সুলতান মাহমুদ, ঢাকা
বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন এবং অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি হিসেবে একে অপরকে ব্যাংক চেক দেওয়া হয়ে থাকে। চেক গ্রহীতা উল্লেখিত তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে চেকটি ব্যাংকে উপস্থাপন করে টাকা উত্তোলন করতে পারে।
তবে টাকা ওঠানোর জন্য ব্যাংকে চেক জমা দেওয়া হলে ওই চেকটির বিপরীতে টাকা প্রদান করতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অস্বীকৃতি জানাতে পারে। একেই বলে চেক ডিজঅনার। অপর্যাপ্ত তহবিল, চেকের মেয়াদ উত্তীর্ণ, প্রদানকারীর স্বাক্ষরের মিল না থাকা, টাকার পরিমাণ অঙ্কে এবং কথায় মিল না থাকা, ইত্যাদি কারণে চেক ডিজঅনার হতে পারে।
চেকটি ব্যাংকে জমা প্রদানের পর যদি তা অপর্যাপ্ত তহবিল বা অন্য কোনো যুক্তিসংগত কারণে চেক ডিজঅনার হয়, তাহলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ডিজঅনারের কারণ উল্লেখ করে চেক জমাদানকারীকে একটি ডিজঅনার স্লিপ প্রদান করবে।
চেক ডিজঅনার হলে মামলা করতে হয় ১৮৮১ সালের হস্তান্তর যোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারা মোতাবেক। ওই ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং চেকে উল্লেখিত অর্থের ৩ (তিন) গুন অর্থ জরিমানা করতে পারে।
ঢাকা জজ আদালতের আইনজীবী আলী হাসান বলেন, ‘যদিও আইনে তিন গুন জরিমানার কথা উল্লেখ আছে, কিন্তু বাস্তবে আদালত তিনগুণ টাকা জরিমানা সাধারণত করেন না। আদালত পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা বিবাদী স্বেচ্ছায় না দিলে দেওয়ানি মোকদ্দমার মাধ্যমে আদায় করা যেতে পারে।’
চেক ডিজ অনার হয় যেসব কারণে
এক. ব্যাংকের হিসাবে অপর্যাপ্ত অর্থ থাকলে। অর্থাৎ চেকে যে পরিমাণ অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে তা অপেক্ষা কম অর্থ হিসাবে থাকা।
দুই. যে ব্যক্তি চেক প্রদান করেন তাঁর স্বাক্ষর যদি না মেলে।
তিন. যদি চেকে উল্লেখিত অর্থ অঙ্কে ও কথায় লেখার মধ্যে গরমিল পাওয়া যায়।
চার. চেক মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে।
পাঁচ. চেক যথাযথভাবে পূরণ করা না হলে।
ছয়. চেকে ঘষামাজা করলে।
সাত. চেকে কাটাকাটি থাকলে পূর্ণ স্বাক্ষর দিয়ে তা সত্যায়িত করা না হলে।
মামলা করবেন যেভাবে
প্রথমে ব্যাংকে গিয়ে চেক ডিজঅনার করে নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ ডিজঅনার স্লিপ আনতে হবে।
এরপর চেকের টাকা পরিশোধের জন্য ৩০ দিন সময় দিয়ে উকিল নোটিশ বা লিগ্যাল নোটিশ দিতে হবে।
উকিল নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে, পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে এখতিয়ারসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে হবে।
মামলায় যেসব নথি লাগবে
মামলা করার সময় বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্র, চেক ডিজঅনারের স্লিপ, লিগ্যাল নোটিশের একটি করে ফটোকপি ফিরিস্তি করে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া মামলা করার সময় চেকের মূল কপি আদালতে প্রদর্শন করতে হবে। এটি ছাড়াও মামলার আরজির সঙ্গে প্রসেস ফি দাখিল করতে হবে।
উকিল নোটিশ দেবেন যেভাবে
যিনি চেক ইস্যু করবেন তাঁকে আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশ দিতে হবে। তিন ভাবে এটি দেওয়া যায়। এক. চেক ইস্যুকারীর হাতে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া যায়। দুই. প্রাপ্তি স্বীকার রসিদসহ (এডি) রেজিস্টার্ড ডাকযোগে তাঁর ঠিকানায় পাঠানো। তিন. বহুল প্রচারিত কোনো বাংলা জাতীয় দৈনিকেও নোটিশ প্রকাশ করা যায়।
মামলা করার সময়সীমা
