নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
পনেরো বছর ধরে যদি একই সমস্যা থাকে তাহলে বুঝতে হবে সিস্টেমে সমস্যা আছে। এই সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। তবে এসব বিষয়ে মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
আজ শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জন শুনানি: জাতীয় উন্নয়ন এবং স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘দেশে যে গত কয়েক বছরে উন্নতি হয়েছে সেটি অস্বীকার করা যাবে না। তবে যেসব বিষয় বা বক্তব্য মাঠ থেকে উঠে আসছে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। আদিবাসীদের স্বীকৃতি ও তাঁদের ভূমির সমস্যা, গার্মেন্টস কর্মীদের সমস্যা, প্রান্তিক মানুষদের সমস্যা—এগুলো প্রায় গত ১৫ বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায় থেকে মন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত যোগাযোগ, সমস্যা নির্ধারণ ও তা সমাধান করার ঘাটতি রয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
প্রখ্যাত এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘এই যে আজকে আদিবাসীরা ও সংখ্যালঘু তাঁদের সমস্যার কথা বললেন, তা সমাধানে কেন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না এই উত্তর কিন্তু আজকে উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছ থেকেও পাওয়া যায়নি। যদি ১৫ বছর ধরে একই সমস্যা থাকে তাহলে বুঝতে হবে সিস্টেমে সমস্যা আছে। এই সিস্টেম পরিবর্তনের উদ্যোগ মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা ও সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না। তাঁদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে।’
এই বক্তব্যের জবাবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেখুন, এখনো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে পুরোনো অনেক আইনের পরিবর্তন হচ্ছে। আমরাও প্রয়োজনে পুরোনো আইনের পরিবর্তন করব।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি আমাদেরও ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, আবার সফলতাও আছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের পর পরবর্তী ২১ বছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র ৫২ ডলার। গত ১৪ বছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ১০০ ডলারের বেশি। এতেই বোঝা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কতটা হয়েছে। তবে এটা ঠিক উন্নয়নের ধারায় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। নইলে শিল্পায়ন হবে না।'
মন্ত্রী আরও বলেন, `আজকে যেভাবে সবাই খোলামেলাভাবে মতামত দিলেন আগে কেউ এভাবে মতামত দিতে পারত না। তবে এখনো সমস্যা রয়েছে এটা ঠিকই। দেশ পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত হয়ে গেছে সেটাও বলব না। তবে দেশকে দুষ্টুমুক্ত করতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশপ্রেমের জন্য কোনো ট্যাবলেট নেই। যে দুর্নীতি করে তার কোনো দলীয় পরিচয় নেই। আমরা এসব সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং যাব।’
জন মতামত পর্বে কথা বলেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রথম ব্যাংকার সঞ্জীবনী বলেন, ‘আজকে আমি বাংলাদেশের প্রথম হিজড়া ব্যাংকার। এই পর্যায়ে আসতে যে আমাকে কতটা কষ্ট, কতটা লড়াই করতে হয়েছে সেটা আমি জানি। আমার মতো অন্য হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডারের মানুষ সমাজে যাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে জন্য আরও সহজ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।’
ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল বলেন, ‘এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ১০০–এর মতো সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু ৩০০–এর বেশি সেনাক্যাম্প এখনো রয়ে গেছে। এগুলো প্রত্যাহার করা দরকার। আমাদের জুম্ম জনগণদের ভূমি এখনো দখল করা হচ্ছে, নানা রকম নিপীড়ন করা হচ্ছে। এগুলো কবে বন্ধ হবে?’
চা শ্রমিক রাহেলা আক্তার বলেন, ‘এখন ১৭০ টাকা মজুরিতে আমাদের কাজ করতে হয়। আমরা কি ভিনগ্রহ থেকে আসছি? কেন আমাদের প্রতি এ বৈষম্য করা হচ্ছে?’
গাজীপুর থেকে আশা গার্মেন্টসকর্মী রোজিনা আক্তার বলেন, ‘করোনার সময় আমরাই দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছি। তাহলে কেন আমাদের মজুরি বাড়ানোর জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে?’
