নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশ গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থানের কারণে সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সংলাপেই সমাধান দেখছে পশ্চিমা দেশগুলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদে এবার আলোচনায় উঠে এসেছে সংলাপ।
আ.লীগ সংলাপে রাজি, তবে হতে হবে শর্তহীন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপে রাজি আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এ সংলাপ হতে হবে শর্তহীন। দলটির নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি থেকে বিএনপি সরে এলেই তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে।
সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের চাপ আছে সরকারের ওপর। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ চাপ বেশ স্পষ্ট। এ নিয়ে গতকাল রোববার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিএনপি তাদের শর্ত প্রত্যাহার করে নিলে সংলাপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।
শর্তমুক্তভাবে বিএনপি সংলাপ করতে চাইলে আওয়ামী লীগ সংলাপে বসবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তখন চিন্তা করে দেখা হবে।
চলতি মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ ঢাকা সফর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) একটি যৌথ প্রতিনিধিদল। সফরকালে তাঁরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সুশীল সমাজ, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। প্রতিনিধিদলটি যুক্তরাষ্ট্র ফিরে পাঁচটি মতামত তুলে ধরেছে, যার একটি হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপ করা। পাশাপাশি রাজনীতির ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন, নির্বাচনের সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং সব নাগরিকের ভিন্নমতকে সম্মান জানাতেও বলেছে প্রতিনিধিদলটি।
পশ্চিমাদের এসব পরামর্শের কারণে আওয়ামী লীগ সংলাপের প্রশ্নে আগের চেয়ে নমনীয় হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তবে দুই দল পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল হতে না পারলে কোনো সংলাপই ফলপ্রসূ হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য।
জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংলাপ হতেই পারে, তবে কোনো শর্ত দিয়ে নয়। শর্তযুক্ত সংলাপে কোনো ফল হবে না। খোলামন নিয়ে আসতে হবে। আমরা খোলা মনে যাব, যাঁরা সংলাপ চান তাঁদেরও খোলা মনে আসতে হবে। আলোচনা তখন করব। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের জন্য আলোচনা হতেই পারে।’
বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসে সংলাপ প্রচলিত শব্দ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারনকোর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল। তাতে কোনো সমাধান হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে আওয়ামী লীগ। সংলাপের কারণে তফসিল ঘোষণার পরে ভোটের তারিখ ঠিক রেখে মনোনয়ন দাখিলের সময়ও বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু ভোটের পর বিএনপি অভিযোগ করে, আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে দেওয়া কথা রাখেনি।
শর্ত দেওয়ার ক্ষমতা সরকারএখন রাখে না: বিএনপি
অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসার অনীহা রয়েছে বিএনপির। এরপরও বিরাজমান সংকট নিরসনে বৃহত্তর স্বার্থে সংলাপে বসতে আপত্তি নেই তাদের। তবে সেই সংলাপ শর্তযুক্ত না শর্তহীন হবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা সরকার এখন রাখে না বলে মনে করছে দলটি।
সংলাপ নিয়ে দুই পক্ষের কথা-চালাচালির মধ্যে গতকাল রোববার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শর্তহীন সংলাপ করতে চাইলে তাতে আওয়ামী লীগ রাজি হতে পারে।’ এর আগে ‘সংলাপের পথ বিএনপি বন্ধ করেছে’ বলে মন্তব্য করেন কাদের।
কাদেরের এসব মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁর (ওবায়দুল কাদের) কথার কোনো মূল্য আছে নাকি? তিনি সকালে এক কথা বলেন, আবার বিকেলে আরেক কথা বলেন। আগে সংলাপের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করুক, আলোচনার বিষয় ঠিক করুক, পরিবেশ তৈরি হোক। তারপর এ ব্যাপারে ভাবা যাবে।’
তবে সংলাপ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে খানিকটা নমনীয়তা বলেও মনে করছেন বিএনপির নেতাদের অনেকে। তবে এ নমনীয়তা যথেষ্ট নয় মত দিয়ে তাঁরা বলছেন, বিদেশি শক্তি ও আন্দোলনের চাপে সরকার এখন নমনীয় হয়েছে এবং বাধ্য হয়েই সংলাপের কথা বলছে। সেদিক থেকে বিএনপি একটু সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় আগ বাড়িয়ে সংলাপের জন্য আপাতত কোনো ছাড় দেওয়ার চিন্তা করছে না বিএনপি।
আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে আত্মহত্যার শামিল বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। তাই ক্ষমতা ছাড়ার আগে তাদের সঙ্গে সংলাপ করাকে অর্থহীন বলেও মনে করছেন তাঁদের অনেকে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার বাধ্য হয়ে সংলাপের কথা বলছে। কিন্তু সেই সংলাপ শর্তযুক্ত না শর্তহীন হবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা সরকার এখন রাখে না।’ তবে তিনি এও বলেছেন, ‘রাজনীতি চলমান এবং আগামীতে আমাদের কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে, সেটাও এখনো নির্ধারিত নয়।’
দলগুলোর মধ্যে খোলামনে সংলাপ দরকার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খোলামনে অর্থবহ সংলাপের তাগিদ দিয়েছে ঢাকা ঘুরে যাওয়া মার্কিন প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে এ তাগিদ দেয়।
নির্বাচনের অংশীজনদের বিবেচনার জন্য এনডিআই-আইআরআই দলটি বিবৃতিতে পাঁচ দফা সুপারিশসহ একটি রূপরেখা প্রস্তাব করে। সংলাপ ছাড়াও এতে অন্তর্ভুক্ত অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সংযমী হতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। নাগরিকদের জন্য খোলামেলা পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ভিন্নমতকে সম্মান দিতে হবে। রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সব দলের জন্য অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। স্বাধীন নির্বাচন পরিচালনাব্যবস্থাকে মজবুত করতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সক্রিয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের সংস্কৃতি তৈরির আগ্রহ জাগাতে হবে।
এনডিআই ও আইআরআইয়ের পাঠানো ছয় সদস্যের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দলটি ৭ অক্টোবর থেকে ছয় দিন ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কয়েকজন মন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিদেশি কূটনীতিকসহ অনেকের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর এ রূপরেখাটি প্রকাশ করে।
মার্কিন মিশনটি বলছে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি আছে। কিন্তু এখানকার রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও দলগুলোর মধ্যে ক্রমহ্রাসমান আস্থা ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় রকম প্রতিবন্ধকতা। দলগুলোর আপসহীন মানসিকতা, ভোটে জিতে নিজেরাই সবকিছু গ্রাস করার মনোভাব, আক্রমণাত্মক বক্তৃতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, ভয়ের পরিবেশ, নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়া, দলগুলোর মধ্যে আস্থার ঘাটতি এমন বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, তুলনামূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠনকে নিবন্ধন না দিয়ে অচেনা সংগঠনকে নিবন্ধিত করে নির্বাচন কমিশন নিজের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। কাগজ-কলমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা থাকলেও তা কার্যকরভাবে ভোটের দিন নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বেশ জটিলতা আছে।
এমন বিরূপ পরিবেশ তৈরি হওয়ার পরিণতিতে নাগরিকেরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। তাঁদের রাজনৈতিক পছন্দের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক সংলাপ না হলে উদ্বেগ-উত্তেজনা বাড়তে পারে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও আছে।
মার্কিন সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মার্কিন প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে মনে করে না সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল এ মন্তব্য করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তারা একটি ফরমাশি বিবৃতি দিয়েছে। সুপারিশগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেকেই অনেক ধরনের মত দেয়। কিন্তু এগুলো গ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা সরকারের বিষয়।
মোমেন বলেন, বিভিন্ন দেশের অনেক কূটনৈতিক এসে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলাপ করে। নির্বাচন নিয়ে অনেকে কথা বলে মজা পায়। এটা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশ গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থানের কারণে সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সংলাপেই সমাধান দেখছে পশ্চিমা দেশগুলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদে এবার আলোচনায় উঠে এসেছে সংলাপ।