চেকগ্রহীতা ব্যাংক থেকে চেকটি ডিজঅনার হয়ে ফেরত আসার ৩০ দিনের মধ্যে চেক দাতাকে নোটিশ দিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেকদাতা চেকগ্রহীতাকে টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, চেকগ্রহীতা মামলা করতে পারবেন।
মামলা কোথায় করবেন
চেক ডিজঅনারের মামলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে করতে হয়। মেট্রোপলিটন এরিয়াতে চেক ডিজঅনারের মামলা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা হয়। আর অন্য এলাকাতে এই মামলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা হয়।
এরপর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অথবা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি প্রস্তুত করে বিচারের জন্য দায়রা আদালতে পাঠিয়ে দেন। হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১–এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী চেক ডিজঅনারের মামলা করা হয়।
সাধারণত প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারা অনুযায়ী নালিশকারীকে পরীক্ষা (জবানবন্দি গ্রহণ) করবেন। পরীক্ষা করার পর যদি ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন, নালিশের প্রিমাফ্যাসি (প্রাথমিক দৃষ্টি) অনুকূলে আছে, তাহলে মামলা আমলে নিয়ে প্রস্তুত করে বিচারের জন্য দায়রা আদালতে পাঠিয়ে দেবেন। এরপর মামলাটি দায়রা আদালতে বিচার হবে।
চেক ডিজঅনারের মামলা সব সময় নালিশি মামলা হিসেবে বিবেচিত হয়।
চেক ডিজঅনারের মামলা চলাকালীন আসামির মৃত্যু হলে
চেক ডিজঅনারের মামলা করার আগেই চেকদাতা মারা গেলে চেক গ্রহীতার আর কোনো প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে না। এমনকি আসামি মামলা চলমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও তাঁর উত্তরাধিকারী বা আইনগত প্রতিনিধির বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ মামলা চালাতে পারেন না।
আসামি মারা যাওয়ার পর চেক ডিজঅনারের মামলাটি বাদী ফৌজদারি আদালতে চালাতে না পারলেও দেওয়ানি আদালতে অর্থ উদ্ধারের উপায় রয়েছে।
মামলা করার আগে বা পরে যখনই আসামি মারা যান না কেন, উভয় ক্ষেত্রেই বাদীর প্রতিকার হলো— মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী বা আইনগত প্রতিনিধির বিরুদ্ধে দেওয়ানি আদালতে টাকার মামলা করে চেকে উল্লেখিত টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করা যায়।
আপিল
১৩৮ ধারায় চেক ডিজঅনার মামলায় প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির আপিলের বিধান প্রযোজ্য হবে। ১৩৮ ধারায় প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে আপিল করা যাবে। চেক ডিজঅনারের মামলাটি যুগ্ম দায়রা জজ কর্তৃক বিচার করা হলে, দায়রা জজের কাছে রায়ের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০৮ ধারার আপিলের বিধান প্রযোজ্য হবে।
আপিলের পূর্বশর্ত
চেক ডিজঅনারের মামলায় চেকে উল্লেখিত অর্থের ৫০ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে আপিল করতে হবে। যে আদালত শাস্তি দেন, সেই আদালতে ডিজঅনারকৃত চেকের টাকার ৫০ শতাংশ জমা দিয়ে আপিল করতে হবে। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ টাকা বিচারিক আদালতে জমা দিতে হবে, আপিল আদালতে নয়।
রিভিশন দায়ের
চেক ডিজঅনারের মামলায় রিভিশনের আবেদনও করা যায়। শুধু আইনগত প্রশ্নে রিভিশন করা যায়। এখানেও ফৌজদারি কার্যবিধির রিভিশনের বিধান প্রযোজ্য হবে। এখানে বলা হয়েছে, আইনগত প্রশ্নে রিভিশনের আবেদন করা যায়। আইনগত প্রশ্ন বলতে বোঝায়, উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংক থেকে চেকটি অপরিশোধিত হয়ে আসার পর ৩০ দিনের মধ্যে চেকদাতাকে নোটিশ না দেওয়া। এটি একটা আইনগত প্রশ্ন।
চেক ডিজঅনার মামলায় হাইকোর্টের ৫ নির্দেশনা
১. মামলা হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে চেক প্রদানকারী যদি চেকে উল্লেখিত টাকা চেক গ্রহীতাকে দিতে চান, তবে বিচারিক আদালত চেকে উল্লেখিত টাকা এবং মামলার যাবতীয় খরচ যোগ করে চেক গ্রহণকারীকে জরিমানা (ক্ষতিপূরণ) দেবেন।
২. চেক প্রদানকারী যদি মামলা হওয়ার ৩ মাস পর কিন্তু ৬ মাসের আগে চেক গ্রহীতাকে ওই টাকা দিতে চান, তবে চেকে উল্লেখিত টাকার পাশাপাশি, সমপরিমাণ টাকা মামলার খরচ হিসেবে জরিমানা দিতে হবে। অর্থাৎ চেকে উল্লেখিত টাকার দ্বিগুণ পরিমাণ দিতে হবে।
৩. যদি চেক প্রদানকারী চেকে উল্লেখিত পুরো টাকা মামলা হওয়ার ৬ মাস পর, কিন্তু এক বছরের আগে দিতে চান, তবে আদালত চেক প্রদানকারীকে চেকে উল্লেখিত টাকা এবং উল্লেখিত টাকার আড়াইগুণ জরিমানা হিসেবে দিতে হবে।
৪. যদি চেক প্রদানকারী সমুদয় টাকা মামলা হওয়ার এক বছর পর, কিন্তু দুই বছরের আগে দিতে চান, তবে চেক প্রদানকারীকে চেকে উল্লেখিত টাকা ও উল্লেখিত টাকার তিনগুণ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
৫. মামলা হওয়ার দুই বছর পরও যদি চেক প্রদানকারী টাকা না দেন, সে ক্ষেত্রে আদালত চেকে উল্লেখিত টাকার তিনগুণ জরিমানা এবং আদালত মনে করলে চেক প্রদানকারীকে এক বছর পর্যন্ত সাজা দিতে পারেন।
বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন এবং অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি হিসেবে একে অপরকে ব্যাংক চেক দেওয়া হয়ে থাকে। চেক গ্রহীতা উল্লেখিত তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে চেকটি ব্যাংকে উপস্থাপন করে টাকা উত্তোলন করতে পারে।
তবে টাকা ওঠানোর জন্য ব্যাংকে চেক জমা দেওয়া হলে ওই চেকটির বিপরীতে টাকা প্রদান করতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অস্বীকৃতি জানাতে পারে। একেই বলে চেক ডিজঅনার। অপর্যাপ্ত তহবিল, চেকের মেয়াদ উত্তীর্ণ, প্রদানকারীর স্বাক্ষরের মিল না থাকা, টাকার পরিমাণ অঙ্কে এবং কথায় মিল না থাকা, ইত্যাদি কারণে চেক ডিজঅনার হতে পারে।
চেকটি ব্যাংকে জমা প্রদানের পর যদি তা অপর্যাপ্ত তহবিল বা অন্য কোনো যুক্তিসংগত কারণে চেক ডিজঅনার হয়, তাহলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ডিজঅনারের কারণ উল্লেখ করে চেক জমাদানকারীকে একটি ডিজঅনার স্লিপ প্রদান করবে।
চেক ডিজঅনার হলে মামলা করতে হয় ১৮৮১ সালের হস্তান্তর যোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারা মোতাবেক। ওই ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং চেকে উল্লেখিত অর্থের ৩ (তিন) গুন অর্থ জরিমানা করতে পারে।
ঢাকা জজ আদালতের আইনজীবী আলী হাসান বলেন, ‘যদিও আইনে তিন গুন জরিমানার কথা উল্লেখ আছে, কিন্তু বাস্তবে আদালত তিনগুণ টাকা জরিমানা সাধারণত করেন না। আদালত পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা বিবাদী স্বেচ্ছায় না দিলে দেওয়ানি মোকদ্দমার মাধ্যমে আদায় করা যেতে পারে।’
চেক ডিজ অনার হয় যেসব কারণে
এক. ব্যাংকের হিসাবে অপর্যাপ্ত অর্থ থাকলে। অর্থাৎ চেকে যে পরিমাণ অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে তা অপেক্ষা কম অর্থ হিসাবে থাকা।
দুই. যে ব্যক্তি চেক প্রদান করেন তাঁর স্বাক্ষর যদি না মেলে।
তিন. যদি চেকে উল্লেখিত অর্থ অঙ্কে ও কথায় লেখার মধ্যে গরমিল পাওয়া যায়।
চার. চেক মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে।
পাঁচ. চেক যথাযথভাবে পূরণ করা না হলে।
ছয়. চেকে ঘষামাজা করলে।
সাত. চেকে কাটাকাটি থাকলে পূর্ণ স্বাক্ষর দিয়ে তা সত্যায়িত করা না হলে।
মামলা করবেন যেভাবে
প্রথমে ব্যাংকে গিয়ে চেক ডিজঅনার করে নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ ডিজঅনার স্লিপ আনতে হবে।
এরপর চেকের টাকা পরিশোধের জন্য ৩০ দিন সময় দিয়ে উকিল নোটিশ বা লিগ্যাল নোটিশ দিতে হবে।
উকিল নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে, পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে এখতিয়ারসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে হবে।
মামলায় যেসব নথি লাগবে
মামলা করার সময় বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্র, চেক ডিজঅনারের স্লিপ, লিগ্যাল নোটিশের একটি করে ফটোকপি ফিরিস্তি করে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া মামলা করার সময় চেকের মূল কপি আদালতে প্রদর্শন করতে হবে। এটি ছাড়াও মামলার আরজির সঙ্গে প্রসেস ফি দাখিল করতে হবে।
উকিল নোটিশ দেবেন যেভাবে
যিনি চেক ইস্যু করবেন তাঁকে আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশ দিতে হবে। তিন ভাবে এটি দেওয়া যায়। এক. চেক ইস্যুকারীর হাতে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া যায়। দুই. প্রাপ্তি স্বীকার রসিদসহ (এডি) রেজিস্টার্ড ডাকযোগে তাঁর ঠিকানায় পাঠানো। তিন. বহুল প্রচারিত কোনো বাংলা জাতীয় দৈনিকেও নোটিশ প্রকাশ করা যায়।
মামলা করার সময়সীমা
চেকগ্রহীতা ব্যাংক থেকে চেকটি ডিজঅনার হয়ে ফেরত আসার ৩০ দিনের মধ্যে চেক দাতাকে নোটিশ দিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেকদাতা চেকগ্রহীতাকে টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, চেকগ্রহীতা মামলা করতে পারবেন।
মামলা কোথায় করবেন
চেক ডিজঅনারের মামলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে করতে হয়। মেট্রোপলিটন এরিয়াতে চেক ডিজঅনারের মামলা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা হয়। আর অন্য এলাকাতে এই মামলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা হয়।
এরপর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অথবা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি প্রস্তুত করে বিচারের জন্য দায়রা আদালতে পাঠিয়ে দেন। হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১–এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী চেক ডিজঅনারের মামলা করা হয়।
সাধারণত প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারা অনুযায়ী নালিশকারীকে পরীক্ষা (জবানবন্দি গ্রহণ) করবেন। পরীক্ষা করার পর যদি ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন, নালিশের প্রিমাফ্যাসি (প্রাথমিক দৃষ্টি) অনুকূলে আছে, তাহলে মামলা আমলে নিয়ে প্রস্তুত করে বিচারের জন্য দায়রা আদালতে পাঠিয়ে দেবেন। এরপর মামলাটি দায়রা আদালতে বিচার হবে।
চেক ডিজঅনারের মামলা সব সময় নালিশি মামলা হিসেবে বিবেচিত হয়।
চেক ডিজঅনারের মামলা চলাকালীন আসামির মৃত্যু হলে
চেক ডিজঅনারের মামলা করার আগেই চেকদাতা মারা গেলে চেক গ্রহীতার আর কোনো প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকে না। এমনকি আসামি মামলা চলমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও তাঁর উত্তরাধিকারী বা আইনগত প্রতিনিধির বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ মামলা চালাতে পারেন না।
আসামি মারা যাওয়ার পর চেক ডিজঅনারের মামলাটি বাদী ফৌজদারি আদালতে চালাতে না পারলেও দেওয়ানি আদালতে অর্থ উদ্ধারের উপায় রয়েছে।
মামলা করার আগে বা পরে যখনই আসামি মারা যান না কেন, উভয় ক্ষেত্রেই বাদীর প্রতিকার হলো— মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী বা আইনগত প্রতিনিধির বিরুদ্ধে দেওয়ানি আদালতে টাকার মামলা করে চেকে উল্লেখিত টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করা যায়।
আপিল
১৩৮ ধারায় চেক ডিজঅনার মামলায় প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির আপিলের বিধান প্রযোজ্য হবে। ১৩৮ ধারায় প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে আপিল করা যাবে। চেক ডিজঅনারের মামলাটি যুগ্ম দায়রা জজ কর্তৃক বিচার করা হলে, দায়রা জজের কাছে রায়ের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০৮ ধারার আপিলের বিধান প্রযোজ্য হবে।
আপিলের পূর্বশর্ত
চেক ডিজঅনারের মামলায় চেকে উল্লেখিত অর্থের ৫০ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে আপিল করতে হবে। যে আদালত শাস্তি দেন, সেই আদালতে ডিজঅনারকৃত চেকের টাকার ৫০ শতাংশ জমা দিয়ে আপিল করতে হবে। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ টাকা বিচারিক আদালতে জমা দিতে হবে, আপিল আদালতে নয়।
রিভিশন দায়ের
চেক ডিজঅনারের মামলায় রিভিশনের আবেদনও করা যায়। শুধু আইনগত প্রশ্নে রিভিশন করা যায়। এখানেও ফৌজদারি কার্যবিধির রিভিশনের বিধান প্রযোজ্য হবে। এখানে বলা হয়েছে, আইনগত প্রশ্নে রিভিশনের আবেদন করা যায়। আইনগত প্রশ্ন বলতে বোঝায়, উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংক থেকে চেকটি অপরিশোধিত হয়ে আসার পর ৩০ দিনের মধ্যে চেকদাতাকে নোটিশ না দেওয়া। এটি একটা আইনগত প্রশ্ন।
চেক ডিজঅনার মামলায় হাইকোর্টের ৫ নির্দেশনা
১. মামলা হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে চেক প্রদানকারী যদি চেকে উল্লেখিত টাকা চেক গ্রহীতাকে দিতে চান, তবে বিচারিক আদালত চেকে উল্লেখিত টাকা এবং মামলার যাবতীয় খরচ যোগ করে চেক গ্রহণকারীকে জরিমানা (ক্ষতিপূরণ) দেবেন।
২. চেক প্রদানকারী যদি মামলা হওয়ার ৩ মাস পর কিন্তু ৬ মাসের আগে চেক গ্রহীতাকে ওই টাকা দিতে চান, তবে চেকে উল্লেখিত টাকার পাশাপাশি, সমপরিমাণ টাকা মামলার খরচ হিসেবে জরিমানা দিতে হবে। অর্থাৎ চেকে উল্লেখিত টাকার দ্বিগুণ পরিমাণ দিতে হবে।
৩. যদি চেক প্রদানকারী চেকে উল্লেখিত পুরো টাকা মামলা হওয়ার ৬ মাস পর, কিন্তু এক বছরের আগে দিতে চান, তবে আদালত চেক প্রদানকারীকে চেকে উল্লেখিত টাকা এবং উল্লেখিত টাকার আড়াইগুণ জরিমানা হিসেবে দিতে হবে।
৪. যদি চেক প্রদানকারী সমুদয় টাকা মামলা হওয়ার এক বছর পর, কিন্তু দুই বছরের আগে দিতে চান, তবে চেক প্রদানকারীকে চেকে উল্লেখিত টাকা ও উল্লেখিত টাকার তিনগুণ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
৫. মামলা হওয়ার দুই বছর পরও যদি চেক প্রদানকারী টাকা না দেন, সে ক্ষেত্রে আদালত চেকে উল্লেখিত টাকার তিনগুণ জরিমানা এবং আদালত মনে করলে চেক প্রদানকারীকে এক বছর পর্যন্ত সাজা দিতে পারেন।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ৮০০ জন অতিথি। প্রথম দিন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে থাকবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের
২ ঘণ্টা আগেকিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহল ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার স্বত্ব প্রদান এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
৩ ঘণ্টা আগেছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। এর তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে বেলজিয়ামভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। মূল্যায়নে তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী স
৩ ঘণ্টা আগেবিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাইয়ের সময় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য অনেকে নিজেই পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় সেসব তথ্যই এখন তাঁদের জন্য ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গ
৪ ঘণ্টা আগে