মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদে, টক শোতে, রাজনীতিবিদদের চায়ের কাপে সংস্কৃতিকর্মীদের মানববন্ধনে সর্বত্রই দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলার ঘটনায় ঝড় উঠেছিল। ঝড়টা এখন থেমেছে। যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের আকাশ মেঘমুক্ত হয়নি। ঘরবাড়ি মেরামত হয়নি। আহতরা চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে আসেননি। একমাত্র যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁরা ছাড়া। দেশে সংবাদের অভাব নেই, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তর্কোন্দল-মারামারি শীর্ষ সংবাদ হয়ে এসেছে। একটি ছাত্র গুরুতরভাবে আহত হয়ে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে আছে। এর মধ্যেই নির্বাচনী সহিংসতা চলছে, দু-চারজন মারাও গেছে। এহেন নানা সংবাদের মধ্যে বড় দুঃসংবাদ হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একের পর এক জেতা খেলাগুলো হারছে। বাকি খেলাগুলোতেও হারার ব্যাপারে প্রায়
সবাই নিশ্চিত।
প্রথম যে সংবাদটির কথা বলা হলো তাকে ম্লান করার জন্য পরের সংবাদগুলো যথেষ্ট। এবং সবগুলো সংবাদেই নিত্যদিনের ছোট্ট স্মৃতিকথায় মিলিয়ে যায়। আমরা সংবাদকে একধরনের বিনোদন হিসেবে ভাবতে শুরু করেছি। সে সংবাদ মৃত্যুসংবাদ হোক আর আনন্দের সংবাদ হোক। সমস্ত জাতি কি একটা রোগে আক্রান্ত হয়ে গেল যে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়াই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী যার যার নিজের ভবিষ্যৎ বা যাকে বলে আখের গোছানো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে ভবিষ্যতে জাতি থাকে না, সমাজ থাকে না, পাড়াপড়শিরা থাকে না, থাকে শুধু আমি এবং আমার পরিবার। পরিবারের নিরাপত্তার জন্য কোনো আদর্শবোধ নয়, বিষয়ভাবনা নয়, থাকে শুধু অর্থভাবনা। অর্থই যেন নিরাপত্তার একমাত্র উপায়। সেই অর্থের প্রয়োজনে সব মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, সম্পর্ক হারিয়ে যাচ্ছে। জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়ে যাচ্ছে। অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করাকে অন্যায় মনে হচ্ছে না, মুহূর্তে চোখ ওলটানোকে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
করোনায় আক্রান্ত এক শিল্পপতি ডাক্তারকে বলছেন, আমার সব সম্পদ নিয়ে নিন, বিনিময়ে আমি বাঁচতে চাই। তিনি বাঁচতে পারেননি বটে তবে মৃত্যুর পরেই তাঁর সম্পদ তাঁর কাছ থেকে বহুদূর চলে যায়। এই সম্পদ তিনি ভোগও করতে পারেননি। মৃত্যুর পরে মানুষ যেমন আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়, তেমনি প্রথম তার বিচ্ছেদ ঘটে সম্পদের কাছ থেকে। তাই বলে কি মানুষ সম্পদ আহরণ করবে না? জীবনধারণের জন্য তো সম্পদ প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কতটা প্রয়োজন? তলস্তয়ের ভাষায়, একটা মানুষের জীবনে কতটুকু জায়গা প্রয়োজন? এসব আপ্তবাক্য বলে লাভ নেই, কারণ কেমন করে যেন মানুষ বুঝে ফেলেছে জীবনে সুখ ও নিরাপত্তার একটাই উপায় আর তা হচ্ছে অর্থ, টাকা চাই।
সরকারি চাকুরেরা যে বেতন পায়, তা দিয়ে চলতে পারে না। সরকার এক লাফে বেতন বাড়িয়ে দিল দ্বিগুণ। সরকারের মধ্যে কারও কারও চিন্তা বেতন দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু দেখা গেল দুর্নীতিও দ্বিগুণ, তিন গুণ হয়ে গেল। দেশে মহামারি এল, সরকার মহামারিরোধে ত্বরিত ব্যবস্থা নিল। সেই ত্বরিত ব্যবস্থায় সবচেয়ে সুবিধাবাদী হলো দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী এবং আমলারা। ব্যবসায়ীরা রাতারাতি আঙুল ফুলে আবার কলাগাছ হয়ে গেল। মহামারির আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁদের কোনো যায় আসে না। এটা কি পৃথিবীর সব দেশে হয়? হয়তো হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে শীর্ষে।
