সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ভবিষ্যতের বাংলাকে বাংলাদেশ নামকরণ নিয়ে অবশ্য মৃদু গুঞ্জন উঠেছিল। পাকিস্তানপন্থীদের কাছ থেকে নয়, তারা তো তখন অপ্রাসঙ্গিকই; স্বাধীনতাপন্থীদের কাছ থেকেই। এঁদের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ নামকরণে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি অবিচার করা হবে; কারণ বাংলাদেশ তো কেবল পূর্ববঙ্গের নয়, পশ্চিমবঙ্গেরও। আপত্তিটা ছিল জাতীয়তাবাদের উগ্রতার প্রকাশ নিয়েও। এই আপত্তি কিন্তু একাত্তরের মার্চ মাসে যাঁরা ‘স্বাধীনতার’ ইশতেহার পড়েছিলেন তাঁরাও, ষোলো মাস পরে ১৯৭২ সালের ২১ জুলাই তারিখে, ওই পল্টন ময়দানেই, তুলেছিলেন। তখন তাঁরা অবশ্য বিদ্রোহী। একাত্তরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শাজাহান সিরাজ ছিলেন স্বাধীনতার ইশতেহারের পাঠক, স্বাধীনতা যখন সদ্য অর্জিত হয়েছে, তখন তিনিই এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই তাঁর সম্পাদকীয় রিপোর্টে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘জাতীয়তাবাদ বলতে যেখানে বাঙালির বাঙালিত্বই বোঝায়, সেখানে পশ্চিম বাংলার বাঙালীদের জন্য কী ব্যবস্থা?’ একাত্তরে-পঠিত স্বাধীনতার ইশতেহারের একটি প্রস্তাবে শেখ মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল; বাহাত্তরে-পঠিত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টে ওই প্রস্তাবকেই বুঝি-বা ‘অপ্রিয়’ সত্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেটা এসেছিল এভাবে: ‘এ দেশে কোনো রাজনৈতিক নেতা কোনো আন্দোলনের জন্ম বা নেতৃত্ব দেয়নি; বরং জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই “নেতা” সৃষ্টি হয়েছে।’ উল্লেখ্য, একাত্তরে এঁরা স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনের লক্ষ্য হিসেবে নির্দিষ্ট করেছিলেন, ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম “বাংলাদেশ” গঠন করে’ ‘পৃথিবীর বুকে একটি বলিষ্ঠ বাঙালী জাতি’ সৃষ্টি করাকে। বাহাত্তরে এসে, বিদ্রোহীবেশে, ‘পশ্চিম বাংলার বাঙালীদের জন্য কী ব্যবস্থা’, এ প্রশ্নটি ‘বিদ্রোহী’রা তুলেছিলেন বটে, কিন্তু সেটিকে যে তাঁরা খুব একটা গুরুত্ব দিয়েছেন, তা নয়। অনেক বছর পরে, আমেরিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই বিদ্রোহীদের দলনেতা সিরাজুল আলম খান বলেছেন, ‘আজকে পৃথিবীব্যাপী বাঙালিরা ছড়িয়ে আছে। কমবেশি সব দেশেই আমাদের অবস্থান রয়েছে। কিন্তু বাঙালির দেশ একটিই–সে হলো বাঙালির এই “জাতি রাষ্ট্র” বাংলাদেশ।’ বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাই বলে এটি যে একটি জাতি রাষ্ট্র তা নয়; বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর ওই যে দাবি, ‘বাঙালির দেশ একটিই–বাংলাদেশ’, ওই দাবি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মোটেই সন্তুষ্ট করবে না; বরং যখন এটা ক্রমাগত স্পষ্ট হয়েছে যে হিন্দিবলয়ের কেন্দ্রীয় শাসনে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি বেশ ভালোভাবেই বিপন্ন এবং আত্মরক্ষার আবশ্যক তাতে অধুনা যখন তারা ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিতেও বাধ্য হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের যে বাঙালিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে মনেপ্রাণে সমর্থন জানিয়েছেন, যতভাবে পারা যায় তাকে সাহায্য করেছেন, তাঁদের কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেছে যে পূর্ববঙ্গের মানুষকে বাংলাদেশ নামটা নিয়ে নেওয়ার দরুন তাঁরা বঞ্চিত বোধ করেছেন। ঢাকায় সফরে এসে কেউ কেউ সেটা