একটি গ্রুপই ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ২৫
Thumbnail image
আজ শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘সেন্টার ফর এনআরবি’ আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘দেশে দিনেদুপুরে এমনভাবে চুরি হয়েছে, যা বিশ্বের আর কোথাও হয়নি। শুধু চট্টগ্রামভিত্তিক একটি গ্রুপই ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। আমরা টাস্কফোর্স গঠন করেছি। বিদেশিরা কাজ করছে। পাচারকারীদের অর্থ ফিরিয়ে আনব। আমাদের দেশের বাইরের আদালতেও জিততে হবে। প্রবাসীরা পাচারকারীদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে অনুসন্ধানে সুবিধা হবে, অর্থ ফিরিয়ে আনা সহজ হবে।’

আজ শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘সেন্টার ফর এনআরবি’ আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সৌদি আরবের পুরো রেমিট্যান্স এখন সরাসরি বাংলাদেশে আসছে না। দুবাই হয়ে আসছে। একটি অসাধু চক্র সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কিনে মজুত করছে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ডলারের বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছে তারা। দায় পরিশোধের চাপে অনেক সময় ব্যাংকগুলো উচ্চমূল্য দিতেও রাজি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে দেশের ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে।’

ব্যাংকগুলোর উদ্দেশে গভর্নর বলেন, ‘দেশের সাথে আপনারা (ব্যাংক) এই কাজটি করবেন না। যদি বড় কোনো দায় পরিশোধের প্রয়োজন হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসুন। আমরা ডলারের ব্যবস্থা করে দেব। বিদেশি চক্রের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে ডলার কিনবেন না।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা প্যানিকড (আতঙ্কিত) হবেন না। সাত দিন ডলার না কিনলে ওরা সোজা হয়ে যাবে। এখন চার মাসের বেশি আমদানি দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে। সুতরাং আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। একতাবদ্ধ থাকুন।’

একটি ব্যাংকের উদাহরণ দিয়ে গভর্নর বলেন, ‘এই তো গত মাসে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সকালবেলা ১২০ টাকায় ডলার কিনেছে। কিন্তু বিকেলবেলা একই উৎস থেকে ১২৭ টাকায় ডলার কিনেছে। কারণ সেদিন ওই ব্যাংকের আমদানি দায় পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত ডলার ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে সকালের চেয়ে ৭ টাকা বেশি দিয়ে ডলার কিনেছে ব্যাংকটি। কিন্তু সেই সংকট এখন সমাধান হয়ে গেছে।’

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৫ মাসে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি মিলে অতিরিক্ত সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও রেমিট্যান্স বেড়েছে। একই সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে। এখানে প্রবাসীদের অনেক বড় অবদান রয়েছে। এতে চলতি হিসাবের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, সেটি আর নেই। তিনি বলেন, এখন অর্থ পাচার কমেছে। আগে দুবাই থেকেই ডলার পাচার হয়ে যেত। এটা কমেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে গুড-গভর্নেন্স ফিরে আসায় অর্থ পাচার ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন এসেছে। এতে অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে।

প্রবাসীদের উদ্দেশে গভর্নর বলেন, ‘দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে বিদেশিদের ব্যাপক সহায়তা পাচ্ছি। আমরা আইনজীবী নিয়োগ করছি। তবে টাকা পাচারকারীদের বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য দিয়ে প্রবাসীরা সহায়তা করতে পারেন।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের সমস্যা অনেক, সামর্থ্য কম। রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের মাধ্যমে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি (ইমেজ) বেড়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর মাধ্যমেও বেড়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইমেজ পজিটিভ নয়। নেগেটিভও আছে। গত চার-পাঁচ মাসে এ দেশের ইমেজ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়া বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এর একটি প্রভাব জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্সেও পড়েছে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর বিরুদ্ধেও তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত রাজনৈতিক রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। এরপর ইমেজ সংকট কেটে যাবে। তখন বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত