বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
গুলশান-১ ও ২ গোলচত্বরের মাঝামাঝি একটি পুরোনো বাড়িতে ছিল গুলশান থানা। দোতলা বাড়ির নিচতলায় থানা, ওপরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিবার নিয়ে থাকেন। তখনকার ওসি ফারুক আহমেদের সঙ্গে আমার চমৎকার সম্পর্ক। ১৯৯৯ সালের প্রথম দিকে এক দুপুরে তাঁর সামনে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন এসবির ওসি ওয়াচ রওনকুল হক চৌধুরী। এসবিতে ওসি ওয়াচ পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের হাতে তখন মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট ছিল না, ব্যক্তিগত সুসম্পর্কই ছিল খবর জোগাড়ের প্রধান অবলম্বন।
রওনকুল হক চৌধুরী কথায় কথায় বললেন, বড় একটি তদন্তের কাজে গুলশানে এসেছেন। অতিরিক্ত আইজিপি তাড়া দিয়েছেন দুই দিনের মধ্যে সেটা শেষ করতে হবে। তাঁর হাতে একটি খাম, তাতে একটি পাসপোর্টের ফটোকপি।
রওনকুল হকের কাছে আবদার করলাম, আমাকেও সঙ্গে নিতে হবে। আজকের দিনের পুলিশ কর্মকর্তারা হলে হয়তো এ ধরনের প্রস্তাব শুনে অবাক হতেন; কিন্তু রওনকুল হক চৌধুরী কোনো কথা না বলে রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, মোটরসাইকেল থানায় থাক, আমার গাড়িতে ওঠেন। গুলশানের ওসি ফারুক আহমেদ তাঁকে কিছু তথ্য দিলেন। সেই তথ্য যাচাই করতে আমরা প্রথমে গেলাম বনানীর বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী মার্কেটে।
এই মার্কেট তখন বেশ জমজমাট। সেই মার্কেটে ঢোকার সময় বাম কোনায় একটি নতুন ফ্যাশন হাউস। নাম ‘বুটিক ইসাবেলা’। ঢাকায় তখন ফ্যাশন হাউস শব্দটি মানুষ অত ভালো করে রপ্ত করতে পারেনি। প্রথমে গেলাম বুটিক ইসাবেলার ভেতরে।
তার আগে একটি কথা বলে রাখি, তদন্ত নিয়ে আমি তখন পর্যন্ত রওনকুল হক চৌধুরীর কাছে কোনো কিছু জানতে চাইনি। শুধু তাঁকে অনুসরণ করছি। প্রশ্ন যা করার তিনিই করছেন। তাঁর প্রশ্নের জবাবে বুটিক ইসাবেলার এক কর্মচারী বললেন, এই দোকানের মালিক সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি এক নারীকে দোকানটি দিয়েছেন। কীভাবে দিয়েছেন তা তিনি জানেন না। সেই নারী তাঁর মেয়ের নামে দোকানের নাম রেখেছেন ‘বুটিক ইসাবেলা’। কী নাম সেই মালিকের? দোকানি থতমত খেলেন। জানালেন, তাঁর নাম মিসেস উইসন।
উইসন শুনে রওনকুল হক চৌধুরী পাসপোর্টের ফটোকপিটি নিজে দেখলেন, আমাকে দেখালেন। দেখি, ঝাঁকড়া চুলের এক নারীর ছবি। নাম বিদিশা সিদ্দিক উইসন। স্বামীর নাম পিটার স্টুয়ার্ট উইসন। কর্মচারীর কাছে পুলিশ পরিচয় দেওয়ার পর বললেন, ম্যাডাম গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে থাকেন। বাড়ির নম্বরও দিলেন।
এবার আমাদের গন্তব্য সেই বাড়ি। তার আগে বিদিশা সিদ্দিকের পরিচয়টা একটু বলে রাখি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক, নামকরা কবি আবুবকর সিদ্দিকের বড় মেয়ে বিদিশা।
১৯৮০ সালের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হয়ে আসেন পিটার। ১৯৮৫ সালে সেই শিক্ষকের সঙ্গে কিশোরী কন্যাকে বিয়ে দেন আবুবকর সিদ্দিক। পিটারের নাম হয় পারভেজ আহমেদ। বিয়ের পর পিটার তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যান। সেখানে এক ছেলে ও এক মেয়ের মা হন বিদিশা। ইতিমধ্যে ফ্যাশনে উচ্চতর ডিগ্রি নেন তিনি। ১৯৯৫ সালের দিকে ঢাকায় ফিরে এসে ফ্যাশন হাউসের ব্যবসা শুরু করেন। তখন তিনি গুলশানে বাসা ভাড়া নেন।
গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের সেই বাড়িতে আমরা গিয়ে দেখি দোতলা বাড়ি, নিচতলায় বায়িং হাউস, ওপরে এক নারী একা থাকেন। কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলেন। পরিচয় দিয়ে বললেন, আমার নাম বিদিশা। বলেন, কী জানতে চান? শুরু হলো রওনকুল হকের জেরা। দু-একটি প্রশ্ন শুনেই একটা স্কুপ নিউজের গন্ধ নাকে লাগে। কান খাড়া করে রাখি। কোনো কিছুই যেন মিস না হয়।
প্রথম প্রশ্ন, আপনি তো লন্ডনে যাচ্ছিলেন? বিমানবন্দরে ঢুকে বোর্ডিং করলেন, তারপর কী হলো যে ফিরে এলেন? কী এমন ঘটল যে, লন্ডনযাত্রা স্থগিত করতে হলো?
সামনে বসা নারীকে দেখে বেশ ঋজু মনে হচ্ছিল। কিন্তু তাঁর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস আমাকে অবাক করল। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে বললেন, এটা আমার ব্যক্তিগত অধিকার। আমি কোথায় যাব, যাব না, সেটা আমার ব্যাপার। কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই। আপনি আমাকে এ প্রশ্ন করতে পারেন না।
রওনকুল হক চৌধুরীও ছাড়ার পাত্র নন। তিনি বললেন, ম্যাডাম, সবই ঠিক আছে। কিন্তু যে সন্দেহ করে এসবি আপনার পাসপোর্ট নিয়েছে, সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আপনি পাসপোর্ট ফেরত পাবেন না। আর দেশের বাইরেও যেতে পারবেন না। এখন আপনার উচিত আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করা।
এবার সেই নারী কিছুটা নরম হলেন। কোনো রকম রাখঢাক না করে একে একে প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
রওনকুল হক চৌধুরী আবার জানতে চাইলেন:
–কাল আপনার লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল। বোর্ডিং পাস নেওয়ার পরও আপনি যাননি কেন?
–পারসোনাল কারণ।
–ওই একই ফ্লাইটে এরশাদেরও যাওয়ার কথা ছিল।
–হতে পারে, সেটা তাঁর ব্যাপার। তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন।
–এরশাদ সাহেবের সঙ্গে আপনার পরিচয় নেই?
–থাকবে না কেন! আছে। কিন্তু তাতে কী? পরিচয় থাকাটা কি অন্যায়?
–এরশাদ সাহেব তো আপনার এখানে প্রায়ই আসেন।
–হ্যাঁ, আসেন। উনি আমার বিজনেস পার্টনার।
–কীভাবে পরিচয়?
