অনলাইন ডেস্ক
মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। বুধবার (২৮) ডিসেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে ট্রেন। শুরুতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও থামবে না। তবে আগামী ২৬ মার্চ থেকে এই পথের নয়টি স্টেশনের সবগুলোতে মেট্রোরেল থামবে।
আগামী বছর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর সম্পূর্ণ মেট্রোরেল প্রকল্প।
কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পৌনে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে মেট্রোরেলের সময় লাগবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী বছর ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে। ২০২৫ সালে কমলাপুর পর্যন্ত চলবে। সে ক্ষেত্রে পুরোটা চালু হলে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে ৩৮ মিনিট লাগবে। ঘণ্টায় ৬০ হাজার অর্থাৎ দিনে ৫ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করতে পারবেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেলের চলাচল, স্টেশনে থামা, কোথায় কত গতিতে চলবে—এর পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে, একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এই ব্যবস্থা উত্তরার দিয়াবাড়ির ডিপোতে থাকা অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারে (ওসিসি) থাকবে। যাত্রীদের যাতায়াত সম্পর্কে দিকনির্দেশনা পরে ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকবে।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটি জানিয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথে যেখানে লাইন সোজা, সেখানে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে মেট্রোরেল চলবে। আর যেখানে কিছুটা বাঁক রয়েছে, সেখানে কিছুটা কম গতিতে চলবে। পুরো ব্যবস্থা আগে থেকেই ঠিক করা আছে।
মেট্রোরেল কী
সাধারণ রেলপথে পাথর থাকে। কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনে কোনো পাথর নেই। সাধারণ রেললাইনে কিছুটা পরপর জোড়া আছে। কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনে কোনো জোড়া নেই। আসা-যাওয়ার দুটি ভিন্ন লাইন। শুধু স্টেশনে একাধিক লাইন আছে। মেট্রোরেল চলাচল করবে পুরোপুরি বিদ্যুতের মাধ্যমে। এ জন্য রেললাইনের দুই পাশে খুঁটি দিয়ে ওপরে তার টানানো হয়েছে। মেট্রোরেলের সঙ্গে ওপরের তারের সংযোগ আছে।
সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেসব লাইনে মেট্রোরেলের স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ পুলিশ (এমআরটি পুলিশ) নিয়োগের আইন করা হয়েছে। তবে এখনো বিশেষ পুলিশের কাঠামো দাঁড় করানো যায়নি। আপাতত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
নিরাপত্তা
মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে দুই দিকে থাকছে দুটি করে চারটি ফটক। মেট্রোরেলের স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ পুলিশ (এমআরটি পুলিশ) নিয়োগের আইন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ‘এমআরটি পুলিশ’গঠনের জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
আপাতত ডিএমপি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে। চারটি ফটকের প্রতিটিতে দুজন করে মোট আটজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের তদারকে থাকবেন একজন কর্মকর্তা।
ভাড়া
মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধের জন্য ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড থাকবে। এই কার্ড কিনতে লাগবে ২০০ টাকা। এরপর প্রয়োজনমতো টাকা দিয়ে (রিচার্জ) কার্ড ব্যবহার করা যাবে। এই কার্ড পেতে নিবন্ধন করতে হবে। বৃহস্পতিবারই ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের লিংক দেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) জন্য নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। স্টেশন থেকে এক যাত্রার এবং দীর্ঘমেয়াদি—দুই ধরনের কার্ড পাওয়া যাবে।
মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬-এ প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ৫ টাকা, সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাড়া মওকুফ। মাসিক, সাপ্তাহিক, পারিবারিক ভাড়ার কার্ডে ভাড়ায় বিশেষ সুবিধা থাকবে।
শুরুতে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে টিকিট (কার্ড) কাটা যাবে। স্টেশন পড়বে মোট ৯টি। এই পথের মোট ভাড়া ৬০ টাকা।
