জাহীদ রেজা নূর
আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল বলে পরিচিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও এই ধর্মব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ যারা করে, তাদের অনেকের মনেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা নেই। সম্ভবত বিজয়ের সবচেয়ে বড় পরাজয় হয়েছে এখানেই।
যে রথী-মহারথীরা এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বোঝাতে চাইছেন যে, পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখেছিল ইকবাল নামের যে লোকটি, সে উন্মাদ, কিংবা আরেক দল বৈজ্ঞানিক বোঝাতে চাইছেন, সিসিটিভিতে দেখানো ঘটনাবলিতে ‘রহস্য’ আছে, তারা এই বাকোয়াজ চালিয়ে যাক। এটা চলতেই থাকবে। তাতে মূল যে সংকট, তা কাটবে না। মূল সংকট হলো, দুর্গাপূজার সময় হিন্দুধর্মাবলম্বী কোনো মানুষ কোরআনের অবমাননা করেনি, করেছে একজন মুসলমান। সেই কোরআন উদ্ধারের সময় ভিডিও করে ফেসবুকে তা ছড়িয়ে দিয়েছে যে, সে-ও মুসলমান এবং সেই ভিডিও দেখে কাণ্ডজ্ঞানশূন্য হয়ে যারা দলে দলে ছুটে গিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হিন্দুবাড়িতে আগুন দিয়েছে, তারাও মুসলমান।
তাহলে ‘মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি’তে যারা আঘাত করল, তারা মুসলমান হওয়ায় এখন কি দেশজুড়ে সব মুসলমানের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালাবে এই ধর্মোন্মাদেরা?
আলোচনায় আসা উচিত এই ব্যাপারটাও যে ‘ইসলামের অবমাননা’র ধুয়া তুলে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘর লুট, অগ্নিসংযোগ, প্রহার, ধর্ষণ, হত্যা করার ইন্ধন যারা দিচ্ছে এবং যারা তা করে দেখাচ্ছে, তারা সবাই একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসর নয়। ধর্মান্ধ হতে হলে এখন কোনো নির্দিষ্ট রাজনীতির লেবাস পরা লাগে না। যেকোনো দলেই ঘাপটি মেরে থাকতে পারে এই বীরপুঙ্গবেরা। রংপুরের পীরগঞ্জের জেলেপল্লিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলার নেতৃত্বে যখন সৈকত মণ্ডল নামে ছাত্রলীগের একজন নেতা থাকেন, তখন বুঝতে হয়, ছেলেভোলানো ছড়া দিয়ে দেশের নাগরিকদের ঘুম পাড়িয়ে রাখা যাবে না। সমাজকাঠামোটা যে ভেতরে-ভেতরে ক্ষয়ে গেছে, পারস্পরিক সম্পর্কগুলো যে আর দৃঢ়ভাবে টিকে নেই, সেটা যদি এখনো বোঝা না যায়, তাহলে এই গড্ডলিকা প্রবাহই হয়তো আমাদের নিয়তি বলে একদিন স্বীকৃত হবে। একদিন বলা হবে, এই জাতি নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছিল।
আলোচনাটা এখান থেকেই শুরু হওয়া দরকার। অন্য ধর্মের প্রতি কতটা ঘৃণা মনে পুষে রাখলে এহেন তাণ্ডব চালানো যায়, সেটাই আসলে দেখা দরকার।
কয়েকটি দিক দিয়ে দেখা যাক ঘটনাটি।
এক. দেশের সবখানেই কি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী হামলা চালিয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বিবেচনাবোধকে কাজে লাগিয়ে। যা ঘটেছে, তা পৈশাচিক। কিন্তু তাই বলে সব মুসলমানকে হামলাকারী ভাবা হবে বোকামি। বদমাশদের প্ররোচনায় মোটেই সবাই বিভ্রান্ত হয়নি। কিন্তু তাতে তৃপ্তিলাভের অবকাশ নেই। যেসব এলাকায় হামলা হয়েছে, সেসব এলাকার মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সময়মতো প্রতিরোধও গড়ে তুলতে পারেনি। তোলার চেষ্টা কি হয়েছিল? এখানে যে প্রশ্নটি এসে যায় তা হলো, হামলা ঠেকানোর মানসিকতা কেন ছিল না সিংহভাগ মানুষের? যেখানে আগুন জ্বলেছে, সেখানকার সিংহভাগ মুসলমান কেন সব মেনে নিয়েছিল? ভয়টা ছিল কিসের? তার মানে সত্যিই ধর্মান্ধ মানুষকে ভয় করার মতো কারণ সমাজে বিদ্যমান আছে? প্রতিবছরই প্রতিমা ভাঙার কাজটা অক্লেশে করে যাচ্ছে এরা। প্রতিবছরই একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারছে। বিচারহীনতাকে এর একটা বড় কারণ বললে কি খুব বেশি বাড়াবাড়ি হবে?
