ভজন সরকার
সব দলেরই জনপ্রিয়তার পারদ ওঠানামা করছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি অনেক এগিয়ে থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ভোটের দিন যত কাছাকাছি আসছে, লিবারেল পার্টির পারদ তত নেমে যাচ্ছে। এ লেখা যেদিন লিখছি ভোটের মাত্র ১৮ দিন বাকি। ইতিমধ্যেই গত এক সপ্তাহে সব সমীক্ষায় লিবারেল পার্টি পিছিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দল, অর্থাৎ কনজারভেটিভ পার্টি পিছিয়ে থেকে শুরু করেও এখন অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। যদিও কনজারভেটিভ পার্টি যাকে দলনেতা নির্বাচন করেছে, তিনি কানাডিয়ান বিমানবাহিনীর সাবেক অফিসার।
নাম এরিন ওটুল। রাজনীতিতে নতুন হলেও কথাবার্তায় বেশ ভদ্র এবং মার্জিত। পেশাদার সৈনিকের মতো রাজনীতিতেও পরিশীলিত এবং সুশৃঙ্খল। তৃতীয় দলটি, অর্থাৎ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এনডিপি জনপ্রিয়তায় আগের মতোই। ভারতীয় বংশোদ্ভূত দলনেতা জগমৎ সিংকে দিয়ে এনডিপি ভোটের দৌড়ে আর বেশি দূর এগোতে পারবে না। বর্তমান সংসদের তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ফরাসি ভাষাভাষী প্রদেশ কুইবেকের আঞ্চলিক একটি দল। এই দলে কুইবেকের বাইরে অন্য কোথাও শাখা নেই। তাই নিজেদের সরকার গঠনের সামর্থ্য নেই দেখে আলোচনায় এ আঞ্চলিক দলটি নেই।
ফলে আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে সবার আগ্রহ লিবারেল আর কনজারভেটিভ পার্টিকে ঘিরেই। সবার প্রশ্ন, জাস্টিন ট্রুডো কি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? লিবারেল কি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবার? নাকি গতবারের মতোই ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে? লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে আরেকবার মাইনরিটি সরকার গড়তে হবে না তো? নাকি কানাডা নতুন এক প্রধানমন্ত্রীকে পেতে যাচ্ছে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে?
লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা জনমত সমীক্ষায় কেন নিচে নেমে যাচ্ছে? কারণ অনুসন্ধানে প্রধান যে বিষয়টি চলে এসেছে তা হলো, এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের যৌক্তিকতা। আদৌ এই মধ্যবর্তী নির্বাচন দরকার ছিল না বলেই অধিকাংশ কানাডিয়ান মনে করছেন। জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টির সরকারের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পার্লামেন্টে নেই। লিবারেল পার্টিকে সরকারে টিকে থাকতে হলে অন্য একটি বা দুটি দলের সমর্থন দরকার। এ ক্ষেত্রে এনডিপি তো লিবারেল পার্টির কাছাকাছি আদর্শের দল। তা ছাড়া, ফরাসি ভাষাভাষী প্রদেশ কুইবেকের আঞ্চলিক দলটিও প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রায় সব নীতিকে সমর্থনই দিয়ে এসেছে। এই কোভিডকালে সরকারের কোনো কাজে বিরোধী দল বাধা দেয়নি। তবু কেন লিবারেল প্রধানমন্ত্রী এই কোভিড পরিস্থিতিতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটিই সবার প্রশ্ন এবং বিস্ময়।
এই বিস্ময়ের কারণেই লিবারেল পার্টি জনমত সমীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে। লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কোভিডকালে প্রচুর নগদ অর্থ সাহায্য দিয়েছেন। সাধারণ নাগরিক থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা সবাই অর্থ অনুদান পেয়েছেন। বাছবিচারহীন এ অর্থ সাহায্য নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের কথাও উঠেছে। তবু এ কথা বিরোধী দলসহ সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছে যে কোভিডকালীন এ নগদ অর্থ সাহায্য পেয়ে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছেন, বিশেষ করে যাঁরা কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছিলেন। লিবারেল নেতা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মানুষের এই সেন্টিমেন্টকেই হয়তো কাজে লাগিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে চাইছেন।
লিবারেল পার্টির এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটি ২০ সেপ্টেম্বর ভোটের রায়ে বোঝা যাবে। তবে বর্তমানে ভোটের হাওয়া যে লিবারেল পার্টি বা জাস্টিন ট্রুডোর অনুকূলে নয়, সেটি জনমত সমীক্ষায় দিন দিনই স্পষ্ট হচ্ছে।
