আব্দুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী
আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন যাবৎ রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রাতিষ্ঠানিক গ্যাং কালচার চলছে। এই গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ মুখ খোলে না। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ এই কালচার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। আমরা ধরেই নিয়েছি এই কালচার চলবে—এটাই সমাজের প্রাপ্য।
কোনো ভূমি অফিসে গেলে যেকোনো সাধারণ কাজের জন্য একটি রেট ধার্য করা আছে, কোন টেবিলে কাকে কত টাকা দিতে হবে। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে গেলেই আপনার কাজ হয়ে যাবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলে লেখা টাকার অঙ্ক অনুসারে বিভিন্ন টেবিলে পরিমাণমতো টাকা দেবেন, দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে যাবে। না দিলে দলিলে শত শত ভুল বের হবে। রেজিস্ট্রি হবে কি না, সন্দেহ আছে। এ কথা কি কারও অজানা?
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে যত রকম প্রকৌশল অধিদপ্তরে যাঁরা ঠিকাদারি করেন, তাঁরা ভালোভাবেই জানেন, যে অঙ্কের টাকা বিল আসবে তার কত শতাংশ কোন কোন টেবিলে দিতে হবে। পিডিবি, পল্লী বিদ্যুৎ, ডেসকো, ওয়াসাসহ সব অধিদপ্তর-পরিদপ্তরের
একই অবস্থা।সবার এটা গা সওয়া হয়ে গেছে। ঠিকাদার কিন্তু নিজে লোকসান দিয়ে কাজ করেন না। প্রতিটি কন্ট্রাক্টে যে পরিমাণ ঘুষ বা ‘স্পিড মানি’ দিতে হবে, সেটা যোগ করে ঠিকাদার দরপত্র সাবমিট করেন। এখানে রাষ্ট্রের টাকাই প্রকারান্তরে বিভিন্ন পদে বসা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকাদারের মাধ্যমে লুট করছেন।
একবার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একজন সহকারী কমিশনার কমলাপুর আইসিডি যুগ্ম কমিশনারের কাছে কিছু কাগজপত্র নিয়ে এলেন। সেখানে অনেক ভুলত্রুটি পাওয়া গেল। যুগ্ম কমিশনার মহোদয় সহকারী কমিশনার মহোদয়কে জিজ্ঞেস করলেন তাঁদের কোনো টাইপিস্ট আছে কি না। সহকারী কমিশনার সহজে উত্তর দিলেন, তাঁদের সাতজন টাইপিস্ট আছেন; তবে সবগুলো টাইপ মেশিনই ভাঙা।
সেবাপ্রার্থী লোকজন বাইরে থেকে টাইপ করে নিয়ে আসেন। টাইপ রাইটার টেবিলের সামনে বসে থাকেন বলে তাঁকে ২০০ টাকা করে দিতে হয়। ১৫ বছর আগের কথা বলছি। এখন টাকার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।
ভ্যাট অফিসেও নির্ধারণ করা আছে কোন টেবিলে কত টাকা দিতে হবে।
মজার ব্যাপার হলো, কেউ কোনো প্রতিবাদ করে না।
বুয়েট থেকে পাস করা এক প্রকৌশলী ট্রান্সফরমার বানানোর ব্যবসা করছেন। তাঁর ব্যবসার খাতাপত্র ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা সিজ করে নিয়ে গেছেন। তেমন কোনো অসংগতি না পেলেও, মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন। ভদ্রলোক কোনো অপরাধ করেননি বলে নিজের পরিচয় দিয়ে জানালেন ওই বিভাগে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা তাঁর বন্ধু। ওই কর্মকর্তারা বললেন, ‘আপনার বন্ধুরা যখন আমাদের চেয়ারে ছিলেন, তাঁরাও একই কাজ করেছেন।’
মানুষ ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করতে যান, সেখানেও ‘স্পিড মানি’ নির্ধারিত আছে। সৎভাবে সব রকমের কাগজপত্র নিয়ে সরকারি ব্যাংক থেকে লোন নিতে গেলেও দেখবেন হিসাব করে শতকরা ভাগ হিসেবে ‘স্পিড মানি’ নির্ধারণ করা আছে। পুলিশ স্টেশনে গেলে মামলার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকেই যথাযথ স্থানে সবাইকে খুশি করতে হয়। নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ যাঁরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন, তাঁরা জানেন, কত ঘাটে ঘাটে বাড়তি টাকাপয়সা দিয়ে চিকিৎসাসেবা পেতে হয়।
দাপটের সঙ্গে চাকরি করা একজন সরকারি কর্মকর্তা পেনশন তুলতে গেলেও হয়তো তাঁকে প্রাতিষ্ঠানিক কালচারের সম্মুখীন হতে হয়। কোর্টে বিচারপ্রাপ্তির চিত্র ভিন্ন কিছু নয়।
প্রাতিষ্ঠানিক গ্যাং কালচারের কথা উঠলে বলা হয়, কিছু কিছু জায়গায় দুর্নীতি আছে। আসলে কথাটি হবে, কিছু জায়গায় দুর্নীতি নেই। এই কালচার থেকে সাধারণ জনগণকে রক্ষা করতে হবে। এ রকম চলতে থাকলে সমাজের ন্যায়নীতি, মূল্যবোধ বিলুপ্ত হবে। ধীরে ধীরে এই ব্যাধি সংক্রমিত হয়ে মানুষের মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে প্রোথিত হবে।
আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন যাবৎ রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রাতিষ্ঠানিক গ্যাং কালচার চলছে। এই গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ মুখ খোলে না। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ এই কালচার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। আমরা ধরেই নিয়েছি এই কালচার চলবে—এটাই সমাজের প্রাপ্য।
কোনো ভূমি অফিসে গেলে যেকোনো সাধারণ কাজের জন্য একটি রেট ধার্য করা আছে, কোন টেবিলে কাকে কত টাকা দিতে হবে। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে গেলেই আপনার কাজ হয়ে যাবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলে লেখা টাকার অঙ্ক অনুসারে বিভিন্ন টেবিলে পরিমাণমতো টাকা দেবেন, দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে যাবে। না দিলে দলিলে শত শত ভুল বের হবে। রেজিস্ট্রি হবে কি না, সন্দেহ আছে। এ কথা কি কারও অজানা?
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে যত রকম প্রকৌশল অধিদপ্তরে যাঁরা ঠিকাদারি করেন, তাঁরা ভালোভাবেই জানেন, যে অঙ্কের টাকা বিল আসবে তার কত শতাংশ কোন কোন টেবিলে দিতে হবে। পিডিবি, পল্লী বিদ্যুৎ, ডেসকো, ওয়াসাসহ সব অধিদপ্তর-পরিদপ্তরের
একই অবস্থা।সবার এটা গা সওয়া হয়ে গেছে। ঠিকাদার কিন্তু নিজে লোকসান দিয়ে কাজ করেন না। প্রতিটি কন্ট্রাক্টে যে পরিমাণ ঘুষ বা ‘স্পিড মানি’ দিতে হবে, সেটা যোগ করে ঠিকাদার দরপত্র সাবমিট করেন। এখানে রাষ্ট্রের টাকাই প্রকারান্তরে বিভিন্ন পদে বসা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকাদারের মাধ্যমে লুট করছেন।
একবার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একজন সহকারী কমিশনার কমলাপুর আইসিডি যুগ্ম কমিশনারের কাছে কিছু কাগজপত্র নিয়ে এলেন। সেখানে অনেক ভুলত্রুটি পাওয়া গেল। যুগ্ম কমিশনার মহোদয় সহকারী কমিশনার মহোদয়কে জিজ্ঞেস করলেন তাঁদের কোনো টাইপিস্ট আছে কি না। সহকারী কমিশনার সহজে উত্তর দিলেন, তাঁদের সাতজন টাইপিস্ট আছেন; তবে সবগুলো টাইপ মেশিনই ভাঙা।
সেবাপ্রার্থী লোকজন বাইরে থেকে টাইপ করে নিয়ে আসেন। টাইপ রাইটার টেবিলের সামনে বসে থাকেন বলে তাঁকে ২০০ টাকা করে দিতে হয়। ১৫ বছর আগের কথা বলছি। এখন টাকার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।
ভ্যাট অফিসেও নির্ধারণ করা আছে কোন টেবিলে কত টাকা দিতে হবে।
মজার ব্যাপার হলো, কেউ কোনো প্রতিবাদ করে না।
বুয়েট থেকে পাস করা এক প্রকৌশলী ট্রান্সফরমার বানানোর ব্যবসা করছেন। তাঁর ব্যবসার খাতাপত্র ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা সিজ করে নিয়ে গেছেন। তেমন কোনো অসংগতি না পেলেও, মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন। ভদ্রলোক কোনো অপরাধ করেননি বলে নিজের পরিচয় দিয়ে জানালেন ওই বিভাগে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা তাঁর বন্ধু। ওই কর্মকর্তারা বললেন, ‘আপনার বন্ধুরা যখন আমাদের চেয়ারে ছিলেন, তাঁরাও একই কাজ করেছেন।’
মানুষ ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করতে যান, সেখানেও ‘স্পিড মানি’ নির্ধারিত আছে। সৎভাবে সব রকমের কাগজপত্র নিয়ে সরকারি ব্যাংক থেকে লোন নিতে গেলেও দেখবেন হিসাব করে শতকরা ভাগ হিসেবে ‘স্পিড মানি’ নির্ধারণ করা আছে। পুলিশ স্টেশনে গেলে মামলার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকেই যথাযথ স্থানে সবাইকে খুশি করতে হয়। নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ যাঁরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন, তাঁরা জানেন, কত ঘাটে ঘাটে বাড়তি টাকাপয়সা দিয়ে চিকিৎসাসেবা পেতে হয়।
দাপটের সঙ্গে চাকরি করা একজন সরকারি কর্মকর্তা পেনশন তুলতে গেলেও হয়তো তাঁকে প্রাতিষ্ঠানিক কালচারের সম্মুখীন হতে হয়। কোর্টে বিচারপ্রাপ্তির চিত্র ভিন্ন কিছু নয়।
প্রাতিষ্ঠানিক গ্যাং কালচারের কথা উঠলে বলা হয়, কিছু কিছু জায়গায় দুর্নীতি আছে। আসলে কথাটি হবে, কিছু জায়গায় দুর্নীতি নেই। এই কালচার থেকে সাধারণ জনগণকে রক্ষা করতে হবে। এ রকম চলতে থাকলে সমাজের ন্যায়নীতি, মূল্যবোধ বিলুপ্ত হবে। ধীরে ধীরে এই ব্যাধি সংক্রমিত হয়ে মানুষের মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে প্রোথিত হবে।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১৪ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১৪ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১৪ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৪ ঘণ্টা আগে