বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
চিত্রনায়ক সালমান শাহর সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনো জানাশোনা ছিল না। সেটা হওয়ার কথাও নয়। তবে তাঁর সঙ্গে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, কথাও হয়েছিল। সেটা এফডিসিতে কী একটি অপ্রীতিকর ঘটনার সময়। এটা ঠিক যে, তাঁর মতো নক্ষত্রের সঙ্গে আমার মতো উটকো লোকের আলাপ কখনো কখনো হয়তো হয়, কিন্তু তার আয়ু খুব বেশি স্থায়ী হয় না। তার পরও সালমান শাহকে এভাবে দেখব, সেটা একেবারে মাথায় ছিল না।
শুক্রবারের সকাল মানেই রিপোর্টারদের বিশ্রামের দিন, এদিন অ্যাসাইনমেন্ট কম থাকে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দিনের প্রথম ভাগে বিশ্রামেই ছিলাম। দুপুরের ঠিক আগে খবর এল চিত্রনায়ক সালমান শাহ খুন হয়েছেন। লাশ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। আমার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পায়ে হাঁটা দূরে। দিলাম দৌড়। গিয়ে শুনি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হলি ফ্যামিলির জরুরি বিভাগে একজন ডাক্তার বসে ছিলেন। বললেন, ‘গলায় ফাঁসির দাগ আছে, আত্মহত্যা হতে পারে।’
ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি শত শত মানুষের ভিড়। বেশির ভাগই সিনেমার লোকজন। সবাই চুপচাপ, কেউ কিছু বলছেন না। কী হয়েছে, তা-ও কেউ জানেন না।
নায়ক সালমান তাঁর স্ত্রী সামিরা হক ওয়াইজকে নিয়ে থাকতেন দিলু রোডের উল্টো দিকের ইস্কাটন প্লাজায়। গেলাম সেখানে। কেউ কিছু বলেন না। বিকেলের দিকে তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এলেন রমনা থানায় মামলা করতে।
সালমান শাহরা ছিলেন দুই ভাই। তাঁর মা নিলুফার জামান চৌধুরী, যিনি নীলা চৌধুরী নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন এরশাদের রাজনীতি করার সুবাদে। সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন নিরীহ প্রকৃতির। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রামে একটি শো করতে গিয়ে সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরার সঙ্গে সালমানের পরিচয় হয়। পরে মায়ের অমতে সালমান তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সালমান মায়ের বাসা থেকে ইস্কাটনে এসে থাকতে শুরু করেন। সালমানের সঙ্গে তাঁর মায়ের তেমন কোনো কথা হতো না। বাসায় আসতেন শুধু তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
রমনা থানায় এসে কমর উদ্দিন বললেন, সেদিন তাঁদের সিলেটে যাওয়ার কথা ছিল। সকালে তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। বাসার নিচে দারোয়ান তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। জোর করে তিনি ওপরে গেলে সালমানের স্ত্রী সামিরা তাঁকে বলেন, সালমান ঘুমাচ্ছে। এ কথা শুনে তিনি বাড়ি ফিরে যান। এরপর বেলা ১১টার দিকে সেলিম নামে চলচ্চিত্রের এক কর্মী নীলা চৌধুরীকে ফোন দিয়ে দ্রুত সালমানের বাসায় আসতে বলেন। নীলা চৌধুরী ছোট ছেলে চৌধুরী মো. শাহরান বিল্টুকে নিয়ে ইস্কাটনের বাসায় এসে দেখেন কয়েকজন নারী সালমানের পায়ে তেল মালিশ করছেন। তাঁর শরীর নীল হয়ে গেছে। বাদল খন্দকার নামের একজন চলচ্চিত্রকার তখন সেখানে ছিলেন। এরপর সবাই সালমানকে ধরাধরি করে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার ডাক্তার বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর এই মামলা অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে রমনা থানা। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন লাশ নেওয়া হলো এফডিসিতে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে। সবাই বললেন, এটা পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। সেদিনই সালমানের লাশ সিলেটে নিয়ে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের কবরস্থানে দাফন করা হলো। সব কাগজে এই মৃত্যু নিয়ে রহস্যের খবর ছাপা হলো।
দেশজুড়ে তখন সালমানের অসংখ্য ভক্ত। কয়েকজন তরুণী এই মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যাও করলেন। আকস্মিক এই মৃত্যুতে স্তম্ভিত গোটা দেশ। সালমানভক্তদের মধ্যে তৈরি হলো নানা প্রশ্ন। এ অবস্থায় পরিবারের দাবির মুখে আবার লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হলো সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে। ভিসেরা পরীক্ষাও হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি বোর্ড গঠন করে দেয়। তাঁদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হয়, সালমান শাহর গলায় ফাঁস ছিল ‘এনটিই মর্টেম’ বা মৃত্যুপূর্ব।
