কামরুল হাসান, ঢাকা
কারওয়ান বাজারে প্রায়ই দেখতাম, সোনারগাঁওয়ের চার মাথায় দাঁড়িয়ে গাড়িচালকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল। তাঁর হাত প্রসারিত। সবাই দেখতেন, তিনি ‘পারানির কড়ি’ আদায় করেছেন, কিন্তু কেউ কিছু বলছেন না। বলে হবেই-বা কী! এ দৃশ্য তো খুবই স্বাভাবিক, চন্দ্র-সূর্যের মতো।
কিন্তু ওই মোড়ে দাঁড়িয়ে কেউ যদি ভালোবেসে চুমু খায় আলগোছে, তাহলে? সবাই বলবে, ছি ছি, একি নোংরামি! সবার সামনে ঘুষ খাওয়া যায়, কিন্তু ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় না।
ভালোবাসা যে এ দেশে অন্ত্যজ, তা বেনজীর নামের মেয়েটিও জানতেন। তার পরও কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ভালোবাসার মানুষকে চুমু খেলেন, তা-ও থানার ভেতরে পুলিশের নাকের ডগায়। মুহূর্তে হইচই পড়ে গেল। ওসি দৌড়ে এসে বললেন, ‘এসব কী হচ্ছে?’ বেনজীর তখন প্রাচীরের মতো সুদৃঢ়, বললেন, ‘ভালোবাসার প্রমাণ দিলাম।’
যে লোকটির জন্য কিশোরী মেয়েটি ‘উজাড় যমুনা’, মনে হলো তাঁকে একটু দেখে আসি। তিনি হাজতের দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আছেন। গরাদের শিকের ওপারের দেয়ালে তাঁর ঝাঁকড়া চুলের আলোকছটা। থানার বাইরে তখন তুমুল চিৎকার—গুরু গুরু। জনতা তাদের ‘গুরু’ ফারুক মাহফুজ আনাম জেমসকে ছাড়িয়ে নিতে এসেছে। জেমস তখন হার্টথ্রব রকস্টার।
বেনজীরকে প্রথম দেখায় আমার কিশোরী বলে ভুল হয়েছিল। হালকা-পাতলা গড়নের মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছিল, স্কুলের গণ্ডিই হয়তো পেরোয়নি। তবে আমি ভুল করলেও ভুল করেননি তাঁর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বাবা ইকবাল সাজ্জাদ। তিনি ঠিকই অপহরণ মামলা ঠুকে দেন উত্তরা থানায়। এরপর জেমস আর বেনজীর আমেরিকা থেকে ঢাকায় এলে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ তাঁদের পাকড়াও করে নিয়ে আসে।
খবর পেয়ে উত্তরা থানায় যেতে যেতে আমার একটু দেরি হয়ে যায়। গিয়ে দেখি, গেটের সামনে শত শত লোকের ভিড়। পুলিশ থানার ফটক বন্ধ করে দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশও আনা হয়েছে। নিজের পরিচয় দিয়ে কোনোভাবে ভেতরে ঢুকেই দেখি, সব পুলিশের মুখে সেই চুম্বনের গল্প। জেমসের খোঁজ করতে গিয়ে দেখি, তাঁকে হাজতে রাখা হয়েছে। আর বেনজীর থানার বিভিন্ন রুমে ঘুরছেন, কিন্তু থানা থেকে বেরোতে পারছেন না। বেনজীরের বাবার লোকেরা থানার ভেতরে বেশ তৎপর। মনে হলো, পুলিশ তাঁদের সহযোগিতা করছে।
ডিউটি অফিসারের সামনের টেবিলে এফআইআরের মোটা খাতা। দুজন সাংবাদিক খুব মনোযোগসহকারে সেই খাতা থেকে এফআইআরের বিবরণ টুকে নিচ্ছেন। খাতাটা হাতে নিয়ে দেখি, মামলা হয়েছে ২৩ অক্টোবর (২০০২)। জেমস ছাড়াও আসামি করা হয়েছে গীতিকার বিশু শিকদার এবং জেমসের বাসার গৃহকর্মী কামরুল ইসলামকে। ইকবাল সাজ্জাদ নিজেই মামলাটি করেছেন। বলেছেন, তাঁর ও লেভেল পড়ুয়া মেয়ে বেনজীর সাজ্জাদ একাকে অপহরণ করা হয়েছে। ২০০২ সালের ২৮ জুন সন্ধ্যায় মেয়েটি কোচিং থেকে বাসায় ফিরছিলেন। পথে উত্তরা হাইস্কুলের পাশ থেকে জেমস, তাঁর বন্ধু বিশু ও গৃহকর্মী মিলে তাঁকে অপহরণ করেন। এরপর তাঁকে নিয়ে আমেরিকায় চলে যান। তিনি বিদেশে থাকায় তখন মামলা করতে পারেননি বলে উল্লেখ করেন ইকবাল।
