সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
পাহাড় বেয়ে নেমেছে ঠেগা ছড়া। এসে মিলিত হয়েছে কর্ণফুলীতে। তাই ছড়ার নামেই ঠেগার নামকরণ।
ভারতের মিজোরামের সীমান্তঘেঁষা ঠেগা হয়ে নেমে আসে কর্ণফুলীর মূল স্রোত। মিজোরামের ব্লু মাউন্টেন বা নীল পাহাড়ের কিংবা লুসাই পাহাড়ের স্রোতোধারা এসে মিশেছে বাংলাদেশের ঠেগামুখ সীমান্তে। নদীর দুপাশে দুই দেশেই চাকমাদের বসতি। তাই সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট। ছোট কর্ণফুলীর দূরত্ব এখানে বাধা হতে পারেনি।
নীলকন্ঠ পাখির মতো সীমান্তে তেমন কড়াকড়ি নেই। সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফ পারস্পরিক বন্ধুত্ব রয়েছে। জোন অধিনায়কের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় মিলল ঠেগামুখ দেখার সুযোগ।
বড় হরিণা, মরা থেগা, থেগাসহ একাধিক সীমান্ত চৌকিতে বিজিবি জওয়ানদের উপস্থিতি। দিন-রাত টহল চলে এখানকার সীমান্তে। কর্ণফুলীর উজান নদীর মাঝ বরাবর ‘শূন্যরেখা’। ভারত ও বাংলাদেশের পতাকাবাহী নৌকা চলছে নদীর পথে। বছরের পর বছর ধরে এখানে দুই দেশের মানুষ বসবাস করছে। তবে ছোট হরিণার পর নিরাপত্তার কারণে বাঙালিদের চলাচল করার অনুমতি নেই।
ছোট হরিণা থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে ঠেগামুখ সীমান্ত। সীমান্তের পাশেই ঠেগামুখ বাজার ও ঠেগামুখ বিওপি। পরিপাটি ঠেগামুখ ক্যাম্প। ক্যাম্পের গোলঘরে বসেই চোখে পড়ে মিজোরামের নীল পাহাড়, মিজো গ্রাম আর সবুজ দৃশ্যপট।
বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় নৌবন্দরের তালিকায় রয়েছে ঠেগামুখ। রয়েছে এর বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। হ্রদ আর ছোট পাহাড়ের শহর রাঙামাটি। এর বেশ বড় অংশজুড়ে সংরক্ষিত বন, অনাবিষ্কৃত ঝরনা, অদেখা পাহাড় ও নৃতাত্ত্বিক মানুষের বসবাস।
কান্ট্রি বোটের ইঞ্জিনের শব্দে নিরন্তর চলা। জলের দুপাশে সাজানো দৃশ্যের চেয়ে বেশি কিছু। হ্রদের সবুজাভ জলের রং আগের দিনের বৃষ্টিতে কিছুটা ম্লান হয়েছে।
রাঙামাটি থেকে শুভলংয়ের বিরতি শেষ করে সরাসরি বরকলে যাত্রা। রাঙামাটি থেকে ছোট হরিণা পর্যন্ত ৭৬ কিলোমিটার জলের পথ। এই পথে কেবল অচেনা পাখি, পাহাড় আর জলের মিলনের সুর। বরকল বাজার থেকে ছোট হরিণার পথে রওনা দিতে বিকেল প্রায় ছুঁই ছুঁই। এর আগে লংগদু হয়ে আমাদের যাত্রা হতো শুভলং বাজার। সেখান থেকে দুপুর আড়াইটায় বরকলের শেষ লঞ্চ ধরতে হতো। বরকল হয়ে হরিণা যেতে সময় লাগবে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। এবার লেকের পানি কমে যাওয়ায় রাঙামাটি থেকেই সরাসরি কান্ট্রি বোটে বরকল।
ক্লান্তিহীন প্রায় ১০ ঘণ্টার ভ্রমণ। কাপ্তাই লেকের কোল ঘেঁষে থাকা পাহাড়, দলছুট বাড়ি, নীল জলরাশির ভিড়ে কোথাও কোথাও পাখির ঝাঁক। বরকলের পাহাড়চূড়ায় সূর্যটা কত সুন্দর হতে পারে! সেই সঙ্গে শেষ বিকেলের মায়াবী আলোয় বরকল বাজার পাড়ি দিতে না দিতেই চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্যপট।
পাহাড়ের কোলে জুমঘর। মেঘের ছায়ায় ঢেকে আছে গ্রামগুলো। কাশবন ঘেঁষে পাহাড়ের কোলজুড়ে রংধনুর রেখা সবুজ পাহাড়কে যেন আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। শেষ বিকেলের শান্ত জলপথ। সন্ধ্যার সোনালি উজ্জ্বল আকাশ! এ যেন পূর্ণিমার আলোয় ডুবে থাকা নীরব-নিঝুম পাহাড়। কর্ণফুলীর দুই ধারে এমন নিরবচ্ছিন্ন পাহাড়ের সারি আর কোথাও বোধ হয় পাওয়া যাবে না। তবে লেকের পানি কম হওয়ায় কোথাও কোথাও আটকে যায় বোটের তলা।
শেষ বিকেলে ছোট হরিণার আগেই ভূষণছড়ায় নামতে হলো। পানি কম হওয়ায় ওদিকটায় যাওয়া সম্ভব হবে না। ভূষণছড়ায় নেমে ভাড়ায় চালিত বাইকে ছোট হরিণাঘাট। তারপর নৌকায় পার হলেই ছোট হরিণা বাজার। নেমেই ক্যাম্পে ছোট হরিণা বিজিবি জোন অধিনায়কের আমন্ত্রণে চা আর ঝাল খাবারে আয়োজনে শামিল হয়েছি।
ক্যাম্পের ভেতরে বাঁশ দিয়ে সাজানো দারুণ শৈলীর বৈঠকখানা। সেই দীর্ঘ নৌযাত্রার পর অসাধারণ সন্ধ্যার ভোজ। এত দুর্গমেও অসাধারণ খাবারের স্বাদ।
ক্যাম্প থেকে বিদায় নিয়ে বাজারের দিকে রওনা হলাম। সেখানে আমাদের রাতের থাকার জায়গা। পাহাড় আর নদীঘেঁষা ছোট হরিণা বাজার। ধবধবে জোছনায় আলোকিত পুরো সীমান্ত। নদীর জলে ধুয়ে যাচ্ছে চাঁদের আলো। কী মুগ্ধ করা রাত! পাহাড় ঘেঁষে থাকা চাঁদের আলোয় রুপালি জলের ধারা। তীব্র স্রোতে ভেসে যাওয়ার এই তো সময়।
পরদিন সকাল হতেই ঠেগামুখে যাওয়ার প্রস্তুতি। যাত্রার সঙ্গী বিশেষ ইঞ্জিনচালিত বার্মিজ বোট। দেশি বোটের চেয়ে এর গতি অনেক বেশি। তীব্র স্রোতের বিপরীতে ছুটে চলে বার্মিজ বোট। সামনে যেতেই সুউচ্চ টারশিয়ান যুগের পাহাড়। শান্ত জলের ধারায় ছুটে চলেছি বার্মিজ বোটে।
পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে পাহাড়িদের বসতি। বড় হরিণা ক্যাম্পে ক্ষণিকের বিরতি। ক্যাম্পের উল্টো দিকে জিরার খামার। প্রায় এক ঘণ্টা চলার পর দেখা মেলে মিজোরাম সীমান্ত।
বিএসএফের নিরাপত্তা চৌকি। সুদূরে উঁচু পাহাড়ের সীমানা। পথে পথে মিজোদের যাতায়াত। কর্ণফুলীর পাড় ঘেঁষে অচেনা মিজো গ্রামের নান্দনিক বসতবাড়ি। ওপারে সীমান্তে মেলে নাগরিক জীবনের সব সুবিধা। মিজোরামে পাকা সড়ক, বিদ্যুৎ সবই আছে। কোথাও কোথাও ভারতীয় পতাকাবাহী নৌকায় মিজোদের যাতায়াত।
মিজোরামের সীমান্তঘেঁষা শিলচর বাজারে শনিবার হাট বসে। হাট থেকে সদাই কিনে ফিরছে মানুষ। শুধু মিজোরাই নয়, শিলচর হাটে বাংলাদেশ থেকে পাহাড়িরাও যায়। আবার বাজার শেষ করে ঠেগামুখে ফিরে আসে। ওপার থেকে মিজোগ্রামের বাসিন্দারাও এপারের ঠেগামুখ থেকে বাজার করে নিয়ে যায়। মাঝখানে কেবল একটি নদীর দূরত্ব।
ঠেগামুখ বাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। বাজারটি সরকারিকরণ হয় ২০০৩ সালে। সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০টি দোকান। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। এই দুই দিন দূর-দূরান্তের বাসিন্দারা বাজারে এসে মিলিত হয়। দুই দেশের মানুষের উপস্থিতিতে সরগরম থাকে হাট।
