জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের পরপরই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে শূন্য হওয়া ওই আসনগুলোয় নির্বাচন নিয়ে। ঘটনার একদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানান দিল খুব শিগগিরই এসব আসনে ভোটের আয়োজন করা হবে। শূন্য আসনে ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আমাদের হলো রেফারির কাজ। আমরা মাঠ প্রস্তুত রাখব, গ্যালারি প্রস্তুত রাখব। সবকিছু প্রস্তুত রাখব প্লেয়ারেরা খেলতে আসবেন।’

সংস্থাটির কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবারই কমিশন বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। সেদিনই সংসদ থেকে পদত্যাগ করা এমপিদের আসনে ভোটের তফসিলের সিদ্ধান্ত হতে পারে। আজ সোমবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান কমিশনার মো. আলমগীর। 

মো. আলমগীর বলেন, ‘বৃহস্পতিবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে হয়তো আমরা বসব। মিনিমাম সময় যেটা দিতে হয় সেটি দিয়ে আমরা হয়তো দিয়ে দেব। আমরা ৯০ দিন অপেক্ষা করব না।’

গত শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগের সমাবেশে বিএনপির সাত সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরদিন রোববার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপি থেকে যোগ দেওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার, বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন, বগুড়া–৬ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান এবং বিএনপির সংরক্ষিত সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বিদেশে থাকায় তার স্ক্যান করা স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করা হয়নি। পরবর্তীতে রাতেই সংসদ সচিবালয় থেকে ছয় এমপির আসন শূন্য করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

পদত্যাগ করা এসব সংসদ সদস্যের আসনে শিগগিরই ভোটের আয়োজন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। সংস্থাটি মনে করে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় যেহেতু আর বেশি দিন নেই সেহেতু যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব শূন্য হওয়া আসনগুলোতে নির্বাচন দিয়ে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। 

এ বিষয়ে ইসি আলমগীর বলেন, ‘তফসিল আমরা খুব তাড়াতাড়িই দেব ইনশাআল্লাহ। যেহেতু পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন এক বছরের একটু বেশি সময় আছে। ওই হিসেবে ৯০ দিনের আগেই দিয়ে দেব।’ 

আলমগীর আরও জানান, সব নির্বাচনই ৯০ দিনের মধ্যে করতে হয়। কিন্তু মিনিমাম একটা সময় দিতে হয় কারণ মনোনয়ন জমা দেওয়া, বাছাইয়ের সময়, প্রত্যাহার ও প্রচারের সময় থাকে। এ জন্য ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় দিতে হয়। এই সময়টা দিয়ে তারিখ ঘোষণা করা হবে। 

এই ছয়জন সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘটনায় নির্বাচন কমিশন কোনো চাপ অনুভব করছে না বলেও জানান মো. আলমগীর। এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো সম্পর্ক জড়িত নয়। বরং আইন অনুযায়ী আসন শূন্য হলে নির্বাচন করাই সংস্থাটির দায়িত্ব বলে মনে করেন এই সাবেক ইসি সচিব। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ইভিএম প্রথা বাতিলসহ বেশ কিছু দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপি ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসতে রাজি নয়। বর্তমান কমিশন যোগদানের পরও দলটিকে একাধিকবার আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ইসি মনে করে সব দল নির্বাচনে না-ই আসতে পারে।

মো. আলমগীর বলেন, ‘সব খেলোয়াড়রা নাও আসতে পারেন। যাদের প্রস্তুতি থাকবে না তারা তো নাও আসতে পারেন। ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। সবগুলো দলই যে নির্বাচন করবে সেটি তো আর বলা যায় না।’ 

আবার কমিশন এও ভাবছে, সব সক্রিয় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিলে একটি নির্বাচন সুন্দর হবে। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা দেখব যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বা সক্রিয় রাজনৈতিক দল যারা আছে, তারা আসলেই বলব যে একটু সুন্দর নির্বাচন হয়েছে।