জাহীদ রেজা নূর
আফগানিস্তানের হেরাতে কিছুসংখ্যক নারী নিজেদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। তালেবান নেতৃত্বের কাছে তাঁরা দাবি করেছেন, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং কাজের অধিকার যেন খর্ব না হয়। এগুলো যেকোনো মানুষের মৌলিক অধিকার।
এই প্রতিবাদকারীদের নেতা ফ্রিবা কাবরাজানি দাবি করেছেন, নতুন সরকারে যেন নারীদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, প্রতিনিধিত্ব থাকে মন্ত্রিত্বে এবং উপদেষ্টামণ্ডলীতে। গত ২০ বছরে বহু সংগ্রামের পর যে অধিকারগুলো আদায় করে নেওয়া হয়েছে, তা রক্ষা করার জন্য সোচ্চার হয়েছেন তাঁরা।
এই তো, দুদিন আগে কাবুলেও নারীরা দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য। তালেবান তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
এই দুটো ঘটনা দেখে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, কেমন আছেন আফগানিস্তানের নারীরা, কেমন আছেন তরুণেরা? এ মুহূর্তে দেশের কথা বাদ রেখে আফগানিস্তানের কথা বলা হচ্ছে শুধু এই কারণে যে, সারা বিশ্বের চোখ এখন আফগানিস্তানের দিকে, তাই কয়েক বছর ধরে আফগানিস্তানে কী হচ্ছে, কী ভাবছেন আফগান নারী ও তারুণ্য, সেটা জেনে রাখা প্রয়োজন।
শহরের তরুণদের সংকট
আফগান জীবনে সরকারের চেয়েও শক্তিশালী হলো ঐতিহ্য। নিজ এলাকার বিজ্ঞজনেরা যে ভাবনাকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন, সেটাই হয়ে যায় আইন। সে মতেই চলেন আফগান জনগণ। কথাটা গ্রামীণ আফগানিস্তান সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি সত্য। মুশকিল হলো শহর এলাকা নিয়ে। কাবুল এবং দেশের বড় শহরগুলোর মানুষ তাঁদের জীবনাচরণে পরিবর্তন এনেছিলেন। তালেবানের আয়ত্তে আফগানিস্তান চলে আসার পর অনেকেই তাঁদের জীবনযাপনে ধাক্কা খেতে পারেন বলে শঙ্কিত।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই আফগান তরুণেরা গান ভালোবাসেন, কম্পিউটার গেমসে আনন্দ পান, ফ্যাশনে অভ্যস্ত হন, আধুনিক শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হন, কফি, পারলারে, বইয়ের দোকানে কাজ করেন। এই যে নতুন একটা জীবনাচরণ দাঁড়িয়ে গেছে, তা থেকে বিযুক্ত হলে জীবনের অর্থই বদলে যাবে। এই চিন্তা আফগান শহুরে তরুণদের মনকে বিচলিত করছে।
আফগানিস্তানের ২৫ বছর বয়সী চিত্রকর মাহদি জাহাক মনে করেন, তালেবানের আমলেও শান্তির সম্ভাবনা আছে, যদি গত ২০ বছরে দেশ যা অর্জন করেছে, তা তালেবান মেনে নেয়। নাপিতের কাজ করেন হোসেন। বয়স ১৯ বছর। ইরানে বড় হয়েছেন হোসেন। তালেবান যদি আগের মতো কট্টর রক্ষণশীল না হয়, তাহলে শান্তি আসতেও পারে বলে মনে করেন তিনি।
পিয়ানো বাজায় ১৬ বছরের মারাম আতাইয়া। আফগান জাতীয় সংগীত ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সে। তালেবান শাসনে পিয়ানো বাজাতে পারবে কি না, তা তার জানা নেই। তৎকালীন সরকার ও তালেবানের মধ্যে সংগীতের মুক্তি নিয়ে কোনো চুক্তি হলে বেশ হতো বলে মনে করে সে। সংগীত শিক্ষা নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার অধিকার বলে মনে করে আতাইয়া।
২৪ বছর বয়স্ক আহমেদ দাউদ এখন আর তাঁর বাড়ির বাইরে যান না। ১৫ আগস্ট তালেবান যোদ্ধারা কাবুলে ঢোকার দুদিন পর দাউদকে বলে দিয়েছে দরজিখানা বন্ধ রাখতে। তারা বলেছে, নারীদের কাপড় সেলাই করা পুরুষের কম্ম নয়। এর মানে হলো, দাউদের ব্যবসায় লালবাতি জ্বলেছে, কারণ তাঁর বেশির ভাগ ক্লায়েন্টই নারী। এখন নতুন কোনো কাজের খোঁজ করতে হবে বেচারা দরজিকে। বাবা, দুই ভাই ও দুই বোনের সংসারে দাউদই ছিলেন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছোট ভাই পুলিশে চাকরি করতেন, কিন্তু তালেবান আসার পরে তিনি চাকরি হারিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের নারী চাকরিজীবীদের অনেককেই বলে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন কাজে যোগদান না করেন। যদিও বলা হচ্ছে, কাবুল স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে, কিন্তু মাঝে মাঝেই এমন সব খবর শোনা যায়, যাতে বোঝা যায়, এখনো প্রগাঢ় সংকট মোকাবিলা করছে দেশটি।
স্কুলের কী হবে?
২৫ বছর বয়সী বশির ফারোগ কাবুলের একটি স্কুলের শিক্ষক। তালেবানের আদেশে এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ। তালেবান শাসনে শিক্ষার কী হবে, সেটা নিয়ে চিন্তিত তিনি। যেদিন তালেবান ঢুকল কাবুলে, সেদিন দুপুরে বন্ধ হয়ে গেল স্কুল। অভিভাবকেরা সন্তানদের স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য পাগলের মতো ছুটে এলেন। একে অন্যকে খোঁজার জন্য টেলিফোন করছিলেন তাঁরা। কিন্তু সে সময় টেলিফোন লাইন ছিল বন্ধ।
তালেবানের পক্ষ থেকে এখনো স্কুলবিষয়ক কোনো ঘোষণা আসেনি। ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে ক্লাস করতে পারবে কি না, স্কুলের ইউনিফর্ম আগের মতোই থাকবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটেনি। দাউদ চান, স্কুল খুলে দেওয়া হোক। রক্ষণশীল ড্রেস-কোড যদি মানতে হয়, তবে তা মেনে নিয়েও স্কুল চালু করা দরকার।
তালেবান বলেছে, মেয়েশিশুদের পড়াশোনা বা নারীদের কাজের ব্যাপারে তারা কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি; বরং ইসলামসম্মত পোশাক পরলে যে কেউ স্কুলে বা কাজে যেতে পারবে। এই ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবের যোগাযোগ একেবারেই কম। স্কুল খোলেনি, নারীরা কাজে যাওয়ার মতো ভরসা পাচ্ছেন না। নারী সাংবাদিক ও কর্মজীবী নারীদের অনেকেই বলেছেন, তালেবান তাঁদের সোজা ঘরের পথ
দেখিয়ে দিচ্ছে। সর্বশেষ খবর হলো, নারীদের অধিকার ও সংস্কৃতি নিয়ে পশ্চিমাদের নাক না গলানোর পরামর্শ দিয়েছেন এক তালেবান মুখপাত্র।
চলবে কী করে দেশটা