দোকানদার রুমা চাকমা (৩২) জানান, ‘আট বছর ধরে এখানে দোকান করছি। ভালোই বেচাকেনা হয়। সীমান্ত কাছে হওয়ায় বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য থাকে।’
রুমা আরও বলেন, ‘দুই পাড়ের মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। ঠেগামুখ বাজারে নিত্যপণ্য কিনে আবার ফিরে যাচ্ছে মিজোরামের নাগরিকেরা। বছরের পর বছর এখানে এভাবে চলে লেনদেন।’
দীর্ঘ সময় ঠেগামুখ বাজারে কাটিয়ে আবার রওনা হলাম ছোট হরিণার পথে। হরিণা ক্যাম্পে সিও-র আমন্ত্রণে দুপুরের উদরপূর্তি। নদীর বোয়াল, কাতলসহ বিভিন্ন উপাদেয় খাবার মধ্যাহ্নভোজে। শেষ বিকেলের মায়াবী আলোয় কর্ণফুলী নদীর স্রোতে ভেসে চলা। দিন শেষে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নেমে যাচ্ছে শেষ বিকেলের সূর্য। তার পূর্বাকাশে পাহাড়ে হেলান দিয়েছে পূর্ণিমার ঝকঝকে বড় চাঁদ। চাঁদের আলোয় ডুবে থাকে চিত্রপটের মতোই সুন্দর হরিণা, শ্রীনগর, নীলকণ্ঠ, মিজোরাম পাহাড় এবং ঠেগামুখ।
প্রয়োজনীয় তথ্য
বিশেষ অনুমতি ছাড়া ঠেগামুখে যাওয়া যায় না। অনুমতি পেলে প্রথমে জলযানে রাঙামাটি থেকে বরকল। সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। বরকল থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার পথ ছোট হরিণা। তবে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় সময় আরও বেশি লাগতে পারে।
ছোট হরিণায় থাকার তেমন ভালো আয়োজন নেই। থাকতে হবে দোতলা বোর্ডিংয়ে। শৌচাগারের সুবিধা নেই। তবে খাবারের ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। বাজারের বাথুয়ায় রাখাইন খাবারের ষোলোআনা স্বাদ পাওয়া যায়। ঠেগামুখে যাওয়ার আপাতত অনুমতি নেই। বার্মিজ বোটে সময় লাগবে দুই ঘণ্টা।
পাহাড় বেয়ে নেমেছে ঠেগা ছড়া। এসে মিলিত হয়েছে কর্ণফুলীতে। তাই ছড়ার নামেই ঠেগার নামকরণ।
ভারতের মিজোরামের সীমান্তঘেঁষা ঠেগা হয়ে নেমে আসে কর্ণফুলীর মূল স্রোত। মিজোরামের ব্লু মাউন্টেন বা নীল পাহাড়ের কিংবা লুসাই পাহাড়ের স্রোতোধারা এসে মিশেছে বাংলাদেশের ঠেগামুখ সীমান্তে। নদীর দুপাশে দুই দেশেই চাকমাদের বসতি। তাই সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট। ছোট কর্ণফুলীর দূরত্ব এখানে বাধা হতে পারেনি।
নীলকন্ঠ পাখির মতো সীমান্তে তেমন কড়াকড়ি নেই। সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফ পারস্পরিক বন্ধুত্ব রয়েছে। জোন অধিনায়কের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় মিলল ঠেগামুখ দেখার সুযোগ।
বড় হরিণা, মরা থেগা, থেগাসহ একাধিক সীমান্ত চৌকিতে বিজিবি জওয়ানদের উপস্থিতি। দিন-রাত টহল চলে এখানকার সীমান্তে। কর্ণফুলীর উজান নদীর মাঝ বরাবর ‘শূন্যরেখা’। ভারত ও বাংলাদেশের পতাকাবাহী নৌকা চলছে নদীর পথে। বছরের পর বছর ধরে এখানে দুই দেশের মানুষ বসবাস করছে। তবে ছোট হরিণার পর নিরাপত্তার কারণে বাঙালিদের চলাচল করার অনুমতি নেই।
