বাসস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং অঞ্চলটিতে অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য আমি সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি এই ভয়াবহ যুদ্ধ, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ও অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধে ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
গতকাল সৌদি আরবের জেদ্দায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) আয়োজনে ‘ইসলামে নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ এ সময় তিনি ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের পক্ষে তাঁর ভূমিকা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির জন্য তাদের মুসলিম নারীদের আওয়াজ শুনতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজায় নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতার নিন্দা করছি। গাজার এই নৃশংসতা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অমানবিক নির্যাতনের শিকার ২ লাখ নারীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই নৃশংস ঘটনাগুলো আমাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মা এবং নারী ও শিশুসহ পরিবারের অন্য সদস্যের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি মিয়ানমারের হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর নির্যাতনের দৃশ্যকেই ফুটিয়ে তোলে, যারা নৃশংসতার শিকার হলে ২০১৭ সালের আগস্টে আমাদের সীমান্তে আশ্রয় চেয়েছিল।’
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মুসলিম নারীদের জন্য একগুচ্ছ পরামর্শ দেন। পরামর্শগুলো হলো—
প্রথমত, ফিলিস্তিনে অবিলম্বে সংঘাতের অবসান এবং সেখানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর অপরাধের বিচার।
দ্বিতীয়ত, সমস্ত অপরাধ, সহিংসতা, বৈষম্য ও নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়াকে ‘না’ বলুন।
তৃতীয়ত, এসডিজি-৫ পূরণের লক্ষ্যে লিঙ্গ সমতা অর্জন ও নারীদের ক্ষমতায়নের দিকে যথাযথ মনোযোগ দিন।
চতুর্থত, মুসলিম নারীরা যেন ইচ্ছেমতো স্বাধীনভাবে জনসমক্ষে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করুন।
পঞ্চমত, নারী ক্ষমতায়ন ও মূল স্রোতে নারীদের ভূমিকার উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এই বহুল প্রতীক্ষিত ইস্যুগুলোতে সংলাপ প্রত্যাশিত। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে এর সম্ভাবনা উপলব্ধি করে খুব তাড়াতাড়ি ওআইসির নারী উন্নয়ন সংস্থায় (ডব্লিউডিও) যোগ দেয়। তিনি বলেন, ‘ডব্লিউডিও এর যাত্রা শুরু করেছে এবং আমি আশা করি, ইসলামকে আরও ভালোভাবে বোঝার মাধ্যমে আজকের চাহিদাগুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এ ম্যান্ডেটকে প্রসারিত করা যেতে পারে। আর তবেই আমরা একটি বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের স্বপ্ন দেখতে পারি। আমি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সাফল্য কামনা করছি।’
শেখ হাসিনা এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইসলামে নারীর মর্যাদা তুলে ধরার জন্য সৌদি আরব ও ওআইসিকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নারীমুক্তির জন্য সৌদি আরবের যুগান্তকারী উদ্যোগগুলোকে আগ্রহের সঙ্গেই লক্ষ করি। আমি মহামান্য বাদশাহ ও হিজ রয়েল হাইনেস যুবরাজের এই রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করি।’ ইসলামকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লামের আহ্বানে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন একজন নারী—বিবি খাদিজা।’
পবিত্র কোরআনের সুরা আন-নিসা’র আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আর আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা পরস্পরের এবং রক্ত সম্পর্কের অধিকার চাও। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বদাই তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীর অধিকার ও লিঙ্গ সমতা রক্ষায় তাদের গর্বিত ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলাদেশের রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মতো পথপ্রদর্শক আছেন, যিনি ১৯০৫ সালে প্রকাশিত তার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বইতে নারী নেতৃত্বাধীন বিশ্বের কল্পনা করেছিলেন। ইংরেজিতে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর, অর্ধেক তা করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমমর্যাদা নিশ্চিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি সংরক্ষিত আসনের বিধান করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর মেয়ে হিসেবে তিনি নারী ক্ষমতায়নের এ কাজ অব্যাহত রেখেছেন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৫০টিতে উন্নীত করেছেন। আমাদের জাতীয় সংসদে এখন ৭৩ জন নারী সাংসদ রয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীরা সব সময়ই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রথম সারিতে থেকেছেন। তাঁরা নিজেরাই যেন কাজের মাধ্যমে তাঁদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারেন, আমি তাঁদের প্রতি সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বৈশ্বিক সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটি অনন্য উদাহরণ আছে, যেখানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও সরকারি দলের উপনেতা সবাই নারী। এ ছাড়া আমাদের স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বস্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতবার আমি দায়িত্বে এসেছি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের উন্নীত করার জন্য সমস্ত বাধা দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্য সংস্থায় আমাদের নারীদের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হতে দেখে আমি গর্বিত বোধ করি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাদের মেয়েরা পাবলিক পরীক্ষা, প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ ও জাতীয় পর্যায়ের খেলায় অংশ নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির হোস্ট হিসাবে আমি ওআইসি সদস্য দেশগুলোর তরুণ নারীদের এই চমৎকার প্রতিষ্ঠানে পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে নারীদের জন্য সুবিধাসহ সারা দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক অগ্রগতিও আমাদের নারীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের প্রমাণ।
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রায় ৪৬% নারী কর্মী। নারী উদ্যোক্তারা আমাদের কুটির, ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পে বড় ধরনের অবদান রাখছেন। আইটি ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স ও স্টার্ট-আপে নারীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি রয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার অর্থ, বাজার, ধারণা ও প্রশিক্ষণে নারীদের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।’ সরকারি ক্ষেত্রে ছয় মাসের সবেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি, যাতে বিদেশে কর্মরত নারী কর্মীদের সুরক্ষা ও মঙ্গল নিশ্চিত করা যায়। সরকারের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র, বিধবা, পরিত্যক্ত, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নারীরা উপকৃত হচ্ছেন। সরকার বিনা মূল্যের আবাসন ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্বামী ও স্ত্রী উভয়কে যৌথ মালিকানা দিচ্ছে, যাতে বিচ্ছেদ হলে সেটি স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। যৌতুক, বাল্যবিবাহ ও সাইবার হয়রানির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং অঞ্চলটিতে অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য আমি সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি এই ভয়াবহ যুদ্ধ, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ও অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধে ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
গতকাল সৌদি আরবের জেদ্দায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) আয়োজনে ‘ইসলামে নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ এ সময় তিনি ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের পক্ষে তাঁর ভূমিকা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির জন্য তাদের মুসলিম নারীদের আওয়াজ শুনতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজায় নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতার নিন্দা করছি। গাজার এই নৃশংসতা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অমানবিক নির্যাতনের শিকার ২ লাখ নারীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই নৃশংস ঘটনাগুলো আমাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মা এবং নারী ও শিশুসহ পরিবারের অন্য সদস্যের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি মিয়ানমারের হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর নির্যাতনের দৃশ্যকেই ফুটিয়ে তোলে, যারা নৃশংসতার শিকার হলে ২০১৭ সালের আগস্টে আমাদের সীমান্তে আশ্রয় চেয়েছিল।’
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মুসলিম নারীদের জন্য একগুচ্ছ পরামর্শ দেন। পরামর্শগুলো হলো—
প্রথমত, ফিলিস্তিনে অবিলম্বে সংঘাতের অবসান এবং সেখানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর অপরাধের বিচার।
দ্বিতীয়ত, সমস্ত অপরাধ, সহিংসতা, বৈষম্য ও নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়াকে ‘না’ বলুন।
তৃতীয়ত, এসডিজি-৫ পূরণের লক্ষ্যে লিঙ্গ সমতা অর্জন ও নারীদের ক্ষমতায়নের দিকে যথাযথ মনোযোগ দিন।
চতুর্থত, মুসলিম নারীরা যেন ইচ্ছেমতো স্বাধীনভাবে জনসমক্ষে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করুন।
পঞ্চমত, নারী ক্ষমতায়ন ও মূল স্রোতে নারীদের ভূমিকার উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এই বহুল প্রতীক্ষিত ইস্যুগুলোতে সংলাপ প্রত্যাশিত। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে এর সম্ভাবনা উপলব্ধি করে খুব তাড়াতাড়ি ওআইসির নারী উন্নয়ন সংস্থায় (ডব্লিউডিও) যোগ দেয়। তিনি বলেন, ‘ডব্লিউডিও এর যাত্রা শুরু করেছে এবং আমি আশা করি, ইসলামকে আরও ভালোভাবে বোঝার মাধ্যমে আজকের চাহিদাগুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এ ম্যান্ডেটকে প্রসারিত করা যেতে পারে। আর তবেই আমরা একটি বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের স্বপ্ন দেখতে পারি। আমি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সাফল্য কামনা করছি।’
শেখ হাসিনা এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইসলামে নারীর মর্যাদা তুলে ধরার জন্য সৌদি আরব ও ওআইসিকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নারীমুক্তির জন্য সৌদি আরবের যুগান্তকারী উদ্যোগগুলোকে আগ্রহের সঙ্গেই লক্ষ করি। আমি মহামান্য বাদশাহ ও হিজ রয়েল হাইনেস যুবরাজের এই রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করি।’ ইসলামকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লামের আহ্বানে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন একজন নারী—বিবি খাদিজা।’