নির্দিষ্টভাবে তালেবান কিছুই বলছে না, এটাই তারুণ্যকে হতাশ করছে। রাইমা সাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। দুই মাস আগেও তিনি তালেবান নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। ভেবেছিলেন, তালেবান বদলেছে। জুলাই মাসে তিনি আশাবাদী হয়ে বলেছিলেন, পড়াশোনাটা স্বাভাবিকভাবে করতে পারবেন। গত দুই সপ্তাহে তিনি আশাহত। বললেন, অনেক শিক্ষার্থীই এরই মধ্যে আফগানিস্তান ত্যাগ করেছেন। সাদ এখনো কাবুলে আছেন। আশায় আছেন, শিক্ষার ব্যাপারে তালেবান তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করবে।
১৫ আগস্ট অকারণেই কাবুল বিমানবন্দরে হাজার হাজার শঙ্কিত মানুষ দেশ ছাড়ার জন্য একত্র হয়নি। ব্রেইন-ড্রেইন হতে পারে ভেবে তালেবান এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে, দেশ ছেড়ো না, দেশেই কাজ খুঁজে নাও।
তালেবান যে ঘোষণাই করুক না কেন, তারা নিজেরাই আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় সংকটের জন্ম দিতে পারে। এই কৃত্রিম সংকটের জন্য দায়ী হবে তালেবান। কৃত্রিম সংকট বলছি এই কারণে যে, কারণটা তালেবানের বানানো। সাধারণভাবে এই সংকট ছিল না গত ২০ বছরে। সংকটটি হলো, মানবসম্পদের ব্যবহারে রক্ষণশীলতা। অর্থাৎ, দেশের লাখ লাখ নারীকে ঘরে বসিয়ে রাখা হবে, যাঁরা শিক্ষকতা, চিকিৎসাসেবা, পুলিশি সেবা এবং বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছিলেন। দেশের অর্ধেক মানুষকে স্রেফ নারী হওয়ার কারণে সামাজিক জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে সে দেশ এগোবে কী করে? কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সদ্য বেরিয়েছেন মাহজাবিন রামস। কাবুলে তালেবান আগমনের কয়েক দিন আগে রাজধানীর একটি সংবাদপত্রে চাকরি হয়েছিল তাঁর। এ সপ্তাহে সেই পত্রিকা থেকে ফোন করে মাহজাবিনকে জানানো হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য পত্রিকা অফিসে তাঁর যোগদান বন্ধ রাখা হয়েছে। মাহজাবিন নারী—এটাই যে কাজে না নেওয়ার একমাত্র কারণ, সেটা না বললেও বোঝা যায়।
টাকা নয়, স্বাধীনতা
কাবুলে মোহাম্মদ শাপুরের রয়েছে দুটি ওষুধের দোকান। চলছে ভালোই। অন্য অনেকের মতো আর্থিক সংকটে পড়েননি তিনি। খাইরখাঁ নামের বনেদি অঞ্চলেই বাস তাঁর। কিন্তু শাপুরের মন ভালো নেই। তিনি বলেছেন, টাকাই সব নয়। প্রয়োজন হলো স্বাধীনতার। স্বাধীনতার ছোট ছোট উপাদান যদি জীবন থেকে হারিয়ে যেতে থাকে, তাহলেই সব গেল। কোনো রেস্তোরাঁয় পরিবারসহ ডিনার খাওয়া, বিউটি পারলারে গিয়ে সাফসুতরো হয়ে আসা, কোনো প্রদর্শনী দেখতে যাওয়া–এসব যদি জীবনে না থাকে, তাহলে স্বাধীনতাহীন আর্থিকনির্ভরতা জীবনকে গড়ে তুলতে পারে না। শাপুর বলেছেন, ‘এখন প্রতিদিন নিরাপত্তাহীন। ছোটবেলায় অনেক কষ্ট করেছি। না খেয়ে থেকেছি। কিন্তু কখনোই এ রকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি।’
