অর্ণব সান্যাল
এ দেশে পদ সব সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাজের বিকেন্দ্রীকরণ যেহেতু শুধু মুখে আছে, কাজে নেই—ফলে পদ হয়ে উঠেছে সব ক্ষমতার মূল। ঘাস কাটতেও তাই পদে থাকা ব্যক্তির অনুমোদন লাগে। তাতেই কি পদের প্রতি মোহ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে?
মোহ তখনই প্রবল হয়, যখন তাতে ক্ষমতার চূড়ান্ত চর্চা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদগুলোও সেভাবেই তৈরি। আমরা যতই নানা নীতির কথা বলি না কেন, আসলে একধরনের ‘সর্বময় ক্ষমতা’ প্রয়োগের উদাহরণ এ দেশে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও একই ঐতিহ্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সবাইকে সমান চোখে দেখার এবং ন্যায়-অন্যায় বা ন্যায্য-অন্যায্যর শিক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও শেষে গিয়ে তা পুঁথিগত বিদ্যাই হয়ে থাকছে। কারণ, শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিদ্যায়তনে সেই শিক্ষার বাস্তব চরিত্রায়ণ খুব কমই দেখতে পান। আর সে কারণেই বোধ হয় পদত্যাগের কথা বললেই কর্তৃপক্ষের প্রধান চরম অস্বস্তিতে পড়ে যান। কারণ, ওই ক্ষমতাদণ্ডটি ছাড়া যে তাঁর কাছে আর কিছু আছে বলে তিনি ভাবতে পারেন না!
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গত কয়েক দিন ধরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি কর্তৃপক্ষের এক অভূতপূর্ব নিস্পৃহভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশনে বসে নিয়মিত বিরতিতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন এবং তাঁদের শারীরিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। তাঁদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। কিন্তু যে পক্ষের দাবি মানার বা সে ব্যাপারে আলোচনা করার কথা, তারা শুকনো কথা ছাড়া আর কিছু দিচ্ছেন না। করা হচ্ছে কিছু ক্লিশে মন্তব্য, যেগুলো যেকোনো আন্দোলনে আমরা বারবারই শুনে থাকি। এই যেমন: ‘এটি উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র’, ‘শিক্ষার্থীরা ভুল পথে চলছেন’, ‘তৃতীয় পক্ষের ফায়দা লোটার চেষ্টা’ ইত্যাদি ইত্যাদি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবি যে ‘অহেতুক’, তা বোঝানোর ইঙ্গিতও দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মতো করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও স্বজাতির (শাবিপ্রবির ভিসি) পাশে দাঁড়াচ্ছেন এবং শিক্ষার্থীদের ‘ভুল’ ধরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালু রেখেছেন। এই তো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ বিবৃতিতে জানিয়ে দিল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ চাওয়া ‘নীতিবহির্ভূত’।
নীতি বা দুর্নীতির সবক যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু নিজেদের ‘দুর্নীতি’ বা স্বজনপ্রীতি নিয়ে কথা বলেন কমই। সংবাদমাধ্যম সূত্রে আমরা আগে দেখেছি যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি বেশ কয়েকজন উপাচার্যের দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে নেমেছে। তখন কি বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ নিজেদের সদস্যদের কর্মকাণ্ডে লজ্জিত হয়ে কোনো বিবৃতি দিয়েছিল? নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার অভাব দেখে কখনো উদ্যোগী হয়ে সে বিষয়ে কোনো স্বাধীন কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল? নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের (যেকোনো সময়কালের) দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে ‘গভীরতর’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ?
