রজত কান্তি রায়, ঢাকা
লেনিন পিকের সমান্তরালে এগিয়েছে ইউহিন চূড়ার পথ। এই পথ থেকে লেনিন পিকের হিমবাহটি স্পষ্ট দেখা যায়। ক্যাম্প ১ থেকে ক্যাম্প ২-এ যাওয়ার পথটি দেখে কিছুটা শিহরিত হয়ে ওঠেন আরশাদী। ঝুলে থাকা হিমবাহ, তার মধ্যকার অজস্র ফাটল পেরিয়ে একটি আইসফল, ভয়ংকর দেখতে পথটি পাড়ি দিতে হবে—ভাবতেই একধরনের শিহরণ জেগে উঠল পুরো শরীরে। মনে তো বটেই। ঘুরে ঘুরে একটি পর্বতের মাথায় উঠলেন তিনি। দেখলেন, সহযাত্রী অজিল ইশারায় ডাকছেন। এখানেও চূড়ার মতো একটি জায়গা আছে। ওপরে হিমালয়ের ধাঁচে বিশাল একটি পাথরের স্তূপ বা কেয়ার্ন বানানো হয়েছে। ম্যাপ দেখাচ্ছে, এই চূড়ার নাম হোম পিক, উচ্চতা ৪ হাজার ৭১৭ মিটার। এক ঘণ্টার মধ্যে ৩ মিটার ক্লাইম্ব করে ফেলেছেন বলে নিজেই খানিক খুশি হলেন আরশাদী। পরক্ষণেই মনে পড়ে গেল, আজ সঙ্গে ব্যাকপ্যাক নেই, থাকলে বোঝা যেত ৩ মিটার ক্লাইম্ব করা কত কঠিন।
এরপর একেবারে খাড়া ওপরে ওঠা। কোনো উতরাই নেই। প্রায় তিন ঘণ্টা পর তাঁরা হাজির হলেন ইউহিন পিকের বরফে ঢাকা সামিটের ঠিক নিচে। এদিকে আবহাওয়া দ্রুত খারাপ হচ্ছে। বেশ ঝোড়ো হাওয়া বইছে। এর মধ্যেই তাঁরা হাজির হলেন চূড়ায়। অল্টিমিটার দেখাচ্ছিল, চূড়ার উচ্চতা ৫ হাজার ১০৩ মিটার। চূড়ায় থাকতেই শুরু হলো তীব্র তুষার ঝড়! নরক গুলজার এই অবস্থার মধ্যে পৃথিবীর ছাদ বলে খ্যাত পামির মালভূমির কোনো পর্বতে তাঁদের প্রথম আরোহণ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের কোনো পর্বতারোহীর পক্ষে এই আরোহণ একেবারে প্রথম!
চিনিগুঁড়ার মতো শক্ত তুষার নাকে-মুখে লাগছিল। ফলে সংবিৎ ফিরে না এসে পারল না। সমতল থেকে ৫ হাজার ১০৩ মিটার উঁচুতে দাঁড়িয়ে তুষারের আঘাত সহ্য করা আর প্লেজার ট্রিপে কাশ্মীর-মানালিতে তুষার নিয়ে খেলাধুলা করা এক ব্যাপার নয়। তাই শুরু হলো নিচে নামার পালা, যত দ্রুত সম্ভব। ঢাল ধরে সতর্ক পায়ে একটানা নেমে সোজা তাঁবুর ভেতর।
সালেহীন আরশাদী যখন বলে চলছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, আমি তখন চোখ বড় বড় করে শুনছি। পামির মালভূমি! সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আর পড়ে বড় হয়েছি, একে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়। কতবার যে সেখানে মানসভ্রমণ করেছি, তার প্রান্তরে প্রান্তরে ঘুরেছি! সেই পামিরে সামিট করে ফিরে এসেছেন আরশাদী! সংগত কারণেই আমি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে শুষে নিতে চাইছি আমার অধরা-অদেখা পামিরের ঘ্রাণ।
স্নো লেপার্ড চ্যালেঞ্জ
পামির ও তিয়েন শান পর্বতশ্রেণিতে আরোহণের মর্যাদাপূর্ণ ‘স্নো লেপার্ড’ চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করছেন আরশাদী ও তাঁর বন্ধুরা। এটি বেশ দীর্ঘ প্রক্রিয়া। পামির ও তিয়েন শান পর্বতশ্রেণির সর্বোচ্চ পাঁচটি শৃঙ্গ সফলতার সঙ্গে আরোহণ করতে পারলেই কেবল এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়া যায়। পাঁচটি শৃঙ্গের সবকটির উচ্চতা ৭ হাজার মিটার বা ২৩ হাজার ফুটের বেশি। মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত এই দানবীয় শৃঙ্গগুলো তাদের দুর্গমতা ও বৈরী আবহাওয়ার জন্য বিখ্যাত। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মাত্র ৬৯৩ জন এই মর্যাদাপূর্ণ চ্যালেঞ্জ শেষ করতে পেরেছেন। পাঁচটি শিখর হলো:
» ইসমাইল সোমনি—২৪ হাজার ৫৯০ ফুট, ৭ হাজার ৫০০ মিটার
» জেঙ্গিশ চোকুসু—২৪ হাজার ৪০৬ ফুট, ৭ হাজার ৪৩৯ মিটার
» ইবনে সিনা পিক বা পিক লেনিন—২৩ হাজার ৪০৬ ফুট, ৭ হাজার ১৩৪ মিটার
» কর্জেনেভস্কায়া—২৩ হাজার ৩১০ ফুট, ৭ হাজার ১০০ মিটার
» খান তেংরি—২২ হাজার ৯৯৯ ফুট, ৭ হাজার ১০ মিটার
এ পাহাড়ে আরোহণ করতে মধ্য এশিয়ার তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তান যেতে হবে। সে জন্য আরশাদীদের দল পরিকল্পনা করেছিল প্রাচীন রেশমপথের প্রসিদ্ধ জায়গাগুলো দেখে ফেলার। এবার যেমন উজবেকিস্তানের প্রাচীন শহর বুখারা, আন্দিজান ও সামারখন্দ ঘুরে দেখেছিলেন তাঁরা।
পথ থেকে পথে
ভারত থেকে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে যাওয়া যায়। কিন্তু ভারতীয় ভিসা না থাকায় কিছুটা ঘুরে যেতে হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে প্রথমে গেছেন কিরগিজস্তানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর বিশকেক। সেখান থেকে তিন হাজার বছরের প্রাচীন শহর ফারগানা উপত্যকার ওশ। সেখানে অভিযান শেষে সড়কপথে উজবেকিস্তানের আন্দিজান শহর। সেখান থেকে রাজধানী তাসখন্দ হয়ে চলে গেছেন বোখারা, সামারখন্দের রেশমপথে। সামারখন্দ থেকে আবার আরব আমিরাত হয়ে ফিরেছেন দেশে।
এবারের যাত্রায় কিরগিজস্তান ও উজবেকিস্তানের কিছু অংশ ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছে। মধ্য এশিয়ার প্রাচীন স্থাপনাগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতি, তাদের রীতিনীতি, সমাজ, খাবারদাবার বোঝার চেষ্টা করেছেন। এত দিন ধরে বই পড়ে, তথ্যচিত্র দেখে মধ্য এশিয়া মস্তিষ্কে যে চিত্রটি তৈরি করে নিয়েছিল, সশরীরে সেই ঐতিহাসিক জায়গাগুলোতে গিয়ে মিলিয়ে দেখার সুযোগ হলো এবার।
লেনিন পিকের সমান্তরালে এগিয়েছে ইউহিন চূড়ার পথ। এই পথ থেকে লেনিন পিকের হিমবাহটি স্পষ্ট দেখা যায়। ক্যাম্প ১ থেকে ক্যাম্প ২-এ যাওয়ার পথটি দেখে কিছুটা শিহরিত হয়ে ওঠেন আরশাদী। ঝুলে থাকা হিমবাহ, তার মধ্যকার অজস্র ফাটল পেরিয়ে একটি আইসফল, ভয়ংকর দেখতে পথটি পাড়ি দিতে হবে—ভাবতেই একধরনের শিহরণ জেগে উঠল পুরো শরীরে। মনে তো বটেই। ঘুরে ঘুরে একটি পর্বতের মাথায় উঠলেন তিনি। দেখলেন, সহযাত্রী অজিল ইশারায় ডাকছেন। এখানেও চূড়ার মতো একটি জায়গা আছে। ওপরে হিমালয়ের ধাঁচে বিশাল একটি পাথরের স্তূপ বা কেয়ার্ন বানানো হয়েছে। ম্যাপ দেখাচ্ছে, এই চূড়ার নাম হোম পিক, উচ্চতা ৪ হাজার ৭১৭ মিটার। এক ঘণ্টার মধ্যে ৩ মিটার ক্লাইম্ব করে ফেলেছেন বলে নিজেই খানিক খুশি হলেন আরশাদী। পরক্ষণেই মনে পড়ে গেল, আজ সঙ্গে ব্যাকপ্যাক নেই, থাকলে বোঝা যেত ৩ মিটার ক্লাইম্ব করা কত কঠিন।
এরপর একেবারে খাড়া ওপরে ওঠা। কোনো উতরাই নেই। প্রায় তিন ঘণ্টা পর তাঁরা হাজির হলেন ইউহিন পিকের বরফে ঢাকা সামিটের ঠিক নিচে। এদিকে আবহাওয়া দ্রুত খারাপ হচ্ছে। বেশ ঝোড়ো হাওয়া বইছে। এর মধ্যেই তাঁরা হাজির হলেন চূড়ায়। অল্টিমিটার দেখাচ্ছিল, চূড়ার উচ্চতা ৫ হাজার ১০৩ মিটার। চূড়ায় থাকতেই শুরু হলো তীব্র তুষার ঝড়! নরক গুলজার এই অবস্থার মধ্যে পৃথিবীর ছাদ বলে খ্যাত পামির মালভূমির কোনো পর্বতে তাঁদের প্রথম আরোহণ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের কোনো পর্বতারোহীর পক্ষে এই আরোহণ একেবারে প্রথম!