এটাই আসলে মূল কথা। আফগানিস্তান এই সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে কি না, সেটাও এখনো বোঝা যাচ্ছে না। আমরা সবাই চাই, আফগান জনগণ যুদ্ধের বদলে শান্তির দেখা পাক।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আফগানিস্তানের হেরাতে কিছুসংখ্যক নারী নিজেদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। তালেবান নেতৃত্বের কাছে তাঁরা দাবি করেছেন, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং কাজের অধিকার যেন খর্ব না হয়। এগুলো যেকোনো মানুষের মৌলিক অধিকার।
এই প্রতিবাদকারীদের নেতা ফ্রিবা কাবরাজানি দাবি করেছেন, নতুন সরকারে যেন নারীদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, প্রতিনিধিত্ব থাকে মন্ত্রিত্বে এবং উপদেষ্টামণ্ডলীতে। গত ২০ বছরে বহু সংগ্রামের পর যে অধিকারগুলো আদায় করে নেওয়া হয়েছে, তা রক্ষা করার জন্য সোচ্চার হয়েছেন তাঁরা।
এই তো, দুদিন আগে কাবুলেও নারীরা দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য। তালেবান তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
এই দুটো ঘটনা দেখে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, কেমন আছেন আফগানিস্তানের নারীরা, কেমন আছেন তরুণেরা? এ মুহূর্তে দেশের কথা বাদ রেখে আফগানিস্তানের কথা বলা হচ্ছে শুধু এই কারণে যে, সারা বিশ্বের চোখ এখন আফগানিস্তানের দিকে, তাই কয়েক বছর ধরে আফগানিস্তানে কী হচ্ছে, কী ভাবছেন আফগান নারী ও তারুণ্য, সেটা জেনে রাখা প্রয়োজন।
শহরের তরুণদের সংকট
আফগান জীবনে সরকারের চেয়েও শক্তিশালী হলো ঐতিহ্য। নিজ এলাকার বিজ্ঞজনেরা যে ভাবনাকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন, সেটাই হয়ে যায় আইন। সে মতেই চলেন আফগান জনগণ। কথাটা গ্রামীণ আফগানিস্তান সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি সত্য। মুশকিল হলো শহর এলাকা নিয়ে। কাবুল এবং দেশের বড় শহরগুলোর মানুষ তাঁদের জীবনাচরণে পরিবর্তন এনেছিলেন। তালেবানের আয়ত্তে আফগানিস্তান চলে আসার পর অনেকেই তাঁদের জীবনযাপনে ধাক্কা খেতে পারেন বলে শঙ্কিত।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই আফগান তরুণেরা গান ভালোবাসেন, কম্পিউটার গেমসে আনন্দ পান, ফ্যাশনে অভ্যস্ত হন, আধুনিক শিল্পের সঙ্গে পরিচিত হন, কফি, পারলারে, বইয়ের দোকানে কাজ করেন। এই যে নতুন একটা জীবনাচরণ দাঁড়িয়ে গেছে, তা থেকে বিযুক্ত হলে জীবনের অর্থই বদলে যাবে। এই চিন্তা আফগান শহুরে তরুণদের মনকে বিচলিত করছে।
আফগানিস্তানের ২৫ বছর বয়সী চিত্রকর মাহদি জাহাক মনে করেন, তালেবানের আমলেও শান্তির সম্ভাবনা আছে, যদি গত ২০ বছরে দেশ যা অর্জন করেছে, তা তালেবান মেনে নেয়। নাপিতের কাজ করেন হোসেন। বয়স ১৯ বছর। ইরানে বড় হয়েছেন হোসেন। তালেবান যদি আগের মতো কট্টর রক্ষণশীল না হয়, তাহলে শান্তি আসতেও পারে বলে মনে করেন তিনি।
পিয়ানো বাজায় ১৬ বছরের মারাম আতাইয়া। আফগান জাতীয় সংগীত ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সে। তালেবান শাসনে পিয়ানো বাজাতে পারবে কি না, তা তার জানা নেই। তৎকালীন সরকার ও তালেবানের মধ্যে সংগীতের মুক্তি নিয়ে কোনো চুক্তি হলে বেশ হতো বলে মনে করে সে। সংগীত শিক্ষা নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার অধিকার বলে মনে করে আতাইয়া।