–ফ্রান্স দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানে পরিচয়। তারপর আমাদের অনেক কথাবার্তা হয়। তিনি আমার বাসায় আসা-যাওয়া করেন।
তারপর তিনি যা বললেন, তার সার কথা হলো–এরশাদ এ ঘটনার কিছুদিন আগে জেল থেকে বের হয়েছেন। ফ্রান্স দূতাবাসের এক অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত নিজেই তাঁকে এরশাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সেই পরিচয়ের সূত্রে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়।
রওনকুল হক চৌধুরীর সেই জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে বিদিশা তাঁর বই ‘শত্রুর সঙ্গে বসবাস’-এ বিস্তারিত লিখেছেন। সেখান থেকে একটু তুলে দিলাম।
‘আমরা ইংল্যান্ড যাচ্ছিলাম। তবে একসঙ্গে নয়, এয়ারপোর্টে ঢুকেছি আলাদা আলাদা। আমি বিদিশা উইসন হিসেবে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে। আর এরশাদ সাবেক প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে। পরিকল্পনা ছিল একই ফ্লাইটে যাব, লন্ডনে নেমে একত্রিত হব।
আমার বোর্ডিং পাস হয়ে গেছে, লাগেজ দিয়ে দিয়েছি। বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশনের সামনে। তখনই মোবাইলে ফোন এল এরশাদের।
–আমার একটু অসুবিধা হয়েছে। সরকার আমাকে আটকে দিয়েছে। আমি যেতে পারছি না। তুমি চলে যাও।
–আমি একা গিয়ে কী করব?
–না, না, তুমি চলে যাও। এখন তুমি না গেলে এ নিয়ে একটা স্ক্যান্ডাল হতে পারে।
–আমি ওসবের তোয়াক্কা করি না। তোমার যাওয়া না হলে আমিও যাব না।
আমি ইমিগ্রেশন থেকে ফিরে এলাম ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কাউন্টারে। বললাম, আমি এই ফ্লাইটে যাচ্ছি না। আমার লাগেজ অফলোড করো।
বিদিশা লিখেছেন: ‘এই ঘটনার পর আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আর ফিসফিসানি নয়, চারদিকে সরব আলোচনা শুরু হয়। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়–এরশাদ ও বিদিশা উইসন একসঙ্গে লন্ডনে যাচ্ছিলেন।
এয়ারপোর্টে এরশাদের যাওয়া বাধাগ্রস্ত হলে বিদিশাও আর যাননি।
পরদিন আমার বাসায় হাজির গোয়েন্দা সংস্থার লোক। নিজেদের পরিচয় দিয়ে তাঁরা আমার পাসপোর্টটি চাইল। এরশাদ যে আমার বাসায় নিয়মিত আসেন, এটা গোপন করার কোনো বিষয় নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে তিনি যেখানেই যান, তাঁর পেছনে পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও যায়। খেয়াল করেছি, আমার বাসায় থাকাকালে বাসার সামনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে অপেক্ষা করতে। তবে এ নিয়ে এরশাদের মধ্যে কোনো ধরনের লাজলজ্জা বা বিব্রতভাব দেখিনি। বরং তাঁর মতো একজন বয়স্ক লোকের প্রেমে পড়েছে আমার মতো একজন যুবতী–এ বিষয়টা প্রকাশ করার মধ্যে তিনি একধরনের বাহাদুরি অনুভব করতেন। সেটা প্রকাশও করতেন নির্দ্বিধায়।’
বিদিশার বাড়ি থেকে বের হতে হতে বিকেল হয়ে যায়। পরদিন জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় দুই কলাম করে ছাপা হয় ‘নতুন বান্ধবী জোটালেন এরশাদ’। নতুন বান্ধবীর খবর ফাঁস হতেই চারদিকে হইচই পড়ে যায়। তুমুল আলোচনায় আসেন বিদিশা।
আজকের ‘আষাঢ়ে নয়’ লেখার আগে বিদিশাকে ফোন করে পুরোনো তথ্যগুলো ঝালাই করে নিতেই স্বভাবসুলভ হো হো করে হাসলেন, তারপর বললেন, এত দিন পর এসব লিখে কী হবে?
