ফাতিমা জাহান
শিল্পে সমৃদ্ধ বিশাল আফ্রিকা মহাদেশের চারু ও কারুশিল্প এক ছাদের নিচে দেখতে পাওয়া শ্বাপদসংকুল বনভূমি বা পাহাড় জয় করার চেয়েও রোমাঞ্চকর। কারণ, বর্ণিল ও দুর্লভ বিভিন্ন শিল্প-উপকরণ দেখার জন্য আমাকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দিতে হচ্ছে না। তানজানিয়ার আরুশা শহরের কালচারাল হেরিটেজ সেন্টারে আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য সব শিল্প সংরক্ষিত আছে। এই জাদুঘরে কয়েক শ বা হাজার বছরের পুরোনো শিল্পেরও দেখা মিলবে। তানজানিয়া, কেনিয়া, ঘানা, মালি, মালায়ি, নাইজেরিয়া, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নামিবিয়া, সুদান, লাইবেরিয়া, ক্যামেরুন ইত্যাদি দেশের ঐতিহ্য বহন করছে এই বিশাল জাদুঘর।
শহরের মূল সড়কের পাশে বিশাল প্রাঙ্গণজুড়ে শুধু শিল্পের ছাপ। জাদুঘরের সামনের খোলা জায়গায় আছে আফ্রিকার জঙ্গলের বিভিন্ন পশুর লাইফ সাইজ ভাস্কর্য। দেখে মনে হয় যেন জেব্রা, জিরাফ, সিংহ, হরিণ, বুনো ষাঁড়, কুমির কিংবা জলহস্তী বাগানে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তাদের সামনে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষ নেচে-গেয়ে দলপতির মনোরঞ্জন করছে।
জাদুঘরটির পাঁচতলা ভবনের সামনের কৃত্রিম নদীতে কুমির ভেসে রয়েছে। সেই নদীতে তৈরি করা হয়েছে ইনস্টলেশন আর্ট। সেগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে দেখে মনে হবে, নদীতে নৌকা চলছে। সেই নৌকায় করে আরব ও ইউরোপীয় বণিকেরা দাস হিসেবে বিক্রির জন্য হাত-পা বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন আফ্রিকার কালো মানুষদের। মর্মান্তিক হলেও অর্থবহ এ চিত্র ছিল উনিশ শতক পর্যন্ত আফ্রিকার পরিচিত দৃশ্য।
আঙিনার আরেক পাশে আফ্রিকার গ্রামের প্রাচীন ঘরগুলোর মতো গোলাকার ছনের ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো স্যুভেনির শপ। এই আঙিনায়ও তেজি বুনো পশুর ভাস্কর্য আছে। কালচারাল সেন্টার ও আফ্রিকান আর্ট গ্যালারি একই ভবনে অবস্থিত। ভবনের সামনে রাখা আছে আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী ঢাল ও বিশাল আকারের বল্লম।
আফ্রিকার প্রাচীন শিল্পগুলোর অন্যতম হলো কাঠখোদাই। জাদুঘরের প্রবেশমুখে এ মাধ্যমে করা কয়েকটি ফ্যামিলি ট্রি বা বংশলতিকা দেখা যাবে। এগুলোর একেকটি লম্বায় প্রায় ১০ ফুট। কাঠের ওপর খোদাই করা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কারুকাজের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে একেকটি পরিবারের আদি মানব থেকে বর্তমান বংশধরদের তালিকা। লম্বা, মোটা, আস্ত গাছ ব্যবহার করা হয় একেকটি ফ্যামিলি ট্রি খোদাই করার জন্য।
জাদুঘরে প্রবেশের পর প্রথম তলায় সারি সারি হাতে আঁকা চিত্র গোলাকার ভবনের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে। বেশির ভাগ চিত্র আফ্রিকার বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর নরনারীর, দৈনন্দিন জীবনের বা পশুপাখির। আন্ডারগ্রাউন্ডে আছে সবচেয়ে পুরোনো কারুশিল্পের এক অমূল্য ভান্ডার। পুরো আফ্রিকা মহাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এনে জড়ো করা হয়েছে এখানে।
