নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই শিশুদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান ভাবা হয় তার বাড়িকে ৷ অথচ সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে আমাদের দেশে বাড়িতেই সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে শিশুরা। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা গেছে, ঘরেই শতকরা ৯৫ দশমিক ৮ জন শিশু নির্যাতিত হচ্ছে নানাভাবে। শিশুরা পরিবারে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয় বাবা-মা ও অভিভাবকদের দ্বারা। শান্তি ও নিয়মানুবর্তিতার কথা বলে শিশুর ওপর এই নিপীড়ন চালানো হয়।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশ আজ সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই জরিপ রিপোর্টটি উপস্থাপন করে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গবেষণার মূল বিষয় উপস্থাপন করা হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরের বাইরে, কাজের জায়গা বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানে শিশু যতটা নির্যাতিত হচ্ছে, এর চেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে নিজ গৃহে। প্রতিবন্ধী শিশুরাও শুধু প্রতিবন্ধিতার কারণে পরিবারে ও সমাজে নিগৃহীত হচ্ছে। এ ছাড়া পর্নোগ্রাফিতে শিশুদের প্রবেশাধিকারের বিষয়টিও জরিপে উঠে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী শতকরা ৯৫ দশমিক ৩ জন শিশু জানিয়েছে যে তারা জীবনের কোনো না কোনো সময় ঘরে, বাইরে, স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৯৬ দশমিক ২ জন মেয়েশিশু এবং শতকরা ৯৪ দশমিক ৫ জন ছেলেশিশু।
জুন ২০২০ থেকে মে ২০২১ পর্যন্ত মোট ১১টি জেলায় এই জরিপ চালানো হয়। জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা ও রাঙামাটিতে এই জরিপটি চালানো হয়েছে। মোট ৫ হাজার ৭৪ জন শিশুর ওপর জরিপটি চালানো হয়। এদের মধ্যে শহরের ৩ হাজার ১৩৪ জন শিশু ও গ্রামের ১ হাজার ৯৪০।
জরিপে অংশ নেওয়া শতকরা ৮৬ দশমিক ৯ জন শিশু জানায়, তারা গৃহে শারীরিকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে, বাসায় থাকা শিশুরা জানিয়েছে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থার’ নামে তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়। অন্যদিকে প্রায় শতকরা ৮১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বলেছেন সন্তান যদি বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়, তাহলে তাঁরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিশুকে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার পক্ষে। এ ক্ষেত্রে ছেলেশিশুরা মেয়েশিশুদের চেয়ে শারীরিক শাস্তি বেশি ভোগ করে। ছেলেশিশু শতকরা ৮৮ দশমিক ৪ আর মেয়েশিশু ৮৪ দশমিক ১। শতকরা ৫৫ জন শিশু জানিয়েছে, তারা পরিবারের ভেতরেই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। গৃহে মেয়েশিশুর (৫০%) চেয়ে ছেলেশিশুই (৬০%) বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
শিশুকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করার মধ্যে পড়ে হাত, জুতা, বেল্ট, বোতল দিয়ে মারা, লাথি মারা, টানাহেঁচড়া করা, চুল টানা, দাঁড় করিয়ে রাখা, হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা, শরীর পুড়িয়ে দেওয়া, অতিরিক্ত শ্রম করানো এবং ভয় ঝাঁকি দেওয়া, ছুড়ে ফেলা, চিমটি দেখানো।
জরিপে অংশ নেওয়া শতকরা ৮২ জন শিশু জানায় তারা নির্যাতিত হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিশু অর্থাৎ শতকরা ৮৬ দশমিক ১ জন শিশু ইমোশনালি বা মানসিকভাবে নিপীড়িত হচ্ছে। শতকরা ৮২ জন শারীরিক সহিংসতার শিকার হয় আর ২৪ দশমিক ১ শতাংশ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়।