কোভিডকালীন অর্থ অনুদান যে লিবারেল পার্টি বা জাস্টিন ট্রুডোর নিজস্ব সম্পদ নয়, সেটি শিক্ষিত এবং সচেতন কানাডিয়ানরা ভালো করেই জানেন। তা ছাড়া, এই অর্থ অনুদানের ব্যাপারে বিরোধী দল থেকে তেমন জোরালো আপত্তি ওঠেনি; বরং অর্থ বণ্টনে সরকারের স্বচ্ছতা রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বিরোধী দল বারবার দাবি তুলেছে, যা জনগণ ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছেন। ফলে জাস্টিন
ট্রুডোর এই কোভিড-কৌশল তেমন কাজে লাগেনি।
অন্যদিকে উন্নত দেশ হিসেবে কানাডার কোভিড মহামারি মোকাবিলা এবং ব্যবস্থাপনা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশ নিম্নমানের ছিল। জনসংখ্যার তুলনায় কোভিডে মৃত্যুহার কানাডায় অনেক বেশি। তা ছাড়া, কোভিডের টিকা আমদানি এবং উৎপাদন নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপই প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে নিতে দেখা যায়নি; বিশেষ করে টিকা আমদানির ব্যাপারে লিবারেল পার্টির সরকারের দূরদর্শিতার চরম অভাব কানাডিয়ানদের ক্ষুব্ধ করেছে।
সারা বিশ্বে এখনো কোভিড মহামারি ব্যাপকভাবেই চলছে। কানাডায়ও সবেমাত্র কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হলো। ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। তাই এ সময়ে স্পষ্টতই অপ্রয়োজনীয় এই মধ্যবর্তী নির্বাচন তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলবে বলেই সবার ধারণা। আর এর জন্য দায়ী লিবারেল পার্টি এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
ইতিমধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আফগানিস্তান সংকট প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে আরও বেশি বিপদে ফেলেছে। প্রতিবেশী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আফগানিস্তানে চরম ব্যর্থতার দায়ভার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর ঘাড়েও পড়েছে। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বেশ রাখঢাকহীনভাবেই জো বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছিলেন। যদিও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতাসীন হয়ে প্রথম দিনেই কানাডার তেলের পাইপলাইন প্রকল্পটির চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করেছিলেন কোনো আলোচনা ছাড়াই। এই ব্যর্থতাও প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে এবারের নির্বাচনে
বেশ বিপদে ফেলবে বলেই অনেকে মনে করছেন।
বিগত নির্বাচনে লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডো পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেননি। কানাডার ইতিহাসে সেই প্রথম, যেখানে একটি শাসক দল দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে কোনো আসন তো পায়ইনি; বরং প্রদত্ত ভোটের মাত্র ১০ শতাংশ পেয়েছিল। কারণ, লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছিলেন এ দুটো প্রদেশে। এবারে আমেরিকা দ্বারা পাইপলাইন চুক্তি বাতিল করার ফলে মানুষের সামনে থেকে শেষ প্রদীপের সলতেটিও নিভে গেছে। ফলে এই দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে এবারেও ভোটের ফলাফলে লিবারেল পার্টি তেমন ভালো করতে পারবে না বলেই
সবার ধারণা।
গতবারের নির্বাচনের মতো এবারেও তাই লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডোর ভরসা ওন্টারিও প্রদেশের ইমিগ্র্যান্ট-অধ্যুষিত এলাকাগুলো। সেই সঙ্গে ফরাসি ভাষাভাষী প্রদেশ কুইবেকের আঞ্চলিক দলের ব্যর্থতার দিকে তাকিয়ে থেকে বিকল্প হিসেবে লিবারেল পার্টিকে ভোট দেয় কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা। কেবল এ দুটো প্রদেশই জাস্টিন ট্রুডোকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে সাহায্য করতে পারে।
যদিও আগাম জনমত সমীক্ষায় স্পষ্টত এক অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে লিবারেল পার্টি এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সামনে। তবু এ কথা এখনো স্পষ্ট করে বলা যাবে না যে, ২০ সেপ্টেম্বর কানাডিয়ানরা সরকার পরিবর্তন করবেন, নাকি বর্তমান সরকারকে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু যেকোনোভাবেই পুনর্নির্বাচিত করবেন।
কানাডাপ্রবাসী প্রকৌশলী ও গবেষক