তানজানিয়া বিখ্যাত কাঠখোদাই শিল্পের জন্য। জাদুঘরের বাইরে ফ্যামিলি ট্রি ও ভাস্কর্য দেখে এসেছি। ভেতরেও বেশ কয়েকটি ফ্যামিলি ট্রি অন্যান্য কাঠে তৈরি ভাস্কর্যের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে। সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে জাঞ্জিবারের ঐতিহ্যবাহী ওমানি নকশার দরজা ও ফুল-লতাপাতা খোদাই করা সিন্দুক। তানজানিয়া চিত্রশিল্পের জন্যও বিখ্যাত। এ দেশের ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলার নাম টিংগা টিংগা পেইন্টিং। ভীষণ রঙিন। বিভিন্ন বয়সের মানুষ এবং আফ্রিকান বিগ ফাইভ অর্থাৎ সিংহ, লেপার্ড, হাতি, মহিষ ও গন্ডারের প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে ওপরের কয়েকটি তলায়। পুঁতি দিয়ে গয়না তৈরি হয় আমরা জানি। কিন্তু তানজানিয়ার শিল্পীরা নানা রঙের ছোট পুঁতি আঠা দিয়ে পাশাপাশি বসিয়ে আস্ত একটা ছবি এঁকে ফেলেন! এ ছাড়া বাটিক ও রঙিন কাপড় জোড়া দিয়ে ক্যানভাসে চিত্র ফুটিয়ে তোলার কাজও শোভা পাচ্ছে এই জাদুঘরে।
ছোট ছোট পুঁতি কাঠের সোফার ওপর আঠা দিয়ে বসিয়ে যে বিভিন্ন রঙের নকশা করা যায়, তা এই জাদুঘরে না এলে জানতাম না। তানজানিয়া ও ঘানায় এই শিল্প ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এই ভবনের প্রতিটি তলায় রঙিন নকশার পুঁতিশিল্পের চেয়ার ও সোফা শোভা পাচ্ছে। ঘানার মৃৎশিল্পের কিছু কিছু এখানে সাজিয়ে রাখা আছে। মাটির পাত্র বা বিশাল আকারের মাটির পশুর গায়ে সূক্ষ্ম কারুকাজে ফুটে উঠেছে আফ্রিকান আভিজাত্য।
এই জাদুঘরের পুরোনো দর্শনীয় বস্তু হলো ইথিওপিয়া থেকে আসা কপটিক বাইবেল। এটি প্রাচীন ‘গিজ’ ভাষায় লেখা। ভাষাটি এখন ইথিওপিয়ার অল্প কিছু মানুষ ব্যবহার করেন। সে দেশে তৈরি রুপার মূর্তি ও তৈজসপত্রও এই জাদুঘরে স্থান করে নিয়েছে।
আফ্রিকার বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী শত শত বছর ধরে যুদ্ধ ও আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেছে। কাঠ, বাঁশ, লোহা, ব্রোঞ্জ, রুপা, ঢাল, ছোরা, বল্লম ইত্যাদি অস্ত্রের গায়ে দেখা মেলে আফ্রিকান শিল্পের দারুণ সব মোটিফ।
ক্যামেরুন বিখ্যাত কড়িশিল্পের জন্য। বিভিন্ন ধরনের ও আকারের কাঠের মূর্তি, আসবাব বা ডেকোরেশন পিসের ওপর কড়ি, পুঁতি, রঙিন কাচের টুকরা বসিয়ে তৈরি করা হয় সৌন্দর্য। এই জাদুঘরে কয়েক শ বছরের পুরোনো কড়িশিল্প সংরক্ষিত আছে।
শহরের মূল সড়কের পাশে বিশাল প্রাঙ্গণজুড়ে শুধু শিল্পের ছাপ। জাদুঘরের সামনের খোলা জায়গায় আছে আফ্রিকার জঙ্গলের বিভিন্ন পশুর লাইফ সাইজ ভাস্কর্য।
বিভিন্ন রঙের সুতার সাহায্যে ফোঁড় দিয়ে বিভিন্ন রঙের কাপড়ের প্যাচওয়ার্ক করা আফ্রিকার সূচিশিল্পের বৈশিষ্ট্য। এই সূচিশিল্পে তৈরি বিছানার চাদর, পর্দা, পোশাক ইত্যাদি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এখনো ব্যবহৃত হয়।
নাইজেরিয়া বিখ্যাত তামা বা ব্রোঞ্জের তৈরি ভাস্কর্যের জন্য। ব্রোঞ্জ দিয়ে কখনো তৈরি করা হয়েছে বিশাল নৌকা ও মাঝি, কখনো সোফা, কখনো আবক্ষ মূর্তি। প্রতিটি প্রতিকৃতি সূক্ষ্ম কারুকার্যে আবৃত। দেয়ালে ঠোকা ছাড়া পেরেক দিয়ে যে শিল্পকর্ম তৈরি করা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছে কঙ্গো। সাধারণ কাঠ বা লোহার অবয়বের ওপর খাড়াভাবে পেরেক বসিয়ে সে দেশে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য।
