শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নির্বাচন কমিশন, তথ্য কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ কমিশনগুলোর বেশির ভাগ পদেই আছেন সাবেক আমলা। সংবিধান ও আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত এসব কমিশনে অন্য শ্রেণি-পেশার মানুষের নিয়োগের সুযোগ থাকলেও প্রাধান্য পেয়েছেন আমলারা। এত দিন এসব নিয়ে কোনো আলোচনা না হলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বদলে আমলাদের জেলার দায়িত্ব দেওয়ার পর রাজনৈতিক নেতারা আমলাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, কমিশনগুলোতে আমলানির্ভরতা বাড়াতে গিয়ে যাঁদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাঁদেরও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে তাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। আর সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলছেন, কমিশনগুলোতে শুধু আমলা নিয়োগ না দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে যুক্ত করা উচিত। এতে ভালো ফল হবে।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে গত ১ এপ্রিল একটি অফিস আদেশ জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মন্তব্য না করলেও অনেক সাংসদ তা ভালোভাবে নেননি। গত ২৮ জুন জাতীয় সংসদে এ নিয়ে সমালোচনা করেন বঙ্গবন্ধুর সহচর ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এতে মানুষ মনে করে আমরা যা দিই, এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেন।’ তাঁর সঙ্গে যোগ দেন জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করছেন। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। আমরা রাজনীতিবিদেরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য।’ তবে তাঁদের এই বক্তব্যে ভিন্নমত পোষণ করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি জেলা পর্যায়ে সচিবদের দায়িত্ব দেওয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করেন।
রাজনৈতিকে নেতাদের এসব বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সরকারের দপ্তরগুলোতে এখন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরই আধিপত্য। যেসব কমিশন ও সরকারি দপ্তরে সাবেক আমলাদের বাইরে অন্যদেরও নিয়োগের সুযোগ রয়েছে, সেখানেও আধিপত্য রয়েছে সাবেক আমলাদের। এসব কমিশনে ও সরকারি দপ্তরে সাবেক আমলাদের নিয়োগের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য তো পিএসসি না। সেখান থেকে আরও অনেক ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে পিএসসিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক থাকা উচিত।
সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসিতে বর্তমানে একজন চেয়ারম্যান ও ১৪ জন সদস্য আছেন। কমিশনের ১৫ সদস্যের মধ্যে পাঁচজন সাবেক সচিব, তিনজন সাবেক অতিরিক্ত সচিব। এ ছাড়া পররাষ্ট্র ক্যাডারের সাবেক এক সাবেক কর্মকর্তা, একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, দুজন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সরকারি প্রকৌশলী সদস্যের দায়িত্বে আছেন। সাবেক সচিব মো. সোহরাব হোসাইন পিএসসি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাবেক সচিব মো. শাহজাহান আলী মোল্লা, আবদুল মান্নান, এস এম গোলাম ফারুক এবং ও এন সিদ্দিকা খানম। সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক, নূরজাহান বেগম, কাজী সালাহ্উদ্দিন আকবর পিএসসির সদস্য।
এর বাইরে পররাষ্ট্র ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা এম শামীম আহসান, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বিনয় কৃষ্ণ বালা, শিক্ষা ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা মো. হামিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক উত্তম কুমার সাহা পিএসসির সদস্যের দায়িত্বে আছেন। এ ছাড়া শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নূরজাহান বেগম, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক নির্বাহী পরিচালক জাহিদুর রশিদ কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পিএসসির ১৫ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই সাবেক আমলা। অর্থাৎ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ ৬০ শতাংশ পদেই আমলারা নিয়োগ পেয়েছেন।
সংবিধান অনুসারে পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। যাঁরা ২০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে সরকারি চাকরি করেছেন, তাঁদের মধ্য থেকে কমিশনের অর্ধেক সদস্য (অর্ধেকের কম না) নিয়োগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পিএসসির গত কয়েকটি কমিশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কমিশনে দিনদিন আমলাদের সংখ্যা বাড়ছে।