সেই সঙ্গে জোর দিয়ে আগে বলা কথাটি আবার বলতে চাই, সমাজে মানুষে-মানুষে সম্পর্কে ঘুণ ধরেছে। মানুষ নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচয় না দিয়ে ধর্মীয় পরিচয়টা বড় করে দেখায় ধর্মবিদ্বেষটা উসকে দেওয়া সহজ হয়েছে। তাই ধর্মান্ধদের এই আস্ফালনের প্রতি কি একধরনের পরোক্ষ সায়ও আছে কারও কারও মনে?
দুই. কোনো কোনো জায়গায় মুসলিম জনগণই এই হামলাকারীদের প্রতিরোধ করেছে। অন্য এলাকা থেকে এসে প্রতিমা ভাঙচুর করার সময় হিন্দু-মুসলমান সবাইকে মেরেছে বহিরাগতরা। হামলাকারীদের কাউকে কাউকে আটক করার পর তারা স্বীকার করেছে যে, অন্য এলাকা থেকে প্রতিমা ভাঙতে তারা এসেছে। কারা এদের ইন্ধন দিয়েছে, সেটা খুঁজে বের করা কি খুব শক্ত ব্যাপার? খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই তরুণদের বয়স কিন্তু আঠারো থেকে পঁচিশের মধ্যে। এখানেও আমরা একটা প্যাটার্ন দেখতে পাব। এরা ইন্টারনেট, স্মার্টফোন নিখুঁতভাবে পরিচালনা করতে পারা প্রজন্ম। বিংশ শতাব্দীর একটা বড় সময় পৃথিবীজুড়ে এই বয়সী তরুণদের বেশির ভাগই বামপন্থায় বিশ্বাসী হতো। এই বিশ্বাস কীভাবে ধর্মান্ধতার দিকে গেল, সেটাও তো বিবেচনা করে দেখা দরকার।
তিন. ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা গোটা বিশ্বেই বাড়ছে। তার বহু কারণ রয়েছে। ধর্মবিরোধ উসকে দেওয়ার কাজটি সব ধর্মের উন্মাদেরাই করে যাচ্ছে। এবং তা করা হচ্ছে সবগুলো মহাদেশেই। সে আলোচনা নিশ্চয়ই একদিন করতে হবে। আজ আমাদের ঘরে এসে আঘাত করা সংকটটা নিয়েই কথা বলা দরকার।
যখন আমাদের দেশের সংকট নিয়ে কথা বলতে চাই, তখন অনেক মতলবি প্রশ্নের মধ্যে যেটা অহরহ শুনতে হয় তা হলো, ‘ভারতেও তো মুসলিম নির্যাতন হচ্ছে।’ প্রশ্নটা এমন এক অহংকার নিয়ে করা হয় যে মনে হয়, ওরা ওখানে মুসলমানদের মারছে বলেই আমরা এখানে হিন্দুদের মারব।
এটা যে মূর্খতার চূড়ান্ত, সেটা নতুন করে বলার নয়। ঘর জ্বলছে আমার, আর আমি সে আগুন নেভানোর চেষ্টা না করে বলছি, ‘ওরাও তো আমার জ্ঞাতি ভাইয়ের ঘর পোড়াচ্ছে!’ মানুষ কতটা অবিবেচক হলে এ ধরনের মানসিকতা বহন করতে পারে!
একাত্তরের পরাজিত শক্তিই যদি এই নির্মমতা একহাতে ঘটাতে পারে, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের স্থানীয় নেতারা কোথায় আছেন? তাঁরা কেন এই উন্মাদনা রুখে দিতে পারেন না? কেন তাঁরা পূজার আগে নিজ এলাকার নিরাপত্তা বিধান করতে পারেন না?
