যুদ্ধের আঁচ বাংলাদেশে, মিয়ানমারের ৯৫ সীমান্তরক্ষী বিজিবির আশ্রয়ে 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ০৮

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধের আঁচ লেগেছে বাংলাদেশেও। এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাঁদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। 

বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৯৫ সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বিজিবি তাঁদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান। 

গতকাল রোববার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে দুই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে বিজিপির ৫৮ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তবে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না। 

সীমান্তের ওপারে সংঘর্ষের সময় মর্টার শেল উড়ে আসছে বাংলাদেশের ভেতরেও। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি বাড়িতে মর্টার শেল এসে পড়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারে সংঘর্ষের সময় ছুটে আসা গুলিতে তমব্রুতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, আতঙ্কে পাঁচটি স্কুল ও একটি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয়শিবিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। 

কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েছে। গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সেখানকার কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এ ছাড়া বান্দরবানের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের ৭৫ কিলোমিটার এলাকার ৯০ শতাংশ তাদের দখলে। এর মধ্যেই আরেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনও (আরএসও) সেখানে জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। তারাও ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বাধে। 

আজকের পত্রিকার নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি জানান, দুই দিন বন্ধ থাকার পর গত শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত মুহুর্মুহু গোলাগুলি চলে সীমান্তের ওপারে। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রাত পৌনে ৮টার দিকে আবারও গুলি শুরু হয়। সেই গোলাগুলি গতকালও চলছিল। এ প্রসঙ্গে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, তমব্রু-ঘুমধুমের পরিস্থিতি পাল্টে যায় গতকাল সকাল থেকে। সীমান্তের ওপারে ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের জেরে সীমান্তের এপারে তমব্রু, তমব্রু বাজার, তমব্রু পশ্চিমকুল পাহাড়পাড়া, তমব্রু মধ্যম ও উত্তরকুলের কয়েকটি স্থানে এসে গোলা পড়েছে। এর মধ্যে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শফিকের উঠানেও গোলা পড়েছে। চেয়ারম্যান আজিজ বলেন, মর্টার শেল এবং হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানের গোলাসহ গুলি এসে পড়ছে তমব্রু খালের দুই পাড়ে। এতে পাঁচ বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। চেয়ারম্যান আরও জানান, ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকাবাসীদের বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। 

সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সীমান্তের পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি, পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। 

এদিকে সীমান্তের ওপারে সংঘর্ষের কারণে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা বলেন, গোলাগুলির কারণে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশপারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকুল তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা এক দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

অপরদিকে, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না। যুদ্ধ চাইও না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের সব সময় সে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তবে আমরা সব সময় তৈরি আছি।’ 

সীমান্ত এলাকায় শক্তি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করেছি। আমরা পুলিশকে বলে দিয়েছি, কোস্ট গার্ডকেও নির্দেশনা দিয়েছি, যাতে কোনোভাবেই কেউ আমাদের সীমানায় অনুপ্রবেশ করতে না পারে। সে ব্যাপারে আমরা খুব সতর্ক। যুদ্ধ কত দিন চলে আমরা জানি না; কিন্তু সীমান্ত পার হয়ে কাউকে আসতে দেব না। বিজিবিকে আমরা সে নির্দেশনাই দিয়েছি।’

আরও পড়ুন:–

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

অধিকৃত অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদের সার্বভৌম মালিকানা ফিলিস্তিনিদের, জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

বিসিএস নিয়োগ: নিজেই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন অনেকে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত