সেলিম জাহান
‘কথার কথা?’ অবাক হয়ে গেলাম বন্ধুটির মন্তব্যে। প্রগতিশীল বলে তাঁর নামডাক আছে, পড়াশোনার ব্যাপ্তিও তাঁর কম নয়, সাহিত্য-সমাজ নিয়েও তিনি চিন্তাভাবনা করেন। এহেন ব্যক্তিটি যে এমন একটা উৎকট মন্তব্য করবেন, ভাবতেই পারিনি। দুদিন ধরে যে বিষয়টি আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল, সে বিষয়টি নিয়েই বন্ধুটিকে দু-এক কথা বলছিলাম। কিন্তু তা নিয়ে যথাযথ চিন্তাভাবনা না করেই হালকাভাবেই তিনি বলে বসলেন, ‘ও তো একটা কথার কথা।’
বিষয়টির সূত্রপাত এভাবেই। দপ্তরে বসে কাজ করছিলাম। সাড়া দিয়ে প্রবেশ করলেন তরুণী সহকর্মীটি, যিনি আগামীকাল থেকেই মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাচ্ছেন। বিদায়ী সাক্ষাৎকারের জন্য এসেছেন তিনি। এ কথা-সে কথা বললাম, আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করলাম তাঁকে আগামী দিনগুলোর জন্য, হাসি-ঠাট্টার কথাও হলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। তাঁর স্বামী ববের কথাও উঠল, ওই ঠাট্টার বুনটেই। পরিচিত সে-ও আমার। ওই সব কথার রেশ ধরে একসময়ে তিনি মন্তব্য করলেন, ‘I am proud that I am carrying John’s child.’ একটা গর্বের আভা ছড়িয়ে পড়ল তাঁর সারা মুখে। কিন্তু কেন জানি, খট করে কথাটা লাগল আমার কানে।
সারা দিন ধরে ওই একটি বাক্যই জলের মতো আমার মনের অলি-গলিতে ঘুরতে লাগল। বাড়ি ফিরে রাতের খাবারের পর যে বইটি পড়ছিলাম, সেটা নিয়েই বসা গেল–রমানাথ রায়ের ছোটগল্প। পড়তে পড়তে একটি গল্পের মাঝামাঝি গল্পের নায়িকা মালতীর মন্তব্য পড়ে আবারও চমকালাম। সন্তানসম্ভবা মালতী দৃঢ়স্বরে বলছে, ‘না, ও আমি করতে পারব না। অনিমেষের সন্তান আমার গর্ভে।’
আমি ধীরে ধীরে বইটি মুড়ে রাখলাম। তিনটি জিনিস আমাকে অবাক করল। এক. একটি কথা বাস্তব জীবনে শুনেছি, আর অন্য কথাটি গল্পে পড়েছি। দুই. কথাটি একজন বিদেশিনী বলেছেন, আবার কথাটি এক বাংলা গল্পের নায়িকাও বলেছেন। তিন. কথাটি এক জায়গায় উচ্চারিত হয়েছে বাংলায়, অন্য জায়গায় ইংরেজিতে। কিন্তু এত সব ভিন্নতা সত্ত্বেও ইংরেজি ও বাংলা দুটো বাক্য একই কথা বলেছে এবং সেখানেই আমার যত অস্বস্তি, যত আপত্তি।
দুটো কথনেরই প্রতিপাদ্য তিনটি–দুটো প্রত্যক্ষ আর একটি পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ ব্যাপার দুটো হচ্ছে, এক. সন্তানটি পুরুষের–এক ক্ষেত্রে ববের, অন্য ক্ষেত্রে অনিমেষের। দুই. উভয় ক্ষেত্রেই নারী হচ্ছেন শুধু একটি আধার, যা শিশুটিকে ধারণ করছেন মাত্র। পরোক্ষভাবে এটাই বেরিয়ে আসছে যে নারী মানেই পুরুষের সম্পত্তি।
ভেবে পাই না, এটা কেমন করে হয়? একটি মানবসন্তান মা-বাবা দুজনেরই অবদানের ফল–দুজনেরই সৃষ্টি। সেখানে কেমন করে ভাবা হয় যে সন্তানটি পুরুষেরই? এমন একটি ব্যাপারকে কেমন করে ‘কথার কথা’ বলা যায়? কথা শুধু তো কথা নয়। কী বলছি, কেন বলছি, কেমন করে বলছি, তা তো শুধু শব্দের সমষ্টি নয়, সে তো ইতিহাস, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, ঐতিহ্য, মানসিকতা ও সমাজ-বাস্তবতার প্রতিফলনও।