এর কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল বলে পরিচিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও এই ধর্মব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ যাঁরা করেন, তাঁদের অনেকের মনেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা নেই। সম্ভবত বিজয়ের সবচেয়ে বড় পরাজয় হয়েছে এখানেই। মানবতার মূল সুরটাই হারিয়ে গেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মের নামে শোষণ চালাতে পারবে না কেউ, এ-ই তো ছিল মুক্তির জন্য যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার মূল মর্মবাণী। আমরা নিজেদের দিকে তাকিয়ে একটু দেখলেই বুঝতে পারব, সেগুলোর কিছুই এখনো অর্জিত হয়নি।
এ লেখায় সংকটের সব বিষয় আনা গেল না। শুধু একটা জায়গাকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে বলছি: ধর্মান্ধতার বীজ ছড়িয়েছে, কারণ ধর্মকর্ম নিয়ে কথা বলার অধিকার যাঁদের আছে, তাঁদের অনেকে ধর্মের অপব্যাখ্য দিয়ে অন্য ধর্মের প্রতি মানুষের মনে ঘৃণার জন্ম দিয়েছেন। মসজিদে-ওয়াজে অন্য ধর্মের প্রতি যে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে বছরের পর বছর, সেই বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য কাউকে বিচারের সামনে পড়তে হয়নি (ইদানীং কিছু ভণ্ড হুজুরকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে)। এই প্রচারণার কারণে শুধু স্বাধীনতাবিরোধী চক্রই ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করছে না, আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল সব দলের সদস্যরাও তাতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন এবং একসময় বানোয়াট গুজবের পাল্লায় পড়ে তিনিও তাঁর ‘ধর্মীয় অনুভূতি’তে আঘাত পাচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁদের মধ্যেও প্রচ্ছন্নভাবে জন্ম নিচ্ছে ধর্মান্ধতা। এ যেন বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা।
ধর্ম নয়, ধর্মের লেবাসে ধর্মের অপব্যাখ্যার শিকার হয়ে যাঁরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সেটাই শঙ্কার সবচেয়ে বড় ব্যাপার।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা।
আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল বলে পরিচিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও এই ধর্মব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ যারা করে, তাদের অনেকের মনেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা নেই। সম্ভবত বিজয়ের সবচেয়ে বড় পরাজয় হয়েছে এখানেই।
যে রথী-মহারথীরা এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বোঝাতে চাইছেন যে, পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখেছিল ইকবাল নামের যে লোকটি, সে উন্মাদ, কিংবা আরেক দল বৈজ্ঞানিক বোঝাতে চাইছেন, সিসিটিভিতে দেখানো ঘটনাবলিতে ‘রহস্য’ আছে, তারা এই বাকোয়াজ চালিয়ে যাক। এটা চলতেই থাকবে। তাতে মূল যে সংকট, তা কাটবে না। মূল সংকট হলো, দুর্গাপূজার সময় হিন্দুধর্মাবলম্বী কোনো মানুষ কোরআনের অবমাননা করেনি, করেছে একজন মুসলমান। সেই কোরআন উদ্ধারের সময় ভিডিও করে ফেসবুকে তা ছড়িয়ে দিয়েছে যে, সে-ও মুসলমান এবং সেই ভিডিও দেখে কাণ্ডজ্ঞানশূন্য হয়ে যারা দলে দলে ছুটে গিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হিন্দুবাড়িতে আগুন দিয়েছে, তারাও মুসলমান।
তাহলে ‘মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি’তে যারা আঘাত করল, তারা মুসলমান হওয়ায় এখন কি দেশজুড়ে সব মুসলমানের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালাবে এই ধর্মোন্মাদেরা?
আলোচনায় আসা উচিত এই ব্যাপারটাও যে ‘ইসলামের অবমাননা’র ধুয়া তুলে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘর লুট, অগ্নিসংযোগ, প্রহার, ধর্ষণ, হত্যা করার ইন্ধন যারা দিচ্ছে এবং যারা তা করে দেখাচ্ছে, তারা সবাই একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসর নয়। ধর্মান্ধ হতে হলে এখন কোনো নির্দিষ্ট রাজনীতির লেবাস পরা লাগে না। যেকোনো দলেই ঘাপটি মেরে থাকতে পারে এই বীরপুঙ্গবেরা। রংপুরের পীরগঞ্জের জেলেপল্লিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলার নেতৃত্বে যখন সৈকত মণ্ডল নামে ছাত্রলীগের একজন নেতা থাকেন, তখন বুঝতে হয়, ছেলেভোলানো ছড়া দিয়ে দেশের নাগরিকদের ঘুম পাড়িয়ে রাখা যাবে না। সমাজকাঠামোটা যে ভেতরে-ভেতরে ক্ষয়ে গেছে, পারস্পরিক সম্পর্কগুলো যে আর দৃঢ়ভাবে টিকে নেই, সেটা যদি এখনো বোঝা না যায়, তাহলে এই গড্ডলিকা প্রবাহই হয়তো আমাদের নিয়তি বলে একদিন স্বীকৃত হবে। একদিন বলা হবে, এই জাতি নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছিল।
আলোচনাটা এখান থেকেই শুরু হওয়া দরকার। অন্য ধর্মের প্রতি কতটা ঘৃণা মনে পুষে রাখলে এহেন তাণ্ডব চালানো যায়, সেটাই আসলে দেখা দরকার।
কয়েকটি দিক দিয়ে দেখা যাক ঘটনাটি।
এক. দেশের সবখানেই কি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী হামলা চালিয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বিবেচনাবোধকে কাজে লাগিয়ে। যা ঘটেছে, তা পৈশাচিক। কিন্তু তাই বলে সব মুসলমানকে হামলাকারী ভাবা হবে বোকামি। বদমাশদের প্ররোচনায় মোটেই সবাই বিভ্রান্ত হয়নি। কিন্তু তাতে তৃপ্তিলাভের অবকাশ নেই। যেসব এলাকায় হামলা হয়েছে, সেসব এলাকার মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সময়মতো প্রতিরোধও গড়ে তুলতে পারেনি। তোলার চেষ্টা কি হয়েছিল? এখানে যে প্রশ্নটি এসে যায় তা হলো, হামলা ঠেকানোর মানসিকতা কেন ছিল না সিংহভাগ মানুষের? যেখানে আগুন জ্বলেছে, সেখানকার সিংহভাগ মুসলমান কেন সব মেনে নিয়েছিল? ভয়টা ছিল কিসের? তার মানে সত্যিই ধর্মান্ধ মানুষকে ভয় করার মতো কারণ সমাজে বিদ্যমান আছে? প্রতিবছরই প্রতিমা ভাঙার কাজটা অক্লেশে করে যাচ্ছে এরা। প্রতিবছরই একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারছে। বিচারহীনতাকে এর একটা বড় কারণ বললে কি খুব বেশি বাড়াবাড়ি হবে?
সেই সঙ্গে জোর দিয়ে আগে বলা কথাটি আবার বলতে চাই, সমাজে মানুষে-মানুষে সম্পর্কে ঘুণ ধরেছে। মানুষ নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচয় না দিয়ে ধর্মীয় পরিচয়টা বড় করে দেখায় ধর্মবিদ্বেষটা উসকে দেওয়া সহজ হয়েছে। তাই ধর্মান্ধদের এই আস্ফালনের প্রতি কি একধরনের পরোক্ষ সায়ও আছে কারও কারও মনে?