সাবেক সচিব কে এম নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে আছেন। অন্য দুই নির্বাচন কমিশনারের একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, আরেকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। সংবিধান অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তবে কারা ওই পদে নিয়োগ পাওয়ায় যোগ্য সে বিষয়ে সংবিধানে কিছু বলা নেই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য সংলাপের আয়োজন করেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। সংবিধান ও আইনে কিছু বলা না থাকলেও এরপর থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি করে সরকার।
সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই নির্বাচন কমিশন গঠনে যাঁদের নিয়ে সার্চ কমিটি করা হয়েছিল, তাঁরাও কিন্তু ভালো সুপারিশ দিতে পারেননি। কারণ বর্তমান কমিশন নিয়ে বিতর্ক আছে।
তথ্য কমিশনের তিনজন কমিশনারের সব পদেই বর্তমানে সাবেক সচিবদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক সচিব মরতুজা আহমদ প্রধান তথ্য কমিশনার এবং সাবেক সচিব সুরাইয়া বেগম ও আবদুল মালেক তথ্য কমিশনারের দায়িত্বে আছেন।
তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী, প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারদের নিয়োগে একটি বাছাই কমিটি করতে হয়। আইন, বিচার, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্য, সমাজকর্ম, ব্যবস্থাপনা বা জনপ্রশাসনে ব্যাপক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অধিকারী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া যায়। সরকারের সাবেক আমলাদের বাইরে অন্যরা সেখানে নিয়োগ পাচ্ছেন কম।
সাবেক সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন সাবেক সচিব নাছিমা বেগম। সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ ও নমিতা হালদার মানবাধিকার কমিশনের সদস্য। সাবেক সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসনের দায়িত্বে আছেন।
কমিশনগুলো ছাড়াও সরকারি অন্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের শীর্ষ পদেও এখন সাবেক আমলাদের প্রাধান্য। সাবেক সচিব ফজলে কবির বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সাবেক সচিব সাজ্জাদুল হাসান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান, সাবেক সচিব এন এ এম ছিদ্দিক ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাবেক সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং সাবেক সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন।
এভাবে সরকারি দপ্তরে সাবেক আমলাদের প্রাধান্য দেওয়াকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো একধরনের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে রূপান্তিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় এমন লোক নিয়োগ পাচ্ছেন, প্রতিষ্ঠানের যে মৌলিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তার সঙ্গে তাঁদের কর্মজীবনে অভিজ্ঞতা বা সংশ্লিষ্টতা নেই। অনেক ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েও তাঁরা এ রকম প্রতিষ্ঠানে যোগদান করছেন। একপর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠান অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সাবেক সচিবরা অভিজ্ঞ, তাঁরা অবসরে যাওয়ার পরও ভালোমতো কাজ করতে পারেন। তাঁরা ছাড়া সিভিল সোসাইটিতে হয়তো সে রকম ব্যক্তি উঠে আসছেন না। সে কারণেই আমলারা প্রাধান্য পাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০০৭ সালের পর যত কমিশন গঠিত হয়েছে, সেখানে কমিশনারদের নিয়োগে সার্চ কমিটির বিধান রাখা হয়েছিল। শুধু পিএসসির সদস্য হিসেবে কাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে তা সংবিধানে তা বলা নেই। এ নিয়ে বিস্তারিত বিধি থাকলে এই সমস্যা হতো না। অথচ সরকার চাইলেই এসব প্রতিষ্ঠানে ভালো লোককে নিয়োগ দিতে পারে। একটি কমিশনে সব পেশার মানুষ থাকলে ভারসাম্য থাকে, নিয়োগের ক্ষেত্রে সে বিষয়টিই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নির্বাচন কমিশন, তথ্য কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ কমিশনগুলোর বেশির ভাগ পদেই আছেন সাবেক আমলা। সংবিধান ও আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত এসব কমিশনে অন্য শ্রেণি-পেশার মানুষের নিয়োগের সুযোগ থাকলেও প্রাধান্য পেয়েছেন আমলারা। এত দিন এসব