অবশ্য এই ভাড়াকে অনেকে একটু বেশি বলেই মনে করছেন। ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হতে যাওয়া মেট্রোরেলের ভাড়া ৩০ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন গবেষণা এবং নীতি বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
হাফ ভাড়া নেই
শিক্ষার্থীদের জন্য মেট্রোরেলে কোনো হাফ ভাড়া থাকছে না। গণপরিবহনে এ সুবিধা থাকলেও মেট্রোতে না থাকার কারণ ব্যাখ্যায় মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিক বলেন, এমনিতেই যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা খরচের ৩৩ থেকে ৩৫ শতাংশ কম। এ ছাড়া যাঁরা স্থায়ী কার্ড কিনে যাতায়াত করবেন, তাঁদের জন্য ১০ শতাংশ ছাড় আছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন। পঙ্গুদের জন্য ছাড় আছে। এসব কারণে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা নেই।
টিকিট কাটার পদ্ধতি
উদ্বোধন ঘোষণার পর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। প্রথম দিকে শুধু স্টেশনের কাউন্টার থেকে এমআরটি পাস ইস্যু করা হবে এবং তা রিচার্জ করা যাবে।
দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপোতে স্থাপন করা হয়েছে মেট্রোরেল এক্সিবিশন ইনফরমেশন সেন্টার (এমইআইসি)। টিকিট কেটে মেট্রোতে চলাচলের যাবতীয় তথ্য সেখান থেকে জানা যাচ্ছে। যাত্রীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য সেখানে আছেন এক্সিবিশন গাইড।
প্রত্যেকটি স্টেশনেই একটি টিকেট ভেন্ডর মেশিন বা টিকিট বিক্রয় মেশিনে পাওয়া যাবে। গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটার দুটি পদ্ধতি রয়েছে—সিঙ্গেল (একক) ও পারমানেন্ট। টিকিট কাটতে হলে যাত্রীকে প্রথমে মনিটরে ভাষা (বাংলা অথবা ইংরেজি) নির্বাচন করতে হবে। একক ও পারমানেন্ট (এমআরটি পাস) যাত্রার জন্য টিকিট নির্বাচন করতে হবে। এরপর আসবে গন্তব্যের তালিকা। কোন স্টেশন পর্যন্ত কত ভাড়া সে তালিকা দেওয়া থাকবে। সেখান থেকে যাত্রীকে তাঁর গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর কয়টি টিকিট কাটবেন তার অপশন আসবে। পছন্দমতো স্টেশন ও টিকিট সংখ্যা টাচ-স্ক্রিন মনিটরে নির্বাচন করে গন্তব্যের স্থান নির্বাচন করতে হবে। এরপর ‘ওকে’ বাটন চাপলেই মেশিন টাকা চাইবে। টাকা দিলেই একক টিকিট বের হয়ে আসবে। এই পদ্ধতিতে যাত্রীরা একবারই ভ্রমণ করতে পারবেন। একক যাত্রার জন্য একজন যাত্রী একসঙ্গে পাঁচটির বেশি টিকিট কাটতে পারবেন না।
অন্যদিকে এমআরটি পাস পদ্ধতিতে একটি স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে যতবার খুশি যাতায়াত করা যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে কার্ডটি সময়মতো রিচার্জ করে নিতে হবে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যাবে কার্ডটিতে। প্রত্যেক স্টেশনে থাকা টিকিট ভেন্ডর মেশিনের মাধ্যমেই এটি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে গন্তব্য অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়া কেটে নিয়ে কার্ডটি ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে যাত্রীকে।
মেট্রোরেল এক্সিবিউশন সেন্টারের আরেক এক্সিবিশন হল গাইড মো. সুজন মিয়া জানান, টিকিট ভেন্ডর মেশিন থেকে একক যাত্রার টিকিট অথবা এমআরটি পদ্ধতির স্মার্ট কার্ডটি মেট্রোরেলে প্রবেশের আগে পাঞ্চ করলে খুলে যাবে স্বয়ংক্রিয় দরজা। এর মাধ্যমে যাত্রী মেট্রোরেলে প্রবেশ করতে পারবেন। যাত্রী গন্তব্যে পৌঁছালে মেট্রো থেকে বের হওয়ার সময় আবার কার্ডটি পাঞ্চ করলে খুলে যাবে মেট্রো স্টেশন থেকে বের হওয়ার স্বয়ংক্রিয় দরজা। আর একক যাত্রার টিকিট স্বয়ংক্রিয় গেটের মেশিনে পাঞ্চ করলে গেটটি খুলে যাবে। তবে টিকিটটি রেখে দেবে গেট-মেশিন।
২৮ ডিসেম্বর স্বপ্নের মেট্রোরেলের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে চলছে শেষ মুহূর্তের নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ। রেললাইনে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে মেট্রোরেল। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরের ১২ নম্বর এলাকায়।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, মেট্রোরেলের আগামীকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আতশবাজির কর্মসূচি ছিল। সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর আদলে সুধী সমাবেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করা হবে।
প্রকল্পের আদ্যোপান্ত