আশঙ্কা এই যে ওপরের কোনো বিষয়েই ইতিবাচক উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এখন কর্তৃপক্ষের অবস্থাই যদি অভিভাবকসুলভ ও নিরপেক্ষ বা স্বাধীন না হয়, তবে কি কোনো সংকটে তার ‘নীতি’র কথা বলা মানায়? যদিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর অধিকাংশ, বিশেষ করে ভিসিরা শাবিপ্রবির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দাবিকে কোণঠাসা করে নিজেদের ‘ঠিক’ পথে দৌড়ানোর তত্ত্ব আওড়েই যাচ্ছেন। এ যেন নতুন এক ‘মেটাভার্স’ সৃষ্টির আনন্দ! যেখানে বিদ্যমান বাস্তবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চোখ-কান বন্ধ করে প্রলাপ বকে যাওয়া যায়। এই প্রক্রিয়ায় এমন এক নতুন বাস্তবতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে, যার কোনো শিকড় বাস্তবে নেই। বরং বারবার বলে কোনো একটি কল্পিত বিষয়কে ‘সত্যি’ বানানোর চেষ্টা চলছে পুরোদমে।
ঠিক এমন এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই শিক্ষার্থীরা তারস্বরে চিৎকার করে যাচ্ছেন। নিজেদের দাবি জানাচ্ছেন। শুরুটা হয়েছিল ‘ভিসি’ পদের ক্ষমতার হিসাবে খুবই সামান্য দাবি তুলে। কিন্তু বর্তমানে ‘ট্রেন্ড’ হলো এই, কর্তৃপক্ষ হলে তো আর দাবি মানা চলে না! সুতরাং ছোট বা বড় সব ধরনের দাবিকে তাচ্ছিল্য বা উপেক্ষা করার একটি প্রবণতা চলে আসে। আর কোনো দাবিই আমলে না নেওয়ার সংস্কৃতি আসলে তৈরি করে ‘দণ্ডমুণ্ডের কর্তা’ হওয়ার লোভ! যখন আপনি দেখবেন, আপনার এক অঙ্গুলি হেলনে অনেকেই হেলে পড়ছে বা মাথা নিচু করতে বাধ্য করা যাচ্ছে, তখন সেটি ব্যাপকভাবে সংক্রামক হয়ে পড়তে বাধ্য। এর সঙ্গে যদি যা খুশি তাই করে কালো, নীল বা গোলাপি (সাদা বাদে যেকোনো রং) অর্থযোগের লাইসেন্স মেলে, তবে তো কথাই নেই। তখন ‘ম্যাজিক’ দেখতে আপনার বারংবার আঙুল নাড়ানোর ইচ্ছে জাগবে! ঠিক সেই সময়টায় কারও ন্যায্য কথা মনে ধরবে না আর। বোধ হবে—ওঁদের কথা শুনব কেন?
এই মানসিক অবস্থা সৃষ্টি হলেই গদিনসিন শিক্ষকেরা আর শিক্ষা বিলানোর অবস্থায় থাকেন না বরং ‘শিক্ষা দেওয়ার’ জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। শুধু ভিসি নন, এ দেশে তোয়ালে মোড়ানো নরম গদিতে যাঁরাই বসে থাকেন, সবাই নিজেকে রাজা বা রানি ভাবতেই ভালোবাসেন। মনেপ্রাণে কামনা করেন এমন একটি অনুগত প্রজাবাহিনী, যারা কিনা গলা কাটা গেলেও মালিকের নাক কাটার কথা ভাববে না! বরং ‘আমরা সবাই রাজা’ গানের পঙ্ক্তি চিরতরে মুছে দিতেই ব্যস্ত থাকবে। এর ব্যত্যয় হলেই শুরু হয় রোষানল। আর তাতেও কাজ না হয়ে ‘বিপদ’ (মতান্তরে আন্দোলন) জারি থাকলে চালু হয় পদ আঁকড়ে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা।
আশার কথা হলো, এই বঙ্গে তেমন চেষ্টা বেশি দিন সফলতা ধরে রাখতে পারেনি। কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত, ধান চাষ না হলে জমিয়ে মুড়িমাখা খাওয়ার স্বপ্ন যে কল্পলোকেই থেকে যায়! এর চেয়ে ‘ত্যাগ’ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তবে ত্যাগই ভালো!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
এ দেশে পদ সব সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাজের বিকেন্দ্রীকরণ যেহেতু শুধু মুখে আছে, কাজে নেই—ফলে পদ হয়ে উঠেছে সব ক্ষমতার মূল। ঘাস কাটতেও তাই পদে থাকা ব্যক্তির অনুমোদন লাগে। তাতেই কি পদের প্রতি মোহ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে?
মোহ তখনই প্রবল হয়, যখন তাতে ক্ষমতার চূড়ান্ত চর্চা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদগুলোও সেভাবেই তৈরি। আমরা যতই নানা নীতির কথা বলি না কেন, আসলে একধরনের ‘সর্বময় ক্ষমতা’ প্রয়োগের উদাহরণ এ দেশে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও একই ঐতিহ্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সবাইকে সমান চোখে দেখার এবং ন্যায়-অন্যায় বা ন্যায্য-অন্যায্যর শিক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও শেষে গিয়ে তা পুঁথিগত বিদ্যাই হয়ে থাকছে। কারণ, শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিদ্যায়তনে সেই শিক্ষার বাস্তব চরিত্রায়ণ খুব কমই দেখতে পান। আর সে কারণেই বোধ হয় পদত্যাগের কথা বললেই কর্তৃপক্ষের প্রধান চরম অস্বস্তিতে পড়ে যান। কারণ, ওই ক্ষমতাদণ্ডটি ছাড়া যে তাঁর কাছে আর কিছু আছে বলে তিনি ভাবতে পারেন না!
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গত কয়েক দিন ধরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি কর্তৃপক্ষের এক অভূতপূর্ব নিস্পৃহভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশনে বসে নিয়মিত বিরতিতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন এবং তাঁদের শারীরিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। তাঁদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। কিন্তু যে পক্ষের দাবি মানার বা সে ব্যাপারে আলোচনা করার কথা, তারা শুকনো কথা ছাড়া আর কিছু দিচ্ছেন না। করা হচ্ছে কিছু ক্লিশে মন্তব্য, যেগুলো যেকোনো আন্দোলনে আমরা বারবারই শুনে থাকি। এই যেমন: ‘এটি উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র’, ‘শিক্ষার্থীরা ভুল পথে চলছেন’, ‘তৃতীয় পক্ষের ফায়দা লোটার চেষ্টা’ ইত্যাদি ইত্যাদি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবি যে ‘অহেতুক’, তা বোঝানোর ইঙ্গিতও দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মতো করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও স্বজাতির (শাবিপ্রবির ভিসি) পাশে দাঁড়াচ্ছেন এবং শিক্ষার্থীদের ‘ভুল’ ধরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালু রেখেছেন। এই তো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ বিবৃতিতে জানিয়ে দিল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ চাওয়া ‘নীতিবহির্ভূত’।
নীতি বা দুর্নীতির সবক যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু নিজেদের ‘দুর্নীতি’ বা স্বজনপ্রীতি নিয়ে কথা বলেন কমই। সংবাদমাধ্যম সূত্রে আমরা আগে দেখেছি যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি বেশ কয়েকজন উপাচার্যের দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে নেমেছে। তখন কি বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ নিজেদের সদস্যদের কর্মকাণ্ডে লজ্জিত হয়ে কোনো বিবৃতি দিয়েছিল? নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার অভাব দেখে কখনো উদ্যোগী হয়ে সে বিষয়ে কোনো স্বাধীন কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল? নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের (যেকোনো সময়কালের) দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে ‘গভীরতর’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ?
আশঙ্কা এই যে ওপরের কোনো বিষয়েই ইতিবাচক উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এখন কর্তৃপক্ষের অবস্থাই যদি অভিভাবকসুলভ ও নিরপেক্ষ বা স্বাধীন না হয়, তবে কি কোনো সংকটে তার ‘নীতি’র কথা বলা মানায়? যদিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর অধিকাংশ, বিশেষ করে ভিসিরা শাবিপ্রবির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দাবিকে কোণঠাসা করে নিজেদের ‘ঠিক’ পথে দৌড়ানোর তত্ত্ব আওড়েই যাচ্ছেন। এ যেন নতুন এক ‘মেটাভার্স’ সৃষ্টির আনন্দ! যেখানে বিদ্যমান বাস্তবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চোখ-কান বন্ধ করে প্রলাপ বকে যাওয়া যায়। এই প্রক্রিয়ায় এমন এক নতুন বাস্তবতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে, যার কোনো শিকড় বাস্তবে নেই। বরং বারবার বলে কোনো একটি কল্পিত বিষয়কে ‘সত্যি’ বানানোর চেষ্টা চলছে পুরোদমে।
ঠিক এমন এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই শিক্ষার্থীরা তারস্বরে চিৎকার করে যাচ্ছেন। নিজেদের দাবি জানাচ্ছেন। শুরুটা হয়েছিল ‘ভিসি’ পদের ক্ষমতার হিসাবে খুবই সামান্য দাবি তুলে। কিন্তু বর্তমানে ‘ট্রেন্ড’ হলো এই, কর্তৃপক্ষ হলে তো আর দাবি মানা চলে না! সুতরাং ছোট বা বড় সব ধরনের দাবিকে তাচ্ছিল্য বা উপেক্ষা করার একটি প্রবণতা চলে আসে। আর কোনো দাবিই আমলে না নেওয়ার সংস্কৃতি আসলে তৈরি করে ‘দণ্ডমুণ্ডের কর্তা’ হওয়ার লোভ! যখন আপনি দেখবেন, আপনার এক অঙ্গুলি হেলনে অনেকেই হেলে পড়ছে বা মাথা নিচু করতে বাধ্য করা যাচ্ছে, তখন সেটি ব্যাপকভাবে সংক্রামক হয়ে পড়তে বাধ্য। এর সঙ্গে যদি যা খুশি তাই করে কালো, নীল বা গোলাপি (সাদা বাদে যেকোনো রং) অর্থযোগের লাইসেন্স মেলে, তবে তো কথাই নেই। তখন ‘ম্যাজিক’ দেখতে আপনার বারংবার আঙুল নাড়ানোর ইচ্ছে জাগবে! ঠিক সেই সময়টায় কারও ন্যায্য কথা মনে ধরবে না আর। বোধ হবে—ওঁদের কথা শুনব কেন?
এই মানসিক অবস্থা সৃষ্টি হলেই গদিনসিন শিক্ষকেরা আর শিক্ষা বিলানোর অবস্থায় থাকেন না বরং ‘শিক্ষা দেওয়ার’ জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। শুধু ভিসি নন, এ দেশে তোয়ালে মোড়ানো নরম গদিতে যাঁরাই বসে থাকেন, সবাই নিজেকে রাজা বা রানি ভাবতেই ভালোবাসেন। মনেপ্রাণে কামনা করেন এমন একটি অনুগত প্রজাবাহিনী, যারা কিনা গলা কাটা গেলেও মালিকের নাক কাটার কথা ভাববে না! বরং ‘আমরা সবাই রাজা’ গানের পঙ্ক্তি চিরতরে মুছে দিতেই ব্যস্ত থাকবে। এর ব্যত্যয় হলেই শুরু হয় রোষানল। আর তাতেও কাজ না হয়ে ‘বিপদ’ (মতান্তরে আন্দোলন) জারি থাকলে চালু হয় পদ আঁকড়ে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা।
আশার কথা হলো, এই বঙ্গে তেমন চেষ্টা বেশি দিন সফলতা ধরে রাখতে পারেনি। কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত, ধান চাষ না হলে জমিয়ে মুড়িমাখা খাওয়ার স্বপ্ন যে কল্পলোকেই থেকে যায়! এর চেয়ে ‘ত্যাগ’ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তবে ত্যাগই ভালো!
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
৩ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
৩ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
৩ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
৩ ঘণ্টা আগে