একবার বিপ্লবের আগে চীন দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা বেইজিং শহরে কত সুখী পরিবার আছে, তার একটা পরিসংখ্যান করতে চাইল। প্রথম পরিসংখ্যান হলো ধনী ব্যক্তিদের নিয়ে। একজন সাংবাদিককে বিশেষভাবে নিয়োগ দেওয়া হলো, সেই সাংবাদিক যে প্রাসাদোপম বাড়িতে যায়, তার মূল্যবান আসবাব, চাকরবাকর, দারোয়ানদের কর্মব্যস্ততা দেখে মুগ্ধ হয়। এরপর সে লিখতে শুরু করে ধনী পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। সবাই সুখী, প্রচুর অর্থ তাদের। তাদের জীবনে কোনো আর চাওয়া-পাওয়া নেই। সাংবাদিক রাত্রি যাপন করার অভিলাষ ব্যক্ত করে। অতিথি কক্ষে তার রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হয়, সেটিও বিলাসবহুল। এত বিলাসবহুল বাড়িতে সেই সাংবাদিক কখনো থাকেনি। খাবারদাবারও সেই রকম। কিন্তু রাত্রিবেলায় ওই সাংবাদিকের ঘুম আসছিল না। কোথায় যেন কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল। সে পা টিপে টিপে কান্নাকে অনুসরণ করল। গৃহকর্তা গভীর রাতে বাড়ি ফিরেছেন। গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে চরম বাগ্বিতণ্ডা চলছে, ক্ষণে ক্ষণে গৃহকর্ত্রী ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন আবার কখনো উচ্চ স্বরে। বাড়ির ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের এই প্রবল দ্বন্দ্ব শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। একপর্যায়ে গৃহকর্তা বলে উঠলেন, ‘আমি তোমাকে কী দিইনি? বাড়ি, গাড়ি, অর্থ, বিত্ত।’ গৃহকর্ত্রী বলে উঠলেন, ‘হ্যাঁ সব দিয়েছ। কিন্তু একটাই দাওনি তা হচ্ছে সুখ।’ কী রকম যেন অবাক হয়ে যান গৃহকর্তা। বলেন, ‘সুখ, সেটা আবার কী? অর্থবিত্তই তো সুখ।’ স্ত্রী তখন কেঁদেই চলেছেন।
সেই চীন দেশেই বিপ্লবের পর চীনের সম্রাটের ক্ষমতার অবসান হয়। তাঁকে ছোট্ট একটা গৃহে একজন স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে দেওয়া হয়। সেখানে কোনো উপপত্নী বা চাকরবাকর কেউ ছিল না। কোনো অতিথি এলে চীনের সম্রাজ্ঞী নিজে তাঁকে চা করে খাওয়াতেন। এই অবস্থা দেখে অতিথি সম্রাটকে প্রশ্ন করলেন, ‘এ জীবন আপনি কী করে যাপন করছেন? যেখানে আপনার ছিল শত শত উপপত্নী, হাজার হাজার ভৃত্য। আর এখন আপনি এক স্ত্রীকে নিয়ে শুধুই নিঃসঙ্গ।’ সম্রাট সহাস্যে বললেন, ‘আমি যতদিন সম্রাট ছিলাম জীবন কাকে বলে বুঝতে পারিনি। জানতাম না স্বজন কাকে বলে। মানুষে মানুষে সম্পর্কটা কী? জীবনের আনন্দ কোথায়? এখন আমি বুঝতে পারি, বসন্তের বাতাস কেমন, মেঘমুক্ত আকাশ কেমন, শীতের রাত কত কষ্টকর। ক্রীড়াচ্ছলে যখন রাজহাঁসগুলো হ্রদের জলে খেলা করে, সেটা দেখতে কেমন। ঘুম থেকে উঠে যখন বাগানের সামনে নিজ হাতে চা বানিয়ে তা দেখতে কত ভালো লাগছে। আমার সৌভাগ্য বাঁচার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, সেই অর্থ দিয়ে আমি জীবনের স্বাদ পেয়েছি।’
কেউ হয়তো এই দুটি গল্পকে মনে করতে পারেন আত্মকাহিনি। দরিদ্র মানুষদের প্রবোধ দেওয়ার গল্প। ষাটের দশকে একটা নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত সমাজকে দেখেছি। বিত্ত ছিল না, কিন্তু বন্ধুত্ব ছিল।