পবিত্র কোরআনের সুরা আন-নিসা’র আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আর আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা পরস্পরের এবং রক্ত সম্পর্কের অধিকার চাও। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বদাই তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীর অধিকার ও লিঙ্গ সমতা রক্ষায় তাদের গর্বিত ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলাদেশের রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মতো পথপ্রদর্শক আছেন, যিনি ১৯০৫ সালে প্রকাশিত তার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বইতে নারী নেতৃত্বাধীন বিশ্বের কল্পনা করেছিলেন। ইংরেজিতে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর, অর্ধেক তা করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমমর্যাদা নিশ্চিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি সংরক্ষিত আসনের বিধান করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর মেয়ে হিসেবে তিনি নারী ক্ষমতায়নের এ কাজ অব্যাহত রেখেছেন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৫০টিতে উন্নীত করেছেন। আমাদের জাতীয় সংসদে এখন ৭৩ জন নারী সাংসদ রয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীরা সব সময়ই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রথম সারিতে থেকেছেন। তাঁরা নিজেরাই যেন কাজের মাধ্যমে তাঁদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারেন, আমি তাঁদের প্রতি সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বৈশ্বিক সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটি অনন্য উদাহরণ আছে, যেখানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও সরকারি দলের উপনেতা সবাই নারী। এ ছাড়া আমাদের স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বস্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতবার আমি দায়িত্বে এসেছি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের উন্নীত করার জন্য সমস্ত বাধা দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্য সংস্থায় আমাদের নারীদের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হতে দেখে আমি গর্বিত বোধ করি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাদের মেয়েরা পাবলিক পরীক্ষা, প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ ও জাতীয় পর্যায়ের খেলায় অংশ নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির হোস্ট হিসাবে আমি ওআইসি সদস্য দেশগুলোর তরুণ নারীদের এই চমৎকার প্রতিষ্ঠানে পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে নারীদের জন্য সুবিধাসহ সারা দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক অগ্রগতিও আমাদের নারীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের প্রমাণ।
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রায় ৪৬% নারী কর্মী। নারী উদ্যোক্তারা আমাদের কুটির, ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পে বড় ধরনের অবদান রাখছেন। আইটি ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স ও স্টার্ট-আপে নারীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি রয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার অর্থ, বাজার, ধারণা ও প্রশিক্ষণে নারীদের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।’ সরকারি ক্ষেত্রে ছয় মাসের সবেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি, যাতে বিদেশে কর্মরত নারী কর্মীদের সুরক্ষা ও মঙ্গল নিশ্চিত করা যায়। সরকারের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র, বিধবা, পরিত্যক্ত, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নারীরা উপকৃত হচ্ছেন। সরকার বিনা মূল্যের আবাসন ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্বামী ও স্ত্রী উভয়কে যৌথ মালিকানা দিচ্ছে, যাতে বিচ্ছেদ হলে সেটি স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। যৌতুক, বাল্যবিবাহ ও সাইবার হয়রানির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন বাড়ছে।
দেশে গত ১৫ বছরে ৮২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে সরকার। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই (কেন্দ্রভাড়া) নিয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বিনা দরপত্রে কেন্দ্র দেওয়ায় বিদ্যুতের দামও পড়েছে বেশি। সেই বাড়তি দাম গিয়ে পড়েছে সাধারণ ভোক্তার কাঁধে।
১ ঘণ্টা আগেরাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে না বসলেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নারীনেত্রী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা, ইউটিউবারসহ বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিতে সভা করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। প্র
৮ ঘণ্টা আগেডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১০৭ জন রোগী।
১৩ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ‘কনফারেন্স অফ পার্টিস-২৯(কপ২৯)’ শীর্ষক বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগদান শেষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরেছেন।
১৪ ঘণ্টা আগে