নিয়ে কোনো আলোচনা না হলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বদলে আমলাদের জেলার দায়িত্ব দেওয়ার পর রাজনৈতিক নেতারা আমলাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, কমিশনগুলোতে আমলানির্ভরতা বাড়াতে গিয়ে যাঁদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাঁদেরও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে তাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। আর সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলছেন, কমিশনগুলোতে শুধু আমলা নিয়োগ না দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে যুক্ত করা উচিত। এতে ভালো ফল হবে।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে গত ১ এপ্রিল একটি অফিস আদেশ জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মন্তব্য না করলেও অনেক সাংসদ তা ভালোভাবে নেননি। গত ২৮ জুন জাতীয় সংসদে এ নিয়ে সমালোচনা করেন বঙ্গবন্ধুর সহচর ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এতে মানুষ মনে করে আমরা যা দিই, এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেন।’ তাঁর সঙ্গে যোগ দেন জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করছেন। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। আমরা রাজনীতিবিদেরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য।’ তবে তাঁদের এই বক্তব্যে ভিন্নমত পোষণ করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি জেলা পর্যায়ে সচিবদের দায়িত্ব দেওয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করেন।
রাজনৈতিকে নেতাদের এসব বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সরকারের দপ্তরগুলোতে এখন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরই আধিপত্য। যেসব কমিশন ও সরকারি দপ্তরে সাবেক আমলাদের বাইরে অন্যদেরও নিয়োগের সুযোগ রয়েছে, সেখানেও আধিপত্য রয়েছে সাবেক আমলাদের। এসব কমিশনে ও সরকারি দপ্তরে সাবেক আমলাদের নিয়োগের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য তো পিএসসি না। সেখান থেকে আরও অনেক ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে পিএসসিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক থাকা উচিত।
সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসিতে বর্তমানে একজন চেয়ারম্যান ও ১৪ জন সদস্য আছেন। কমিশনের ১৫ সদস্যের মধ্যে পাঁচজন সাবেক সচিব, তিনজন সাবেক অতিরিক্ত সচিব। এ ছাড়া পররাষ্ট্র ক্যাডারের সাবেক এক সাবেক কর্মকর্তা, একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, দুজন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সরকারি প্রকৌশলী সদস্যের দায়িত্বে আছেন। সাবেক সচিব মো. সোহরাব হোসাইন পিএসসি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাবেক সচিব মো. শাহজাহান আলী মোল্লা, আবদুল মান্নান, এস এম গোলাম ফারুক এবং ও এন সিদ্দিকা খানম। সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক, নূরজাহান বেগম, কাজী সালাহ্উদ্দিন আকবর পিএসসির সদস্য।
এর বাইরে পররাষ্ট্র ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা এম শামীম আহসান, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বিনয় কৃষ্ণ বালা, শিক্ষা ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা মো. হামিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক উত্তম কুমার সাহা পিএসসির সদস্যের দায়িত্বে আছেন। এ ছাড়া শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নূরজাহান বেগম, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক নির্বাহী পরিচালক জাহিদুর রশিদ কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পিএসসির ১৫ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই সাবেক আমলা। অর্থাৎ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ ৬০ শতাংশ পদেই আমলারা নিয়োগ পেয়েছেন।
সংবিধান অনুসারে পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। যাঁরা ২০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে সরকারি চাকরি করেছেন, তাঁদের মধ্য থেকে কমিশনের অর্ধেক সদস্য (অর্ধেকের কম না) নিয়োগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পিএসসির গত কয়েকটি কমিশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কমিশনে দিনদিন আমলাদের সংখ্যা বাড়ছে।