বান্দরবান থেকে আসা হেডম্যান জয়া ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা যখন নারী নির্যাতনের কোনো বিষয় নিয়ে বসি, তখন প্রশাসনের চাপে নারী নির্যাতন ইস্যুগুলোর সমাধান করতে পারি না। প্রশাসনই তো নারী নির্যাতনের পক্ষে কাজ করছে।’
দিনাজপুরের সাদা মারান্ডি বলেন, ‘সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন করার কথা থাকলেও সেটা এখনো করা হয়নি।’
রোজমেরি করবী বলেন, ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করার কথা ছিল। কিন্তু এগুলো করা হলে আমাদের সংখ্যালঘুদের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যেতো।’
এ ছাড়া মাদকের বিস্তার ও মাদক ব্যবসায় রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতা, ঘুষ ছাড়া সরকারি দপ্তরে কোনো কাজ করতে না পারা এবং পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করার কথাও বলেন অনেকে।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আজ আমরা আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগছি। আমাদের এখনো আদিবাসী বলা হবে নাকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতি নাকি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বলা হবে তা নিয়ে বিতর্ক করা হয়। এটা বড়ই কষ্টের, বড়ই দুঃখের।’
বিশেষজ্ঞ বক্তাদের মধ্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দরকার। এ স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদ করলে, ফেসবুকে কিছু লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আর সরকারের অস্বীকার করার প্রবণতা আছে। ঋণ খেলাপিদের সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।’
শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা আইন করে কেন গাইড বই বন্ধ করা হচ্ছে না? হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও কোচিং সেন্টার ও কোচিং বাণিজ্য কেন বন্ধ করা হচ্ছে না? এ জন্য সরকারের পাশাপাশি আমাদের জনগণের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। দেশের সব গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘রাজনীতি সুস্থ থাকলে মানুষ সুস্থ থাকে, দেশ সুস্থ থাকে। দেখি আজ মাদক কারবারি, নদী খেকো, বন খেকো এরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতিকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এখন সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি জোর দেয় কারণ বড় বড় প্রজেক্ট থেকে বিশাল টাকা লুটপাট করা যায়। এই লুটপাটের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আর এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়, কারণ সেখান থেকে তো বেশি লুটপাট করা যায় না।’
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ বলেন, ‘রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করতে হবে। এটা ছাড়া দেশের স্থিতিশীলতা আসবে না।’
অর্থনীতিবিদ ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেসব পরিবর্তনের কথা বলছি সে জন্য সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। রাজনৈতিক প্রান্তিকতা জরুরি। নীতি ও সেবার জায়গায় জনগণের অন্তর্ভুক্তির জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে। এই আজকের যেসব কণ্ঠস্বর উঠে এসেছে এসব কণ্ঠস্বরকে কীভাবে শক্তিশালী করব সেটি খুঁজে বের করতে হবে।’
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের এসডিজি স্থানীয়করণ করতে হবে। তৃণমূলের মানুষগুলো যাতে ক্ষমতায়িত সেই চেষ্টা করতে হবে।’
এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘কিছু সমস্যা স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে। সবকিছু সরকার হাত ধরে এগিয়ে দেবে না। আমাদের নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’
নাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আজকে কি আমাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে? দেশ, ক্ষমতা এগুলো তো চলে গেছে কালো টাকার মালিকদের কাছে। একটা ছোট কাজের জন্য স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম, বলল দুই হাজার টাকা না দিলে আপনার কাজ হবে না। জেলা প্রশাসকের হাতে এত ক্ষমতা কেন, এই ক্ষমতা কমিয়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে।’
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন—অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, সাবেক বিচারপতি নিজামুল, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও সিপিডির সহযোগী গবেষক ফাবিয়া বুশরা খান। এই জন শুনানিতে সহযোগিতা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, হিকস বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ওয়াটার এআইডি বাংলাদেশ, ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বাংলাদেশ।
সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল—অ্যাকশন এইড, আর্টিকেল নাইনটিন, বন্ধু, ব্লাস্ট, কারিতাস বাংলাদেশ, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট, ক্রিশ্চিয়ান এইড, ডাক দিয়ে যাই, নাগরিক উদ্যোগ, কাপেং ফাউন্ডেশন, সলিডারিটি, দ্য হাঙ্গার প্রোজেক্ট, ওয়ার্ল্ড ভিশন, এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম পভার্টি-এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশন, বাংলাদেশ ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম, ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ও ঘাসফুল।
পনেরো বছর ধরে যদি একই সমস্যা থাকে তাহলে বুঝতে হবে সিস্টেমে সমস্যা আছে। এই সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। তবে এসব বিষয়ে মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
আজ শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জন শুনানি: জাতীয় উন্নয়ন এবং স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘দেশে যে গত কয়েক বছরে উন্নতি হয়েছে সেটি অস্বীকার করা যাবে না। তবে যেসব বিষয় বা বক্তব্য মাঠ থেকে উঠে আসছে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। আদিবাসীদের স্বীকৃতি ও তাঁদের ভূমির সমস্যা, গার্মেন্টস কর্মীদের সমস্যা, প্রান্তিক মানুষদের সমস্যা—এগুলো প্রায় গত ১৫ বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায় থেকে মন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত যোগাযোগ, সমস্যা নির্ধারণ ও তা সমাধান করার ঘাটতি রয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
প্রখ্যাত এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘এই যে আজকে আদিবাসীরা ও সংখ্যালঘু তাঁদের সমস্যার কথা বললেন, তা সমাধানে কেন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না এই উত্তর কিন্তু আজকে উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছ থেকেও পাওয়া যায়নি। যদি ১৫ বছর ধরে একই সমস্যা থাকে তাহলে বুঝতে হবে সিস্টেমে সমস্যা আছে। এই সিস্টেম পরিবর্তনের উদ্যোগ মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা ও সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না। তাঁদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে।’
এই বক্তব্যের জবাবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেখুন, এখনো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে পুরোনো অনেক আইনের পরিবর্তন হচ্ছে। আমরাও প্রয়োজনে পুরোনো আইনের পরিবর্তন করব।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি আমাদেরও ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, আবার সফলতাও আছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের পর পরবর্তী ২১ বছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র ৫২ ডলার। গত ১৪ বছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ১০০ ডলারের বেশি। এতেই বোঝা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কতটা হয়েছে। তবে এটা ঠিক উন্নয়নের ধারায় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। নইলে শিল্পায়ন হবে না।'
মন্ত্রী আরও বলেন, `আজকে যেভাবে সবাই খোলামেলাভাবে মতামত দিলেন আগে কেউ এভাবে মতামত দিতে পারত না। তবে এখনো সমস্যা রয়েছে এটা ঠিকই। দেশ পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত হয়ে গেছে সেটাও বলব না। তবে দেশকে দুষ্টুমুক্ত করতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশপ্রেমের জন্য কোনো ট্যাবলেট নেই। যে দুর্নীতি করে তার কোনো দলীয় পরিচয় নেই। আমরা এসব সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং যাব।’
জন মতামত পর্বে কথা বলেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রথম ব্যাংকার সঞ্জীবনী বলেন, ‘আজকে আমি বাংলাদেশের প্রথম হিজড়া ব্যাংকার। এই পর্যায়ে আসতে যে আমাকে কতটা কষ্ট, কতটা লড়াই করতে হয়েছে সেটা আমি জানি। আমার মতো অন্য হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডারের মানুষ সমাজে যাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে জন্য আরও সহজ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।’
ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল বলেন, ‘এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ১০০–এর মতো সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু ৩০০–এর বেশি সেনাক্যাম্প এখনো রয়ে গেছে। এগুলো প্রত্যাহার করা দরকার। আমাদের জুম্ম জনগণদের ভূমি এখনো দখল করা হচ্ছে, নানা রকম নিপীড়ন করা হচ্ছে। এগুলো কবে বন্ধ হবে?’
চা শ্রমিক রাহেলা আক্তার বলেন, ‘এখন ১৭০ টাকা মজুরিতে আমাদের কাজ করতে হয়। আমরা কি ভিনগ্রহ থেকে আসছি? কেন আমাদের প্রতি এ বৈষম্য করা হচ্ছে?’
গাজীপুর থেকে আশা গার্মেন্টসকর্মী রোজিনা আক্তার বলেন, ‘করোনার সময় আমরাই দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছি। তাহলে কেন আমাদের মজুরি বাড়ানোর জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে?’