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলমান প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, অনুমোদিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান। বাকিটা সরকার দেশীয় উৎস থেকে ব্যয় করবে। মেট্রোরেলের পথটির নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি লাইন-৬। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে ১৬টি স্টেশন হবে। স্টেশনের স্থানগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল।
তবে মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত নেওয়ায় প্রকল্পের কাজ বেড়ে গেছে। সে জন্য পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে আরও প্রায় এক বছর বেশি সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে মেট্রোরেল প্রকল্পটি শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর খরচ হবে আরও ১১ হাজার কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এমআরটি লাইন-১ কমলাপুর টু ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটারের মধ্যে হবে ২১ কিলোমিটার পর্যন্ত পাতাল রেল এবং ১০ কিলোমিটার হবে এলিভেটেড লাইন। এরপর এমআরটি লাইন-৫, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪সহ মোট ছয়টি লাইন ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ করার টার্গেট রয়েছে। ঢাকা মেগাসিটিতে ২ কোটি লোক। তরুণ প্রজন্ম আজ স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্ন আমরা বাস্তবে রূপান্তর করব। সেই আশাবাদ আমরা ব্যক্ত করছি।’
মেট্রোরেল নিয়ে আরও খবর পড়ুন:
মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। বুধবার (২৮) ডিসেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে ট্রেন। শুরুতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও থামবে না। তবে আগামী ২৬ মার্চ থেকে এই পথের নয়টি স্টেশনের সবগুলোতে মেট্রোরেল থামবে।
আগামী বছর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর সম্পূর্ণ মেট্রোরেল প্রকল্প।
কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পৌনে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে মেট্রোরেলের সময় লাগবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী বছর ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে। ২০২৫ সালে কমলাপুর পর্যন্ত চলবে। সে ক্ষেত্রে পুরোটা চালু হলে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে ৩৮ মিনিট লাগবে। ঘণ্টায় ৬০ হাজার অর্থাৎ দিনে ৫ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করতে পারবেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেলের চলাচল, স্টেশনে থামা, কোথায় কত গতিতে চলবে—এর পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে, একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এই ব্যবস্থা উত্তরার দিয়াবাড়ির ডিপোতে থাকা অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারে (ওসিসি) থাকবে। যাত্রীদের যাতায়াত সম্পর্কে দিকনির্দেশনা পরে ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকবে।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটি জানিয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথে যেখানে লাইন সোজা, সেখানে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে মেট্রোরেল চলবে। আর যেখানে কিছুটা বাঁক রয়েছে, সেখানে কিছুটা কম গতিতে চলবে। পুরো ব্যবস্থা আগে থেকেই ঠিক করা আছে।
মেট্রোরেল কী
সাধারণ রেলপথে পাথর থাকে। কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনে কোনো পাথর নেই। সাধারণ রেললাইনে কিছুটা পরপর জোড়া আছে। কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনে কোনো জোড়া নেই। আসা-যাওয়ার দুটি ভিন্ন লাইন। শুধু স্টেশনে একাধিক লাইন আছে। মেট্রোরেল চলাচল করবে পুরোপুরি বিদ্যুতের মাধ্যমে। এ জন্য রেললাইনের দুই পাশে খুঁটি দিয়ে ওপরে তার টানানো হয়েছে। মেট্রোরেলের সঙ্গে ওপরের তারের সংযোগ আছে।
সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেসব লাইনে মেট্রোরেলের স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ পুলিশ (এমআরটি পুলিশ) নিয়োগের আইন করা হয়েছে। তবে এখনো বিশেষ পুলিশের কাঠামো দাঁড় করানো যায়নি। আপাতত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
নিরাপত্তা
মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে দুই দিকে থাকছে দুটি করে চারটি ফটক। মেট্রোরেলের স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ পুলিশ (এমআরটি পুলিশ) নিয়োগের আইন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ‘এমআরটি পুলিশ’গঠনের জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
আপাতত ডিএমপি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে। চারটি ফটকের প্রতিটিতে দুজন করে মোট আটজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের তদারকে থাকবেন একজন কর্মকর্তা।
ভাড়া
মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধের জন্য ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড থাকবে। এই কার্ড কিনতে লাগবে ২০০ টাকা। এরপর প্রয়োজনমতো টাকা দিয়ে (রিচার্জ) কার্ড ব্যবহার করা যাবে। এই কার্ড পেতে নিবন্ধন করতে হবে। বৃহস্পতিবারই ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের লিংক দেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে এক যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) জন্য নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। স্টেশন থেকে এক যাত্রার এবং দীর্ঘমেয়াদি—দুই ধরনের কার্ড পাওয়া যাবে।
মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬-এ প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ৫ টাকা, সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাড়া মওকুফ। মাসিক, সাপ্তাহিক, পারিবারিক ভাড়ার কার্ডে ভাড়ায় বিশেষ সুবিধা থাকবে।
শুরুতে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে টিকিট (কার্ড) কাটা যাবে। স্টেশন পড়বে মোট ৯টি। এই পথের মোট ভাড়া ৬০ টাকা।
অবশ্য এই ভাড়াকে অনেকে একটু বেশি বলেই মনে করছেন। ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হতে যাওয়া মেট্রোরেলের ভাড়া ৩০ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন গবেষণা এবং নীতি বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
হাফ ভাড়া নেই
শিক্ষার্থীদের জন্য মেট্রোরেলে কোনো হাফ ভাড়া থাকছে না। গণপরিবহনে এ সুবিধা থাকলেও মেট্রোতে না থাকার কারণ ব্যাখ্যায় মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিক বলেন, এমনিতেই যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা খরচের ৩৩ থেকে ৩৫ শতাংশ কম। এ ছাড়া যাঁরা স্থায়ী কার্ড কিনে যাতায়াত করবেন, তাঁদের জন্য ১০ শতাংশ ছাড় আছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন। পঙ্গুদের জন্য ছাড় আছে। এসব কারণে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা নেই।
টিকিট কাটার পদ্ধতি
উদ্বোধন ঘোষণার পর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। প্রথম দিকে শুধু স্টেশনের কাউন্টার থেকে এমআরটি পাস ইস্যু করা হবে এবং তা রিচার্জ করা যাবে।
দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপোতে স্থাপন করা হয়েছে মেট্রোরেল এক্সিবিশন ইনফরমেশন সেন্টার (এমইআইসি)। টিকিট কেটে মেট্রোতে চলাচলের যাবতীয় তথ্য সেখান থেকে জানা যাচ্ছে। যাত্রীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য সেখানে আছেন এক্সিবিশন গাইড।
প্রত্যেকটি স্টেশনেই একটি টিকেট ভেন্ডর মেশিন বা টিকিট বিক্রয় মেশিনে পাওয়া যাবে। গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটার দুটি পদ্ধতি রয়েছে—সিঙ্গেল (একক) ও পারমানেন্ট। টিকিট কাটতে হলে যাত্রীকে প্রথমে মনিটরে ভাষা (বাংলা অথবা ইংরেজি) নির্বাচন করতে হবে। একক ও পারমানেন্ট (এমআরটি পাস) যাত্রার জন্য টিকিট নির্বাচন করতে হবে। এরপর আসবে গন্তব্যের তালিকা। কোন স্টেশন পর্যন্ত কত ভাড়া সে তালিকা দেওয়া থাকবে। সেখান থেকে যাত্রীকে তাঁর গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর কয়টি টিকিট কাটবেন তার অপশন আসবে। পছন্দমতো স্টেশন ও টিকিট সংখ্যা টাচ-স্ক্রিন মনিটরে নির্বাচন করে গন্তব্যের স্থান নির্বাচন করতে হবে। এরপর ‘ওকে’ বাটন চাপলেই মেশিন টাকা চাইবে। টাকা দিলেই একক টিকিট বের হয়ে আসবে। এই পদ্ধতিতে যাত্রীরা একবারই ভ্রমণ করতে পারবেন। একক যাত্রার জন্য একজন যাত্রী একসঙ্গে পাঁচটির বেশি টিকিট কাটতে পারবেন না।
অন্যদিকে এমআরটি পাস পদ্ধতিতে একটি স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে যতবার খুশি যাতায়াত করা যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে কার্ডটি সময়মতো রিচার্জ করে নিতে হবে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যাবে কার্ডটিতে। প্রত্যেক স্টেশনে থাকা টিকিট ভেন্ডর মেশিনের মাধ্যমেই এটি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে গন্তব্য অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়া কেটে নিয়ে কার্ডটি ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে যাত্রীকে।