আফ্রিকা ও মুখোশ—এ দুটি আলাদা করার উপায় নেই। সে মহাদেশে প্রতিটি দেশের নিজস্ব আকার, রং, বৈশিষ্ট্য ও আকৃতির মুখোশ আছে। একেক মুখোশ একেক রীতি ও সংস্কৃতি ধারণ করে। কাঠ, ব্রোঞ্জ, লোহা, নারকেলের দড়ি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয় মুখোশ। একেক মুখোশে ফুটিয়ে তোলা হয় ভিন্ন ভিন্ন অভিব্যক্তি। লাইবেরিয়ায় মুখোশ তৈরি করা হতো যোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে। কাঠের ওপর খোদাই করে নারকেলের দড়ি, পাখির পালক দিয়ে সাজানো হয় এসব মুখোশ।
জিনি ভাস্কর্য হলো মালির নিজস্ব ঐতিহ্য। কাঠের তৈরি এই ভাস্কর্য সে দেশের যোদ্ধাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই ভাস্কর্যের ওপর সাধারণত কালো বা গাঢ় বাদামি রঙের বার্নিশ করা থাকে।
কেনিয়াকে আমার আফ্রিকার সবচেয়ে উচ্ছল, হাসিখুশি ও রঙিন দেশ মনে হয়। এ দেশের চিত্রকলা ভুবনবিখ্যাত। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তুলির আঁচড়ে জীবন্ত করে তোলেন শিল্পীরা। তাঁদের কাঠের তৈরি মুখোশ তুলনাহীন। একেক মুখোশ একেক নৃগোষ্ঠী ও একেক অনুষ্ঠানের কথা মনে করিয়ে দেয়। কেনিয়ায় সোপ স্টোনে খোদাই করা ডেকোরেশন পিস তৈরি হয়, যা পুরো আফ্রিকা ও বিশ্বে সমাদৃত।
শিল্পে সমৃদ্ধ বিশাল আফ্রিকা মহাদেশের চারু ও কারুশিল্প এক ছাদের নিচে দেখতে পাওয়া শ্বাপদসংকুল বনভূমি বা পাহাড় জয় করার চেয়েও রোমাঞ্চকর। কারণ, বর্ণিল ও দুর্লভ বিভিন্ন শিল্প-উপকরণ দেখার জন্য আমাকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দিতে হচ্ছে না। তানজানিয়ার আরুশা শহরের কালচারাল হেরিটেজ সেন্টারে আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য সব শিল্প সংরক্ষিত আছে। এই জাদুঘরে কয়েক শ বা হাজার বছরের পুরোনো শিল্পেরও দেখা মিলবে। তানজানিয়া, কেনিয়া, ঘানা, মালি, মালায়ি, নাইজেরিয়া, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নামিবিয়া, সুদান, লাইবেরিয়া, ক্যামেরুন ইত্যাদি দেশের ঐতিহ্য বহন করছে এই বিশাল জাদুঘর।
শহরের মূল সড়কের পাশে বিশাল প্রাঙ্গণজুড়ে শুধু শিল্পের ছাপ। জাদুঘরের সামনের খোলা জায়গায় আছে আফ্রিকার জঙ্গলের বিভিন্ন পশুর লাইফ সাইজ ভাস্কর্য। দেখে মনে হয় যেন জেব্রা, জিরাফ, সিংহ, হরিণ, বুনো ষাঁড়, কুমির কিংবা জলহস্তী বাগানে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তাদের সামনে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষ নেচে-গেয়ে দলপতির মনোরঞ্জন করছে।
জাদুঘরটির পাঁচতলা ভবনের সামনের কৃত্রিম নদীতে কুমির ভেসে রয়েছে। সেই নদীতে তৈরি করা হয়েছে ইনস্টলেশন আর্ট। সেগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে দেখে মনে হবে, নদীতে নৌকা চলছে। সেই নৌকায় করে আরব ও ইউরোপীয় বণিকেরা দাস হিসেবে বিক্রির জন্য হাত-পা বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন আফ্রিকার কালো মানুষদের। মর্মান্তিক হলেও অর্থবহ এ চিত্র ছিল উনিশ শতক পর্যন্ত আফ্রিকার পরিচিত দৃশ্য।