ইমোশনাল হয়রানির মধ্যে পড়ে ছোট করা, আজেবাজে নামে ডাকা, ভয় দেখানো, গালাগালি করা, হুংকার দেওয়া, ইয়ার্কি করা, বুলিং করা, শারীরিক ত্রুটি নিয়ে ঠাট্টা করা, সামাজিকভাবে হেয় করা, সমালোচনা করা, অভিশাপ দেওয়া, লজ্জা দেওয়া, অবহেলা করা। এই হয়রানিগুলো শিশুকে মানসিক ও শারীরিকভাবে বড় হতে দেয় না।
শতকরা ৬৭ দশমিক ১ জন ঘরের বাইরে বা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়। এর মধ্যে ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুকে ইমোশনালি হয়রানি করা হয়, শারীরিকভাবে হয়রানি করা হয় ৬৭ দশমিক ১ জনকে এবং যৌন হয়রানির শিকার হয় ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। শতকরা ৫৫ দশমিক ৩ জন শিশুকে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হতে হয়। এর মধ্যে শতকরা ৭২ জন ইমোশনালি হয়রানির শিকার হচ্ছে, শারীরিক নিপীড়ন শতকরা ৫৫ দশমিক ৩ এবং যৌন হয়রানি শতকরা ৩৭ দশমিক ৮ জন। এদের মধ্যে মেয়েশিশু ৩৯ দশমিক ৩ এবং ছেলেশিশু ৩৬ দশমিক ৬ জন।
শতকরা ২৬ দশমিক ৯ জন শিশু এমন প্রতিষ্ঠানে সহিংসতার শিকার হচ্ছে, যেখানে তারা অবস্থান করে বা সেবা গ্রহণ করে। এখানে বসবাসরত ১১ দশমিক ৯ জন মেয়েই শুধু যৌন হয়রানির কথা বলেছে।
এই যে পরিবারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, পাড়া বা মহল্লায় এবং কর্মক্ষেত্রে শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, তাহলে কেন তারা এই বিষয়ে মুখ খোলেনি, এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে শতকরা ৬১ দশমিক ৭ জন বলেছে যে লজ্জা এবং বাবা-মা ও অভিভাবকের ভয়ের কারণে মুখ খোলে না। শতকরা ৫২ দশমিক ৭ জন বলেছে, তারা তখন বুঝতে পারেনি যে তাদের প্রতি যৌন হয়রানি করা হচ্ছে। অপরাধী হুমকি দেওয়ার কারণে চুপ থেকেছে ৩০ দশমিক ১ ভাগ শিশু। যৌন অপরাধ যারা করে, তারা স্নেহ ও ভালোবাসার ছদ্মাবরণে এটা করে বলে জানিয়েছে ১৬ দশমিক ২ ভাগ শিশু। ১৫ দশমিক ৬ জন শিশু বলেছে তারা ঠিক জানে না পরিবারের বাইরে কোথায় গিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ জানাতে হয়।
ছাত্রছাত্রী দুজনই বলেছে সাধারণ শিক্ষক/শিক্ষিকারাই সবচেয়ে বেশি তাদের ওপর নিপীড়ন করে। তবে এর বাইরে আছে প্রধান শিক্ষক, শরীরচর্চা শিক্ষক, ধর্ম শিক্ষক, গার্ড, অন্য স্টাফ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের কেউ কেউ। সমাজে বা ঘরের বাইরে প্রতিবেশী, চাকরিদাতা, সঙ্গীসাথি, শিক্ষক, অপরিচিত ব্যক্তি, দোকানদার এবং আইন রক্ষাকারী সংস্থার লোক শিশুদের হয়রানি করে। আর যেসব শিশু কাজ করে বা কর্মজীবী তারা বলেছে তাদের সঙ্গী, মালিক, মালিকের পরিবারের লোকজন, নিরাপত্তারক্ষী এবং সুপারভাইজাররা তাদের ওপর অত্যাচার করে।
এ ছাড়াও এনজিও দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানেও শিশুরা অন্য বয়স্ক শিশু, স্টাফদের দ্বারা নিপীড়িত হয়। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে শিশুবিষয়ক নিরাপত্তা নীতি বা পলিসি এখানেও কাজ করছে না।
শতকরা ৬২ দশমিক ১ জন প্রতিবন্ধী শিশু বলেছে শুধু প্রতিবন্ধী শিশু হওয়ার কারণে তারা পরিবারে ও সমাজে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। এর মধ্যে ছেলেশিশু ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মেয়েশিশু ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ।
জরিপে আরও দেখা হয়েছে যে পর্নোগ্রাফিতে শিশুর প্রবেশাধিকার কেমন বা কতটা? শতকরা ৩৪ জন শিশু বলেছে যে তারা পর্নোগ্রাফি দেখে। এর চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে শতকরা ৭৫ দশমিক ১ জন শিশু, যাদের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন আছে, তারাও পর্নোগ্রাফি দেখছে। শতকরা ২৬ জন মেয়েশিশু বলেছে যে তারা আত্মীয়দের সঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখছে। শতকরা ১৪ দশমিক ৪ জন মেয়েশিশু দেখেছে অনাত্মীয়দের সঙ্গে। শিশুদের এভাবে পর্নোগ্রাফি দেখার মাধ্যমে তাদের যৌন হয়রানির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
জরিপে থেকে যে সুপারিশমালায় উঠে এসেছে এর মধ্যে আছে নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে হবে। শিশুর প্রতি যেকোনো ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হবে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য তার জন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে অনিরাপদ পারিবারিক অভিবাসন থামাতে হবে। শিশুর প্রতি যে অপরাধ করবে, শিশুকে নির্যাতন করবে তাকে ভালোভাবে বোঝাতে হবে এবং প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কমিউনিটিভিত্তিক শিশু সুরক্ষা পলিসি গ্রহণ করতে হবে।
সভায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ে শিশু বাজেটে ১০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানান। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শিশুর ব্যবহার বন্ধের ওপর জোর দেন তিনি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘প্রত্যেক শিশুর সুন্দর নিরাপদ ভবিষ্যৎ আমরা দেখতে চাই। কোনো শিশু যেন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় এটা প্রত্যাশা।’
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই শিশুদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান ভাবা হয় তার বাড়িকে ৷ অথচ সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে আমাদের দেশে বাড়িতেই সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে শিশুরা। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা গেছে, ঘরেই শতকরা ৯৫ দশমিক ৮ জন শিশু নির্যাতিত হচ্ছে নানাভাবে। শিশুরা পরিবারে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয় বাবা-মা ও অভিভাবকদের দ্বারা। শান্তি ও নিয়মানুবর্তিতার কথা বলে শিশুর ওপর এই নিপীড়ন চালানো হয়।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশ আজ সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই জরিপ রিপোর্টটি উপস্থাপন করে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গবেষণার মূল বিষয় উপস্থাপন করা হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরের বাইরে, কাজের জায়গা বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানে শিশু যতটা নির্যাতিত হচ্ছে, এর চেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে নিজ গৃহে। প্রতিবন্ধী শিশুরাও শুধু প্রতিবন্ধিতার কারণে পরিবারে ও সমাজে নিগৃহীত হচ্ছে। এ ছাড়া পর্নোগ্রাফিতে শিশুদের প্রবেশাধিকারের বিষয়টিও জরিপে উঠে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী শতকরা ৯৫ দশমিক ৩ জন শিশু জানিয়েছে যে তারা জীবনের কোনো না কোনো সময় ঘরে, বাইরে, স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৯৬ দশমিক ২ জন মেয়েশিশু এবং শতকরা ৯৪ দশমিক ৫ জন ছেলেশিশু।
জুন ২০২০ থেকে মে ২০২১ পর্যন্ত মোট ১১টি জেলায় এই জরিপ চালানো হয়। জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা ও রাঙামাটিতে এই জরিপটি চালানো হয়েছে। মোট ৫ হাজার ৭৪ জন শিশুর ওপর জরিপটি চালানো হয়। এদের মধ্যে শহরের ৩ হাজার ১৩৪ জন শিশু ও গ্রামের ১ হাজার ৯৪০।
জরিপে অংশ নেওয়া শতকরা ৮৬ দশমিক ৯ জন শিশু জানায়, তারা গৃহে শারীরিকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে, বাসায় থাকা শিশুরা জানিয়েছে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থার’ নামে তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়। অন্যদিকে প্রায় শতকরা ৮১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বলেছেন সন্তান যদি বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়, তাহলে তাঁরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিশুকে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার পক্ষে। এ ক্ষেত্রে ছেলেশিশুরা মেয়েশিশুদের চেয়ে শারীরিক শাস্তি বেশি ভোগ করে। ছেলেশিশু শতকরা ৮৮ দশমিক ৪ আর মেয়েশিশু ৮৪ দশমিক ১। শতকরা ৫৫ জন শিশু জানিয়েছে, তারা পরিবারের ভেতরেই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। গৃহে মেয়েশিশুর (৫০%) চেয়ে ছেলেশিশুই (৬০%) বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
শিশুকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করার মধ্যে পড়ে হাত, জুতা, বেল্ট, বোতল দিয়ে মারা, লাথি মারা, টানাহেঁচড়া করা, চুল টানা, দাঁড় করিয়ে রাখা, হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা, শরীর পুড়িয়ে দেওয়া, অতিরিক্ত শ্রম করানো এবং ভয় ঝাঁকি দেওয়া, ছুড়ে ফেলা, চিমটি দেখানো।
জরিপে অংশ নেওয়া শতকরা ৮২ জন শিশু জানায় তারা নির্যাতিত হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিশু অর্থাৎ শতকরা ৮৬ দশমিক ১ জন শিশু ইমোশনালি বা মানসিকভাবে নিপীড়িত হচ্ছে। শতকরা ৮২ জন শারীরিক সহিংসতার শিকার হয় আর ২৪ দশমিক ১ শতাংশ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়।
ইমোশনাল হয়রানির মধ্যে পড়ে ছোট করা, আজেবাজে নামে ডাকা, ভয় দেখানো, গালাগালি করা, হুংকার দেওয়া, ইয়ার্কি করা, বুলিং করা, শারীরিক ত্রুটি নিয়ে ঠাট্টা করা, সামাজিকভাবে হেয় করা, সমালোচনা করা, অভিশাপ দেওয়া, লজ্জা দেওয়া, অবহেলা করা। এই হয়রানিগুলো শিশুকে মানসিক ও শারীরিকভাবে বড় হতে দেয় না।
শতকরা ৬৭ দশমিক ১ জন ঘরের বাইরে বা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়। এর মধ্যে ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুকে ইমোশনালি হয়রানি করা হয়, শারীরিকভাবে হয়রানি করা হয় ৬৭ দশমিক ১ জনকে এবং যৌন হয়রানির শিকার হয় ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। শতকরা ৫৫ দশমিক ৩ জন শিশুকে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হতে হয়। এর মধ্যে শতকরা ৭২ জন ইমোশনালি হয়রানির শিকার হচ্ছে, শারীরিক নিপীড়ন শতকরা ৫৫ দশমিক ৩ এবং যৌন হয়রানি শতকরা ৩৭ দশমিক ৮ জন। এদের মধ্যে মেয়েশিশু ৩৯ দশমিক ৩ এবং ছেলেশিশু ৩৬ দশমিক ৬ জন।
শতকরা ২৬ দশমিক ৯ জন শিশু এমন প্রতিষ্ঠানে সহিংসতার শিকার হচ্ছে, যেখানে তারা অবস্থান করে বা সেবা গ্রহণ করে। এখানে বসবাসরত ১১ দশমিক ৯ জন মেয়েই শুধু যৌন হয়রানির কথা বলেছে।
এই যে পরিবারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, পাড়া বা মহল্লায় এবং কর্মক্ষেত্রে শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, তাহলে কেন তারা এই বিষয়ে মুখ খোলেনি, এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে শতকরা ৬১ দশমিক ৭ জন বলেছে যে লজ্জা এবং বাবা-মা ও অভিভাবকের ভয়ের কারণে মুখ খোলে না। শতকরা ৫২ দশমিক ৭ জন বলেছে, তারা তখন বুঝতে পারেনি যে তাদের প্রতি যৌন হয়রানি করা হচ্ছে। অপরাধী হুমকি দেওয়ার কারণে চুপ থেকেছে ৩০ দশমিক ১ ভাগ শিশু। যৌন অপরাধ যারা করে, তারা স্নেহ ও ভালোবাসার ছদ্মাবরণে এটা করে বলে জানিয়েছে ১৬ দশমিক ২ ভাগ শিশু। ১৫ দশমিক ৬ জন শিশু বলেছে তারা ঠিক জানে না পরিবারের বাইরে কোথায় গিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ জানাতে হয়।