আ.লীগ সংলাপে রাজি, তবে হতে হবে শর্তহীন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপে রাজি আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এ সংলাপ হতে হবে শর্তহীন। দলটির নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি থেকে বিএনপি সরে এলেই তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে।
সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের চাপ আছে সরকারের ওপর। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ চাপ বেশ স্পষ্ট। এ নিয়ে গতকাল রোববার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিএনপি তাদের শর্ত প্রত্যাহার করে নিলে সংলাপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।
শর্তমুক্তভাবে বিএনপি সংলাপ করতে চাইলে আওয়ামী লীগ সংলাপে বসবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তখন চিন্তা করে দেখা হবে।
চলতি মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ ঢাকা সফর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) একটি যৌথ প্রতিনিধিদল। সফরকালে তাঁরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সুশীল সমাজ, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। প্রতিনিধিদলটি যুক্তরাষ্ট্র ফিরে পাঁচটি মতামত তুলে ধরেছে, যার একটি হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপ করা। পাশাপাশি রাজনীতির ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন, নির্বাচনের সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং সব নাগরিকের ভিন্নমতকে সম্মান জানাতেও বলেছে প্রতিনিধিদলটি।
পশ্চিমাদের এসব পরামর্শের কারণে আওয়ামী লীগ সংলাপের প্রশ্নে আগের চেয়ে নমনীয় হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তবে দুই দল পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল হতে না পারলে কোনো সংলাপই ফলপ্রসূ হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য।
জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংলাপ হতেই পারে, তবে কোনো শর্ত দিয়ে নয়। শর্তযুক্ত সংলাপে কোনো ফল হবে না। খোলামন নিয়ে আসতে হবে। আমরা খোলা মনে যাব, যাঁরা সংলাপ চান তাঁদেরও খোলা মনে আসতে হবে। আলোচনা তখন করব। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের জন্য আলোচনা হতেই পারে।’
বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসে সংলাপ প্রচলিত শব্দ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারনকোর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল। তাতে কোনো সমাধান হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে আওয়ামী লীগ। সংলাপের কারণে তফসিল ঘোষণার পরে ভোটের তারিখ ঠিক রেখে মনোনয়ন দাখিলের সময়ও বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু ভোটের পর বিএনপি অভিযোগ করে, আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে দেওয়া কথা রাখেনি।
শর্ত দেওয়ার ক্ষমতা সরকারএখন রাখে না: বিএনপি
অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসার অনীহা রয়েছে বিএনপির। এরপরও বিরাজমান সংকট নিরসনে বৃহত্তর স্বার্থে সংলাপে বসতে আপত্তি নেই তাদের। তবে সেই সংলাপ শর্তযুক্ত না শর্তহীন হবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা সরকার এখন রাখে না বলে মনে করছে দলটি।
সংলাপ নিয়ে দুই পক্ষের কথা-চালাচালির মধ্যে গতকাল রোববার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শর্তহীন সংলাপ করতে চাইলে তাতে আওয়ামী লীগ রাজি হতে পারে।’ এর আগে ‘সংলাপের পথ বিএনপি বন্ধ করেছে’ বলে মন্তব্য করেন কাদের।
কাদেরের এসব মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁর (ওবায়দুল কাদের) কথার কোনো মূল্য আছে নাকি? তিনি সকালে এক কথা বলেন, আবার বিকেলে আরেক কথা বলেন। আগে সংলাপের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করুক, আলোচনার বিষয় ঠিক করুক, পরিবেশ তৈরি হোক। তারপর এ ব্যাপারে ভাবা যাবে।’
তবে সংলাপ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে খানিকটা নমনীয়তা বলেও মনে করছেন বিএনপির নেতাদের অনেকে। তবে এ নমনীয়তা যথেষ্ট নয় মত দিয়ে তাঁরা বলছেন, বিদেশি শক্তি ও আন্দোলনের চাপে সরকার এখন নমনীয় হয়েছে এবং বাধ্য হয়েই সংলাপের কথা বলছে। সেদিক থেকে বিএনপি একটু সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় আগ বাড়িয়ে সংলাপের জন্য আপাতত কোনো ছাড় দেওয়ার চিন্তা করছে না বিএনপি।
আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে আত্মহত্যার শামিল বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। তাই ক্ষমতা ছাড়ার আগে তাদের সঙ্গে সংলাপ করাকে অর্থহীন বলেও মনে করছেন তাঁদের অনেকে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার বাধ্য হয়ে সংলাপের কথা বলছে। কিন্তু সেই সংলাপ শর্তযুক্ত না শর্তহীন হবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা সরকার এখন রাখে না।’ তবে তিনি এও বলেছেন, ‘রাজনীতি চলমান এবং আগামীতে আমাদের কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে, সেটাও এখনো নির্ধারিত নয়।’
দলগুলোর মধ্যে খোলামনে সংলাপ দরকার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খোলামনে অর্থবহ সংলাপের তাগিদ দিয়েছে ঢাকা ঘুরে যাওয়া মার্কিন প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে এ তাগিদ দেয়।
নির্বাচনের অংশীজনদের বিবেচনার জন্য এনডিআই-আইআরআই দলটি বিবৃতিতে পাঁচ দফা সুপারিশসহ একটি রূপরেখা প্রস্তাব করে। সংলাপ ছাড়াও এতে অন্তর্ভুক্ত অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সংযমী হতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। নাগরিকদের জন্য খোলামেলা পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ভিন্নমতকে সম্মান দিতে হবে। রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সব দলের জন্য অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। স্বাধীন নির্বাচন পরিচালনাব্যবস্থাকে মজবুত করতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সক্রিয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের সংস্কৃতি তৈরির আগ্রহ জাগাতে হবে।
এনডিআই ও আইআরআইয়ের পাঠানো ছয় সদস্যের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দলটি ৭ অক্টোবর থেকে ছয় দিন ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কয়েকজন মন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিদেশি কূটনীতিকসহ অনেকের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর এ রূপরেখাটি প্রকাশ করে।
মার্কিন মিশনটি বলছে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি আছে। কিন্তু এখানকার রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও দলগুলোর মধ্যে ক্রমহ্রাসমান আস্থা ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় রকম প্রতিবন্ধকতা। দলগুলোর আপসহীন মানসিকতা, ভোটে জিতে নিজেরাই সবকিছু গ্রাস করার মনোভাব, আক্রমণাত্মক বক্তৃতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, ভয়ের পরিবেশ, নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়া, দলগুলোর মধ্যে আস্থার ঘাটতি এমন বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, তুলনামূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠনকে নিবন্ধন না দিয়ে অচেনা সংগঠনকে নিবন্ধিত করে নির্বাচন কমিশন নিজের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। কাগজ-কলমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা থাকলেও তা কার্যকরভাবে ভোটের দিন নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বেশ জটিলতা আছে।
এমন বিরূপ পরিবেশ তৈরি হওয়ার পরিণতিতে নাগরিকেরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। তাঁদের রাজনৈতিক পছন্দের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক সংলাপ না হলে উদ্বেগ-উত্তেজনা বাড়তে পারে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও আছে।
মার্কিন সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মার্কিন প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে মনে করে না সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল এ মন্তব্য করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তারা একটি ফরমাশি বিবৃতি দিয়েছে। সুপারিশগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেকেই অনেক ধরনের মত দেয়। কিন্তু এগুলো গ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা সরকারের বিষয়।
মোমেন বলেন, বিভিন্ন দেশের অনেক কূটনৈতিক এসে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলাপ করে। নির্বাচন নিয়ে অনেকে কথা বলে মজা পায়। এটা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে থাকবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের
৩ ঘণ্টা আগেকিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার স্বত্ব প্রদান এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
৫ ঘণ্টা আগেছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এর তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। মূল্যায়নে তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী স
৫ ঘণ্টা আগেবিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য অনেকে নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় সেসব তথ্যই এখন তাঁদের জন্য ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গ
৬ ঘণ্টা আগে