আঙিনার আরেক পাশে আফ্রিকার গ্রামের প্রাচীন ঘরগুলোর মতো গোলাকার ছনের ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো স্যুভেনির শপ। এই আঙিনায়ও তেজি বুনো পশুর ভাস্কর্য আছে। কালচারাল সেন্টার ও আফ্রিকান আর্ট গ্যালারি একই ভবনে অবস্থিত। ভবনের সামনে রাখা আছে আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী ঢাল ও বিশাল আকারের বল্লম।
আফ্রিকার প্রাচীন শিল্পগুলোর অন্যতম হলো কাঠখোদাই। জাদুঘরের প্রবেশমুখে এ মাধ্যমে করা কয়েকটি ফ্যামিলি ট্রি বা বংশলতিকা দেখা যাবে। এগুলোর একেকটি লম্বায় প্রায় ১০ ফুট। কাঠের ওপর খোদাই করা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কারুকাজের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে একেকটি পরিবারের আদি মানব থেকে বর্তমান বংশধরদের তালিকা। লম্বা, মোটা, আস্ত গাছ ব্যবহার করা হয় একেকটি ফ্যামিলি ট্রি খোদাই করার জন্য।
জাদুঘরে প্রবেশের পর প্রথম তলায় সারি সারি হাতে আঁকা চিত্র গোলাকার ভবনের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে। বেশির ভাগ চিত্র আফ্রিকার বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর নরনারীর, দৈনন্দিন জীবনের বা পশুপাখির। আন্ডারগ্রাউন্ডে আছে সবচেয়ে পুরোনো কারুশিল্পের এক অমূল্য ভান্ডার। পুরো আফ্রিকা মহাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এনে জড়ো করা হয়েছে এখানে।
তানজানিয়া বিখ্যাত কাঠখোদাই শিল্পের জন্য। জাদুঘরের বাইরে ফ্যামিলি ট্রি ও ভাস্কর্য দেখে এসেছি। ভেতরেও বেশ কয়েকটি ফ্যামিলি ট্রি অন্যান্য কাঠে তৈরি ভাস্কর্যের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে। সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে জাঞ্জিবারের ঐতিহ্যবাহী ওমানি নকশার দরজা ও ফুল-লতাপাতা খোদাই করা সিন্দুক। তানজানিয়া চিত্রশিল্পের জন্যও বিখ্যাত। এ দেশের ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলার নাম টিংগা টিংগা পেইন্টিং। ভীষণ রঙিন। বিভিন্ন বয়সের মানুষ এবং আফ্রিকান বিগ ফাইভ অর্থাৎ সিংহ, লেপার্ড, হাতি, মহিষ ও গন্ডারের প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে ওপরের কয়েকটি তলায়। পুঁতি দিয়ে গয়না তৈরি হয় আমরা জানি। কিন্তু তানজানিয়ার শিল্পীরা নানা রঙের ছোট পুঁতি আঠা দিয়ে পাশাপাশি বসিয়ে আস্ত একটা ছবি এঁকে ফেলেন! এ ছাড়া বাটিক ও রঙিন কাপড় জোড়া দিয়ে ক্যানভাসে চিত্র ফুটিয়ে তোলার কাজও শোভা পাচ্ছে এই জাদুঘরে।
ছোট ছোট পুঁতি কাঠের সোফার ওপর আঠা দিয়ে বসিয়ে যে বিভিন্ন রঙের নকশা করা যায়, তা এই জাদুঘরে না এলে জানতাম না। তানজানিয়া ও ঘানায় এই শিল্প ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এই ভবনের প্রতিটি তলায় রঙিন নকশার পুঁতিশিল্পের চেয়ার ও সোফা শোভা পাচ্ছে। ঘানার মৃৎশিল্পের কিছু কিছু এখানে সাজিয়ে রাখা আছে। মাটির পাত্র বা বিশাল আকারের মাটির পশুর গায়ে সূক্ষ্ম কারুকাজে ফুটে উঠেছে আফ্রিকান আভিজাত্য।
এই জাদুঘরের পুরোনো দর্শনীয় বস্তু হলো ইথিওপিয়া থেকে আসা কপটিক বাইবেল। এটি প্রাচীন ‘গিজ’ ভাষায় লেখা। ভাষাটি এখন ইথিওপিয়ার অল্প কিছু মানুষ ব্যবহার করেন। সে দেশে তৈরি রুপার মূর্তি ও তৈজসপত্রও এই জাদুঘরে স্থান করে নিয়েছে।