অতএব, যে বাক্যদ্বয় পূর্বোল্লিখিত হয়েছে, তা মানব-জন্মের বিবর্তনে সর্বজনীনভাবে নারীর ভূমিকাকে নিতান্ত খাটো করেই দেখা হয়নি, সেখানে একটি অসম্মানজনক অবস্থানে তাঁকে রাখা হয়েছে। নারী প্রজননের যন্ত্রমাত্র, আর কিছু নয়। অন্যদিকে মানব-জন্ম বিবর্তনে নির্দেশিত ভূমিকায় পুরুষের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য যেন জ্বলজ্বল করে। বলা বাহুল্য, অন্যায় ও অসত্যের ধ্বজা উড়িয়ে। সেখানে নারীর ভূমিকাকে অবদমিত করা হয়েছে। সমস্বীকৃতি তো দূরের কথা।
এর হাত ধরেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উদ্ভব এবং সদম্ভ বিরাজ। জানি, পুরুষশাসিত সমাজের বিবর্তনের অন্য বহুবিধ ঐতিহাসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ আছে। কিন্তু মানব বিবর্তনের ধারায় প্রজনন প্রক্রিয়ায় পুরুষের নিরঙ্কুশ মালিকানা দেওয়ার মাধ্যমে পুরুষের সর্বময় প্রভুত্ব ও আধিপত্যকে স্থায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ কারণে বংশপরম্পরায় পিতার নামেই পুত্র বা কন্যার নামকরণ করা হয়, সে নামেই তাদের পরিচিতি ও চিহ্নিতকরণ। মাতার নাম সেখানে অপাঙ্ক্তেয়। অনেক উদার পিতা সেখানে সন্তানের মাতার নামটিকে কখনোসখনো জায়গা দেন বটে, তবে সেটা ব্যতিক্রম, সচরাচর তা ঘটে না। আদিবাসী মাতৃতান্ত্রিক সমাজে অবশ্য মায়ের নামে সন্তানের নামকরণ করা হয় বৈকি, কিন্তু সেটা তো মূলধারায় ঘটে না।
এর হাত ধরে আসে সম্পদের অধিকার। পুরুষতান্ত্রিক বংশপরম্পরায় যেহেতু নারীরা অন্তর্ভুক্ত নয়, সুতরাং সম্পদের অধিকার থেকেও তাঁদের বঞ্চিত করা হয়। ভাবা যায়, যদিও পৃথিবীর জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, কিন্তু বিশ্বের চাষযোগ্য জমির মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা নারীদের। হ্যাঁ, সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ধর্মের রীতি-নীতির দোহাই দেওয়া হয় বটে, কিন্তু মূলত সেখানে কাজ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষ কর্তৃক সম্পদ দখল করার অপপ্রয়াস। সেই অপপ্রয়াসের অংশ হিসেবে আরও সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্য নারীকে ব্যবহার করা হয় নানান বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে।
এই চালচিত্রের বদলের জন্য বহু কিছু করতে হবে। এক দিনে তা হবে না এবং একটি প্রয়াসের মাধ্যমে তা হবে না। তবে তার শুরুটা হোক না মানবশিশুর পৃথিবীতে আগমন ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে, সচরাচর যা বলা হয় এবং যেমন করে বলা হয়, তার আশু পরিবর্তনের নামে। সে বক্তব্যে নারী-পুরুষের যৌথ ভূমিকার সমস্বীকৃতি তো থাকতেই হবে, কিন্তু সেই সঙ্গে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে নারীর ভূমিকার প্রতি। কারণ, সত্যিকার অর্থে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মানবশিশুর জন্ম ঘটনায় মায়ের অবদান বেশি। তিনি সন্তানকে ধারণ করে থাকেন নিজ দেহে দীর্ঘদিন। মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি নিয়েই ভ্রূণের বর্ধন। অতঃপর অতীব তীব্র প্রসববেদনার মধ্য দিয়ে মা একটি শিশুর জন্ম দেন।