আরও পড়ুন:
গুলশান-১ ও ২ গোলচত্বরের মাঝামাঝি একটি পুরোনো বাড়িতে ছিল গুলশান থানা। দোতলা বাড়ির নিচতলায় থানা, ওপরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিবার নিয়ে থাকেন। তখনকার ওসি ফারুক আহমেদের সঙ্গে আমার চমৎকার সম্পর্ক। ১৯৯৯ সালের প্রথম দিকে এক দুপুরে তাঁর সামনে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন এসবির ওসি ওয়াচ রওনকুল হক চৌধুরী। এসবিতে ওসি ওয়াচ পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের হাতে তখন মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট ছিল না, ব্যক্তিগত সুসম্পর্কই ছিল খবর জোগাড়ের প্রধান অবলম্বন।
রওনকুল হক চৌধুরী কথায় কথায় বললেন, বড় একটি তদন্তের কাজে গুলশানে এসেছেন। অতিরিক্ত আইজিপি তাড়া দিয়েছেন দুই দিনের মধ্যে সেটা শেষ করতে হবে। তাঁর হাতে একটি খাম, তাতে একটি পাসপোর্টের ফটোকপি।
রওনকুল হকের কাছে আবদার করলাম, আমাকেও সঙ্গে নিতে হবে। আজকের দিনের পুলিশ কর্মকর্তারা হলে হয়তো এ ধরনের প্রস্তাব শুনে অবাক হতেন; কিন্তু রওনকুল হক চৌধুরী কোনো কথা না বলে রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, মোটরসাইকেল থানায় থাক, আমার গাড়িতে ওঠেন। গুলশানের ওসি ফারুক আহমেদ তাঁকে কিছু তথ্য দিলেন। সেই তথ্য যাচাই করতে আমরা প্রথমে গেলাম বনানীর বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী মার্কেটে।
এই মার্কেট তখন বেশ জমজমাট। সেই মার্কেটে ঢোকার সময় বাম কোনায় একটি নতুন ফ্যাশন হাউস। নাম ‘বুটিক ইসাবেলা’। ঢাকায় তখন ফ্যাশন হাউস শব্দটি মানুষ অত ভালো করে রপ্ত করতে পারেনি। প্রথমে গেলাম বুটিক ইসাবেলার ভেতরে।
তার আগে একটি কথা বলে রাখি, তদন্ত নিয়ে আমি তখন পর্যন্ত রওনকুল হক চৌধুরীর কাছে কোনো কিছু জানতে চাইনি। শুধু তাঁকে অনুসরণ করছি। প্রশ্ন যা করার তিনিই করছেন। তাঁর প্রশ্নের জবাবে বুটিক ইসাবেলার এক কর্মচারী বললেন, এই দোকানের মালিক সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি এক নারীকে দোকানটি দিয়েছেন। কীভাবে দিয়েছেন তা তিনি জানেন না। সেই নারী তাঁর মেয়ের নামে দোকানের নাম রেখেছেন ‘বুটিক ইসাবেলা’। কী নাম সেই মালিকের? দোকানি থতমত খেলেন। জানালেন, তাঁর নাম মিসেস উইসন।
উইসন শুনে রওনকুল হক চৌধুরী পাসপোর্টের ফটোকপিটি নিজে দেখলেন, আমাকে দেখালেন। দেখি, ঝাঁকড়া চুলের এক নারীর ছবি। নাম বিদিশা সিদ্দিক উইসন। স্বামীর নাম পিটার স্টুয়ার্ট উইসন। কর্মচারীর কাছে পুলিশ পরিচয় দেওয়ার পর বললেন, ম্যাডাম গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে থাকেন। বাড়ির নম্বরও দিলেন।
এবার আমাদের গন্তব্য সেই বাড়ি। তার আগে বিদিশা সিদ্দিকের পরিচয়টা একটু বলে রাখি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক, নামকরা কবি আবুবকর সিদ্দিকের বড় মেয়ে বিদিশা।
১৯৮০ সালের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হয়ে আসেন পিটার। ১৯৮৫ সালে সেই শিক্ষকের সঙ্গে কিশোরী কন্যাকে বিয়ে দেন আবুবকর সিদ্দিক। পিটারের নাম হয় পারভেজ আহমেদ। বিয়ের পর পিটার তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যান। সেখানে এক ছেলে ও এক মেয়ের মা হন বিদিশা। ইতিমধ্যে ফ্যাশনে উচ্চতর ডিগ্রি নেন তিনি। ১৯৯৫ সালের দিকে ঢাকায় ফিরে এসে ফ্যাশন হাউসের ব্যবসা শুরু করেন। তখন তিনি গুলশানে বাসা ভাড়া নেন।
গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের সেই বাড়িতে আমরা গিয়ে দেখি দোতলা বাড়ি, নিচতলায় বায়িং হাউস, ওপরে এক নারী একা থাকেন। কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলেন। পরিচয় দিয়ে বললেন, আমার নাম বিদিশা। বলেন, কী জানতে চান? শুরু হলো রওনকুল হকের জেরা। দু-একটি প্রশ্ন শুনেই একটা স্কুপ নিউজের গন্ধ নাকে লাগে। কান খাড়া করে রাখি। কোনো কিছুই যেন মিস না হয়।
প্রথম প্রশ্ন, আপনি তো লন্ডনে যাচ্ছিলেন? বিমানবন্দরে ঢুকে বোর্ডিং করলেন, তারপর কী হলো যে ফিরে এলেন? কী এমন ঘটল যে, লন্ডনযাত্রা স্থগিত করতে হলো?
সামনে বসা নারীকে দেখে বেশ ঋজু মনে হচ্ছিল। কিন্তু তাঁর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস আমাকে অবাক করল। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে বললেন, এটা আমার ব্যক্তিগত অধিকার। আমি কোথায় যাব, যাব না, সেটা আমার ব্যাপার। কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই। আপনি আমাকে এ প্রশ্ন করতে পারেন না।
রওনকুল হক চৌধুরীও ছাড়ার পাত্র নন। তিনি বললেন, ম্যাডাম, সবই ঠিক আছে। কিন্তু যে সন্দেহ করে এসবি আপনার পাসপোর্ট নিয়েছে, সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আপনি পাসপোর্ট ফেরত পাবেন না। আর দেশের বাইরেও যেতে পারবেন না। এখন আপনার উচিত আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করা।
এবার সেই নারী কিছুটা নরম হলেন। কোনো রকম রাখঢাক না করে একে একে প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
রওনকুল হক চৌধুরী আবার জানতে চাইলেন:
–কাল আপনার লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল। বোর্ডিং পাস নেওয়ার পরও আপনি যাননি কেন?
–পারসোনাল কারণ।
–ওই একই ফ্লাইটে এরশাদেরও যাওয়ার কথা ছিল।
–হতে পারে, সেটা তাঁর ব্যাপার। তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন।
–এরশাদ সাহেবের সঙ্গে আপনার পরিচয় নেই?
–থাকবে না কেন! আছে। কিন্তু তাতে কী? পরিচয় থাকাটা কি অন্যায়?
–এরশাদ সাহেব তো আপনার এখানে প্রায়ই আসেন।
–হ্যাঁ, আসেন। উনি আমার বিজনেস পার্টনার।
–কীভাবে পরিচয়?
–ফ্রান্স দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানে পরিচয়। তারপর আমাদের অনেক কথাবার্তা হয়। তিনি আমার বাসায় আসা-যাওয়া করেন।
তারপর তিনি যা বললেন, তার সার কথা হলো–এরশাদ এ ঘটনার কিছুদিন আগে জেল থেকে বের হয়েছেন। ফ্রান্স দূতাবাসের এক অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত নিজেই তাঁকে এরশাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সেই পরিচয়ের সূত্রে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়।
রওনকুল হক চৌধুরীর সেই জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে বিদিশা তাঁর বই ‘শত্রুর সঙ্গে বসবাস’-এ বিস্তারিত লিখেছেন। সেখান থেকে একটু তুলে দিলাম।
‘আমরা ইংল্যান্ড যাচ্ছিলাম। তবে একসঙ্গে নয়, এয়ারপোর্টে ঢুকেছি আলাদা আলাদা। আমি বিদিশা উইসন হিসেবে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে। আর এরশাদ সাবেক প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে। পরিকল্পনা ছিল একই ফ্লাইটে যাব, লন্ডনে নেমে একত্রিত হব।
আমার বোর্ডিং পাস হয়ে গেছে, লাগেজ দিয়ে দিয়েছি। বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশনের সামনে। তখনই মোবাইলে ফোন এল এরশাদের।
–আমার একটু অসুবিধা হয়েছে। সরকার আমাকে আটকে দিয়েছে। আমি যেতে পারছি না। তুমি চলে যাও।
–আমি একা গিয়ে কী করব?