ডিউটি অফিসার আমাকে বললেন, জেমস ও বেনজীর ২৪ অক্টোবর (২০০২) ঢাকায় ফিরবেন, সে কথা জানতেন ইকবাল সাজ্জাদ। সেভাবেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ তাঁদের থানায় নিয়ে আসে।
থানার ভেতরে বেনজীর খুবই অস্থির, কোথাও দুদণ্ড থামছেন না। তাঁর সঙ্গে কোনো কথাও বলা যাচ্ছে না। একবার বাগে পেয়ে জানতে চাইলাম, জেমসের সঙ্গে আপনার পরিচয় কীভাবে? বললেন, ২০০০ সালে পরিচয়, এরপর আমেরিকায় গিয়ে বিয়ে করেন। জেমস বিবাহিত, তাঁর স্ত্রী ও সন্তান আছে, সে কথা জানেন কি না, জিজ্ঞাসা করতেই বেনজীর বললেন, আমাকে বিয়ে করার আগে আমেরিকা থেকে আগের বউকে সে ডিভোর্স দেয় পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে। বেনজীর বারবার অনুরোধ করলেন তাঁর পক্ষে থাকতে, যেন তাঁর বাবা তাঁকে থানা থেকে বাড়ি নিয়ে যেতে না পারেন।
বেলা বাড়তে শুরু করেছে। চারদিকে খবর রটে গেছে, গায়ক জেমসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। উত্তরা থানার সামনে ভিড়ও বাড়ছে। আদালত থেকে ইতিমধ্যে গাড়ি এসে গেছে আসামি নেওয়ার জন্য। পুলিশ জেমসকে বেশিক্ষণ আর রাখতে চাইছে না। এরপর দুজনকেই পাঠানো হয় আদালতে। জেমসকে নিয়ে আদালতের গাড়ি যখন থানা ছাড়ল, তখন বাইরে দাঁড়ানো অসংখ্য ভক্তের চোখ ছিল সিক্ত।
আদালতে গিয়েও বেনজীর তাঁর বাবার সঙ্গে বাসায় যেতে অস্বীকৃতি জানালেন। বিচারক জেমসকে কারাগারে আর বেনজীরকে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানোর আদেশ দিলেন।
থানা থেকে জেমসকে যখন আদালতে নেওয়া হচ্ছিল, তখন জনতার সারিতে ছিলেন জেমসের আগের স্ত্রী কানিজ রাবেয়া রথির ভাইও। অনেক অনুনয় করার পর তিনি কথা বলতে রাজি হলেন। বললেন, তাঁর বোন রথির সঙ্গে জেমসের পরিচয় শাহীন কলেজের কনসার্টে, ১৯৯১ সালে। জেমসের তখন অত নামডাক হয়নি। রথি আনন্দ বিচিত্রার ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতার রানারআপ। সবার অমতে তাঁদের বিয়ে হয়। এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। কিন্তু মেয়েটিকে জেমস কখনো কোলে নিতেন না। বলতেন, মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই। ২০০০ সালের দিকে জেমস মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। ওই সময় বেনজীরের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। বেনজীর ফোন করে রথিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এরপর একদিন ডাকযোগে ডিভোর্সের চিঠি পান রথি। তার আগেই দুই সন্তান নিয়ে তিনি উত্তরায় বাবার বাসায় চলে আসেন।
গ্রেপ্তারের পর সাত দিন কারাবাস করেন জেমস। বেনজীরও এই কদিন নিরাপত্তা হেফাজতে থাকেন। ৩০ এপ্রিল তাঁদের আদালতে আনা হয়। বেনজীরের বাবা মেয়েকে নেওয়ার জন্য এমন কোনো চেষ্টা নেই যে করেননি। কিন্তু বেনজীর অনড়। তিনি বাবার সঙ্গে যেতে অস্বীকৃতি জানান। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর জবানবন্দি শোনেন, বিয়ের কাগজপত্র দেখেন। আদালতে নিজ জিম্মায় বেনজীরকে চলে যেতে আদেশ দেন। আর জেমসকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। আদালত যখন এই আদেশ দিচ্ছিলেন, তখন দেশের সংগীতশিল্পীতে ঠাসা সেখানে। এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু, এন্ড্রু কিশোর, তপন চৌধুরী, সঞ্জীব চৌধুরী, হাসান, বাপ্পা মজুমদার, বেবী নাজনীনসহ অনেকে। আদালত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁরা ওঠেন উত্তরার বাসায়। পরে বেনজীরের একটি কন্যাসন্তান হয়।
অনেক দিন পর বেনজীরের খোঁজ নিতে কয়েকজন তারকা সাংবাদিককে ফোন দিলাম। বেনজীরের ব্যক্তিগত নম্বরেও ফোন দিলাম, ধরলেন না। সাংবাদিকেরা বললেন, বেনজীরের সঙ্গে জেমসের কোনো সম্পর্ক নেই। বেনজীর তাঁর মেয়েকে নিয়ে আমেরিকায় চলে গেছেন। সেখানেই থিতু হয়েছেন।
আমার চোখের সামনে ভাসছিল তখন আদালত প্রাঙ্গণে বেনজীরের সেই আকুলতা। ভর মজলিসে বারবার বলছিলেন, আমি জেমসকে ছাড়া বাঁচব না, আমি জেমসকে ভালোবাসি। অথচ বেনজীর আজ অনেক দূরে, তবু ঠিকই বেঁচে আছেন। মানুষ আসলে এভাবেই বাঁচে। কিন্তু বেনজীরকে ছেড়ে জেমস কি ভালো আছেন? সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেমস বলেছিলেন, ‘আমার জীবন কখনো মসৃণ ছিল না। জীবনের যে লড়াই, সংগ্রাম; হয়তো সেটাই আমার গানে ফুটে ওঠে।...এসো বুকের গহীনে, বাড়ীর শিথানে/ এসো পথভোলা সেই নদীর কিনারে…সিনায় সিনায় লাগে টান।’
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
কারওয়ান বাজারে প্রায়ই দেখতাম, সোনারগাঁওয়ের চার মাথায় দাঁড়িয়ে গাড়িচালকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল। তাঁর হাত প্রসারিত। সবাই দেখতেন, তিনি ‘পারানির কড়ি’ আদায় করেছেন, কিন্তু কেউ কিছু বলছেন না। বলে হবেই-বা কী! এ দৃশ্য তো খুবই স্বাভাবিক, চন্দ্র-সূর্যের মতো।
কিন্তু ওই মোড়ে দাঁড়িয়ে কেউ যদি ভালোবেসে চুমু খায় আলগোছে, তাহলে? সবাই বলবে, ছি ছি, একি নোংরামি! সবার সামনে ঘুষ খাওয়া যায়, কিন্তু ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় না।
ভালোবাসা যে এ দেশে অন্ত্যজ, তা বেনজীর নামের মেয়েটিও জানতেন। তার পরও কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ভালোবাসার মানুষকে চুমু খেলেন, তা-ও থানার ভেতরে পুলিশের নাকের ডগায়। মুহূর্তে হইচই পড়ে গেল। ওসি দৌড়ে এসে বললেন, ‘এসব কী হচ্ছে?’ বেনজীর তখন প্রাচীরের মতো সুদৃঢ়, বললেন, ‘ভালোবাসার প্রমাণ দিলাম।’
যে লোকটির জন্য কিশোরী মেয়েটি ‘উজাড় যমুনা’, মনে হলো তাঁকে একটু দেখে আসি। তিনি হাজতের দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আছেন। গরাদের শিকের ওপারের দেয়ালে তাঁর ঝাঁকড়া চুলের আলোকছটা। থানার বাইরে তখন তুমুল চিৎকার—গুরু গুরু। জনতা তাদের ‘গুরু’ ফারুক মাহফুজ আনাম জেমসকে ছাড়িয়ে নিতে এসেছে। জেমস তখন হার্টথ্রব রকস্টার।
বেনজীরকে প্রথম দেখায় আমার কিশোরী বলে ভুল হয়েছিল। হালকা-পাতলা গড়নের মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছিল, স্কুলের গণ্ডিই হয়তো পেরোয়নি। তবে আমি ভুল করলেও ভুল করেননি তাঁর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বাবা ইকবাল সাজ্জাদ। তিনি ঠিকই অপহরণ মামলা ঠুকে দেন উত্তরা থানায়। এরপর জেমস আর বেনজীর আমেরিকা থেকে ঢাকায় এলে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ তাঁদের পাকড়াও করে নিয়ে আসে।