মারা যাওয়ার সময় সালমানের পকেটে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল—‘সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি’। সেই নোট পাঠানো হয় সিআইডিতে। সিআইডির হস্তরেখাবিদ সমীর কুমার মুখার্জি এটা পরীক্ষা করেন। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, দুটো লেখা হুবহু মিলে গেলেই ধরে নিতে হয় একটি জাল। বড় খবরের আশায় একদিন আমি তাঁর কাছে গেলাম। বললেন, সুইসাইড নোট ঠিক আছে। এটা সালমানের হাতের লেখা। বড় খবরের আশা উবে গেল।
প্রথমে এই মামলা তদন্ত করল রমনা থানার পুলিশ, তারপর এল ডিবি এবং সিআইডিতে। সবাই বললেন, এটা আত্মহত্যা। সিআইডির রিপোর্টের ব্যাপারে নারাজি দিলেন সালমানের বাবা। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইলেন। ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেন। সালমানের বাবা সেই তদন্তেও নারাজি দেন। তাঁর দাবি, সালমানকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে গলায় বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ আদালত পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। পিবিআই এ ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রতিবেদন দেয়। সালমানের বাবা মারা যাওয়ায় (২০০০ সালের ১১ মে) এবার নারাজি দেন তাঁর মা নীলা চৌধুরী।
এই তদন্তের মাঝে একটি ঘটনা ঘটে। সালমানের মৃত্যুর বছরখানেক পর রেজভী আহমেদ নামে এক যুবক সালমানের মায়ের বাড়িতে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করলে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে বলেন, সালমানকে তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ কয়েকজন মিলে খুন করেছেন। পরে আবার সিআইডির কাছে তিনি বলেন, তাঁর এই জবানবন্দি ছিল সাজানো। ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশ তাঁকে মারধর করে এই জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছিল।
অনেক বছর ধরে এ ঘটনার ফলোআপ করেছি। বিভিন্ন সময় যেসব তথ্য পেয়েছি, তা নিয়ে আমার মনেও অনেক প্রশ্ন। সালমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুল হক ডন, তাঁর গৃহকর্মী, বন্ধুসহ আরও অনেকে আমাকে বলেছিলেন, সালমানের মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক। শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামিরা জেনে যান।
সালমান একবার শাবনূরের সঙ্গে ভারতেও গিয়েছিলেন। তা ছাড়া, সামিরা ঢাকার বাইরে গেলেই শাবনূর এসে সালমানের বাসায় রাত কাটাতেন। সামিরা একবার এফডিসিতে তাঁদের দুজনকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেও ফেলেন। সালমানের ঘনিষ্ঠরা বলেছিলেন, সন্তান না হওয়ায় সালমান খুব বিপর্যস্ত ছিলেন। তিনি কাজের মেয়ে ডলির সন্তানকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন।
সালমান চেয়েছিলেন, সামিরা থাকবেন, আবার তিনি শাবনূরকেও বিয়ে করবেন। তাঁর মায়ের বোধ হয় এতে সম্মতি ছিল। ডনের ধারণা, এর পরই সবকিছু জটিল হয়ে যায়। সালমান আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সালমান ছিলেন ঢাকাই ফিল্মের ‘হার্টথ্রব’ নায়ক। আজকের দিনে বসে এটা একেবারেই ভাবা কঠিন যে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর পোশাকপরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়দক্ষতা—সবকিছু মিলিয়ে রোমান্টিক হিরোর পরিচিতি পেয়ে যান। সালমান শাহ মাত্র চার বছর অভিনয় করেন। এ সময় তিনি ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন। বেশির ভাগই সিনেমা ছিল আলোচিত এবং ব্যবসাসফল। যখন তিনি মারা যান, তাঁর পেছনে প্রযোজকদের লগ্নি ছিল আড়াই শ কোটি টাকা।
সালমান শাহর মৃত্যুসংবাদ দর্শকের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে দুই দশকের বেশি সময় পরেও তাঁকে নিয়ে আলোচনা থামেনি। এখনো অনেক ভক্তের কাছে তাঁর এই মৃত্যু রহস্যে ঘেরা। আমার কাছে তো বটেই।
চিত্রনায়ক সালমান শাহর সঙ্গে আমার কোনো কালে কোনো জানাশোনা ছিল না। সেটা হওয়ার কথাও নয়। তবে তাঁর সঙ্গে মাত্র একবার দেখা হয়েছিল, কথাও হয়েছিল। সেটা এফডিসিতে কী একটি অপ্রীতিকর ঘটনার সময়। এটা ঠিক যে, তাঁর মতো নক্ষত্রের সঙ্গে আমার মতো উটকো লোকের আলাপ কখনো কখনো হয়তো হয়, কিন্তু তার আয়ু খুব বেশি স্থায়ী হয় না। তার পরও সালমান শাহকে এভাবে দেখব, সেটা একেবারে মাথায় ছিল না।
শুক্রবারের সকাল মানেই রিপোর্টারদের বিশ্রামের দিন, এদিন অ্যাসাইনমেন্ট কম থাকে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দিনের প্রথম ভাগে বিশ্রামেই ছিলাম। দুপুরের ঠিক আগে খবর এল চিত্রনায়ক সালমান শাহ খুন হয়েছেন। লাশ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। আমার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পায়ে হাঁটা দূরে। দিলাম দৌড়। গিয়ে শুনি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হলি ফ্যামিলির জরুরি বিভাগে একজন ডাক্তার বসে ছিলেন। বললেন, ‘গলায় ফাঁসির দাগ আছে, আত্মহত্যা হতে পারে।’
ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি শত শত মানুষের ভিড়। বেশির ভাগই সিনেমার লোকজন। সবাই চুপচাপ, কেউ কিছু বলছেন না। কী হয়েছে, তা-ও কেউ জানেন না।
নায়ক সালমান তাঁর স্ত্রী সামিরা হক ওয়াইজকে নিয়ে থাকতেন দিলু রোডের উল্টো দিকের ইস্কাটন প্লাজায়। গেলাম সেখানে। কেউ কিছু বলেন না। বিকেলের দিকে তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এলেন রমনা থানায় মামলা করতে।
সালমান শাহরা ছিলেন দুই ভাই। তাঁর মা নিলুফার জামান চৌধুরী, যিনি নীলা চৌধুরী নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন এরশাদের রাজনীতি করার সুবাদে। সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন নিরীহ প্রকৃতির। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রামে একটি শো করতে গিয়ে সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরার সঙ্গে সালমানের পরিচয় হয়। পরে মায়ের অমতে সালমান তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সালমান মায়ের বাসা থেকে ইস্কাটনে এসে থাকতে শুরু করেন। সালমানের সঙ্গে তাঁর মায়ের তেমন কোনো কথা হতো না। বাসায় আসতেন শুধু তাঁর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
রমনা থানায় এসে কমর উদ্দিন বললেন, সেদিন তাঁদের সিলেটে যাওয়ার কথা ছিল। সকালে তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। বাসার নিচে দারোয়ান তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। জোর করে তিনি ওপরে গেলে সালমানের স্ত্রী সামিরা তাঁকে বলেন, সালমান ঘুমাচ্ছে। এ কথা শুনে তিনি বাড়ি ফিরে যান। এরপর বেলা ১১টার দিকে সেলিম নামে চলচ্চিত্রের এক কর্মী নীলা চৌধুরীকে ফোন দিয়ে দ্রুত সালমানের বাসায় আসতে বলেন। নীলা চৌধুরী ছোট ছেলে চৌধুরী মো. শাহরান বিল্টুকে নিয়ে ইস্কাটনের বাসায় এসে দেখেন কয়েকজন নারী সালমানের পায়ে তেল মালিশ করছেন। তাঁর শরীর নীল হয়ে গেছে। বাদল খন্দকার নামের একজন চলচ্চিত্রকার তখন সেখানে ছিলেন। এরপর সবাই সালমানকে ধরাধরি করে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার ডাক্তার বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর এই মামলা অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে রমনা থানা। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন লাশ নেওয়া হলো এফডিসিতে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে। সবাই বললেন, এটা পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। সেদিনই সালমানের লাশ সিলেটে নিয়ে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের কবরস্থানে দাফন করা হলো। সব কাগজে এই মৃত্যু নিয়ে রহস্যের খবর ছাপা হলো।
দেশজুড়ে তখন সালমানের অসংখ্য ভক্ত। কয়েকজন তরুণী এই মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যাও করলেন। আকস্মিক এই মৃত্যুতে স্তম্ভিত গোটা দেশ। সালমানভক্তদের মধ্যে তৈরি হলো নানা প্রশ্ন। এ অবস্থায় পরিবারের দাবির মুখে আবার লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হলো সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে। ভিসেরা পরীক্ষাও হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি বোর্ড গঠন করে দেয়। তাঁদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হয়, সালমান শাহর গলায় ফাঁস ছিল ‘এনটিই মর্টেম’ বা মৃত্যুপূর্ব।
মারা যাওয়ার সময় সালমানের পকেটে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল—‘সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি’। সেই নোট পাঠানো হয় সিআইডিতে। সিআইডির হস্তরেখাবিদ সমীর কুমার মুখার্জি এটা পরীক্ষা করেন। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, দুটো লেখা হুবহু মিলে গেলেই ধরে নিতে হয় একটি জাল। বড় খবরের আশায় একদিন আমি তাঁর কাছে গেলাম। বললেন, সুইসাইড নোট ঠিক আছে। এটা সালমানের হাতের লেখা। বড় খবরের আশা উবে গেল।