বান্দরবান থেকে আসা হেডম্যান জয়া ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা যখন নারী নির্যাতনের কোনো বিষয় নিয়ে বসি, তখন প্রশাসনের চাপে নারী নির্যাতন ইস্যুগুলোর সমাধান করতে পারি না। প্রশাসনই তো নারী নির্যাতনের পক্ষে কাজ করছে।’
দিনাজপুরের সাদা মারান্ডি বলেন, ‘সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন করার কথা থাকলেও সেটা এখনো করা হয়নি।’
রোজমেরি করবী বলেন, ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করার কথা ছিল। কিন্তু এগুলো করা হলে আমাদের সংখ্যালঘুদের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যেতো।’
এ ছাড়া মাদকের বিস্তার ও মাদক ব্যবসায় রাজনীতিবিদদের সংশ্লিষ্টতা, ঘুষ ছাড়া সরকারি দপ্তরে কোনো কাজ করতে না পারা এবং পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করার কথাও বলেন অনেকে।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আজ আমরা আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগছি। আমাদের এখনো আদিবাসী বলা হবে নাকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতি নাকি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বলা হবে তা নিয়ে বিতর্ক করা হয়। এটা বড়ই কষ্টের, বড়ই দুঃখের।’
বিশেষজ্ঞ বক্তাদের মধ্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দরকার। এ স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদ করলে, ফেসবুকে কিছু লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আর সরকারের অস্বীকার করার প্রবণতা আছে। ঋণ খেলাপিদের সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।’
শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা আইন করে কেন গাইড বই বন্ধ করা হচ্ছে না? হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও কোচিং সেন্টার ও কোচিং বাণিজ্য কেন বন্ধ করা হচ্ছে না? এ জন্য সরকারের পাশাপাশি আমাদের জনগণের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। দেশের সব গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘রাজনীতি সুস্থ থাকলে মানুষ সুস্থ থাকে, দেশ সুস্থ থাকে। দেখি আজ মাদক কারবারি, নদী খেকো, বন খেকো এরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতিকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এখন সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি জোর দেয় কারণ বড় বড় প্রজেক্ট থেকে বিশাল টাকা লুটপাট করা যায়। এই লুটপাটের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আর এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়, কারণ সেখান থেকে তো বেশি লুটপাট করা যায় না।’
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ বলেন, ‘রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করতে হবে। এটা ছাড়া দেশের স্থিতিশীলতা আসবে না।’
অর্থনীতিবিদ ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেসব পরিবর্তনের কথা বলছি সে জন্য সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। রাজনৈতিক প্রান্তিকতা জরুরি। নীতি ও সেবার জায়গায় জনগণের অন্তর্ভুক্তির জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে। এই আজকের যেসব কণ্ঠস্বর উঠে এসেছে এসব কণ্ঠস্বরকে কীভাবে শক্তিশালী করব সেটি খুঁজে বের করতে হবে।’
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের এসডিজি স্থানীয়করণ করতে হবে। তৃণমূলের মানুষগুলো যাতে ক্ষমতায়িত সেই চেষ্টা করতে হবে।’
এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘কিছু সমস্যা স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে। সবকিছু সরকার হাত ধরে এগিয়ে দেবে না। আমাদের নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’
নাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আজকে কি আমাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে? দেশ, ক্ষমতা এগুলো তো চলে গেছে কালো টাকার মালিকদের কাছে। একটা ছোট কাজের জন্য স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম, বলল দুই হাজার টাকা না দিলে আপনার কাজ হবে না। জেলা প্রশাসকের হাতে এত ক্ষমতা কেন, এই ক্ষমতা কমিয়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে।’
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন—অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, সাবেক বিচারপতি নিজামুল, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও সিপিডির সহযোগী গবেষক ফাবিয়া বুশরা খান। এই জন শুনানিতে সহযোগিতা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, হিকস বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ওয়াটার এআইডি বাংলাদেশ, ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বাংলাদেশ।
সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল—অ্যাকশন এইড, আর্টিকেল নাইনটিন, বন্ধু, ব্লাস্ট, কারিতাস বাংলাদেশ, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট, ক্রিশ্চিয়ান এইড, ডাক দিয়ে যাই, নাগরিক উদ্যোগ, কাপেং ফাউন্ডেশন, সলিডারিটি, দ্য হাঙ্গার প্রোজেক্ট, ওয়ার্ল্ড ভিশন, এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম পভার্টি-এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশন, বাংলাদেশ ইন্ডিজেনাস পিপলস ফোরাম, ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ও ঘাসফুল।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে থাকবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের
৬ ঘণ্টা আগেকিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার স্বত্ব প্রদান এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
৭ ঘণ্টা আগেছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এর তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। মূল্যায়নে তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী স
৮ ঘণ্টা আগেবিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য অনেকে নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় সেসব তথ্যই এখন তাঁদের জন্য ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গ
৮ ঘণ্টা আগে