুরি চালু হলে দেশের মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে আসবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। প্রতিশ্রুতির মধ্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা, ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি ডিভাইস চালানো এবং সামগ্রিক ইন্টারনেট অভিজ্ঞতায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসার কথা বলা হচ্ছে।
চলতি মাসেই রাজধানীর একটি হোটেলে ফাইভ-জি শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, হুয়াওয়ে বাংলাদেশ লিমিটেডের সহযোগিতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড এই সেবা চালু করেছে। পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ছয়টি স্থানে এই পরিষেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম অপারেটর টেলিটক। আর স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ নিলাম হওয়ার কথা রয়েছে আগামী বছরের মার্চে। সংশ্লিষ্টদের আশা, এর পরে বেসরকারি অপারেটররা ফাইভ-জি চালু করতে পারবে।
অর্থাৎ, আগামী বছরই সারা দেশে পূর্ণ গতিতে ফাইভ-জি চালু হতে পারে। কিন্তু থ্রি বা ফোরের কী হবে? প্রসঙ্গক্রমে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। কয়েক দিন আগে রাজধানী থেকে বাইরে যেতে হয়েছিল। পথে মোবাইল ডেটা চালু করে বেশ কয়েকবার রিলোড দেওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত পেজ পাওয়া গিয়েছিল। ঢাকার ভেতরে ইন্টারনেট অবশ্য তুলনামূলক গতিশীল। কিন্তু সবখানেই তামাশার মতো মনে হয় মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে থাকা টাওয়ার চিহ্নের ওপর লেখা ফোর-জি।
এ দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ধীরগতি এতটাই যে, কখনো কখনো ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভয়েস কলও ড্রপ হয়। ভিডিও কলের কথা আর না বলি। ভিডিওর যে মান থাকে, তাতে মনে হতে পারে সুদূর কোনো গ্যালাক্সি থেকে ভিনগ্রহের প্রাণীরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে, তাই ঝাপসা। এ দেশের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বাধ্যতামূলক কাজই মনে হয় রিলোড দেওয়া। কারণ একটি ওয়েব পেজ যখন সহজে লোড হয় না, তখন ধৈর্য ধরতে ধরতে ক্লান্ত গ্রাহকদের বারবার লোড দেওয়া ছাড়া আর গতি কী? গাড়ি যদি রিকশার চেয়েও আস্তে চলে, তখন ধাক্কা দেওয়াই হয়তো একমাত্র উপায়। তা-ও সেই ধাক্কায় কাজ হলেও হতো!
বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে যে ধাক্কা কোনো কাজে আসে না, সেটি বুঝতে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভাবমূর্তির সংকট যে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, তা-ও প্রমাণিত হয়ে যাবে। ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ (ডিকিউএল) সূচক প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। সেই সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের ১১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি সবচেয়ে কম, একেবারে তলানিতে বলা চলে।
প্রতিবছর বৈশ্বিক ভিপিএন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্ক ডিকিউএল সূচক প্রকাশ করে। এই সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের ১১০টি দেশের মধ্যে সামগ্রিক ডিজিটাল মান বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩। আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ২৫ ধাপ নেমে গেছে। এই অবস্থান এমনকি প্রতিবেশী সবগুলো দেশেরও পেছনে। সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার ৩২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে ৩০তম অবস্থানে রয়েছে।
এই যখন অবস্থা, তখন দেশে যদি মহাসমারোহে ফাইভ-জি চালু করা হয় এবং তা নিয়ে এমন হুলুস্থুল করা হয়, তবে কেমন লাগে আসলে? নিজের কথা বলতে পারি, প্রচণ্ড হাসি পায়, রসিকতা ছাড়াই। কারণ নিজের মোবাইলের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এতটাই উল্টো বোঝায়, মনে হয় পরাবাস্তব কোনো জগতে আছি। মার্কেজও এমন দুনিয়া কাগজে-কলমে হয়তো তৈরি করতে পারতেন না!
শুধু আমি নই, সাধারণ মানুষেরও হাসি যে পায়, সেটি বোঝার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ঘুরে আসা যেতে পারে। গত ১২ ডিসেম্বর সেই ফেসবুক পেজে ‘৫-জি'র যুগে স্বাগতম’ লিখে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। সেই পোস্টে ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত রিঅ্যাকশন পড়েছে ২৪ হাজার। এর মধ্যে ১৪ হাজারই ‘হা হা’। আর মন্তব্যের অবস্থা বোঝাতে একটির কথা উল্লেখ করছি। হাবিব উল হুদা নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আজকে তিন দিন ধরে গ্রামের বাড়ীতে আছি। নেটওয়ার্কের অবস্থা নিম্নরূপ:
বাড়ীর সামনের রাস্তায় 4 G
বাড়ীর উঠানে 3 G
সামনের রুমে EDGE
ভিতরের রুমে No Service’
আর এর জবাবে মো. আরমান লিখেছেন, ‘ভাইয়া, একটু কষ্ট করে একটা নারিকেল গাছের উপর উঠে বসেন, 5G নেটওয়ার্ক পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ…’। উল্লেখ্য, এই জবাবের শেষেও একটি অট্টহাসির ইমোজি ছিল।
এই সময়ে আমাদের মূল সংকট হলো বর্তমান সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগী না হয়ে চমক দেখানোর আকাঙ্ক্ষা। এ কারণেই থ্রি-ফোরের হিল্লে না হলেও ফাইভের মুখ দেখতে চলেছেন নাগরিকেরা। তাতে সংখ্যার দিক থেকে চমকে-ঠমকে হয়তো আমরা সমৃদ্ধ হচ্ছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। জনতা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছে। মাঝখানে পকেটের টাকা খরচ হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা আর মিলছে না। এসবে ভ্রম হতেই পারে যে, জনতার অপর নাম বুঝি গৌরী সেন!
