সুলতান মাহমুদ
কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার কামারপাড়া গ্রামের হুমাইরা আক্তার রুমকি। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই দাম্পত্য কলহ শুরু হলে চলে আসেন বাবার বাড়ি। সে সময় তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। স্বামী মমিনুল ইসলামও স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। রুমকি প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে থাকেন, হয়তো স্বামী তাঁকে নিতে আসবেন। কিন্তু দিন গড়িয়ে মাস পেরোয়, মমিনুল আসেন না।
রুমকি ও তাঁর বাবা-মা স্থানীয়দের মাধ্যমে মীমাংসার উদ্যোগ নেন। কিন্তু মমিনুল সাড়া দেন না। এর মধ্যে রুমকির কোলজুড়ে আসে একটি কন্যাসন্তান। এবার রুমকি ও তাঁর পরিবারের লোকজন আশায় বুক বেঁধে থাকেন। অন্তত সন্তানের মুখ দেখতে মমিনুল আসবেন। কিন্তু সেই আশার গুড়েও বালি!
রুমকির পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও প্রতিকার পায়নি। মমিনুল স্ত্রী-সন্তান কারও খোঁজ নেন না। রুমকির সন্তান আস্তে আস্তে হাঁটতে শেখে। কিন্তু বাবাকে দেখা হয় না। এভাবে কেটে যায় চারটি বছর। মমিনুল স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে যান না, খোঁজও নেন না। রুমকির প্রতীক্ষার শেষ হয় না। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
অবশেষে রুমকির পরিবার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের শরণাপন্ন হয়। লিগ্যাল এইড অফিস থেকে মমিনুলকে নোটিশ করে কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে অভিযোগ শোনেন। মীমাংসার প্রস্তাব দেন। মমিনুলকে স্ত্রী ও সন্তানের গুরুত্ব বোঝানো হয়। আইনগত ঝামেলার বিষয়েও তাঁকে সতর্ক করা হয়। মমিনুল যেন সংজ্ঞা ফিরে পান! তিনি স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে নিতে রাজি হন।
লিগ্যাল এইড অফিসারের উদ্যোগে মমিনুল-রুমকির চার বছরের দাম্পত্য কলহের অবসান ঘটে। তাঁদের মেয়ে পায় বাবাকে। বর্তমানে মমিনুল ও রুমকি মেয়েকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার করছেন।
রুমকি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমানে আমার স্বামীর মধ্যে একটা পরিবর্তন আসছে। তিনি আর আগের মতো নেই। আমার ও মেয়ের ভরণপোষণও ঠিকমতো দিচ্ছেন। আমরা এখন ভালো আছি। লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আমাদের চার বছরের কষ্টের অবসান হয়েছে। আমার মেয়ে তার বাবা পেয়েছে।’
রুমকি-মমিনুল দম্পতির মতো শত শত পরিবারের কলহ, নির্যাতন, প্রতারণা, পাওনা টাকা আদায়সহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের নিষ্পত্তি ও আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস। এসব সেবা মিলছে সম্পূর্ণ বিনা খরচে। এতে মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও অর্থ খরচ থেকে রেহাই পাচ্ছে শত শত পরিবার। মিলছে হয়রানি থেকে মুক্তি।
২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আইনগত সহায়তা
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জনকে সহায়তা দিয়েছে। সংস্থাটি দেশব্যাপী আইনি সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় ২০০৯ সাল থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৬ জনকে আইনি পরামর্শ দিয়েছে। একই সময়ে সংস্থাটি ৮২ হাজার ৫৮৮টি বিরোধ/মামলা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করেছে এবং বিরোধে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার ৪৯৮ টাকা আদায় করে দিয়েছে।
বিনা খরচে আইনগত সহায়তা পাবেন যেভাবে
অফিস চলাকালীন এই কল সেন্টারের ১৬৪৩০ নম্বরে যে কোনো মোবাইল/টেলিফোন থেকে কল করে আইনি পরামর্শ, আইনগত তথ্য, লিগ্যাল কাউন্সেলিং, মামলা করার প্রাথমিক তথ্য, সরকারি আইনি সেবা সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শ, সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ সম্পর্কিত সেবা পাওয়া যায়। এর জন্য কোনো কলচার্জ কাটা যায় না।
যাঁরা আইনগত সহায়তা পাবেন:
কোনো মামলায় বাদী, বিবাদী বা আসামি যে কেউ আইনগত সহায়তা পেতে পারেন। আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা, ২০১৪-এর ধারা ২-এ বলা হয়েছে কারা আইনগত সহায়তা পাবেন।
এ ছাড়া আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০-এর উদ্দেশ্য পূরণে, সংস্থা সময়-সময় চিহ্নিত আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন, নানাবিধ আর্থসামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি, যিনি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা বা মামলা পরিচালনায় অসমর্থ, তিনিও আইনগত সহায়তা পাবেন।
আইনগত সহায়তা পাওয়ার শর্ত
অনেকের মধ্যে এমন একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, মামলা করার প্রয়োজন হলেই হয়তো জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে। কিন্তু মামলা করার প্রয়োজন ছাড়াও যেকোনো আইনগত পরামর্শের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা পাওয়া যায়। কোনো ব্যক্তি যখন কোনো প্রকারের আইনগত সমস্যার সম্মুখীন হন, তখন জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা থেকে আইনি পরামর্শ নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড অফিসার আইনগত পরামর্শ দেন, আপস-মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করেন বা মামলায় সহযোগিতা করেন। যেকোনো ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্ট, জেলায় অবস্থিত নিম্ন আদালত, শ্রম আদালতে আইনগত সহায়তা পেতে পারেন।
আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা, ২০১৫-এর ধারা ৩ অনুযায়ী প্রত্যেক বিচারপ্রার্থীকে তাঁর নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং আইনগত সহায়তার কারণ উল্লেখ করে সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া সাদা কাগজে লিখেও আবেদন করা যায়।
আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগে বিচারের বিষয় হলে সুপ্রিম কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। অন্যান্য আদালতে বিচারের বিষয় হলে জেলা কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। শ্রম আদালতে বিচারের বিষয় হলে শ্রম আদালতের বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে।
এ ছাড়া বিচারাধীন মামলার আইনগত সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতকে জানিয়ে সহযোগিতা পাওয়া যায়।
যেভাবে আবেদন করা যাবে
দুইভাবে আবেদন করা যায়। এক. অনলাইনে। দুই. সরাসরি লিগ্যাল এইড অফিসে গিয়ে। লিগ্যাল এইডের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হবে।
যদি কেউ অনলাইনে আবেদন করেন, তাহলে ওই দিন তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লিগ্যাল এইড অফিস থেকে যোগাযোগ করে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয় আবেদনটি গ্রহণ করা হবে কি না। যদি গ্রহণ করা হয়, তাহলে একটি আবেদন নম্বর তৈরি হবে। এরপর একটি নির্দিষ্ট তারিখে উভয় পক্ষকে লিগ্যাল এইড অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করা হয়।
যদি নির্দিষ্ট তারিখে উভয় পক্ষ আসে, তাহলে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। যদি অপর পক্ষ না আসে, তাহলে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আর যদি সরাসরি কেউ লিগ্যাল এইড অফিসে গিয়ে হাজির হন, তাহলে সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা সেবাপ্রার্থী ব্যক্তির কাছ থেকে তাঁর নাম-ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করবেন। এরপর উভয় পক্ষকে একটি নির্দিষ্ট দিনে লিগ্যাল এইড অফিসে আসার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করা হবে। যদি অপর পক্ষ না আসে তাহলে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সশরীরে কোথায় যোগাযোগ করবেন
প্রতি জেলায় জেলা জজ আদালত ভবনে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির অফিস রয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ এর চেয়ারম্যান। সেখানে যোগাযোগ করলে লিগ্যাল এইড অফিসার ও কর্মচারীরা আইনগত সহায়তার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা দেবেন। সুপ্রিম কোর্টের বিষয়ে আইনগত সহায়তার জন্য সুপ্রিম কোর্টে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস রয়েছে।
এ ছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা কমিটি রয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যান ওই কমিটির চেয়ারম্যান। প্রতি ইউনিয়নে ইউনিয়ন কমিটি রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওই কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কমিটিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনগত সহায়তার বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া যায়। এ ছাড়া জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত জাতীয় হেল্পলাইন থেকে সাহায্য নিয়ে যোগাযোগ করা যায়।
বিচারপ্রার্থী বা আইনগত সহায়তাপ্রার্থীর দায়িত্ব
আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা, ২০১৫-এর ৪ ধারা মতে বিচারপ্রার্থীর কিছু দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে—আবেদন নির্ভুল হতে হবে এবং পরিপূর্ণ তথ্য দিতে হবে। কমিটি, লিগ্যাল এইড অফিসার এবং নিযুক্ত আইনজীবীকে সহায়তা করতে হবে। কমিটি যেসব শর্ত দেবে, তা পালন করতে হবে।
আইনজীবী নিয়োগ
আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা, ২০১৫-এর ৫ ধারামতে, কোনো বিচারপ্রার্থীকে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে মামলা পরিচালনার জন্য কমিটি তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের মধ্যে থেকে তিনজন আইনজীবীকে মনোনীত করবে এবং বিচারপ্রার্থীর সম্মতি সাপেক্ষে তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ করা হবে।
(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আজকের পত্রিকার কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।)
কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার কামারপাড়া গ্রামের হুমাইরা আক্তার রুমকি। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই দাম্পত্য কলহ শুরু হলে চলে আসেন বাবার বাড়ি। সে সময় তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। স্বামী মমিনুল ইসলামও স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। রুমকি প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে থাকেন, হয়তো স্বামী তাঁকে নিতে আসবেন। কিন্তু দিন গড়িয়ে মাস পেরোয়, মমিনুল আসেন না।
রুমকি ও তাঁর বাবা-মা স্থানীয়দের মাধ্যমে মীমাংসার উদ্যোগ নেন। কিন্তু মমিনুল সাড়া দেন না। এর মধ্যে রুমকির কোলজুড়ে আসে একটি কন্যাসন্তান। এবার রুমকি ও তাঁর পরিবারের লোকজন আশায় বুক বেঁধে থাকেন। অন্তত সন্তানের মুখ দেখতে মমিনুল আসবেন। কিন্তু সেই আশার গুড়েও বালি!
