বাসস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিত্তশালীরা কেবল নয়, আমি চাই আমার রিকশাওয়ালা, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষসহ দিনমজুররাও ফ্ল্যাটে থাকবে। আমার প্রত্যেকটি কাজ হচ্ছে এই তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। এ কথা মাথায় রেখেই আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন। দেখবেন নিজেদেরও ভালো লাগবে।’
আজ শনিবার সকালে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) ৬১তম কনভেনশনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। আইইবি ঢাকা সেন্টার রাজধানীতে আইইবি সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে ‘প্রকৌশল ও প্রযুক্তির জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ’ মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে গণমুখী, পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও টেকসই কৌশল এবং পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়নকে দ্রুততর করতে আলোচনার মাধ্যমে কৌশল ঠিক করুন, যাতে আমরা দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের এই কনভেনশন যখন হয় তখন অতীতে বিভিন্ন সময়ে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের যে কর্মকাণ্ড তার সাফল্য ব্যর্থতা সম্পর্কে পর্যালোচনা করবেন, বিশ্লেষণ করবেন। পাশাপাশি আমরা ভবিষ্যতে কীভাবে এগিয়ে যাব, আরও দ্রুত উন্নতি করতে পারব সেই কৌশল কী হবে সেই বিষয়গুলোও আপনারা আলোচনা করবেন এবং সেই কৌশল নির্ধারণ করবেন। অন্তত আমরা যখন সরকারে আছি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারব। সেটাই আমি আপনাদের কাছ থেকে আশা করি।’
তাঁর সরকার যত পরিকল্পনা করছে বা দেশের উন্নয়ন করছে সেখানে প্রকৌশলীদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার একটা অনুরোধ থাকবে, যে পরিকল্পনা হোক সেই পরিকল্পনা যেন প্রথমত, পরিবেশবান্ধব হতে হবে। কারণ জলবায়ুর অভিঘাত থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করা আমাদের লক্ষ্য এবং এটা আমাদের করতেই হবে। আমাদের খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয়। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জলাধারগুলোকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে জলাধার সংরক্ষিত রেখে এবং নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর এলাকায় পানির প্রবাহ ধরে রেখে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা নিতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এর পাশাপাশি পরিকল্পনাগুলো যেন টেকসই হয় এবং খরচের দিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে। অহেতুক যেকোনো পরিকল্পনা যেন আমরা গ্রহণ না করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একনেক বৈঠকেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে এর থেকে জনগণ কতটুকু লাভবান হবে বা এর রিটার্ন কী আসবে বা যেটা আমাদের জন্য উপযোগী সেই পরিকল্পনা নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু একটা নির্মাণকাজের জন্য যেন নির্মাণ করা না হয়, এটা আমার অনুরোধ। একটা কনস্ট্রাকশন হলে কিছু লোক কাজ পাবেন কিছু কমিশন বা কিছু লোক নানা সুবিধা পাবেন সেটা যেন না হয়।’
তিনি বলেন, ‘এর জন্য আমি আমার পার্লামেন্টারি পার্টির এমপিদেরও নির্দেশ দিয়েছি। সংসদে বলেছি, একনেক সভাসহ সব জায়গায় বলেছি। আর সে রকম যদি কোনো প্রকল্প দেখি অবশ্যই আমি তা অনুমোদন করব না। যেটা আমার দেশের কাজে লাগবে, মানুষের কাজে লাগবে আর যে প্রকল্প শেষ করলে পরে তার থেকে দেশ কিছু লাভবান হবে, মানুষ লাভবান হবে, আমাদের উপার্জন হবে, সেভাবেই যেন পরিকল্পনা করা হয়। এটাই আমার কাম্য।’
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রকৌশলীদের যৌক্তিক দাবিগুলো দেশের উন্নয়নে তাদের অবদানের কথা মাথায় রেখেই তিনি যাচাই-বাছাইপূর্বক পূরণের ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলী, কেন্দ্র, উপকেন্দ্র, প্রকৌশল বিভাগ এবং এএমআইই পরীক্ষার স্নাতকদের হাতে স্বর্ণপদক ও সনদসহ পুরস্কার তুলে দেন।
আইইবি সভাপতি প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর এমপি, আইইবি সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এসএম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেইন ও আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আইইবির ৬১তম কনভেনশনের থিম সংয়ের পাশাপাশি একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আরও অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে আপনারা (প্রকৌশলীরা) বিশেষভাবে অবদান রাখতে পারবেন, আমরা সেটা আশা করি।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে এই বাংলাদেশ যাতে আরও উন্নত হয় সে জন্য যা যা করণীয় আমরা তা করেছি। ইতিমধ্যে ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০২১’ আমরা বাস্তবায়ন করেছি। এখন ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রণয়ন করে সেটাও আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আর জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি পরিকল্পনা ২০৩০ও একই সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এ সময় ২০৪১ সালের বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সেখানে স্মার্ট জনসংখ্যা, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেটা করার জন্য আমি প্রকৌশলীদের বলব আপনারা আপনাদের মেধা ও মনন দিয়ে পরিকল্পনা কী নেওয়া যায়? কীভাবে এগোনো যায়? কোন কোন খাতকে আমরা আরও অগ্রাধিকার দিতে পারি—সে ক্ষেত্রে আপনাদের পরামর্শ চাই। যেটা আমাদের কাজে লাগবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজ। কাজেই বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলতে হবে। সেইভাবে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সেইভাবেই আমি পরিকল্পনা করছি।’