চিনিগুঁড়ার মতো শক্ত তুষার নাকে-মুখে লাগছিল। ফলে সংবিৎ ফিরে না এসে পারল না। সমতল থেকে ৫ হাজার ১০৩ মিটার উঁচুতে দাঁড়িয়ে তুষারের আঘাত সহ্য করা আর প্লেজার ট্রিপে কাশ্মীর-মানালিতে তুষার নিয়ে খেলাধুলা করা এক ব্যাপার নয়। তাই শুরু হলো নিচে নামার পালা, যত দ্রুত সম্ভব। ঢাল ধরে সতর্ক পায়ে একটানা নেমে সোজা তাঁবুর ভেতর।
সালেহীন আরশাদী যখন বলে চলছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, আমি তখন চোখ বড় বড় করে শুনছি। পামির মালভূমি! সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আর পড়ে বড় হয়েছি, একে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়। কতবার যে সেখানে মানসভ্রমণ করেছি, তার প্রান্তরে প্রান্তরে ঘুরেছি! সেই পামিরে সামিট করে ফিরে এসেছেন আরশাদী! সংগত কারণেই আমি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে শুষে নিতে চাইছি আমার অধরা-অদেখা পামিরের ঘ্রাণ।
স্নো লেপার্ড চ্যালেঞ্জ
পামির ও তিয়েন শান পর্বতশ্রেণিতে আরোহণের মর্যাদাপূর্ণ ‘স্নো লেপার্ড’ চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করছেন আরশাদী ও তাঁর বন্ধুরা। এটি বেশ দীর্ঘ প্রক্রিয়া। পামির ও তিয়েন শান পর্বতশ্রেণির সর্বোচ্চ পাঁচটি শৃঙ্গ সফলতার সঙ্গে আরোহণ করতে পারলেই কেবল এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়া যায়। পাঁচটি শৃঙ্গের সবকটির উচ্চতা ৭ হাজার মিটার বা ২৩ হাজার ফুটের বেশি। মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত এই দানবীয় শৃঙ্গগুলো তাদের দুর্গমতা ও বৈরী আবহাওয়ার জন্য বিখ্যাত। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মাত্র ৬৯৩ জন এই মর্যাদাপূর্ণ চ্যালেঞ্জ শেষ করতে পেরেছেন। পাঁচটি শিখর হলো:
» ইসমাইল সোমনি—২৪ হাজার ৫৯০ ফুট, ৭ হাজার ৫০০ মিটার
» জেঙ্গিশ চোকুসু—২৪ হাজার ৪০৬ ফুট, ৭ হাজার ৪৩৯ মিটার
» ইবনে সিনা পিক বা পিক লেনিন—২৩ হাজার ৪০৬ ফুট, ৭ হাজার ১৩৪ মিটার
» কর্জেনেভস্কায়া—২৩ হাজার ৩১০ ফুট, ৭ হাজার ১০০ মিটার
» খান তেংরি—২২ হাজার ৯৯৯ ফুট, ৭ হাজার ১০ মিটার
এ পাহাড়ে আরোহণ করতে মধ্য এশিয়ার তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তান যেতে হবে। সে জন্য আরশাদীদের দল পরিকল্পনা করেছিল প্রাচীন রেশমপথের প্রসিদ্ধ জায়গাগুলো দেখে ফেলার। এবার যেমন উজবেকিস্তানের প্রাচীন শহর বুখারা, আন্দিজান ও সামারখন্দ ঘুরে দেখেছিলেন তাঁরা।
পথ থেকে পথে
ভারত থেকে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে যাওয়া যায়। কিন্তু ভারতীয় ভিসা না থাকায় কিছুটা ঘুরে যেতে হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে প্রথমে গেছেন কিরগিজস্তানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর বিশকেক। সেখান থেকে তিন হাজার বছরের প্রাচীন শহর ফারগানা উপত্যকার ওশ। সেখানে অভিযান শেষে সড়কপথে উজবেকিস্তানের আন্দিজান শহর। সেখান থেকে রাজধানী তাসখন্দ হয়ে চলে গেছেন বোখারা, সামারখন্দের রেশমপথে। সামারখন্দ থেকে আবার আরব আমিরাত হয়ে ফিরেছেন দেশে।
এবারের যাত্রায় কিরগিজস্তান ও উজবেকিস্তানের কিছু অংশ ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছে। মধ্য এশিয়ার প্রাচীন স্থাপনাগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতি, তাদের রীতিনীতি, সমাজ, খাবারদাবার বোঝার চেষ্টা করেছেন। এত দিন ধরে বই পড়ে, তথ্যচিত্র দেখে মধ্য এশিয়া মস্তিষ্কে যে চিত্রটি তৈরি করে নিয়েছিল, সশরীরে সেই ঐতিহাসিক জায়গাগুলোতে গিয়ে মিলিয়ে দেখার সুযোগ হলো এবার।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
৩ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
৩ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
৩ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
৩ দিন আগে