সব দলেরই জনপ্রিয়তার পারদ ওঠানামা করছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি অনেক এগিয়ে থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ভোটের দিন যত কাছাকাছি আসছে, লিবারেল পার্টির পারদ তত নেমে যাচ্ছে। এ লেখা যেদিন লিখছি ভোটের মাত্র ১৮ দিন বাকি। ইতিমধ্যেই গত এক সপ্তাহে সব সমীক্ষায় লিবারেল পার্টি পিছিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দল, অর্থাৎ কনজারভেটিভ পার্টি পিছিয়ে থেকে শুরু করেও এখন অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। যদিও কনজারভেটিভ পার্টি যাকে দলনেতা নির্বাচন করেছে, তিনি কানাডিয়ান বিমানবাহিনীর সাবেক অফিসার।
নাম এরিন ওটুল। রাজনীতিতে নতুন হলেও কথাবার্তায় বেশ ভদ্র এবং মার্জিত। পেশাদার সৈনিকের মতো রাজনীতিতেও পরিশীলিত এবং সুশৃঙ্খল। তৃতীয় দলটি, অর্থাৎ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এনডিপি জনপ্রিয়তায় আগের মতোই। ভারতীয় বংশোদ্ভূত দলনেতা জগমৎ সিংকে দিয়ে এনডিপি ভোটের দৌড়ে আর বেশি দূর এগোতে পারবে না। বর্তমান সংসদের তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ফরাসি ভাষাভাষী প্রদেশ কুইবেকের আঞ্চলিক একটি দল। এই দলে কুইবেকের বাইরে অন্য কোথাও শাখা নেই। তাই নিজেদের সরকার গঠনের সামর্থ্য নেই দেখে আলোচনায় এ আঞ্চলিক দলটি নেই।
ফলে আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনে সবার আগ্রহ লিবারেল আর কনজারভেটিভ পার্টিকে ঘিরেই। সবার প্রশ্ন, জাস্টিন ট্রুডো কি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? লিবারেল কি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবার? নাকি গতবারের মতোই ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে? লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে আরেকবার মাইনরিটি সরকার গড়তে হবে না তো? নাকি কানাডা নতুন এক প্রধানমন্ত্রীকে পেতে যাচ্ছে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে?
লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা জনমত সমীক্ষায় কেন নিচে নেমে যাচ্ছে? কারণ অনুসন্ধানে প্রধান যে বিষয়টি চলে এসেছে তা হলো, এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের যৌক্তিকতা। আদৌ এই মধ্যবর্তী নির্বাচন দরকার ছিল না বলেই অধিকাংশ কানাডিয়ান মনে করছেন। জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টির সরকারের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পার্লামেন্টে নেই। লিবারেল পার্টিকে সরকারে টিকে থাকতে হলে অন্য একটি বা দুটি দলের সমর্থন দরকার। এ ক্ষেত্রে এনডিপি তো লিবারেল পার্টির কাছাকাছি আদর্শের দল। তা ছাড়া, ফরাসি ভাষাভাষী প্রদেশ কুইবেকের আঞ্চলিক দলটিও প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রায় সব নীতিকে সমর্থনই দিয়ে এসেছে। এই কোভিডকালে সরকারের কোনো কাজে বিরোধী দল বাধা দেয়নি। তবু কেন লিবারেল প্রধানমন্ত্রী এই কোভিড পরিস্থিতিতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটিই সবার প্রশ্ন এবং বিস্ময়।
এই বিস্ময়ের কারণেই লিবারেল পার্টি জনমত সমীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে। লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কোভিডকালে প্রচুর নগদ অর্থ সাহায্য দিয়েছেন। সাধারণ নাগরিক থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা সবাই অর্থ অনুদান পেয়েছেন। বাছবিচারহীন এ অর্থ সাহায্য নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের কথাও উঠেছে। তবু এ কথা বিরোধী দলসহ সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছে যে কোভিডকালীন এ নগদ অর্থ সাহায্য পেয়ে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছেন, বিশেষ করে যাঁরা কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছিলেন। লিবারেল নেতা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মানুষের এই সেন্টিমেন্টকেই হয়তো কাজে লাগিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে চাইছেন।
লিবারেল পার্টির এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটি ২০ সেপ্টেম্বর ভোটের রায়ে বোঝা যাবে। তবে বর্তমানে ভোটের হাওয়া যে লিবারেল পার্টি বা জাস্টিন ট্রুডোর অনুকূলে নয়, সেটি জনমত সমীক্ষায় দিন দিনই স্পষ্ট হচ্ছে।