কী রকম একটা নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখত সবাই। আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী নয়, একেবারেই মাটির কাছাকাছি। সেই অল্প বিত্তের মানুষেরাই রক্ত দিতে দ্বিধা করত না বলে একটা নতুন রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে।
একটা ছোট ঘটনা, একটা মৃত্যু, একটা ছোট্ট অপমান খুব বড় হয়ে দেখা দিত মানুষের হৃদয়ে। কিন্তু এখন সবকিছুই গা-সহা। এখন কেউ মধ্যবিত্ত থাকতে চায় না। রাতারাতি বড়লোক হতে না পারলে নিজের বাড়ি-ঘর বিক্রি করে বিদেশ গিয়ে বড়লোক হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। আর যদি সেটা না হয় তাহলে পেশিশক্তি দিয়ে ঠিকাদারি পেতে হবে। অথবা প্রতিবেশী হিন্দুর বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে তাকে দেশছাড়া করে তার সম্পদ লুণ্ঠন করতে হবে। পূজার সময় একটা বড় সুযোগ এসে যায় কোনো রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধনে এই সুযোগটা সে হাতছাড়া করতে চায় না।
আরেকটা সুযোগ আসে ক্ষমতার পালাবদলের সময়। এই সুযোগটা নিতেও সে প্রস্তুত। এ ছাড়া নিয়োগ-বাণিজ্য আছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা-বাণিজ্যও আছে। দুটিই সমাজকে এক বীভৎসতার মধ্য দিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? হায়রে মানুষ! আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে দেশে একটি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, অকাতরে কীভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে এ দেশের মানুষ প্রাণ দিল। যে দেশের ধূলিকণায় শহীদের রক্ত মিশে আছে, সে দেশে কী করে সবকিছু বিস্মৃত হলাম আমরা। এ পাপ আমাদের ক্ষমা করবে না।
পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদে, টক শোতে, রাজনীতিবিদদের চায়ের কাপে সংস্কৃতিকর্মীদের মানববন্ধনে সর্বত্রই দুর্গাপূজার মণ্ডপে হামলার ঘটনায় ঝড় উঠেছিল। ঝড়টা এখন থেমেছে। যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের আকাশ মেঘমুক্ত হয়নি। ঘরবাড়ি মেরামত হয়নি। আহতরা চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে আসেননি। একমাত্র যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁরা ছাড়া। দেশে সংবাদের অভাব নেই, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তর্কোন্দল-মারামারি শীর্ষ সংবাদ হয়ে এসেছে। একটি ছাত্র গুরুতরভাবে আহত হয়ে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে আছে। এর মধ্যেই নির্বাচনী সহিংসতা চলছে, দু-চারজন মারাও গেছে। এহেন নানা সংবাদের মধ্যে বড় দুঃসংবাদ হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একের পর এক জেতা খেলাগুলো হারছে। বাকি খেলাগুলোতেও হারার ব্যাপারে প্রায়
সবাই নিশ্চিত।
প্রথম যে সংবাদটির কথা বলা হলো তাকে ম্লান করার জন্য পরের সংবাদগুলো যথেষ্ট। এবং সবগুলো সংবাদেই নিত্যদিনের ছোট্ট স্মৃতিকথায় মিলিয়ে যায়। আমরা সংবাদকে একধরনের বিনোদন হিসেবে ভাবতে শুরু করেছি। সে সংবাদ মৃত্যুসংবাদ হোক আর আনন্দের সংবাদ হোক। সমস্ত জাতি কি একটা রোগে আক্রান্ত হয়ে গেল যে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়াই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী যার যার নিজের ভবিষ্যৎ বা যাকে বলে আখের গোছানো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে ভবিষ্যতে জাতি থাকে না, সমাজ থাকে না, পাড়াপড়শিরা থাকে না, থাকে শুধু আমি এবং আমার পরিবার। পরিবারের নিরাপত্তার জন্য কোনো আদর্শবোধ নয়, বিষয়ভাবনা নয়, থাকে শুধু অর্থভাবনা। অর্থই যেন নিরাপত্তার একমাত্র উপায়। সেই অর্থের প্রয়োজনে সব মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, সম্পর্ক হারিয়ে যাচ্ছে। জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়ে যাচ্ছে। অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করাকে অন্যায় মনে হচ্ছে না, মুহূর্তে চোখ ওলটানোকে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
করোনায় আক্রান্ত এক শিল্পপতি ডাক্তারকে বলছেন, আমার সব সম্পদ নিয়ে নিন, বিনিময়ে আমি বাঁচতে চাই। তিনি বাঁচতে পারেননি বটে তবে মৃত্যুর পরেই তাঁর সম্পদ তাঁর কাছ থেকে বহুদূর চলে যায়। এই সম্পদ তিনি ভোগও করতে পারেননি। মৃত্যুর পরে মানুষ যেমন আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়, তেমনি প্রথম তার বিচ্ছেদ ঘটে সম্পদের কাছ থেকে। তাই বলে কি মানুষ সম্পদ আহরণ করবে না? জীবনধারণের জন্য তো সম্পদ প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কতটা প্রয়োজন? তলস্তয়ের ভাষায়, একটা মানুষের জীবনে কতটুকু জায়গা প্রয়োজন? এসব আপ্তবাক্য বলে লাভ নেই, কারণ কেমন করে যেন মানুষ বুঝে ফেলেছে জীবনে সুখ ও নিরাপত্তার একটাই উপায় আর তা হচ্ছে অর্থ, টাকা চাই।
সরকারি চাকুরেরা যে বেতন পায়, তা দিয়ে চলতে পারে না। সরকার এক লাফে বেতন বাড়িয়ে দিল দ্বিগুণ। সরকারের মধ্যে কারও কারও চিন্তা বেতন দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু দেখা গেল দুর্নীতিও দ্বিগুণ, তিন গুণ হয়ে গেল। দেশে মহামারি এল, সরকার মহামারিরোধে ত্বরিত ব্যবস্থা নিল। সেই ত্বরিত ব্যবস্থায় সবচেয়ে সুবিধাবাদী হলো দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী এবং আমলারা। ব্যবসায়ীরা রাতারাতি আঙুল ফুলে আবার কলাগাছ হয়ে গেল। মহামারির আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁদের কোনো যায় আসে না। এটা কি পৃথিবীর সব দেশে হয়? হয়তো হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে শীর্ষে।
একবার বিপ্লবের আগে চীন দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা বেইজিং শহরে কত সুখী পরিবার আছে, তার একটা পরিসংখ্যান করতে চাইল। প্রথম পরিসংখ্যান হলো ধনী ব্যক্তিদের নিয়ে। একজন সাংবাদিককে বিশেষভাবে নিয়োগ দেওয়া হলো, সেই সাংবাদিক যে প্রাসাদোপম বাড়িতে যায়, তার মূল্যবান আসবাব, চাকরবাকর, দারোয়ানদের কর্মব্যস্ততা দেখে মুগ্ধ হয়। এরপর সে লিখতে শুরু করে ধনী পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। সবাই সুখী, প্রচুর অর্থ তাদের। তাদের জীবনে কোনো আর চাওয়া-পাওয়া নেই। সাংবাদিক রাত্রি যাপন করার অভিলাষ ব্যক্ত করে। অতিথি কক্ষে তার রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হয়, সেটিও বিলাসবহুল। এত বিলাসবহুল বাড়িতে সেই সাংবাদিক কখনো থাকেনি। খাবারদাবারও সেই রকম। কিন্তু রাত্রিবেলায় ওই সাংবাদিকের ঘুম আসছিল না। কোথায় যেন কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল। সে পা টিপে টিপে কান্নাকে অনুসরণ করল। গৃহকর্তা গভীর রাতে বাড়ি ফিরেছেন। গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে চরম বাগ্বিতণ্ডা চলছে, ক্ষণে ক্ষণে গৃহকর্ত্রী ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন আবার কখনো উচ্চ স্বরে। বাড়ির ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের এই প্রবল দ্বন্দ্ব শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। একপর্যায়ে গৃহকর্তা বলে উঠলেন, ‘আমি তোমাকে কী দিইনি? বাড়ি, গাড়ি, অর্থ, বিত্ত।’ গৃহকর্ত্রী বলে উঠলেন, ‘হ্যাঁ সব দিয়েছ। কিন্তু একটাই দাওনি তা হচ্ছে সুখ।’ কী রকম যেন অবাক হয়ে যান গৃহকর্তা। বলেন, ‘সুখ, সেটা আবার কী? অর্থবিত্তই তো সুখ।’ স্ত্রী তখন কেঁদেই চলেছেন।