আফ্রিকার বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী শত শত বছর ধরে যুদ্ধ ও আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেছে। কাঠ, বাঁশ, লোহা, ব্রোঞ্জ, রুপা, ঢাল, ছোরা, বল্লম ইত্যাদি অস্ত্রের গায়ে দেখা মেলে আফ্রিকান শিল্পের দারুণ সব মোটিফ।
ক্যামেরুন বিখ্যাত কড়িশিল্পের জন্য। বিভিন্ন ধরনের ও আকারের কাঠের মূর্তি, আসবাব বা ডেকোরেশন পিসের ওপর কড়ি, পুঁতি, রঙিন কাচের টুকরা বসিয়ে তৈরি করা হয় সৌন্দর্য। এই জাদুঘরে কয়েক শ বছরের পুরোনো কড়িশিল্প সংরক্ষিত আছে।
শহরের মূল সড়কের পাশে বিশাল প্রাঙ্গণজুড়ে শুধু শিল্পের ছাপ। জাদুঘরের সামনের খোলা জায়গায় আছে আফ্রিকার জঙ্গলের বিভিন্ন পশুর লাইফ সাইজ ভাস্কর্য।
বিভিন্ন রঙের সুতার সাহায্যে ফোঁড় দিয়ে বিভিন্ন রঙের কাপড়ের প্যাচওয়ার্ক করা আফ্রিকার সূচিশিল্পের বৈশিষ্ট্য। এই সূচিশিল্পে তৈরি বিছানার চাদর, পর্দা, পোশাক ইত্যাদি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এখনো ব্যবহৃত হয়।
নাইজেরিয়া বিখ্যাত তামা বা ব্রোঞ্জের তৈরি ভাস্কর্যের জন্য। ব্রোঞ্জ দিয়ে কখনো তৈরি করা হয়েছে বিশাল নৌকা ও মাঝি, কখনো সোফা, কখনো আবক্ষ মূর্তি। প্রতিটি প্রতিকৃতি সূক্ষ্ম কারুকার্যে আবৃত। দেয়ালে ঠোকা ছাড়া পেরেক দিয়ে যে শিল্পকর্ম তৈরি করা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছে কঙ্গো। সাধারণ কাঠ বা লোহার অবয়বের ওপর খাড়াভাবে পেরেক বসিয়ে সে দেশে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য।
আফ্রিকা ও মুখোশ—এ দুটি আলাদা করার উপায় নেই। সে মহাদেশে প্রতিটি দেশের নিজস্ব আকার, রং, বৈশিষ্ট্য ও আকৃতির মুখোশ আছে। একেক মুখোশ একেক রীতি ও সংস্কৃতি ধারণ করে। কাঠ, ব্রোঞ্জ, লোহা, নারকেলের দড়ি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয় মুখোশ। একেক মুখোশে ফুটিয়ে তোলা হয় ভিন্ন ভিন্ন অভিব্যক্তি। লাইবেরিয়ায় মুখোশ তৈরি করা হতো যোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে। কাঠের ওপর খোদাই করে নারকেলের দড়ি, পাখির পালক দিয়ে সাজানো হয় এসব মুখোশ।
জিনি ভাস্কর্য হলো মালির নিজস্ব ঐতিহ্য। কাঠের তৈরি এই ভাস্কর্য সে দেশের যোদ্ধাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই ভাস্কর্যের ওপর সাধারণত কালো বা গাঢ় বাদামি রঙের বার্নিশ করা থাকে।
কেনিয়াকে আমার আফ্রিকার সবচেয়ে উচ্ছল, হাসিখুশি ও রঙিন দেশ মনে হয়। এ দেশের চিত্রকলা ভুবনবিখ্যাত। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তুলির আঁচড়ে জীবন্ত করে তোলেন শিল্পীরা। তাঁদের কাঠের তৈরি মুখোশ তুলনাহীন। একেক মুখোশ একেক নৃগোষ্ঠী ও একেক অনুষ্ঠানের কথা মনে করিয়ে দেয়। কেনিয়ায় সোপ স্টোনে খোদাই করা ডেকোরেশন পিস তৈরি হয়, যা পুরো আফ্রিকা ও বিশ্বে সমাদৃত।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
৩ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
৩ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
৩ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
৩ দিন আগে