কোভিডকালীন অর্থ অনুদান যে লিবারেল পার্টি বা জাস্টিন ট্রুডোর নিজস্ব সম্পদ নয়, সেটি শিক্ষিত এবং সচেতন কানাডিয়ানরা ভালো করেই জানেন। তা ছাড়া, এই অর্থ অনুদানের ব্যাপারে বিরোধী দল থেকে তেমন জোরালো আপত্তি ওঠেনি; বরং অর্থ বণ্টনে সরকারের স্বচ্ছতা রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বিরোধী দল বারবার দাবি তুলেছে, যা জনগণ ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছেন। ফলে জাস্টিন
ট্রুডোর এই কোভিড-কৌশল তেমন কাজে লাগেনি।
অন্যদিকে উন্নত দেশ হিসেবে কানাডার কোভিড মহামারি মোকাবিলা এবং ব্যবস্থাপনা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশ নিম্নমানের ছিল। জনসংখ্যার তুলনায় কোভিডে মৃত্যুহার কানাডায় অনেক বেশি। তা ছাড়া, কোভিডের টিকা আমদানি এবং উৎপাদন নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপই প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে নিতে দেখা যায়নি; বিশেষ করে টিকা আমদানির ব্যাপারে লিবারেল পার্টির সরকারের দূরদর্শিতার চরম অভাব কানাডিয়ানদের ক্ষুব্ধ করেছে।
সারা বিশ্বে এখনো কোভিড মহামারি ব্যাপকভাবেই চলছে। কানাডায়ও সবেমাত্র কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হলো। ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। তাই এ সময়ে স্পষ্টতই অপ্রয়োজনীয় এই মধ্যবর্তী নির্বাচন তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলবে বলেই সবার ধারণা। আর এর জন্য দায়ী লিবারেল পার্টি এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
ইতিমধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আফগানিস্তান সংকট প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে আরও বেশি বিপদে ফেলেছে। প্রতিবেশী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আফগানিস্তানে চরম ব্যর্থতার দায়ভার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর ঘাড়েও পড়েছে। কারণ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বেশ রাখঢাকহীনভাবেই জো বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছিলেন। যদিও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতাসীন হয়ে প্রথম দিনেই কানাডার তেলের পাইপলাইন প্রকল্পটির চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করেছিলেন কোনো আলোচনা ছাড়াই। এই ব্যর্থতাও প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে এবারের নির্বাচনে
বেশ বিপদে ফেলবে বলেই অনেকে মনে করছেন।
বিগত নির্বাচনে লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডো পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেননি। কানাডার ইতিহাসে সেই প্রথম, যেখানে একটি শাসক দল দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে কোনো আসন তো পায়ইনি; বরং প্রদত্ত ভোটের মাত্র ১০ শতাংশ পেয়েছিল। কারণ, লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছিলেন এ দুটো প্রদেশে। এবারে আমেরিকা দ্বারা পাইপলাইন চুক্তি বাতিল করার ফলে মানুষের সামনে থেকে শেষ প্রদীপের সলতেটিও নিভে গেছে। ফলে এই দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে এবারেও ভোটের ফলাফলে লিবারেল পার্টি তেমন ভালো করতে পারবে না বলেই
সবার ধারণা।
গতবারের নির্বাচনের মতো এবারেও তাই লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডোর ভরসা ওন্টারিও প্রদেশের ইমিগ্র্যান্ট-অধ্যুষিত এলাকাগুলো। সেই সঙ্গে ফরাসি ভাষাভাষী প্রদেশ কুইবেকের আঞ্চলিক দলের ব্যর্থতার দিকে তাকিয়ে থেকে বিকল্প হিসেবে লিবারেল পার্টিকে ভোট দেয় কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা। কেবল এ দুটো প্রদেশই জাস্টিন ট্রুডোকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে সাহায্য করতে পারে।
যদিও আগাম জনমত সমীক্ষায় স্পষ্টত এক অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে লিবারেল পার্টি এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সামনে। তবু এ কথা এখনো স্পষ্ট করে বলা যাবে না যে, ২০ সেপ্টেম্বর কানাডিয়ানরা সরকার পরিবর্তন করবেন, নাকি বর্তমান সরকারকে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু যেকোনোভাবেই পুনর্নির্বাচিত করবেন।
কানাডাপ্রবাসী প্রকৌশলী ও গবেষক
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৫ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৬ ঘণ্টা আগে