–না, না, তুমি চলে যাও। এখন তুমি না গেলে এ নিয়ে একটা স্ক্যান্ডাল হতে পারে।
–আমি ওসবের তোয়াক্কা করি না। তোমার যাওয়া না হলে আমিও যাব না।
আমি ইমিগ্রেশন থেকে ফিরে এলাম ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কাউন্টারে। বললাম, আমি এই ফ্লাইটে যাচ্ছি না। আমার লাগেজ অফলোড করো।
বিদিশা লিখেছেন: ‘এই ঘটনার পর আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আর ফিসফিসানি নয়, চারদিকে সরব আলোচনা শুরু হয়। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়–এরশাদ ও বিদিশা উইসন একসঙ্গে লন্ডনে যাচ্ছিলেন।
এয়ারপোর্টে এরশাদের যাওয়া বাধাগ্রস্ত হলে বিদিশাও আর যাননি।
পরদিন আমার বাসায় হাজির গোয়েন্দা সংস্থার লোক। নিজেদের পরিচয় দিয়ে তাঁরা আমার পাসপোর্টটি চাইল। এরশাদ যে আমার বাসায় নিয়মিত আসেন, এটা গোপন করার কোনো বিষয় নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে তিনি যেখানেই যান, তাঁর পেছনে পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও যায়। খেয়াল করেছি, আমার বাসায় থাকাকালে বাসার সামনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে অপেক্ষা করতে। তবে এ নিয়ে এরশাদের মধ্যে কোনো ধরনের লাজলজ্জা বা বিব্রতভাব দেখিনি। বরং তাঁর মতো একজন বয়স্ক লোকের প্রেমে পড়েছে আমার মতো একজন যুবতী–এ বিষয়টা প্রকাশ করার মধ্যে তিনি একধরনের বাহাদুরি অনুভব করতেন। সেটা প্রকাশও করতেন নির্দ্বিধায়।’
বিদিশার বাড়ি থেকে বের হতে হতে বিকেল হয়ে যায়। পরদিন জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় দুই কলাম করে ছাপা হয় ‘নতুন বান্ধবী জোটালেন এরশাদ’। নতুন বান্ধবীর খবর ফাঁস হতেই চারদিকে হইচই পড়ে যায়। তুমুল আলোচনায় আসেন বিদিশা।
আজকের ‘আষাঢ়ে নয়’ লেখার আগে বিদিশাকে ফোন করে পুরোনো তথ্যগুলো ঝালাই করে নিতেই স্বভাবসুলভ হো হো করে হাসলেন, তারপর বললেন, এত দিন পর এসব লিখে কী হবে?
আরও পড়ুন:
ফ্যাসিবাদের দোসরেরা এখনো বিভিন্ন জায়গায় বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদের পরিহারের ঘোষণা দিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (নাসির আব্দুল্লাহ) বলেছেন, ‘খুনি ও খুনের হুকুমদাতারা যদি তাদের স্কিলের কারণে থেকে যায়, তাহলে আমরা আরেকটি যুদ্ধ করতে বাধ্য হব।
২ ঘণ্টা আগেসেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে থাকবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের
৮ ঘণ্টা আগেকিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার স্বত্ব প্রদান এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
১০ ঘণ্টা আগেছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এর তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। মূল্যায়নে তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী স
১০ ঘণ্টা আগে