বলেছেনও। পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভায় প্রস্তাব গৃহীত হয় যে পশ্চিমবঙ্গের নাম বাংলা (ইংরেজিতে বেঙ্গল) করা হোক; সে প্রস্তাব কেন্দ্রীয় বিধায়কেরা মানতে রাজি হননি। যুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকে তাজউদ্দীন আহমদ যখন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দিল্লিতে সাক্ষাৎ করেন, তখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত করার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন যে, ‘বাংলাদেশ’ বলতে তাঁরা পূর্ববঙ্গকেই বোঝেন, তার বেশি নয় এবং বাংলাদেশের প্রস্তাবিত জাতীয় পতাকায় লাল বৃত্তের ভেতরে যে বাংলাদেশের মানচিত্রটি রাখা ছিল, সে তথ্যের উল্লেখ তাঁর বক্তব্যকে জোরদার করেছিল। রাষ্ট্রের নাম ‘বাংলাদেশ’ দেওয়ার ব্যাপারে পূর্ববঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশেরও যে আপত্তি ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় একাত্তরের যুদ্ধে পূর্বাপর প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ডা. কালিদাস বৈদ্যের এক লেখায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়েই তাঁর বক্তব্য ছিল এ রকমের: ‘ভারতের খেয়ে-পরে ও ভারতের সাহায্যের সব রকমের আশ্বাস পেয়ে তারা (অর্থাৎ পূর্ববঙ্গের মানুষেরা) তাদের দেশের নাম বাংলাদেশ ঘোষণা করল। সে নামের স্বীকৃতিও ভারত সরকার দিল। একটা অংশ হয়ে গেল সম্পূর্ণ। কেননা, পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ নিয়েই প্রকৃত বাংলাদেশ। [...] এই বাংলাদেশের নামের স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও বাস্তবপক্ষে কাগজে-কলমে তারা পশ্চিমবঙ্গকে বিনা যুদ্ধে কেড়ে নিল। আর বাংলা ভাষার একমাত্র অধিকারী তারাই হলো।’
লাহোর প্রস্তাবের থাকা না-থাকার বিষয়টি আরও একবার স্মরণ করা যেতে পারে। যুক্তফ্রন্টের একুশ দফা এবং শেখ মুজিবের ছয় দফায় লাহোর প্রস্তাব ভালোভাবেই উপস্থিত; ভাসানী ন্যাপের চৌদ্দ দফার ভেতরেও লাহোর প্রস্তাবের স্বায়ত্তশাসনের ধারণা কার্যকর। ১৯৬৯-এর ৪ জানুয়ারি ঘোষিত সংগ্রামী ছাত্রসমাজের এগারো দফায় কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের কথা আর আসেনি। ওই সময়ে সামরিক সরকারের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামরত ছাত্ররা লাহোর প্রস্তাবকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো আর প্রয়োজনীয় মনে করেনি। তা ছাড়া, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটাকেই হয়তোবা তাদের কাছে যুক্তিযুক্তই মনে হয়নি; তাদের আকাঙ্ক্ষা তখন স্বাধীনতার। অধিক যারা অগ্রসর, তাদের স্বপ্ন সমাজতন্ত্রের, তাদের পক্ষে লাহোর প্রস্তাব আরও বেশি অপ্রাসঙ্গিক।
ছাত্রদের এগারো দফা দেওয়ার আগেই (চীনপন্থী বলে পরিচিত) পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) আট দফার একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে। তাদের ওই কর্মসূচিতেও লাহোর প্রস্তাবের কোনো চিহ্নই নেই। অখণ্ড পাকিস্তানে তারা আর বিশ্বাস করে না; ‘এক জাতি, এক ভাষা, এক সংস্কৃতি ও এক অর্থনীতি, এক রাষ্ট্র, ইসলামী সংস্কৃতি, পাকিস্তান আদর্শ’, এসব ধারণাকে তারা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বাঙালি জাতিসহ পাকিস্তানের প্রতিটি জাতির স্বাধীনতা চায় এবং পূর্ব বাংলায় এক স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করাই তাদের লক্ষ্য। দুই পাকিস্তানের মধ্যে ‘১৪০০ মাইলের ব্যবধান’ তাদের কাছে অত্যন্ত প্রত্যক্ষ সত্য। কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছে, পার্টির নাম তারা ‘পূর্ব পাকিস্তান’ই রেখেছে এবং জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্নটিকে সামনে না এনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, তার বিশ্বস্ত দেশীয় জমিদার-জোতদার-মহাজন এবং বড় ধনিক—এই তিন ‘রাক্ষসে’র বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছেন। ফলে পূর্ববঙ্গকে স্বাধীন করার ব্যাপারে তাঁদের যে অভিপ্রায়, সেটা জোরদার হয়নি। তা ছাড়া, দল যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, সেটির বাস্তবায়নের বিষয়ে দলের নেতারা যে কতটা আন্তরিক ছিলেন, তা নিয়েও পার্টির ভেতরেই সংশয় ছিল, যে জন্য পার্টিতে ভাঙন ধরে এবং ১৯৬৮-তে পূর্ব বাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ—এই ধারণা ব্যক্ত করে এবং মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলাকে মুক্ত করার লক্ষ্যে দেবেন সিকদার ও আবুল বাশার স্বতন্ত্র একটি পার্টি গঠন করেন, নাম দেন ‘পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী)’। কৃষিব্যবস্থায় ধনতন্ত্রই প্রধান–এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে আবদুল মতিন ও আলাউদ্দিন আহমদ আরেকটি ধারা তৈরি করতে সচেষ্ট হন। প্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারিয়ে কাজী জাফর আহমদ, হায়দার আকবর খান রনো ও রাশেদ খান মেনন ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাঙলা সমন্বয় কমিটি’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন।
তরুণ সিরাজ সিকদারও (জ. ১৯৪৪) শুরু করেছিলেন চীনপন্থী হিসেবেই, শুরুতে তিনি গড়ে তোলেন ‘মাও সে-তুং চিন্তাধারা অধ্যয়নকেন্দ্র’; এবং মাও সে-তুংয়ের কাছ থেকে তিনি যে বিশেষ শিক্ষাটি নিয়েছিলেন অধিকাংশ চীনপন্থীই সেটা নিতে পারেননি। সেটা হলো এই যে, একটি সমাজে অনেকগুলো দ্বন্দ্ব থাকে, থাকাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তাদের মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব একসময়ে প্রধান হয়ে ওঠে এবং সেটিকে প্রাধান্য দেওয়াটাই হচ্ছে কর্তব্য। সিরাজ সিকদার ও তাঁর সহযোদ্ধারা দেখতে পেয়েছিলেন যে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে প্রধান দ্বন্দ্বটি ছিল ‘পাকিস্তানি উপনিবেশবাদের সঙ্গে জনগণের দ্বন্দ্ব’। সে জন্যই রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান কর্তব্যটি তাঁরা ঠিক করেছিলেন পূর্ববঙ্গকে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত করা। সেই উপলব্ধি থেকে ১৯৭০ সালের গোড়ার দিকেই তাঁরা নিজেদের সংগঠনের নাম রাখেন পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন, স্লোগান ঠিক করেন ‘পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র-জিন্দাবাদ’; এবং পরের বছর, যুদ্ধের মাঝখানে তাঁদের সংগঠনের নামটি দাঁড়ায় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। বাংলাদেশ বলেননি, পূর্ব বাংলাই বলেছেন। পূর্ব পাকিস্তান তো নয়ই।
আমরা জানি, উনসত্তরের অভ্যুত্থানের পেছনে দুই অর্থনীতির তত্ত্বের একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বেশ আগেই, প্রস্তাবিত পাকিস্তানের পরস্পর-বিচ্ছিন্ন দুই অংশের ভেতরে শ্রম ও পুঁজির চলাচল সম্ভব হবে না; বিশেষ করে এই বিবেচনায় পাকিস্তানে দুই অর্থনীতির ব্যবস্থা চালু করতে হবে–এ ধারণাটি কারও কারও চিন্তায় ধরা পড়েছিল। এটিকে স্পষ্টভাবে প্রথম ব্যক্ত করেন অর্থনীতিবিদ ড. আবদুস সাদেক। ধারণাটিকে তুলে ধরে তিনি একটি পুস্তিকা রচনা করেন ১৯৪০-এর দশকের প্রথম দিকেই। পরবর্তী সময়ে, ষাটের দশকে বাঙালি অর্থনীতিবিদদের কয়েকজন তাঁদের অভিজ্ঞতা ও অধ্যয়ন থেকে এই ধারণাকে আরও জোরালো ও যুক্তিসংগতভাবে প্রবন্ধ ও আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেন। তাঁদের বক্তব্যে পাকিস্তানের দুই অংশের ভেতর ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও বঞ্চনার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন তাঁদের বক্তব্য দ্বারা সমর্থিত হয়ে বিশেষ রকমের শক্তি লাভ করেছে। অর্থনীতিবিদেরা কিন্তু তাই বলে এটা মনে করেননি, অন্তত বলেননি যে পাকিস্তান আসলে এক জাতির দেশ নয়; তাঁদের প্রকাশিত বক্তব্যে বরং এটাই বলা হচ্ছিল যে, অখণ্ড পাকিস্তানের উন্নতির জন্যই দ্বৈত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মেনে নেওয়া এবং দুই অঞ্চলের ভেতরকার বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। যেমন ১৯৬১ সালে লাহোরে জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থার (বিএনআর) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে অধ্যাপক রেহমান সোবহান যে প্রবন্ধটি পাঠ করে বড় রকমের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন, তার শিরোনাম ছিল, ‘How to build Pakistan as a well-knit nation’। পাকিস্তানি জাতিকে সুগঠিত করার এই চিন্তার অন্য অর্থনীতিবিদদেরও সায় ছিল। তাঁরা রাষ্ট্রের নয়, জাতির কথাই ভাবছিলেন। পাকিস্তান প্রস্তাবের রাজনৈতিক দর্শনও কিন্তু ছিল ওইটিই; ভারতবর্ষের মুসলমানরা একটি স্বতন্ত্র জাতি, তাই তাদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি চাই, যার নাম হবে পাকিস্তান, কিন্তু যার ভৌগোলিক গঠনটা সেদিন নেতারা বলতে পারেননি। তবে পাঞ্জাব যে থাকবে একেবারে প্রথমে, তাতে তাঁদের কোনো সন্দেহই ছিল না। বাঙালি এ ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদীরা এবং সমাজতন্ত্রীরা, উভয়েই বিলক্ষণ এগিয়ে গিয়েছিলেন। (সমাপ্ত)
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভবিষ্যতের বাংলাকে বাংলাদেশ নামকরণ নিয়ে অবশ্য মৃদু গুঞ্জন উঠেছিল। পাকিস্তানপন্থীদের কাছ থেকে নয়, তারা তো তখন অপ্রাসঙ্গিকই; স্বাধীনতাপন্থীদের কাছ থেকেই। এঁদের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ নামকরণে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি অবিচার করা হবে; কারণ বাংলাদেশ তো কেবল পূর্ববঙ্গের নয়, পশ্চিমবঙ্গেরও। আপত্তিটা ছিল জাতীয়তাবাদের উগ্রতার প্রকাশ নিয়েও। এই আপত্তি কিন্তু একাত্তরের মার্চ মাসে যাঁরা ‘স্বাধীনতার’ ইশতেহার পড়েছিলেন তাঁরাও, ষোলো মাস পরে ১৯৭২ সালের ২১ জুলাই তারিখে, ওই পল্টন ময়দানেই, তুলেছিলেন। তখন তাঁরা অবশ্য বিদ্রোহী। একাত্তরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শাজাহান সিরাজ ছিলেন স্বাধীনতার ইশতেহারের পাঠক, স্বাধীনতা যখন সদ্য অর্জিত হয়েছে, তখন তিনিই এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই তাঁর সম্পাদকীয় রিপোর্টে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘জাতীয়তাবাদ বলতে যেখানে বাঙালির বাঙালিত্বই বোঝায়, সেখানে পশ্চিম বাংলার বাঙালীদের জন্য কী ব্যবস্থা?’ একাত্তরে-পঠিত স্বাধীনতার ইশতেহারের একটি প্রস্তাবে শেখ মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল; বাহাত্তরে-পঠিত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টে ওই প্রস্তাবকেই বুঝি-বা ‘অপ্রিয়’ সত্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেটা এসেছিল এভাবে: ‘এ দেশে কোনো রাজনৈতিক নেতা কোনো আন্দোলনের জন্ম বা নেতৃত্ব দেয়নি; বরং জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই “নেতা” সৃষ্টি হয়েছে।’ উল্লেখ্য, একাত্তরে এঁরা স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনের লক্ষ্য হিসেবে নির্দিষ্ট করেছিলেন, ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম “বাংলাদেশ” গঠন করে’ ‘পৃথিবীর বুকে একটি বলিষ্ঠ বাঙালী জাতি’ সৃষ্টি করাকে। বাহাত্তরে এসে, বিদ্রোহীবেশে, ‘পশ্চিম বাংলার বাঙালীদের জন্য কী ব্যবস্থা’, এ প্রশ্নটি ‘বিদ্রোহী’রা তুলেছিলেন বটে, কিন্তু সেটিকে যে তাঁরা খুব একটা গুরুত্ব দিয়েছেন, তা নয়। অনেক বছর পরে, আমেরিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই বিদ্রোহীদের দলনেতা সিরাজুল আলম খান বলেছেন, ‘আজকে পৃথিবীব্যাপী বাঙালিরা ছড়িয়ে আছে। কমবেশি সব দেশেই আমাদের অবস্থান রয়েছে। কিন্তু বাঙালির দেশ একটিই–সে হলো বাঙালির এই “জাতি রাষ্ট্র” বাংলাদেশ।’ বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাই বলে এটি যে একটি জাতি রাষ্ট্র তা নয়; বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর ওই যে দাবি, ‘বাঙালির দেশ একটিই–বাংলাদেশ’, ওই দাবি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মোটেই সন্তুষ্ট করবে না; বরং যখন এটা ক্রমাগত স্পষ্ট হয়েছে যে হিন্দিবলয়ের কেন্দ্রীয় শাসনে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি বেশ ভালোভাবেই বিপন্ন এবং আত্মরক্ষার আবশ্যক তাতে অধুনা যখন তারা ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিতেও বাধ্য হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের যে বাঙালিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে মনেপ্রাণে সমর্থন জানিয়েছেন, যতভাবে পারা যায় তাকে সাহায্য করেছেন, তাঁদের কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেছে যে পূর্ববঙ্গের মানুষকে বাংলাদেশ নামটা নিয়ে নেওয়ার দরুন তাঁরা বঞ্চিত বোধ করেছেন। ঢাকায় সফরে এসে কেউ কেউ সেটা বলেছেনও। পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভায় প্রস্তাব গৃহীত হয় যে পশ্চিমবঙ্গের নাম বাংলা (ইংরেজিতে বেঙ্গল) করা হোক; সে প্রস্তাব কেন্দ্রীয় বিধায়কেরা মানতে রাজি হননি। যুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকে তাজউদ্দীন আহমদ যখন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দিল্লিতে সাক্ষাৎ করেন, তখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত করার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন যে, ‘বাংলাদেশ’ বলতে তাঁরা পূর্ববঙ্গকেই বোঝেন, তার বেশি নয় এবং বাংলাদেশের প্রস্তাবিত জাতীয় পতাকায় লাল বৃত্তের ভেতরে যে বাংলাদেশের মানচিত্রটি রাখা ছিল, সে তথ্যের উল্লেখ তাঁর বক্তব্যকে জোরদার করেছিল। রাষ্ট্রের নাম ‘বাংলাদেশ’ দেওয়ার ব্যাপারে পূর্ববঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশেরও যে আপত্তি ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় একাত্তরের যুদ্ধে পূর্বাপর প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ডা. কালিদাস বৈদ্যের এক লেখায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়েই তাঁর বক্তব্য ছিল এ রকমের: ‘ভারতের খেয়ে-পরে ও ভারতের সাহায্যের সব রকমের আশ্বাস পেয়ে তারা (অর্থাৎ পূর্ববঙ্গের মানুষেরা) তাদের দেশের নাম বাংলাদেশ ঘোষণা করল। সে নামের স্বীকৃতিও ভারত সরকার দিল। একটা অংশ হয়ে গেল সম্পূর্ণ। কেননা, পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ নিয়েই প্রকৃত বাংলাদেশ। [...] এই বাংলাদেশের নামের স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও বাস্তবপক্ষে কাগজে-কলমে তারা পশ্চিমবঙ্গকে বিনা যুদ্ধে কেড়ে নিল। আর বাংলা ভাষার একমাত্র অধিকারী তারাই হলো।’