‘আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এবং ২০২৬ সাল থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে’—উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই এখন থেকেই এর জন্য যথাযথ পরিকল্পনা আমরা নিচ্ছি। কিন্তু এখান থেকে যে সুযোগগুলো আমরা পাব, সেগুলো যথাযথভাবে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আর যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে এবং আমরা তা পারব। কাজেই এখন থেকেই আমাদের সে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তাঁর সরকার সব সময়ই চায় কীভাবে দেশের মানুষ ভালো থাকবে এবং তাদের জীবনমান উন্নত হবে উল্লেখ করে দেশের উন্নয়ন যাদের চোখে পড়ে না সেই বিশেষ গোষ্ঠীর সমালোচনাও করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাই আমাদের দেশের কিছু কিছু মানুষ আছেন আপনি যা-ই করেন, কিছুই তাঁদের ভালো লাগে না। কিছু ভালো লাগে না একটা গোষ্ঠীই রয়েছে। যেমন কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের কী দরকার ছিল বা স্যাটেলাইট-২-এরই বা প্রয়োজন কি আছে? পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কেন করা হলো? শুধু শুধু টাকা নষ্ট। মেট্রোরেলের তো প্রয়োজনই ছিল না। ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেট্রোরেল না করে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই তো যানজট দূর হয়ে যেত।
তিনি এ সময় বিশ্বব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করে তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উল্লেখ করে বলেন, ‘অনেকেই বলেছিলেন বিশ্বব্যাংক ছাড়া হবে না। কিন্তু আমরা নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি যে আমরাও পারি। জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে কিছু ভালো লাগে না গোষ্ঠীর এগুলো সফলভাবে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় পরে মানুষের জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়ে যাওয়ায় তাদের কী অসুবিধা হচ্ছে, তারা কি এর সুবিধা ভোগ করছে না? সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে প্রকৌশলীদের গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে যা আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে চাই। সে ক্ষেত্রে আমি বলব আমাদের প্রকৌশলীদেরও গবেষণা দরকার। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বহুমুখী করেছি। আগামীতে আরেকটি দিক আসছে হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও আমাদের গবেষণা দরকার। একই সঙ্গে স্বল্প খরচে টেকসই যন্ত্রপাতি নির্মাণ, স্থাপনা নির্মাণ ও মেরামতেও গবেষণা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৌশল ক্ষেত্রে আরও বেশি গবেষণা করে আপনাদের যে উদ্ভাবনী শক্তি ও মেধা রয়েছে সেটাকে কীভাবে আমরা দেশের কাজে লাগাতে পারি সেদিকে আপনারা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। কারণ আমাদের সবকিছুই নির্মাণের দায়িত্ব পড়ে প্রকৌশলীদের ওপর।’
শেখ হাসিনা এ সময় তাঁর সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে অতি দরিদ্রদের জন্য ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ায় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রকৌশলীদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘এখানে প্রশাসন থেকে প্রকৌশলী এমনকি সংশ্লিষ্ট সকলেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। যার জন্য আজ ২১টি জেলা এবং ৩৩৪টি উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা দিতে পেরেছি। ইনশা আল্লাহ এই বাংলাদেশে একটি পরিবারও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না।’
আরও অল্প খরচে এই সাধারণ মানুষগুলোর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও সুন্দরভাবে বসবাস উপযোগী আবাসস্থল নির্মাণে কারও যদি কোনো পরামর্শ বা পরিকল্পনা থাকে তা দেওয়ার জন্যও তিনি প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নিচ্ছি বাংলাদেশকে আর্থসামাজিক উন্নতি করে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে। সেখানে মূল চালিকাশক্তি হবে আমাদের প্রকৌশলীবৃন্দ। কাজেই আপনাদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের। সেটা আমরা করব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিত্তশালীরা কেবল নয়, আমি চাই আমার রিকশাওয়ালা, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষসহ দিনমজুররাও ফ্ল্যাটে থাকবে। আমার প্রত্যেকটি কাজ হচ্ছে এই তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। এ কথা মাথায় রেখেই আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন। দেখবেন নিজেদেরও ভালো লাগবে।’