রুমকির পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও প্রতিকার পায়নি। মমিনুল স্ত্রী-সন্তান কারও খোঁজ নেন না। রুমকির সন্তান আস্তে আস্তে হাঁটতে শেখে। কিন্তু বাবাকে দেখা হয় না। এভাবে কেটে যায় চারটি বছর। মমিনুল স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে যান না, খোঁজও নেন না। রুমকির প্রতীক্ষার শেষ হয় না। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
অবশেষে রুমকির পরিবার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের শরণাপন্ন হয়। লিগ্যাল এইড অফিস থেকে মমিনুলকে নোটিশ করে কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে অভিযোগ শোনেন। মীমাংসার প্রস্তাব দেন। মমিনুলকে স্ত্রী ও সন্তানের গুরুত্ব বোঝানো হয়। আইনগত ঝামেলার বিষয়েও তাঁকে সতর্ক করা হয়। মমিনুল যেন সংজ্ঞা ফিরে পান! তিনি স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে নিতে রাজি হন।
লিগ্যাল এইড অফিসারের উদ্যোগে মমিনুল-রুমকির চার বছরের দাম্পত্য কলহের অবসান ঘটে। তাঁদের মেয়ে পায় বাবাকে। বর্তমানে মমিনুল ও রুমকি মেয়েকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার করছেন।
রুমকি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমানে আমার স্বামীর মধ্যে একটা পরিবর্তন আসছে। তিনি আর আগের মতো নেই। আমার ও মেয়ের ভরণপোষণও ঠিকমতো দিচ্ছেন। আমরা এখন ভালো আছি। লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আমাদের চার বছরের কষ্টের অবসান হয়েছে। আমার মেয়ে তার বাবা পেয়েছে।’
রুমকি-মমিনুল দম্পতির মতো শত শত পরিবারের কলহ, নির্যাতন, প্রতারণা, পাওনা টাকা আদায়সহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের নিষ্পত্তি ও আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস। এসব সেবা মিলছে সম্পূর্ণ বিনা খরচে। এতে মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও অর্থ খরচ থেকে রেহাই পাচ্ছে শত শত পরিবার। মিলছে হয়রানি থেকে মুক্তি।
২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আইনগত সহায়তা
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জনকে সহায়তা দিয়েছে। সংস্থাটি দেশব্যাপী আইনি সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় ২০০৯ সাল থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৬ জনকে আইনি পরামর্শ দিয়েছে। একই সময়ে সংস্থাটি ৮২ হাজার ৫৮৮টি বিরোধ/মামলা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করেছে এবং বিরোধে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার ৪৯৮ টাকা আদায় করে দিয়েছে।
বিনা খরচে আইনগত সহায়তা পাবেন যেভাবে
অফিস চলাকালীন এই কল সেন্টারের ১৬৪৩০ নম্বরে যে কোনো মোবাইল/টেলিফোন থেকে কল করে আইনি পরামর্শ, আইনগত তথ্য, লিগ্যাল কাউন্সেলিং, মামলা করার প্রাথমিক তথ্য, সরকারি আইনি সেবা সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শ, সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ সম্পর্কিত সেবা পাওয়া যায়। এর জন্য কোনো কলচার্জ কাটা যায় না।
যাঁরা আইনগত সহায়তা পাবেন:
কোনো মামলায় বাদী, বিবাদী বা আসামি যে কেউ আইনগত সহায়তা পেতে পারেন। আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা, ২০১৪-এর ধারা ২-এ বলা হয়েছে কারা আইনগত সহায়তা পাবেন।
এ ছাড়া আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০-এর উদ্দেশ্য পূরণে, সংস্থা সময়-সময় চিহ্নিত আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন, নানাবিধ আর্থসামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি, যিনি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা বা মামলা পরিচালনায় অসমর্থ, তিনিও আইনগত সহায়তা পাবেন।
আইনগত সহায়তা পাওয়ার শর্ত
অনেকের মধ্যে এমন একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, মামলা করার প্রয়োজন হলেই হয়তো জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে। কিন্তু মামলা করার প্রয়োজন ছাড়াও যেকোনো আইনগত পরামর্শের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা পাওয়া যায়। কোনো ব্যক্তি যখন কোনো প্রকারের আইনগত সমস্যার সম্মুখীন হন, তখন জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা থেকে আইনি পরামর্শ নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড অফিসার আইনগত পরামর্শ দেন, আপস-মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করেন বা মামলায় সহযোগিতা করেন। যেকোনো ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্ট, জেলায় অবস্থিত নিম্ন আদালত, শ্রম আদালতে আইনগত সহায়তা পেতে পারেন।
আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা, ২০১৫-এর ধারা ৩ অনুযায়ী প্রত্যেক বিচারপ্রার্থীকে তাঁর নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং আইনগত সহায়তার কারণ উল্লেখ করে সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া সাদা কাগজে লিখেও আবেদন করা যায়।
আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগে বিচারের বিষয় হলে সুপ্রিম কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। অন্যান্য আদালতে বিচারের বিষয় হলে জেলা কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। শ্রম আদালতে বিচারের বিষয় হলে শ্রম আদালতের বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে।
এ ছাড়া বিচারাধীন মামলার আইনগত সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতকে জানিয়ে সহযোগিতা পাওয়া যায়।
যেভাবে আবেদন করা যাবে
দুইভাবে আবেদন করা যায়। এক. অনলাইনে। দুই. সরাসরি লিগ্যাল এইড অফিসে গিয়ে। লিগ্যাল এইডের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হবে।
যদি কেউ অনলাইনে আবেদন করেন, তাহলে ওই দিন তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লিগ্যাল এইড অফিস থেকে যোগাযোগ করে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয় আবেদনটি গ্রহণ করা হবে কি না। যদি গ্রহণ করা হয়, তাহলে একটি আবেদন নম্বর তৈরি হবে। এরপর একটি নির্দিষ্ট তারিখে উভয় পক্ষকে লিগ্যাল এইড অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করা হয়।
যদি নির্দিষ্ট তারিখে উভয় পক্ষ আসে, তাহলে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। যদি অপর পক্ষ না আসে, তাহলে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আর যদি সরাসরি কেউ লিগ্যাল এইড অফিসে গিয়ে হাজির হন, তাহলে সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা সেবাপ্রার্থী ব্যক্তির কাছ থেকে তাঁর নাম-ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করবেন। এরপর উভয় পক্ষকে একটি নির্দিষ্ট দিনে লিগ্যাল এইড অফিসে আসার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করা হবে। যদি অপর পক্ষ না আসে তাহলে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সশরীরে কোথায় যোগাযোগ করবেন
প্রতি জেলায় জেলা জজ আদালত ভবনে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির অফিস রয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ এর চেয়ারম্যান। সেখানে যোগাযোগ করলে লিগ্যাল এইড অফিসার ও কর্মচারীরা আইনগত সহায়তার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা দেবেন। সুপ্রিম কোর্টের বিষয়ে আইনগত সহায়তার জন্য সুপ্রিম কোর্টে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস রয়েছে।
এ ছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা কমিটি রয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যান ওই কমিটির চেয়ারম্যান। প্রতি ইউনিয়নে ইউনিয়ন কমিটি রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওই কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কমিটিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনগত সহায়তার বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া যায়। এ ছাড়া জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত জাতীয় হেল্পলাইন থেকে সাহায্য নিয়ে যোগাযোগ করা যায়।
বিচারপ্রার্থী বা আইনগত সহায়তাপ্রার্থীর দায়িত্ব
আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা, ২০১৫-এর ৪ ধারা মতে বিচারপ্রার্থীর কিছু দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে—আবেদন নির্ভুল হতে হবে এবং পরিপূর্ণ তথ্য দিতে হবে। কমিটি, লিগ্যাল এইড অফিসার এবং নিযুক্ত আইনজীবীকে সহায়তা করতে হবে। কমিটি যেসব শর্ত দেবে, তা পালন করতে হবে।
আইনজীবী নিয়োগ
আইনগত সহায়তা প্রদান প্রবিধানমালা, ২০১৫-এর ৫ ধারামতে, কোনো বিচারপ্রার্থীকে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে মামলা পরিচালনার জন্য কমিটি তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের মধ্যে থেকে তিনজন আইনজীবীকে মনোনীত করবে এবং বিচারপ্রার্থীর সম্মতি সাপেক্ষে তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ করা হবে।
(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আজকের পত্রিকার কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।)
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে থাকবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের
৬ ঘণ্টা আগেকিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার স্বত্ব প্রদান এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
৭ ঘণ্টা আগেছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এর তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। মূল্যায়নে তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী স
৮ ঘণ্টা আগেবিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য অনেকে নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় সেসব তথ্যই এখন তাঁদের জন্য ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গ
৮ ঘণ্টা আগে