ঢাকা: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্মার পর তৃতীয় টিকা হিসেবে এবার দেশে এসেছে জাতিসংঘের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের টিকা। প্রথম চালানে এসেছে ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা। সোমবার রাত সোয়া ১১টায় এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে এ টিকা শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ সময় অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে টিকাগুলো ইপিআইয়ের তত্ত্বাবধানে মহাখালীর সংরক্ষণাগারে নেওয়া হবে। ফাইজারের এই টিকা মাইনাস ৯০ থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাই সংরক্ষণজনিত জটিলতার কারণে ঢাকার বাইরে পাঠানো হবে না। ঢাকায় টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করা লোকদের দুই ডোজে এই টিকা দেওয়া হবে। ন্যূনতম ১২ বছর বয়সীরা এ টিকা গ্রহণ করতে পারবেন। তবে কেন্দ্রে নেওয়ার আগে আইএলআর রেফ্রিজারেটরে ৮ ঘণ্টা রেখে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখার উপযোগী করা হবে। এ অবস্থায় টিকা সংরক্ষণ করা যাবে অন্তত পাঁচ দিন।

এর আগে রোববার এই টিকা আসার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু শিডিউল জটিলতায় এদিন টিকা আসা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কয়েক দফা সিদ্ধান্ত বদলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। পরে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, রোববার নয়, সোমবারই আসছে টিকা। ফাইজারের এই টিকা কাদের দেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, যারা নিবন্ধন করেছেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারাই টিকা পাবেন। সে অনুযায়ী যদি শিক্ষার্থীরাও পড়ে যান আমরা অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করব। পর্যায়ক্রমে আমরা ছাত্রদের, বিশেষ করে যেখানে লেখাপড়াটা তাড়াতাড়ি শুরু করতে পারেন, সেদিকে আমরা মনোযোগী হব। অন্যান্য যারা আছেন তাঁরাও পাবেন।’

অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়ার কথা থাকলেও মৃত্যুহার ঠেকাতে প্রাথমিকভাবে ৯৫ শতাংশ কার্যকর এই টিকা পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখনো টিকাদান কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়নি। আমরা প্রথমে কয়েকজনের শরীরে প্রয়োগ করে এক সপ্তাহ পর্যালোচনা করব। যাঁরা প্রথম ডোজের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁরাই টিকা পাওয়ার কথা থাকলেও আপাতত মৃত্যুহার ঠেকাতে পঞ্চাশোর্ধ্ব নাগরিকদের দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৭ মে) ফাইজারের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ভ্যাকসিনটি ১২ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহারযোগ্য। প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন থেকে চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে।

ফাইজারসহ দেশে এখন পর্যন্ত অনুমোদন পেয়েছে চারটি ভ্যাকসিন। বাকি তিনটি হলো ভারতের সেরাম অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড, রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্মার টিকা। এর মধ্যে প্রয়োগ হয়েছে কোভিশিল্ড ও সিনোফার্মার টিকা। ফাইজারও প্রয়োগের অপেক্ষায়। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখনো বাংলাদেশে আসতে পারেনি স্পুতনিক-ভি।