২৪ বছর বয়স্ক আহমেদ দাউদ এখন আর তাঁর বাড়ির বাইরে যান না। ১৫ আগস্ট তালেবান যোদ্ধারা কাবুলে ঢোকার দুদিন পর দাউদকে বলে দিয়েছে দরজিখানা বন্ধ রাখতে। তারা বলেছে, নারীদের কাপড় সেলাই করা পুরুষের কম্ম নয়। এর মানে হলো, দাউদের ব্যবসায় লালবাতি জ্বলেছে, কারণ তাঁর বেশির ভাগ ক্লায়েন্টই নারী। এখন নতুন কোনো কাজের খোঁজ করতে হবে বেচারা দরজিকে। বাবা, দুই ভাই ও দুই বোনের সংসারে দাউদই ছিলেন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছোট ভাই পুলিশে চাকরি করতেন, কিন্তু তালেবান আসার পরে তিনি চাকরি হারিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের নারী চাকরিজীবীদের অনেককেই বলে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন কাজে যোগদান না করেন। যদিও বলা হচ্ছে, কাবুল স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে, কিন্তু মাঝে মাঝেই এমন সব খবর শোনা যায়, যাতে বোঝা যায়, এখনো প্রগাঢ় সংকট মোকাবিলা করছে দেশটি।
স্কুলের কী হবে?
২৫ বছর বয়সী বশির ফারোগ কাবুলের একটি স্কুলের শিক্ষক। তালেবানের আদেশে এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ। তালেবান শাসনে শিক্ষার কী হবে, সেটা নিয়ে চিন্তিত তিনি। যেদিন তালেবান ঢুকল কাবুলে, সেদিন দুপুরে বন্ধ হয়ে গেল স্কুল। অভিভাবকেরা সন্তানদের স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য পাগলের মতো ছুটে এলেন। একে অন্যকে খোঁজার জন্য টেলিফোন করছিলেন তাঁরা। কিন্তু সে সময় টেলিফোন লাইন ছিল বন্ধ।
তালেবানের পক্ষ থেকে এখনো স্কুলবিষয়ক কোনো ঘোষণা আসেনি। ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে ক্লাস করতে পারবে কি না, স্কুলের ইউনিফর্ম আগের মতোই থাকবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটেনি। দাউদ চান, স্কুল খুলে দেওয়া হোক। রক্ষণশীল ড্রেস-কোড যদি মানতে হয়, তবে তা মেনে নিয়েও স্কুল চালু করা দরকার।
তালেবান বলেছে, মেয়েশিশুদের পড়াশোনা বা নারীদের কাজের ব্যাপারে তারা কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি; বরং ইসলামসম্মত পোশাক পরলে যে কেউ স্কুলে বা কাজে যেতে পারবে। এই ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবের যোগাযোগ একেবারেই কম। স্কুল খোলেনি, নারীরা কাজে যাওয়ার মতো ভরসা পাচ্ছেন না। নারী সাংবাদিক ও কর্মজীবী নারীদের অনেকেই বলেছেন, তালেবান তাঁদের সোজা ঘরের পথ
দেখিয়ে দিচ্ছে। সর্বশেষ খবর হলো, নারীদের অধিকার ও সংস্কৃতি নিয়ে পশ্চিমাদের নাক না গলানোর পরামর্শ দিয়েছেন এক তালেবান মুখপাত্র।
চলবে কী করে দেশটা