ছাত্রছাত্রী দুজনই বলেছে সাধারণ শিক্ষক/শিক্ষিকারাই সবচেয়ে বেশি তাদের ওপর নিপীড়ন করে। তবে এর বাইরে আছে প্রধান শিক্ষক, শরীরচর্চা শিক্ষক, ধর্ম শিক্ষক, গার্ড, অন্য স্টাফ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের কেউ কেউ। সমাজে বা ঘরের বাইরে প্রতিবেশী, চাকরিদাতা, সঙ্গীসাথি, শিক্ষক, অপরিচিত ব্যক্তি, দোকানদার এবং আইন রক্ষাকারী সংস্থার লোক শিশুদের হয়রানি করে। আর যেসব শিশু কাজ করে বা কর্মজীবী তারা বলেছে তাদের সঙ্গী, মালিক, মালিকের পরিবারের লোকজন, নিরাপত্তারক্ষী এবং সুপারভাইজাররা তাদের ওপর অত্যাচার করে।
এ ছাড়াও এনজিও দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানেও শিশুরা অন্য বয়স্ক শিশু, স্টাফদের দ্বারা নিপীড়িত হয়। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে শিশুবিষয়ক নিরাপত্তা নীতি বা পলিসি এখানেও কাজ করছে না।
শতকরা ৬২ দশমিক ১ জন প্রতিবন্ধী শিশু বলেছে শুধু প্রতিবন্ধী শিশু হওয়ার কারণে তারা পরিবারে ও সমাজে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। এর মধ্যে ছেলেশিশু ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মেয়েশিশু ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ।
জরিপে আরও দেখা হয়েছে যে পর্নোগ্রাফিতে শিশুর প্রবেশাধিকার কেমন বা কতটা? শতকরা ৩৪ জন শিশু বলেছে যে তারা পর্নোগ্রাফি দেখে। এর চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে শতকরা ৭৫ দশমিক ১ জন শিশু, যাদের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন আছে, তারাও পর্নোগ্রাফি দেখছে। শতকরা ২৬ জন মেয়েশিশু বলেছে যে তারা আত্মীয়দের সঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখছে। শতকরা ১৪ দশমিক ৪ জন মেয়েশিশু দেখেছে অনাত্মীয়দের সঙ্গে। শিশুদের এভাবে পর্নোগ্রাফি দেখার মাধ্যমে তাদের যৌন হয়রানির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
জরিপে থেকে যে সুপারিশমালায় উঠে এসেছে এর মধ্যে আছে নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে হবে। শিশুর প্রতি যেকোনো ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হবে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য তার জন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে অনিরাপদ পারিবারিক অভিবাসন থামাতে হবে। শিশুর প্রতি যে অপরাধ করবে, শিশুকে নির্যাতন করবে তাকে ভালোভাবে বোঝাতে হবে এবং প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কমিউনিটিভিত্তিক শিশু সুরক্ষা পলিসি গ্রহণ করতে হবে।
সভায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ে শিশু বাজেটে ১০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানান। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শিশুর ব্যবহার বন্ধের ওপর জোর দেন তিনি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘প্রত্যেক শিশুর সুন্দর নিরাপদ ভবিষ্যৎ আমরা দেখতে চাই। কোনো শিশু যেন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় এটা প্রত্যাশা।’
ফ্যাসিবাদের দোসরেরা এখনো বিভিন্ন জায়গায় বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদের পরিহারের ঘোষণা দিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (নাসির আব্দুল্লাহ) বলেছেন, ‘খুনি ও খুনের হুকুমদাতারা যদি তাদের স্কিলের কারণে থেকে যায়, তাহলে আমরা আরেকটি যুদ্ধ করতে বাধ্য হব।
৩ ঘণ্টা আগেসেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে থাকবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের
৯ ঘণ্টা আগেকিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার স্বত্ব প্রদান এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
১০ ঘণ্টা আগেছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এর তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। মূল্যায়নে তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী স
১১ ঘণ্টা আগে