সেই চীন দেশেই বিপ্লবের পর চীনের সম্রাটের ক্ষমতার অবসান হয়। তাঁকে ছোট্ট একটা গৃহে একজন স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে দেওয়া হয়। সেখানে কোনো উপপত্নী বা চাকরবাকর কেউ ছিল না। কোনো অতিথি এলে চীনের সম্রাজ্ঞী নিজে তাঁকে চা করে খাওয়াতেন। এই অবস্থা দেখে অতিথি সম্রাটকে প্রশ্ন করলেন, ‘এ জীবন আপনি কী করে যাপন করছেন? যেখানে আপনার ছিল শত শত উপপত্নী, হাজার হাজার ভৃত্য। আর এখন আপনি এক স্ত্রীকে নিয়ে শুধুই নিঃসঙ্গ।’ সম্রাট সহাস্যে বললেন, ‘আমি যতদিন সম্রাট ছিলাম জীবন কাকে বলে বুঝতে পারিনি। জানতাম না স্বজন কাকে বলে। মানুষে মানুষে সম্পর্কটা কী? জীবনের আনন্দ কোথায়? এখন আমি বুঝতে পারি, বসন্তের বাতাস কেমন, মেঘমুক্ত আকাশ কেমন, শীতের রাত কত কষ্টকর। ক্রীড়াচ্ছলে যখন রাজহাঁসগুলো হ্রদের জলে খেলা করে, সেটা দেখতে কেমন। ঘুম থেকে উঠে যখন বাগানের সামনে নিজ হাতে চা বানিয়ে তা দেখতে কত ভালো লাগছে। আমার সৌভাগ্য বাঁচার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, সেই অর্থ দিয়ে আমি জীবনের স্বাদ পেয়েছি।’
কেউ হয়তো এই দুটি গল্পকে মনে করতে পারেন আত্মকাহিনি। দরিদ্র মানুষদের প্রবোধ দেওয়ার গল্প। ষাটের দশকে একটা নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত সমাজকে দেখেছি। বিত্ত ছিল না, কিন্তু বন্ধুত্ব ছিল।
কী রকম একটা নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখত সবাই। আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী নয়, একেবারেই মাটির কাছাকাছি। সেই অল্প বিত্তের মানুষেরাই রক্ত দিতে দ্বিধা করত না বলে একটা নতুন রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে।
একটা ছোট ঘটনা, একটা মৃত্যু, একটা ছোট্ট অপমান খুব বড় হয়ে দেখা দিত মানুষের হৃদয়ে। কিন্তু এখন সবকিছুই গা-সহা। এখন কেউ মধ্যবিত্ত থাকতে চায় না। রাতারাতি বড়লোক হতে না পারলে নিজের বাড়ি-ঘর বিক্রি করে বিদেশ গিয়ে বড়লোক হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। আর যদি সেটা না হয় তাহলে পেশিশক্তি দিয়ে ঠিকাদারি পেতে হবে। অথবা প্রতিবেশী হিন্দুর বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে তাকে দেশছাড়া করে তার সম্পদ লুণ্ঠন করতে হবে। পূজার সময় একটা বড় সুযোগ এসে যায় কোনো রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধনে এই সুযোগটা সে হাতছাড়া করতে চায় না।
আরেকটা সুযোগ আসে ক্ষমতার পালাবদলের সময়। এই সুযোগটা নিতেও সে প্রস্তুত। এ ছাড়া নিয়োগ-বাণিজ্য আছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা-বাণিজ্যও আছে। দুটিই সমাজকে এক বীভৎসতার মধ্য দিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? হায়রে মানুষ! আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে দেশে একটি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, অকাতরে কীভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে এ দেশের মানুষ প্রাণ দিল। যে দেশের ধূলিকণায় শহীদের রক্ত মিশে আছে, সে দেশে কী করে সবকিছু বিস্মৃত হলাম আমরা। এ পাপ আমাদের ক্ষমা করবে না।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
৯ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৯ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
৯ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৯ ঘণ্টা আগে