নির্দিষ্টভাবে তালেবান কিছুই বলছে না, এটাই তারুণ্যকে হতাশ করছে। রাইমা সাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। দুই মাস আগেও তিনি তালেবান নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। ভেবেছিলেন, তালেবান বদলেছে। জুলাই মাসে তিনি আশাবাদী হয়ে বলেছিলেন, পড়াশোনাটা স্বাভাবিকভাবে করতে পারবেন। গত দুই সপ্তাহে তিনি আশাহত। বললেন, অনেক শিক্ষার্থীই এরই মধ্যে আফগানিস্তান ত্যাগ করেছেন। সাদ এখনো কাবুলে আছেন। আশায় আছেন, শিক্ষার ব্যাপারে তালেবান তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করবে।
১৫ আগস্ট অকারণেই কাবুল বিমানবন্দরে হাজার হাজার শঙ্কিত মানুষ দেশ ছাড়ার জন্য একত্র হয়নি। ব্রেইন-ড্রেইন হতে পারে ভেবে তালেবান এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে, দেশ ছেড়ো না, দেশেই কাজ খুঁজে নাও।
তালেবান যে ঘোষণাই করুক না কেন, তারা নিজেরাই আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় সংকটের জন্ম দিতে পারে। এই কৃত্রিম সংকটের জন্য দায়ী হবে তালেবান। কৃত্রিম সংকট বলছি এই কারণে যে, কারণটা তালেবানের বানানো। সাধারণভাবে এই সংকট ছিল না গত ২০ বছরে। সংকটটি হলো, মানবসম্পদের ব্যবহারে রক্ষণশীলতা। অর্থাৎ, দেশের লাখ লাখ নারীকে ঘরে বসিয়ে রাখা হবে, যাঁরা শিক্ষকতা, চিকিৎসাসেবা, পুলিশি সেবা এবং বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছিলেন। দেশের অর্ধেক মানুষকে স্রেফ নারী হওয়ার কারণে সামাজিক জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে সে দেশ এগোবে কী করে? কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সদ্য বেরিয়েছেন মাহজাবিন রামস। কাবুলে তালেবান আগমনের কয়েক দিন আগে রাজধানীর একটি সংবাদপত্রে চাকরি হয়েছিল তাঁর। এ সপ্তাহে সেই পত্রিকা থেকে ফোন করে মাহজাবিনকে জানানো হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য পত্রিকা অফিসে তাঁর যোগদান বন্ধ রাখা হয়েছে। মাহজাবিন নারী—এটাই যে কাজে না নেওয়ার একমাত্র কারণ, সেটা না বললেও বোঝা যায়।
টাকা নয়, স্বাধীনতা
কাবুলে মোহাম্মদ শাপুরের রয়েছে দুটি ওষুধের দোকান। চলছে ভালোই। অন্য অনেকের মতো আর্থিক সংকটে পড়েননি তিনি। খাইরখাঁ নামের বনেদি অঞ্চলেই বাস তাঁর। কিন্তু শাপুরের মন ভালো নেই। তিনি বলেছেন, টাকাই সব নয়। প্রয়োজন হলো স্বাধীনতার। স্বাধীনতার ছোট ছোট উপাদান যদি জীবন থেকে হারিয়ে যেতে থাকে, তাহলেই সব গেল। কোনো রেস্তোরাঁয় পরিবারসহ ডিনার খাওয়া, বিউটি পারলারে গিয়ে সাফসুতরো হয়ে আসা, কোনো প্রদর্শনী দেখতে যাওয়া–এসব যদি জীবনে না থাকে, তাহলে স্বাধীনতাহীন আর্থিকনির্ভরতা জীবনকে গড়ে তুলতে পারে না। শাপুর বলেছেন, ‘এখন প্রতিদিন নিরাপত্তাহীন। ছোটবেলায় অনেক কষ্ট করেছি। না খেয়ে থেকেছি। কিন্তু কখনোই এ রকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি।’
এটাই আসলে মূল কথা। আফগানিস্তান এই সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে কি না, সেটাও এখনো বোঝা যাচ্ছে না। আমরা সবাই চাই, আফগান জনগণ যুদ্ধের বদলে শান্তির দেখা পাক।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৮ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৮ ঘণ্টা আগে