লাহোর প্রস্তাবের থাকা না-থাকার বিষয়টি আরও একবার স্মরণ করা যেতে পারে। যুক্তফ্রন্টের একুশ দফা এবং শেখ মুজিবের ছয় দফায় লাহোর প্রস্তাব ভালোভাবেই উপস্থিত; ভাসানী ন্যাপের চৌদ্দ দফার ভেতরেও লাহোর প্রস্তাবের স্বায়ত্তশাসনের ধারণা কার্যকর। ১৯৬৯-এর ৪ জানুয়ারি ঘোষিত সংগ্রামী ছাত্রসমাজের এগারো দফায় কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের কথা আর আসেনি। ওই সময়ে সামরিক সরকারের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামরত ছাত্ররা লাহোর প্রস্তাবকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো আর প্রয়োজনীয় মনে করেনি। তা ছাড়া, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটাকেই হয়তোবা তাদের কাছে যুক্তিযুক্তই মনে হয়নি; তাদের আকাঙ্ক্ষা তখন স্বাধীনতার। অধিক যারা অগ্রসর, তাদের স্বপ্ন সমাজতন্ত্রের, তাদের পক্ষে লাহোর প্রস্তাব আরও বেশি অপ্রাসঙ্গিক।
ছাত্রদের এগারো দফা দেওয়ার আগেই (চীনপন্থী বলে পরিচিত) পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) আট দফার একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে। তাদের ওই কর্মসূচিতেও লাহোর প্রস্তাবের কোনো চিহ্নই নেই। অখণ্ড পাকিস্তানে তারা আর বিশ্বাস করে না; ‘এক জাতি, এক ভাষা, এক সংস্কৃতি ও এক অর্থনীতি, এক রাষ্ট্র, ইসলামী সংস্কৃতি, পাকিস্তান আদর্শ’, এসব ধারণাকে তারা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বাঙালি জাতিসহ পাকিস্তানের প্রতিটি জাতির স্বাধীনতা চায় এবং পূর্ব বাংলায় এক স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করাই তাদের লক্ষ্য। দুই পাকিস্তানের মধ্যে ‘১৪০০ মাইলের ব্যবধান’ তাদের কাছে অত্যন্ত প্রত্যক্ষ সত্য। কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছে, পার্টির নাম তারা ‘পূর্ব পাকিস্তান’ই রেখেছে এবং জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্নটিকে সামনে না এনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, তার বিশ্বস্ত দেশীয় জমিদার-জোতদার-মহাজন এবং বড় ধনিক—এই তিন ‘রাক্ষসে’র বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছেন। ফলে পূর্ববঙ্গকে স্বাধীন করার ব্যাপারে তাঁদের যে অভিপ্রায়, সেটা জোরদার হয়নি। তা ছাড়া, দল যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, সেটির বাস্তবায়নের বিষয়ে দলের নেতারা যে কতটা আন্তরিক ছিলেন, তা নিয়েও পার্টির ভেতরেই সংশয় ছিল, যে জন্য পার্টিতে ভাঙন ধরে এবং ১৯৬৮-তে পূর্ব বাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ—এই ধারণা ব্যক্ত করে এবং মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলাকে মুক্ত করার লক্ষ্যে দেবেন সিকদার ও আবুল বাশার স্বতন্ত্র একটি পার্টি গঠন করেন, নাম দেন ‘পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী)’। কৃষিব্যবস্থায় ধনতন্ত্রই প্রধান–এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে আবদুল মতিন ও আলাউদ্দিন আহমদ আরেকটি ধারা তৈরি করতে সচেষ্ট হন। প্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারিয়ে কাজী জাফর আহমদ, হায়দার আকবর খান রনো ও রাশেদ খান মেনন ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাঙলা সমন্বয় কমিটি’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন।