খবর পেয়ে উত্তরা থানায় যেতে যেতে আমার একটু দেরি হয়ে যায়। গিয়ে দেখি, গেটের সামনে শত শত লোকের ভিড়। পুলিশ থানার ফটক বন্ধ করে দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশও আনা হয়েছে। নিজের পরিচয় দিয়ে কোনোভাবে ভেতরে ঢুকেই দেখি, সব পুলিশের মুখে সেই চুম্বনের গল্প। জেমসের খোঁজ করতে গিয়ে দেখি, তাঁকে হাজতে রাখা হয়েছে। আর বেনজীর থানার বিভিন্ন রুমে ঘুরছেন, কিন্তু থানা থেকে বেরোতে পারছেন না। বেনজীরের বাবার লোকেরা থানার ভেতরে বেশ তৎপর। মনে হলো, পুলিশ তাঁদের সহযোগিতা করছে।
ডিউটি অফিসারের সামনের টেবিলে এফআইআরের মোটা খাতা। দুজন সাংবাদিক খুব মনোযোগসহকারে সেই খাতা থেকে এফআইআরের বিবরণ টুকে নিচ্ছেন। খাতাটা হাতে নিয়ে দেখি, মামলা হয়েছে ২৩ অক্টোবর (২০০২)। জেমস ছাড়াও আসামি করা হয়েছে গীতিকার বিশু শিকদার এবং জেমসের বাসার গৃহকর্মী কামরুল ইসলামকে। ইকবাল সাজ্জাদ নিজেই মামলাটি করেছেন। বলেছেন, তাঁর ও লেভেল পড়ুয়া মেয়ে বেনজীর সাজ্জাদ একাকে অপহরণ করা হয়েছে। ২০০২ সালের ২৮ জুন সন্ধ্যায় মেয়েটি কোচিং থেকে বাসায় ফিরছিলেন। পথে উত্তরা হাইস্কুলের পাশ থেকে জেমস, তাঁর বন্ধু বিশু ও গৃহকর্মী মিলে তাঁকে অপহরণ করেন। এরপর তাঁকে নিয়ে আমেরিকায় চলে যান। তিনি বিদেশে থাকায় তখন মামলা করতে পারেননি বলে উল্লেখ করেন ইকবাল।
ডিউটি অফিসার আমাকে বললেন, জেমস ও বেনজীর ২৪ অক্টোবর (২০০২) ঢাকায় ফিরবেন, সে কথা জানতেন ইকবাল সাজ্জাদ। সেভাবেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ তাঁদের থানায় নিয়ে আসে।
থানার ভেতরে বেনজীর খুবই অস্থির, কোথাও দুদণ্ড থামছেন না। তাঁর সঙ্গে কোনো কথাও বলা যাচ্ছে না। একবার বাগে পেয়ে জানতে চাইলাম, জেমসের সঙ্গে আপনার পরিচয় কীভাবে? বললেন, ২০০০ সালে পরিচয়, এরপর আমেরিকায় গিয়ে বিয়ে করেন। জেমস বিবাহিত, তাঁর স্ত্রী ও সন্তান আছে, সে কথা জানেন কি না, জিজ্ঞাসা করতেই বেনজীর বললেন, আমাকে বিয়ে করার আগে আমেরিকা থেকে আগের বউকে সে ডিভোর্স দেয় পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে। বেনজীর বারবার অনুরোধ করলেন তাঁর পক্ষে থাকতে, যেন তাঁর বাবা তাঁকে থানা থেকে বাড়ি নিয়ে যেতে না পারেন।
বেলা বাড়তে শুরু করেছে। চারদিকে খবর রটে গেছে, গায়ক জেমসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। উত্তরা থানার সামনে ভিড়ও বাড়ছে। আদালত থেকে ইতিমধ্যে গাড়ি এসে গেছে আসামি নেওয়ার জন্য। পুলিশ জেমসকে বেশিক্ষণ আর রাখতে চাইছে না। এরপর দুজনকেই পাঠানো হয় আদালতে। জেমসকে নিয়ে আদালতের গাড়ি যখন থানা ছাড়ল, তখন বাইরে দাঁড়ানো অসংখ্য ভক্তের চোখ ছিল সিক্ত।
আদালতে গিয়েও বেনজীর তাঁর বাবার সঙ্গে বাসায় যেতে অস্বীকৃতি জানালেন। বিচারক জেমসকে কারাগারে আর বেনজীরকে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানোর আদেশ দিলেন।