আজ শনিবার সকালে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) ৬১তম কনভেনশনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। আইইবি ঢাকা সেন্টার রাজধানীতে আইইবি সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে ‘প্রকৌশল ও প্রযুক্তির জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ’ মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে গণমুখী, পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও টেকসই কৌশল এবং পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়নকে দ্রুততর করতে আলোচনার মাধ্যমে কৌশল ঠিক করুন, যাতে আমরা দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের এই কনভেনশন যখন হয় তখন অতীতে বিভিন্ন সময়ে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের যে কর্মকাণ্ড তার সাফল্য ব্যর্থতা সম্পর্কে পর্যালোচনা করবেন, বিশ্লেষণ করবেন। পাশাপাশি আমরা ভবিষ্যতে কীভাবে এগিয়ে যাব, আরও দ্রুত উন্নতি করতে পারব সেই কৌশল কী হবে সেই বিষয়গুলোও আপনারা আলোচনা করবেন এবং সেই কৌশল নির্ধারণ করবেন। অন্তত আমরা যখন সরকারে আছি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারব। সেটাই আমি আপনাদের কাছ থেকে আশা করি।’
তাঁর সরকার যত পরিকল্পনা করছে বা দেশের উন্নয়ন করছে সেখানে প্রকৌশলীদের বিশাল ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার একটা অনুরোধ থাকবে, যে পরিকল্পনা হোক সেই পরিকল্পনা যেন প্রথমত, পরিবেশবান্ধব হতে হবে। কারণ জলবায়ুর অভিঘাত থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করা আমাদের লক্ষ্য এবং এটা আমাদের করতেই হবে। আমাদের খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয়। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জলাধারগুলোকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে জলাধার সংরক্ষিত রেখে এবং নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর এলাকায় পানির প্রবাহ ধরে রেখে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা নিতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এর পাশাপাশি পরিকল্পনাগুলো যেন টেকসই হয় এবং খরচের দিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে। অহেতুক যেকোনো পরিকল্পনা যেন আমরা গ্রহণ না করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একনেক বৈঠকেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে এর থেকে জনগণ কতটুকু লাভবান হবে বা এর রিটার্ন কী আসবে বা যেটা আমাদের জন্য উপযোগী সেই পরিকল্পনা নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু একটা নির্মাণকাজের জন্য যেন নির্মাণ করা না হয়, এটা আমার অনুরোধ। একটা কনস্ট্রাকশন হলে কিছু লোক কাজ পাবেন কিছু কমিশন বা কিছু লোক নানা সুবিধা পাবেন সেটা যেন না হয়।’
তিনি বলেন, ‘এর জন্য আমি আমার পার্লামেন্টারি পার্টির এমপিদেরও নির্দেশ দিয়েছি। সংসদে বলেছি, একনেক সভাসহ সব জায়গায় বলেছি। আর সে রকম যদি কোনো প্রকল্প দেখি অবশ্যই আমি তা অনুমোদন করব না। যেটা আমার দেশের কাজে লাগবে, মানুষের কাজে লাগবে আর যে প্রকল্প শেষ করলে পরে তার থেকে দেশ কিছু লাভবান হবে, মানুষ লাভবান হবে, আমাদের উপার্জন হবে, সেভাবেই যেন পরিকল্পনা করা হয়। এটাই আমার কাম্য।’
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রকৌশলীদের যৌক্তিক দাবিগুলো দেশের উন্নয়নে তাদের অবদানের কথা মাথায় রেখেই তিনি যাচাই-বাছাইপূর্বক পূরণের ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলী, কেন্দ্র, উপকেন্দ্র, প্রকৌশল বিভাগ এবং এএমআইই পরীক্ষার স্নাতকদের হাতে স্বর্ণপদক ও সনদসহ পুরস্কার তুলে দেন।
আইইবি সভাপতি প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর এমপি, আইইবি সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এসএম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেইন ও আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আইইবির ৬১তম কনভেনশনের থিম সংয়ের পাশাপাশি একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আরও অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে আপনারা (প্রকৌশলীরা) বিশেষভাবে অবদান রাখতে পারবেন, আমরা সেটা আশা করি।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে এই বাংলাদেশ যাতে আরও উন্নত হয় সে জন্য যা যা করণীয় আমরা তা করেছি। ইতিমধ্যে ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০২১’ আমরা বাস্তবায়ন করেছি। এখন ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রণয়ন করে সেটাও আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আর জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি পরিকল্পনা ২০৩০ও একই সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এ সময় ২০৪১ সালের বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সেখানে স্মার্ট জনসংখ্যা, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেটা করার জন্য আমি প্রকৌশলীদের বলব আপনারা আপনাদের মেধা ও মনন দিয়ে পরিকল্পনা কী নেওয়া যায়? কীভাবে এগোনো যায়? কোন কোন খাতকে আমরা আরও অগ্রাধিকার দিতে পারি—সে ক্ষেত্রে আপনাদের পরামর্শ চাই। যেটা আমাদের কাজে লাগবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজ। কাজেই বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলতে হবে। সেইভাবে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সেইভাবেই আমি পরিকল্পনা করছি।’