সন্তানের নামের ক্ষেত্রেও মায়ের নামটিকে বাবার নামের সঙ্গে সমান গুরুত্ব দেওয়া যায় না। জানি, অনেকেই বলবেন, এগুলো সব প্রতীকী প্রয়াস, কিন্তু প্রতীকের গুরুত্বকে খাটো করে দেখা ঠিক নয়। বহু প্রতীকী প্রয়াসের মাধ্যমে পৃথিবীর বহু পরিবর্তন হয়েছে।
খুব নমিত হয়ে বলি, বহু বছর আগে আমার জন্মের পরে আমার তরুণ পিতা আমার মাতার নামে আমার নামকরণ করেছিলেন। আমার মায়ের নাম ছিল ‘জাহানারা’। সেখান থেকে আমার পারিবারিক নাম দেওয়া হয় ‘জাহান’ এবং আমার পুরো নাম হয় ‘সেলিম জাহান’। আমার পিতার পারিবারিক নাম ‘হক’ আমার নামের সঙ্গে সংযুক্ত হয়নি। আজ থেকে ৭০ বছর আগে সেই যুগে আমার পিতা যে অবিস্মরণীয় কাজটি করেছিলেন, তার জন্য আমার মুগ্ধতার সীমা নেই এবং আমার সারা জীবন আমি তাঁর কাছে একধরনের কৃতজ্ঞতা বোধ করেছি।
শেষের কথা বলি। সন্তান ধারণ ও জন্মদানের দীর্ঘ যে কষ্টের পথ, তা পাড়ি দেওয়া শুধু নারীর পক্ষেই সম্ভব। পুরুষকে যদি সন্তান ধারণ করতে আর সন্তানের জন্ম দিতে হতো, তাহলে আমার মনে হয় পৃথিবীর জনসংখ্যা ৪০০-এর বেশি হতো না।
‘কথার কথা?’ অবাক হয়ে গেলাম বন্ধুটির মন্তব্যে। প্রগতিশীল বলে তাঁর নামডাক আছে, পড়াশোনার ব্যাপ্তিও তাঁর কম নয়, সাহিত্য-সমাজ নিয়েও তিনি চিন্তাভাবনা করেন। এহেন ব্যক্তিটি যে এমন একটা উৎকট মন্তব্য করবেন, ভাবতেই পারিনি। দুদিন ধরে যে বিষয়টি আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল, সে বিষয়টি নিয়েই বন্ধুটিকে দু-এক কথা বলছিলাম। কিন্তু তা নিয়ে যথাযথ চিন্তাভাবনা না করেই হালকাভাবেই তিনি বলে বসলেন, ‘ও তো একটা কথার কথা।’
বিষয়টির সূত্রপাত এভাবেই। দপ্তরে বসে কাজ করছিলাম। সাড়া দিয়ে প্রবেশ করলেন তরুণী সহকর্মীটি, যিনি আগামীকাল থেকেই মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাচ্ছেন। বিদায়ী সাক্ষাৎকারের জন্য এসেছেন তিনি। এ কথা-সে কথা বললাম, আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করলাম তাঁকে আগামী দিনগুলোর জন্য, হাসি-ঠাট্টার কথাও হলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। তাঁর স্বামী ববের কথাও উঠল, ওই ঠাট্টার বুনটেই। পরিচিত সে-ও আমার। ওই সব কথার রেশ ধরে একসময়ে তিনি মন্তব্য করলেন, ‘I am proud that I am carrying John’s child.’ একটা গর্বের আভা ছড়িয়ে পড়ল তাঁর সারা মুখে। কিন্তু কেন জানি, খট করে কথাটা লাগল আমার কানে।
সারা দিন ধরে ওই একটি বাক্যই জলের মতো আমার মনের অলি-গলিতে ঘুরতে লাগল। বাড়ি ফিরে রাতের খাবারের পর যে বইটি পড়ছিলাম, সেটা নিয়েই বসা গেল–রমানাথ রায়ের ছোটগল্প। পড়তে পড়তে একটি গল্পের মাঝামাঝি গল্পের নায়িকা মালতীর মন্তব্য পড়ে আবারও চমকালাম। সন্তানসম্ভবা মালতী দৃঢ়স্বরে বলছে, ‘না, ও আমি করতে পারব না। অনিমেষের সন্তান আমার গর্ভে।’
আমি ধীরে ধীরে বইটি মুড়ে রাখলাম। তিনটি জিনিস আমাকে অবাক করল। এক. একটি কথা বাস্তব জীবনে শুনেছি, আর অন্য কথাটি গল্পে পড়েছি। দুই. কথাটি একজন বিদেশিনী বলেছেন, আবার কথাটি এক বাংলা গল্পের নায়িকাও বলেছেন। তিন. কথাটি এক জায়গায় উচ্চারিত হয়েছে বাংলায়, অন্য জায়গায় ইংরেজিতে। কিন্তু এত সব ভিন্নতা সত্ত্বেও ইংরেজি ও বাংলা দুটো বাক্য একই কথা বলেছে এবং সেখানেই আমার যত অস্বস্তি, যত আপত্তি।