প্রথমে এই মামলা তদন্ত করল রমনা থানার পুলিশ, তারপর এল ডিবি এবং সিআইডিতে। সবাই বললেন, এটা আত্মহত্যা। সিআইডির রিপোর্টের ব্যাপারে নারাজি দিলেন সালমানের বাবা। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইলেন। ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেন। সালমানের বাবা সেই তদন্তেও নারাজি দেন। তাঁর দাবি, সালমানকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে গলায় বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ আদালত পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। পিবিআই এ ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রতিবেদন দেয়। সালমানের বাবা মারা যাওয়ায় (২০০০ সালের ১১ মে) এবার নারাজি দেন তাঁর মা নীলা চৌধুরী।
এই তদন্তের মাঝে একটি ঘটনা ঘটে। সালমানের মৃত্যুর বছরখানেক পর রেজভী আহমেদ নামে এক যুবক সালমানের মায়ের বাড়িতে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করলে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে বলেন, সালমানকে তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ কয়েকজন মিলে খুন করেছেন। পরে আবার সিআইডির কাছে তিনি বলেন, তাঁর এই জবানবন্দি ছিল সাজানো। ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশ তাঁকে মারধর করে এই জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছিল।
অনেক বছর ধরে এ ঘটনার ফলোআপ করেছি। বিভিন্ন সময় যেসব তথ্য পেয়েছি, তা নিয়ে আমার মনেও অনেক প্রশ্ন। সালমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুল হক ডন, তাঁর গৃহকর্মী, বন্ধুসহ আরও অনেকে আমাকে বলেছিলেন, সালমানের মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক। শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামিরা জেনে যান।
সালমান একবার শাবনূরের সঙ্গে ভারতেও গিয়েছিলেন। তা ছাড়া, সামিরা ঢাকার বাইরে গেলেই শাবনূর এসে সালমানের বাসায় রাত কাটাতেন। সামিরা একবার এফডিসিতে তাঁদের দুজনকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখেও ফেলেন। সালমানের ঘনিষ্ঠরা বলেছিলেন, সন্তান না হওয়ায় সালমান খুব বিপর্যস্ত ছিলেন। তিনি কাজের মেয়ে ডলির সন্তানকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন।
সালমান চেয়েছিলেন, সামিরা থাকবেন, আবার তিনি শাবনূরকেও বিয়ে করবেন। তাঁর মায়ের বোধ হয় এতে সম্মতি ছিল। ডনের ধারণা, এর পরই সবকিছু জটিল হয়ে যায়। সালমান আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সালমান ছিলেন ঢাকাই ফিল্মের ‘হার্টথ্রব’ নায়ক। আজকের দিনে বসে এটা একেবারেই ভাবা কঠিন যে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর পোশাকপরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, অভিনয়দক্ষতা—সবকিছু মিলিয়ে রোমান্টিক হিরোর পরিচিতি পেয়ে যান। সালমান শাহ মাত্র চার বছর অভিনয় করেন। এ সময় তিনি ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন। বেশির ভাগই সিনেমা ছিল আলোচিত এবং ব্যবসাসফল। যখন তিনি মারা যান, তাঁর পেছনে প্রযোজকদের লগ্নি ছিল আড়াই শ কোটি টাকা।
সালমান শাহর মৃত্যুসংবাদ দর্শকের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে দুই দশকের বেশি সময় পরেও তাঁকে নিয়ে আলোচনা থামেনি। এখনো অনেক ভক্তের কাছে তাঁর এই মৃত্যু রহস্যে ঘেরা। আমার কাছে তো বটেই।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে থাকবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের
১ ঘণ্টা আগেকিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার স্বত্ব প্রদান এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
৩ ঘণ্টা আগেছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এর তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। মূল্যায়নে তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী স
৩ ঘণ্টা আগেবিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য অনেকে নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় সেসব তথ্যই এখন তাঁদের জন্য ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গ
৪ ঘণ্টা আগে