দুই. কোনো কোনো জায়গায় মুসলিম জনগণই এই হামলাকারীদের প্রতিরোধ করেছে। অন্য এলাকা থেকে এসে প্রতিমা ভাঙচুর করার সময় হিন্দু-মুসলমান সবাইকে মেরেছে বহিরাগতরা। হামলাকারীদের কাউকে কাউকে আটক করার পর তারা স্বীকার করেছে যে, অন্য এলাকা থেকে প্রতিমা ভাঙতে তারা এসেছে। কারা এদের ইন্ধন দিয়েছে, সেটা খুঁজে বের করা কি খুব শক্ত ব্যাপার? খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই তরুণদের বয়স কিন্তু আঠারো থেকে পঁচিশের মধ্যে। এখানেও আমরা একটা প্যাটার্ন দেখতে পাব। এরা ইন্টারনেট, স্মার্টফোন নিখুঁতভাবে পরিচালনা করতে পারা প্রজন্ম। বিংশ শতাব্দীর একটা বড় সময় পৃথিবীজুড়ে এই বয়সী তরুণদের বেশির ভাগই বামপন্থায় বিশ্বাসী হতো। এই বিশ্বাস কীভাবে ধর্মান্ধতার দিকে গেল, সেটাও তো বিবেচনা করে দেখা দরকার।
তিন. ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা গোটা বিশ্বেই বাড়ছে। তার বহু কারণ রয়েছে। ধর্মবিরোধ উসকে দেওয়ার কাজটি সব ধর্মের উন্মাদেরাই করে যাচ্ছে। এবং তা করা হচ্ছে সবগুলো মহাদেশেই। সে আলোচনা নিশ্চয়ই একদিন করতে হবে। আজ আমাদের ঘরে এসে আঘাত করা সংকটটা নিয়েই কথা বলা দরকার।
যখন আমাদের দেশের সংকট নিয়ে কথা বলতে চাই, তখন অনেক মতলবি প্রশ্নের মধ্যে যেটা অহরহ শুনতে হয় তা হলো, ‘ভারতেও তো মুসলিম নির্যাতন হচ্ছে।’ প্রশ্নটা এমন এক অহংকার নিয়ে করা হয় যে মনে হয়, ওরা ওখানে মুসলমানদের মারছে বলেই আমরা এখানে হিন্দুদের মারব।
এটা যে মূর্খতার চূড়ান্ত, সেটা নতুন করে বলার নয়। ঘর জ্বলছে আমার, আর আমি সে আগুন নেভানোর চেষ্টা না করে বলছি, ‘ওরাও তো আমার জ্ঞাতি ভাইয়ের ঘর পোড়াচ্ছে!’ মানুষ কতটা অবিবেচক হলে এ ধরনের মানসিকতা বহন করতে পারে!
একাত্তরের পরাজিত শক্তিই যদি এই নির্মমতা একহাতে ঘটাতে পারে, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের স্থানীয় নেতারা কোথায় আছেন? তাঁরা কেন এই উন্মাদনা রুখে দিতে পারেন না? কেন তাঁরা পূজার আগে নিজ এলাকার নিরাপত্তা বিধান করতে পারেন না?
এর কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল বলে পরিচিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও এই ধর্মব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ যাঁরা করেন, তাঁদের অনেকের মনেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা নেই। সম্ভবত বিজয়ের সবচেয়ে বড় পরাজয় হয়েছে এখানেই। মানবতার মূল সুরটাই হারিয়ে গেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মের নামে শোষণ চালাতে পারবে না কেউ, এ-ই তো ছিল মুক্তির জন্য যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার মূল মর্মবাণী। আমরা নিজেদের দিকে তাকিয়ে একটু দেখলেই বুঝতে পারব, সেগুলোর কিছুই এখনো অর্জিত হয়নি।
এ লেখায় সংকটের সব বিষয় আনা গেল না। শুধু একটা জায়গাকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে বলছি: ধর্মান্ধতার বীজ ছড়িয়েছে, কারণ ধর্মকর্ম নিয়ে কথা বলার অধিকার যাঁদের আছে, তাঁদের অনেকে ধর্মের অপব্যাখ্য দিয়ে অন্য ধর্মের প্রতি মানুষের মনে ঘৃণার জন্ম দিয়েছেন। মসজিদে-ওয়াজে অন্য ধর্মের প্রতি যে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে বছরের পর বছর, সেই বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য কাউকে বিচারের সামনে পড়তে হয়নি (ইদানীং কিছু ভণ্ড হুজুরকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে)। এই প্রচারণার কারণে শুধু স্বাধীনতাবিরোধী চক্রই ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করছে না, আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল সব দলের সদস্যরাও তাতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন এবং একসময় বানোয়াট গুজবের পাল্লায় পড়ে তিনিও তাঁর ‘ধর্মীয় অনুভূতি’তে আঘাত পাচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁদের মধ্যেও প্রচ্ছন্নভাবে জন্ম নিচ্ছে ধর্মান্ধতা। এ যেন বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা।
ধর্ম নয়, ধর্মের লেবাসে ধর্মের অপব্যাখ্যার শিকার হয়ে যাঁরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সেটাই শঙ্কার সবচেয়ে বড় ব্যাপার।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৩ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৩ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৪ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৪ ঘণ্টা আগে