সাবেক সচিব কে এম নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে আছেন। অন্য দুই নির্বাচন কমিশনারের একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, আরেকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। সংবিধান অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তবে কারা ওই পদে নিয়োগ পাওয়ায় যোগ্য সে বিষয়ে সংবিধানে কিছু বলা নেই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য সংলাপের আয়োজন করেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। সংবিধান ও আইনে কিছু বলা না থাকলেও এরপর থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি করে সরকার।
সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই নির্বাচন কমিশন গঠনে যাঁদের নিয়ে সার্চ কমিটি করা হয়েছিল, তাঁরাও কিন্তু ভালো সুপারিশ দিতে পারেননি। কারণ বর্তমান কমিশন নিয়ে বিতর্ক আছে।
তথ্য কমিশনের তিনজন কমিশনারের সব পদেই বর্তমানে সাবেক সচিবদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক সচিব মরতুজা আহমদ প্রধান তথ্য কমিশনার এবং সাবেক সচিব সুরাইয়া বেগম ও আবদুল মালেক তথ্য কমিশনারের দায়িত্বে আছেন।
তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী, প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারদের নিয়োগে একটি বাছাই কমিটি করতে হয়। আইন, বিচার, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্য, সমাজকর্ম, ব্যবস্থাপনা বা জনপ্রশাসনে ব্যাপক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অধিকারী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া যায়। সরকারের সাবেক আমলাদের বাইরে অন্যরা সেখানে নিয়োগ পাচ্ছেন কম।
সাবেক সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন সাবেক সচিব নাছিমা বেগম। সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ ও নমিতা হালদার মানবাধিকার কমিশনের সদস্য। সাবেক সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসনের দায়িত্বে আছেন।
কমিশনগুলো ছাড়াও সরকারি অন্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের শীর্ষ পদেও এখন সাবেক আমলাদের প্রাধান্য। সাবেক সচিব ফজলে কবির বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সাবেক সচিব সাজ্জাদুল হাসান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান, সাবেক সচিব এন এ এম ছিদ্দিক ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাবেক সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং সাবেক সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন।
এভাবে সরকারি দপ্তরে সাবেক আমলাদের প্রাধান্য দেওয়াকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো একধরনের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে রূপান্তিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় এমন লোক নিয়োগ পাচ্ছেন, প্রতিষ্ঠানের যে মৌলিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তার সঙ্গে তাঁদের কর্মজীবনে অভিজ্ঞতা বা সংশ্লিষ্টতা নেই। অনেক ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েও তাঁরা এ রকম প্রতিষ্ঠানে যোগদান করছেন। একপর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠান অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সাবেক সচিবরা অভিজ্ঞ, তাঁরা অবসরে যাওয়ার পরও ভালোমতো কাজ করতে পারেন। তাঁরা ছাড়া সিভিল সোসাইটিতে হয়তো সে রকম ব্যক্তি উঠে আসছেন না। সে কারণেই আমলারা প্রাধান্য পাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০০৭ সালের পর যত কমিশন গঠিত হয়েছে, সেখানে কমিশনারদের নিয়োগে সার্চ কমিটির বিধান রাখা হয়েছিল। শুধু পিএসসির সদস্য হিসেবে কাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে তা সংবিধানে তা বলা নেই। এ নিয়ে বিস্তারিত বিধি থাকলে এই সমস্যা হতো না। অথচ সরকার চাইলেই এসব প্রতিষ্ঠানে ভালো লোককে নিয়োগ দিতে পারে। একটি কমিশনে সব পেশার মানুষ থাকলে ভারসাম্য থাকে, নিয়োগের ক্ষেত্রে সে বিষয়টিই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে থাকবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের
৩৪ মিনিট আগেকিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার স্বত্ব প্রদান এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
২ ঘণ্টা আগেছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এর তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। মূল্যায়নে তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী স
২ ঘণ্টা আগেবিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য অনেকে নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় সেসব তথ্যই এখন তাঁদের জন্য ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গ
৩ ঘণ্টা আগে