‘আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এবং ২০২৬ সাল থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে’—উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই এখন থেকেই এর জন্য যথাযথ পরিকল্পনা আমরা নিচ্ছি। কিন্তু এখান থেকে যে সুযোগগুলো আমরা পাব, সেগুলো যথাযথভাবে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আর যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে এবং আমরা তা পারব। কাজেই এখন থেকেই আমাদের সে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তাঁর সরকার সব সময়ই চায় কীভাবে দেশের মানুষ ভালো থাকবে এবং তাদের জীবনমান উন্নত হবে উল্লেখ করে দেশের উন্নয়ন যাদের চোখে পড়ে না সেই বিশেষ গোষ্ঠীর সমালোচনাও করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাই আমাদের দেশের কিছু কিছু মানুষ আছেন আপনি যা-ই করেন, কিছুই তাঁদের ভালো লাগে না। কিছু ভালো লাগে না একটা গোষ্ঠীই রয়েছে। যেমন কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের কী দরকার ছিল বা স্যাটেলাইট-২-এরই বা প্রয়োজন কি আছে? পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কেন করা হলো? শুধু শুধু টাকা নষ্ট। মেট্রোরেলের তো প্রয়োজনই ছিল না। ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেট্রোরেল না করে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই তো যানজট দূর হয়ে যেত।
তিনি এ সময় বিশ্বব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করে তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উল্লেখ করে বলেন, ‘অনেকেই বলেছিলেন বিশ্বব্যাংক ছাড়া হবে না। কিন্তু আমরা নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি যে আমরাও পারি। জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে কিছু ভালো লাগে না গোষ্ঠীর এগুলো সফলভাবে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় পরে মানুষের জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়ে যাওয়ায় তাদের কী অসুবিধা হচ্ছে, তারা কি এর সুবিধা ভোগ করছে না? সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে প্রকৌশলীদের গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে যা আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে চাই। সে ক্ষেত্রে আমি বলব আমাদের প্রকৌশলীদেরও গবেষণা দরকার। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বহুমুখী করেছি। আগামীতে আরেকটি দিক আসছে হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও আমাদের গবেষণা দরকার। একই সঙ্গে স্বল্প খরচে টেকসই যন্ত্রপাতি নির্মাণ, স্থাপনা নির্মাণ ও মেরামতেও গবেষণা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৌশল ক্ষেত্রে আরও বেশি গবেষণা করে আপনাদের যে উদ্ভাবনী শক্তি ও মেধা রয়েছে সেটাকে কীভাবে আমরা দেশের কাজে লাগাতে পারি সেদিকে আপনারা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। কারণ আমাদের সবকিছুই নির্মাণের দায়িত্ব পড়ে প্রকৌশলীদের ওপর।’
শেখ হাসিনা এ সময় তাঁর সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে অতি দরিদ্রদের জন্য ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ায় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রকৌশলীদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘এখানে প্রশাসন থেকে প্রকৌশলী এমনকি সংশ্লিষ্ট সকলেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। যার জন্য আজ ২১টি জেলা এবং ৩৩৪টি উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা দিতে পেরেছি। ইনশা আল্লাহ এই বাংলাদেশে একটি পরিবারও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না।’
আরও অল্প খরচে এই সাধারণ মানুষগুলোর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও সুন্দরভাবে বসবাস উপযোগী আবাসস্থল নির্মাণে কারও যদি কোনো পরামর্শ বা পরিকল্পনা থাকে তা দেওয়ার জন্যও তিনি প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নিচ্ছি বাংলাদেশকে আর্থসামাজিক উন্নতি করে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে। সেখানে মূল চালিকাশক্তি হবে আমাদের প্রকৌশলীবৃন্দ। কাজেই আপনাদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের। সেটা আমরা করব।’
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে থাকবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের
১ ঘণ্টা আগেকিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার স্বত্ব প্রদান এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
২ ঘণ্টা আগেছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এর তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। মূল্যায়নে তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী স
৩ ঘণ্টা আগেবিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য অনেকে নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় সেসব তথ্যই এখন তাঁদের জন্য ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গ
৪ ঘণ্টা আগে