থানা থেকে জেমসকে যখন আদালতে নেওয়া হচ্ছিল, তখন জনতার সারিতে ছিলেন জেমসের আগের স্ত্রী কানিজ রাবেয়া রথির ভাইও। অনেক অনুনয় করার পর তিনি কথা বলতে রাজি হলেন। বললেন, তাঁর বোন রথির সঙ্গে জেমসের পরিচয় শাহীন কলেজের কনসার্টে, ১৯৯১ সালে। জেমসের তখন অত নামডাক হয়নি। রথি আনন্দ বিচিত্রার ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতার রানারআপ। সবার অমতে তাঁদের বিয়ে হয়। এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। কিন্তু মেয়েটিকে জেমস কখনো কোলে নিতেন না। বলতেন, মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই। ২০০০ সালের দিকে জেমস মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। ওই সময় বেনজীরের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। বেনজীর ফোন করে রথিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এরপর একদিন ডাকযোগে ডিভোর্সের চিঠি পান রথি। তার আগেই দুই সন্তান নিয়ে তিনি উত্তরায় বাবার বাসায় চলে আসেন।
গ্রেপ্তারের পর সাত দিন কারাবাস করেন জেমস। বেনজীরও এই কদিন নিরাপত্তা হেফাজতে থাকেন। ৩০ এপ্রিল তাঁদের আদালতে আনা হয়। বেনজীরের বাবা মেয়েকে নেওয়ার জন্য এমন কোনো চেষ্টা নেই যে করেননি। কিন্তু বেনজীর অনড়। তিনি বাবার সঙ্গে যেতে অস্বীকৃতি জানান। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর জবানবন্দি শোনেন, বিয়ের কাগজপত্র দেখেন। আদালতে নিজ জিম্মায় বেনজীরকে চলে যেতে আদেশ দেন। আর জেমসকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। আদালত যখন এই আদেশ দিচ্ছিলেন, তখন দেশের সংগীতশিল্পীতে ঠাসা সেখানে। এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু, এন্ড্রু কিশোর, তপন চৌধুরী, সঞ্জীব চৌধুরী, হাসান, বাপ্পা মজুমদার, বেবী নাজনীনসহ অনেকে। আদালত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁরা ওঠেন উত্তরার বাসায়। পরে বেনজীরের একটি কন্যাসন্তান হয়।
অনেক দিন পর বেনজীরের খোঁজ নিতে কয়েকজন তারকা সাংবাদিককে ফোন দিলাম। বেনজীরের ব্যক্তিগত নম্বরেও ফোন দিলাম, ধরলেন না। সাংবাদিকেরা বললেন, বেনজীরের সঙ্গে জেমসের কোনো সম্পর্ক নেই। বেনজীর তাঁর মেয়েকে নিয়ে আমেরিকায় চলে গেছেন। সেখানেই থিতু হয়েছেন।
আমার চোখের সামনে ভাসছিল তখন আদালত প্রাঙ্গণে বেনজীরের সেই আকুলতা। ভর মজলিসে বারবার বলছিলেন, আমি জেমসকে ছাড়া বাঁচব না, আমি জেমসকে ভালোবাসি। অথচ বেনজীর আজ অনেক দূরে, তবু ঠিকই বেঁচে আছেন। মানুষ আসলে এভাবেই বাঁচে। কিন্তু বেনজীরকে ছেড়ে জেমস কি ভালো আছেন? সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেমস বলেছিলেন, ‘আমার জীবন কখনো মসৃণ ছিল না। জীবনের যে লড়াই, সংগ্রাম; হয়তো সেটাই আমার গানে ফুটে ওঠে।...এসো বুকের গহীনে, বাড়ীর শিথানে/ এসো পথভোলা সেই নদীর কিনারে…সিনায় সিনায় লাগে টান।’
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে থাকবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের
৪ মিনিট আগেকিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার স্বত্ব প্রদান এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
২ ঘণ্টা আগেছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এর তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। মূল্যায়নে তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী স
২ ঘণ্টা আগেবিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য অনেকে নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় সেসব তথ্যই এখন তাঁদের জন্য ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গ
৩ ঘণ্টা আগে