মেট্রোরেল এক্সিবিউশন সেন্টারের আরেক এক্সিবিশন হল গাইড মো. সুজন মিয়া জানান, টিকিট ভেন্ডর মেশিন থেকে একক যাত্রার টিকিট অথবা এমআরটি পদ্ধতির স্মার্ট কার্ডটি মেট্রোরেলে প্রবেশের আগে পাঞ্চ করলে খুলে যাবে স্বয়ংক্রিয় দরজা। এর মাধ্যমে যাত্রী মেট্রোরেলে প্রবেশ করতে পারবেন। যাত্রী গন্তব্যে পৌঁছালে মেট্রো থেকে বের হওয়ার সময় আবার কার্ডটি পাঞ্চ করলে খুলে যাবে মেট্রো স্টেশন থেকে বের হওয়ার স্বয়ংক্রিয় দরজা। আর একক যাত্রার টিকিট স্বয়ংক্রিয় গেটের মেশিনে পাঞ্চ করলে গেটটি খুলে যাবে। তবে টিকিটটি রেখে দেবে গেট-মেশিন।
২৮ ডিসেম্বর স্বপ্নের মেট্রোরেলের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে চলছে শেষ মুহূর্তের নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ। রেললাইনে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে মেট্রোরেল। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরের ১২ নম্বর এলাকায়।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, মেট্রোরেলের আগামীকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আতশবাজির কর্মসূচি ছিল। সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর আদলে সুধী সমাবেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করা হবে।
প্রকল্পের আদ্যোপান্ত
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলমান প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, অনুমোদিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান। বাকিটা সরকার দেশীয় উৎস থেকে ব্যয় করবে। মেট্রোরেলের পথটির নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি লাইন-৬। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে ১৬টি স্টেশন হবে। স্টেশনের স্থানগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল।
তবে মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত নেওয়ায় প্রকল্পের কাজ বেড়ে গেছে। সে জন্য পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে আরও প্রায় এক বছর বেশি সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে মেট্রোরেল প্রকল্পটি শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর খরচ হবে আরও ১১ হাজার কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এমআরটি লাইন-১ কমলাপুর টু ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটারের মধ্যে হবে ২১ কিলোমিটার পর্যন্ত পাতাল রেল এবং ১০ কিলোমিটার হবে এলিভেটেড লাইন। এরপর এমআরটি লাইন-৫, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪সহ মোট ছয়টি লাইন ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ করার টার্গেট রয়েছে। ঢাকা মেগাসিটিতে ২ কোটি লোক। তরুণ প্রজন্ম আজ স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্ন আমরা বাস্তবে রূপান্তর করব। সেই আশাবাদ আমরা ব্যক্ত করছি।’
মেট্রোরেল নিয়ে আরও খবর পড়ুন:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার একগুচ্ছ সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত রাষ্ট্রে সংস্কার এখন সময়ের দাবি, সমাজের দাবি। রাজনৈতিক দলগুলোও তাই সংস্কারের এ দাবি ছুড়ে ফেলতে পারছে না। আবার সংস্কার করতে গিয়ে ভোট যে পিছিয়ে যাচ্ছ
২২ মিনিট আগেঘোষণার পর প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি চার সংস্কার কমিশনের কাজ। এমনকি কমিশনগুলো গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াও শেষ হয়নি এখন পর্যন্ত।
১ ঘণ্টা আগেপুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন সাধারণ আনসার বা অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ঢাকায় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ করার পর অনেক আনসার সদস্যকে পুলিশ থেকে ধাপে ধাপে সরিয়ে নেওয়া হয়েছ
১ ঘণ্টা আগেরাষ্ট্র পরিচালনায় স্থায়ী সমাধানের জন্য নতুন সংবিধান দরকার বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘বর্তমান যে সংবিধান চলছে, তা কোনোমতে চালানোর জন্য সংস্কার চাইছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এটা দিয়ে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে চলতে পারবে, কিন্তু একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য
৯ ঘণ্টা আগে