দুটো কথনেরই প্রতিপাদ্য তিনটি–দুটো প্রত্যক্ষ আর একটি পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ ব্যাপার দুটো হচ্ছে, এক. সন্তানটি পুরুষের–এক ক্ষেত্রে ববের, অন্য ক্ষেত্রে অনিমেষের। দুই. উভয় ক্ষেত্রেই নারী হচ্ছেন শুধু একটি আধার, যা শিশুটিকে ধারণ করছেন মাত্র। পরোক্ষভাবে এটাই বেরিয়ে আসছে যে নারী মানেই পুরুষের সম্পত্তি।
ভেবে পাই না, এটা কেমন করে হয়? একটি মানবসন্তান মা-বাবা দুজনেরই অবদানের ফল–দুজনেরই সৃষ্টি। সেখানে কেমন করে ভাবা হয় যে সন্তানটি পুরুষেরই? এমন একটি ব্যাপারকে কেমন করে ‘কথার কথা’ বলা যায়? কথা শুধু তো কথা নয়। কী বলছি, কেন বলছি, কেমন করে বলছি, তা তো শুধু শব্দের সমষ্টি নয়, সে তো ইতিহাস, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, ঐতিহ্য, মানসিকতা ও সমাজ-বাস্তবতার প্রতিফলনও।
অতএব, যে বাক্যদ্বয় পূর্বোল্লিখিত হয়েছে, তা মানব-জন্মের বিবর্তনে সর্বজনীনভাবে নারীর ভূমিকাকে নিতান্ত খাটো করেই দেখা হয়নি, সেখানে একটি অসম্মানজনক অবস্থানে তাঁকে রাখা হয়েছে। নারী প্রজননের যন্ত্রমাত্র, আর কিছু নয়। অন্যদিকে মানব-জন্ম বিবর্তনে নির্দেশিত ভূমিকায় পুরুষের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য যেন জ্বলজ্বল করে। বলা বাহুল্য, অন্যায় ও অসত্যের ধ্বজা উড়িয়ে। সেখানে নারীর ভূমিকাকে অবদমিত করা হয়েছে। সমস্বীকৃতি তো দূরের কথা।
এর হাত ধরেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উদ্ভব এবং সদম্ভ বিরাজ। জানি, পুরুষশাসিত সমাজের বিবর্তনের অন্য বহুবিধ ঐতিহাসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ আছে। কিন্তু মানব বিবর্তনের ধারায় প্রজনন প্রক্রিয়ায় পুরুষের নিরঙ্কুশ মালিকানা দেওয়ার মাধ্যমে পুরুষের সর্বময় প্রভুত্ব ও আধিপত্যকে স্থায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ কারণে বংশপরম্পরায় পিতার নামেই পুত্র বা কন্যার নামকরণ করা হয়, সে নামেই তাদের পরিচিতি ও চিহ্নিতকরণ। মাতার নাম সেখানে অপাঙ্ক্তেয়। অনেক উদার পিতা সেখানে সন্তানের মাতার নামটিকে কখনোসখনো জায়গা দেন বটে, তবে সেটা ব্যতিক্রম, সচরাচর তা ঘটে না। আদিবাসী মাতৃতান্ত্রিক সমাজে অবশ্য মায়ের নামে সন্তানের নামকরণ করা হয় বৈকি, কিন্তু সেটা তো মূলধারায় ঘটে না।
এর হাত ধরে আসে সম্পদের অধিকার। পুরুষতান্ত্রিক বংশপরম্পরায় যেহেতু নারীরা অন্তর্ভুক্ত নয়, সুতরাং সম্পদের অধিকার থেকেও তাঁদের বঞ্চিত করা হয়। ভাবা যায়, যদিও পৃথিবীর জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, কিন্তু বিশ্বের চাষযোগ্য জমির মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা নারীদের। হ্যাঁ, সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ধর্মের রীতি-নীতির দোহাই দেওয়া হয় বটে, কিন্তু মূলত সেখানে কাজ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষ কর্তৃক সম্পদ দখল করার অপপ্রয়াস। সেই অপপ্রয়াসের অংশ হিসেবে আরও সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্য নারীকে ব্যবহার করা হয় নানান বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে।
এই চালচিত্রের বদলের জন্য বহু কিছু করতে হবে। এক দিনে তা হবে না এবং একটি প্রয়াসের মাধ্যমে তা হবে না। তবে তার শুরুটা হোক না মানবশিশুর পৃথিবীতে আগমন ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে, সচরাচর যা বলা হয় এবং যেমন করে বলা হয়, তার আশু পরিবর্তনের নামে। সে বক্তব্যে নারী-পুরুষের যৌথ ভূমিকার সমস্বীকৃতি তো থাকতেই হবে, কিন্তু সেই সঙ্গে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে নারীর ভূমিকার প্রতি। কারণ, সত্যিকার অর্থে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মানবশিশুর জন্ম ঘটনায় মায়ের অবদান বেশি। তিনি সন্তানকে ধারণ করে থাকেন নিজ দেহে দীর্ঘদিন। মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি নিয়েই ভ্রূণের বর্ধন। অতঃপর অতীব তীব্র প্রসববেদনার মধ্য দিয়ে মা একটি শিশুর জন্ম দেন।
সন্তানের নামের ক্ষেত্রেও মায়ের নামটিকে বাবার নামের সঙ্গে সমান গুরুত্ব দেওয়া যায় না। জানি, অনেকেই বলবেন, এগুলো সব প্রতীকী প্রয়াস, কিন্তু প্রতীকের গুরুত্বকে খাটো করে দেখা ঠিক নয়। বহু প্রতীকী প্রয়াসের মাধ্যমে পৃথিবীর বহু পরিবর্তন হয়েছে।
খুব নমিত হয়ে বলি, বহু বছর আগে আমার জন্মের পরে আমার তরুণ পিতা আমার মাতার নামে আমার নামকরণ করেছিলেন। আমার মায়ের নাম ছিল ‘জাহানারা’। সেখান থেকে আমার পারিবারিক নাম দেওয়া হয় ‘জাহান’ এবং আমার পুরো নাম হয় ‘সেলিম জাহান’। আমার পিতার পারিবারিক নাম ‘হক’ আমার নামের সঙ্গে সংযুক্ত হয়নি। আজ থেকে ৭০ বছর আগে সেই যুগে আমার পিতা যে অবিস্মরণীয় কাজটি করেছিলেন, তার জন্য আমার মুগ্ধতার সীমা নেই এবং আমার সারা জীবন আমি তাঁর কাছে একধরনের কৃতজ্ঞতা বোধ করেছি।
শেষের কথা বলি। সন্তান ধারণ ও জন্মদানের দীর্ঘ যে কষ্টের পথ, তা পাড়ি দেওয়া শুধু নারীর পক্ষেই সম্ভব। পুরুষকে যদি সন্তান ধারণ করতে আর সন্তানের জন্ম দিতে হতো, তাহলে আমার মনে হয় পৃথিবীর জনসংখ্যা ৪০০-এর বেশি হতো না।
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে।
১২ ঘণ্টা আগেআজ ১৭ নভেম্বর, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুদিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে তিনি এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস পেছনে ফেলে পরলোকগমন করেন। আজীবন সংগ্রামী ভাসানী কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতারও ছিলেন প্রথম প্রবক্তা।
১২ ঘণ্টা আগেসকালের আলোয় মনটা অকারণে আনমনা হয়ে যায়। মনের কোণে হঠাৎ বেজে ওঠে চেনা গানের সুর—‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে...।’ মন ছুটে যায় সেই ছেলেবেলায়, যখন ঋতুবদল ঘটত গানের সুরেই।
১২ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। ক্ষমতা পেয়েছে অন্তর্বর্তী এক সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অরাজনৈতিক অথচ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১২ ঘণ্টা আগে