অবশ্য ব্রডব্যান্ড সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থানে মুখরক্ষা হয়েছে কিছুটা। ডিকিইএল সূচক অনুযায়ী, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের স্থায়িত্বে বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে, ১১০ দেশের মধ্যে অবস্থান ১৬। আর এর গতির প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় অবস্থান ৪৪তম। কিন্তু রাজধানী, পরিসর আরও বাড়িয়ে বললে বিভাগীয় শহরের বাইরে এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের অবস্থা বেশ দুর্বল। সে ক্ষেত্রে মুখ রক্ষা করা পরিসংখ্যান আদতে মুখে চুনকালি দেওয়ার আশঙ্কাই তৈরি করে।
এই লেখাটা যখন লিখছি, ঠিক তখনই ফোনে এল বেসরকারি একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির দেওয়া এসএমএস। প্রমোশনাল অবশ্যই। বিভিন্ন অফার দিয়ে ৪০ মিনিটের মধ্যে চারটি এসএমএস পেলাম। এর মধ্যে মোবাইল ডেটা কেনার প্রস্তাবও আছে। আহা! এভাবে অফারের এসএমএস–বৃষ্টির মতো যদি ইন্টারনেটও ঠিকঠাক আসত, কী ভালোই না হতো! অন্তত ব্রাউজারের রিলোড বাটনটা একটু স্বস্তি পেত আরকি।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দেশে একসময় শুধু ‘জি’ ছিল। এরপর জি-র সংখ্যা ক্রমে বেড়েছে। টু থেকে থ্রি, থ্রি থেকে ফোর। এবার এল ফাইভ। কিন্তু সংখ্যার ক্রম বাড়লেও আমাদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি কি বাড়ল? নাকি আক্ষরিক উন্নয়নের বদলে শুধু সংখ্যার মিনার বানানোতেই আনন্দ?
টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিতে ফাইভ-জি বলতে বোঝায় পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। এটি মূলত ফোর-জি নেটওয়ার্কের উত্তরসূরি। প্রায় দুই বছর আগ থেকেই ফাইভ-জি প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। এখন ক্রমে বিশ্বব্যাপী ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের গ্রাহক বাড়ছে। বর্তমানে তা বাংলাদেশেও শুরু হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফাইভ-জি পুরোপুরি চালু হলে দেশের মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে আসবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। প্রতিশ্রুতির মধ্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা, ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি ডিভাইস চালানো এবং সামগ্রিক ইন্টারনেট অভিজ্ঞতায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসার কথা বলা হচ্ছে।
চলতি মাসেই রাজধানীর একটি হোটেলে ফাইভ-জি শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, হুয়াওয়ে বাংলাদেশ লিমিটেডের সহযোগিতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড এই সেবা চালু করেছে। পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ছয়টি স্থানে এই পরিষেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম অপারেটর টেলিটক। আর স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ নিলাম হওয়ার কথা রয়েছে আগামী বছরের মার্চে। সংশ্লিষ্টদের আশা, এর পরে বেসরকারি অপারেটররা ফাইভ-জি চালু করতে পারবে।
অর্থাৎ, আগামী বছরই সারা দেশে পূর্ণ গতিতে ফাইভ-জি চালু হতে পারে। কিন্তু থ্রি বা ফোরের কী হবে? প্রসঙ্গক্রমে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। কয়েক দিন আগে রাজধানী থেকে বাইরে যেতে হয়েছিল। পথে মোবাইল ডেটা চালু করে বেশ কয়েকবার রিলোড দেওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত পেজ পাওয়া গিয়েছিল। ঢাকার ভেতরে ইন্টারনেট অবশ্য তুলনামূলক গতিশীল। কিন্তু সবখানেই তামাশার মতো মনে হয় মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে থাকা টাওয়ার চিহ্নের ওপর লেখা ফোর-জি।
এ দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ধীরগতি এতটাই যে, কখনো কখনো ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভয়েস কলও ড্রপ হয়। ভিডিও কলের কথা আর না বলি। ভিডিওর যে মান থাকে, তাতে মনে হতে পারে সুদূর কোনো গ্যালাক্সি থেকে ভিনগ্রহের প্রাণীরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে, তাই ঝাপসা। এ দেশের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বাধ্যতামূলক কাজই মনে হয় রিলোড দেওয়া। কারণ একটি ওয়েব পেজ যখন সহজে লোড হয় না, তখন ধৈর্য ধরতে ধরতে ক্লান্ত গ্রাহকদের বারবার লোড দেওয়া ছাড়া আর গতি কী? গাড়ি যদি রিকশার চেয়েও আস্তে চলে, তখন ধাক্কা দেওয়াই হয়তো একমাত্র উপায়। তা-ও সেই ধাক্কায় কাজ হলেও হতো!
বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে যে ধাক্কা কোনো কাজে আসে না, সেটি বুঝতে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভাবমূর্তির সংকট যে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, তা-ও প্রমাণিত হয়ে যাবে। ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ (ডিকিউএল) সূচক প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। সেই সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের ১১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি সবচেয়ে কম, একেবারে তলানিতে বলা চলে।
প্রতিবছর বৈশ্বিক ভিপিএন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্ক ডিকিউএল সূচক প্রকাশ করে। এই সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের ১১০টি দেশের মধ্যে সামগ্রিক ডিজিটাল মান বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩। আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ২৫ ধাপ নেমে গেছে। এই অবস্থান এমনকি প্রতিবেশী সবগুলো দেশেরও পেছনে। সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার ৩২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে ৩০তম অবস্থানে রয়েছে।
এই যখন অবস্থা, তখন দেশে যদি মহাসমারোহে ফাইভ-জি চালু করা হয় এবং তা নিয়ে এমন হুলুস্থুল করা হয়, তবে কেমন লাগে আসলে? নিজের কথা বলতে পারি, প্রচণ্ড হাসি পায়, রসিকতা ছাড়াই। কারণ নিজের মোবাইলের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এতটাই উল্টো বোঝায়, মনে হয় পরাবাস্তব কোনো জগতে আছি। মার্কেজও এমন দুনিয়া কাগজে-কলমে হয়তো তৈরি করতে পারতেন না!
শুধু আমি নই, সাধারণ মানুষেরও হাসি যে পায়, সেটি বোঝার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ঘুরে আসা যেতে পারে। গত ১২ ডিসেম্বর সেই ফেসবুক পেজে ‘৫-জি'র যুগে স্বাগতম’ লিখে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। সেই পোস্টে ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত রিঅ্যাকশন পড়েছে ২৪ হাজার। এর মধ্যে ১৪ হাজারই ‘হা হা’। আর মন্তব্যের অবস্থা বোঝাতে একটির কথা উল্লেখ করছি। হাবিব উল হুদা নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আজকে তিন দিন ধরে গ্রামের বাড়ীতে আছি। নেটওয়ার্কের অবস্থা নিম্নরূপ:
বাড়ীর সামনের রাস্তায় 4 G
বাড়ীর উঠানে 3 G
সামনের রুমে EDGE
ভিতরের রুমে No Service’
আর এর জবাবে মো. আরমান লিখেছেন, ‘ভাইয়া, একটু কষ্ট করে একটা নারিকেল গাছের উপর উঠে বসেন, 5G নেটওয়ার্ক পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ…’। উল্লেখ্য, এই জবাবের শেষেও একটি অট্টহাসির ইমোজি ছিল।
এই সময়ে আমাদের মূল সংকট হলো বর্তমান সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগী না হয়ে চমক দেখানোর আকাঙ্ক্ষা। এ কারণেই থ্রি-ফোরের হিল্লে না হলেও ফাইভের মুখ দেখতে চলেছেন নাগরিকেরা। তাতে সংখ্যার দিক থেকে চমকে-ঠমকে হয়তো আমরা সমৃদ্ধ হচ্ছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। জনতা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছে। মাঝখানে পকেটের টাকা খরচ হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা আর মিলছে না। এসবে ভ্রম হতেই পারে যে, জনতার অপর নাম বুঝি গৌরী সেন!
অবশ্য ব্রডব্যান্ড সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থানে মুখরক্ষা হয়েছে কিছুটা। ডিকিইএল সূচক অনুযায়ী, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের স্থায়িত্বে বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে, ১১০ দেশের মধ্যে অবস্থান ১৬। আর এর গতির প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় অবস্থান ৪৪তম। কিন্তু রাজধানী, পরিসর আরও বাড়িয়ে বললে বিভাগীয় শহরের বাইরে এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের অবস্থা বেশ দুর্বল। সে ক্ষেত্রে মুখ রক্ষা করা পরিসংখ্যান আদতে মুখে চুনকালি দেওয়ার আশঙ্কাই তৈরি করে।
এই লেখাটা যখন লিখছি, ঠিক তখনই ফোনে এল বেসরকারি একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির দেওয়া এসএমএস। প্রমোশনাল অবশ্যই। বিভিন্ন অফার দিয়ে ৪০ মিনিটের মধ্যে চারটি এসএমএস পেলাম। এর মধ্যে মোবাইল ডেটা কেনার প্রস্তাবও আছে। আহা! এভাবে অফারের এসএমএস–বৃষ্টির মতো যদি ইন্টারনেটও ঠিকঠাক আসত, কী ভালোই না হতো! অন্তত ব্রাউজারের রিলোড বাটনটা একটু স্বস্তি পেত আরকি।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
৪ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৪ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
৫ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৫ ঘণ্টা আগে