তরুণ সিরাজ সিকদারও (জ. ১৯৪৪) শুরু করেছিলেন চীনপন্থী হিসেবেই, শুরুতে তিনি গড়ে তোলেন ‘মাও সে-তুং চিন্তাধারা অধ্যয়নকেন্দ্র’; এবং মাও সে-তুংয়ের কাছ থেকে তিনি যে বিশেষ শিক্ষাটি নিয়েছিলেন অধিকাংশ চীনপন্থীই সেটা নিতে পারেননি। সেটা হলো এই যে, একটি সমাজে অনেকগুলো দ্বন্দ্ব থাকে, থাকাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তাদের মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব একসময়ে প্রধান হয়ে ওঠে এবং সেটিকে প্রাধান্য দেওয়াটাই হচ্ছে কর্তব্য। সিরাজ সিকদার ও তাঁর সহযোদ্ধারা দেখতে পেয়েছিলেন যে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে প্রধান দ্বন্দ্বটি ছিল ‘পাকিস্তানি উপনিবেশবাদের সঙ্গে জনগণের দ্বন্দ্ব’। সে জন্যই রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান কর্তব্যটি তাঁরা ঠিক করেছিলেন পূর্ববঙ্গকে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত করা। সেই উপলব্ধি থেকে ১৯৭০ সালের গোড়ার দিকেই তাঁরা নিজেদের সংগঠনের নাম রাখেন পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন, স্লোগান ঠিক করেন ‘পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র-জিন্দাবাদ’; এবং পরের বছর, যুদ্ধের মাঝখানে তাঁদের সংগঠনের নামটি দাঁড়ায় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। বাংলাদেশ বলেননি, পূর্ব বাংলাই বলেছেন। পূর্ব পাকিস্তান তো নয়ই।
আমরা জানি, উনসত্তরের অভ্যুত্থানের পেছনে দুই অর্থনীতির তত্ত্বের একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বেশ আগেই, প্রস্তাবিত পাকিস্তানের পরস্পর-বিচ্ছিন্ন দুই অংশের ভেতরে শ্রম ও পুঁজির চলাচল সম্ভব হবে না; বিশেষ করে এই বিবেচনায় পাকিস্তানে দুই অর্থনীতির ব্যবস্থা চালু করতে হবে–এ ধারণাটি কারও কারও চিন্তায় ধরা পড়েছিল। এটিকে স্পষ্টভাবে প্রথম ব্যক্ত করেন অর্থনীতিবিদ ড. আবদুস সাদেক। ধারণাটিকে তুলে ধরে তিনি একটি পুস্তিকা রচনা করেন ১৯৪০-এর দশকের প্রথম দিকেই। পরবর্তী সময়ে, ষাটের দশকে বাঙালি অর্থনীতিবিদদের কয়েকজন তাঁদের অভিজ্ঞতা ও অধ্যয়ন থেকে এই ধারণাকে আরও জোরালো ও যুক্তিসংগতভাবে প্রবন্ধ ও আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেন। তাঁদের বক্তব্যে পাকিস্তানের দুই অংশের ভেতর ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও বঞ্চনার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন তাঁদের বক্তব্য দ্বারা সমর্থিত হয়ে বিশেষ রকমের শক্তি লাভ করেছে। অর্থনীতিবিদেরা কিন্তু তাই বলে এটা মনে করেননি, অন্তত বলেননি যে পাকিস্তান আসলে এক জাতির দেশ নয়; তাঁদের প্রকাশিত বক্তব্যে বরং এটাই বলা হচ্ছিল যে, অখণ্ড পাকিস্তানের উন্নতির জন্যই দ্বৈত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মেনে নেওয়া এবং দুই অঞ্চলের ভেতরকার বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। যেমন ১৯৬১ সালে লাহোরে জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থার (বিএনআর) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে অধ্যাপক রেহমান সোবহান যে প্রবন্ধটি পাঠ করে বড় রকমের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন, তার শিরোনাম ছিল, ‘How to build Pakistan as a well-knit nation’। পাকিস্তানি জাতিকে সুগঠিত করার এই চিন্তার অন্য অর্থনীতিবিদদেরও সায় ছিল। তাঁরা রাষ্ট্রের নয়, জাতির কথাই ভাবছিলেন। পাকিস্তান প্রস্তাবের রাজনৈতিক দর্শনও কিন্তু ছিল ওইটিই; ভারতবর্ষের মুসলমানরা একটি স্বতন্ত্র জাতি, তাই তাদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি চাই, যার নাম হবে পাকিস্তান, কিন্তু যার ভৌগোলিক গঠনটা সেদিন নেতারা বলতে পারেননি। তবে পাঞ্জাব যে থাকবে একেবারে প্রথমে, তাতে তাঁদের কোনো সন্দেহই ছিল না। বাঙালি এ ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদীরা এবং সমাজতন্ত্রীরা, উভয়েই বিলক্ষণ এগিয়ে গিয়েছিলেন। (সমাপ্ত)
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
৮ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
৮ ঘণ্টা আগে