ছোট হরিণা থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে ঠেগামুখ সীমান্ত। সীমান্তের পাশেই ঠেগামুখ বাজার ও ঠেগামুখ বিওপি। পরিপাটি ঠেগামুখ ক্যাম্প। ক্যাম্পের গোলঘরে বসেই চোখে পড়ে মিজোরামের নীল পাহাড়, মিজো গ্রাম আর সবুজ দৃশ্যপট।
বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় নৌবন্দরের তালিকায় রয়েছে ঠেগামুখ। রয়েছে এর বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। হ্রদ আর ছোট পাহাড়ের শহর রাঙামাটি। এর বেশ বড় অংশজুড়ে সংরক্ষিত বন, অনাবিষ্কৃত ঝরনা, অদেখা পাহাড় ও নৃতাত্ত্বিক মানুষের বসবাস।
কান্ট্রি বোটের ইঞ্জিনের শব্দে নিরন্তর চলা। জলের দুপাশে সাজানো দৃশ্যের চেয়ে বেশি কিছু। হ্রদের সবুজাভ জলের রং আগের দিনের বৃষ্টিতে কিছুটা ম্লান হয়েছে।
রাঙামাটি থেকে শুভলংয়ের বিরতি শেষ করে সরাসরি বরকলে যাত্রা। রাঙামাটি থেকে ছোট হরিণা পর্যন্ত ৭৬ কিলোমিটার জলের পথ। এই পথে কেবল অচেনা পাখি, পাহাড় আর জলের মিলনের সুর। বরকল বাজার থেকে ছোট হরিণার পথে রওনা দিতে বিকেল প্রায় ছুঁই ছুঁই। এর আগে লংগদু হয়ে আমাদের যাত্রা হতো শুভলং বাজার। সেখান থেকে দুপুর আড়াইটায় বরকলের শেষ লঞ্চ ধরতে হতো। বরকল হয়ে হরিণা যেতে সময় লাগবে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। এবার লেকের পানি কমে যাওয়ায় রাঙামাটি থেকেই সরাসরি কান্ট্রি বোটে বরকল।
ক্লান্তিহীন প্রায় ১০ ঘণ্টার ভ্রমণ। কাপ্তাই লেকের কোল ঘেঁষে থাকা পাহাড়, দলছুট বাড়ি, নীল জলরাশির ভিড়ে কোথাও কোথাও পাখির ঝাঁক। বরকলের পাহাড়চূড়ায় সূর্যটা কত সুন্দর হতে পারে! সেই সঙ্গে শেষ বিকেলের মায়াবী আলোয় বরকল বাজার পাড়ি দিতে না দিতেই চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্যপট।
পাহাড়ের কোলে জুমঘর। মেঘের ছায়ায় ঢেকে আছে গ্রামগুলো। কাশবন ঘেঁষে পাহাড়ের কোলজুড়ে রংধনুর রেখা সবুজ পাহাড়কে যেন আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। শেষ বিকেলের শান্ত জলপথ। সন্ধ্যার সোনালি উজ্জ্বল আকাশ! এ যেন পূর্ণিমার আলোয় ডুবে থাকা নীরব-নিঝুম পাহাড়। কর্ণফুলীর দুই ধারে এমন নিরবচ্ছিন্ন পাহাড়ের সারি আর কোথাও বোধ হয় পাওয়া যাবে না। তবে লেকের পানি কম হওয়ায় কোথাও কোথাও আটকে যায় বোটের তলা।
শেষ বিকেলে ছোট হরিণার আগেই ভূষণছড়ায় নামতে হলো। পানি কম হওয়ায় ওদিকটায় যাওয়া সম্ভব হবে না। ভূষণছড়ায় নেমে ভাড়ায় চালিত বাইকে ছোট হরিণাঘাট। তারপর নৌকায় পার হলেই ছোট হরিণা বাজার। নেমেই ক্যাম্পে ছোট হরিণা বিজিবি জোন অধিনায়কের আমন্ত্রণে চা আর ঝাল খাবারে আয়োজনে শামিল হয়েছি।
ক্যাম্পের ভেতরে বাঁশ দিয়ে সাজানো দারুণ শৈলীর বৈঠকখানা। সেই দীর্ঘ নৌযাত্রার পর অসাধারণ সন্ধ্যার ভোজ। এত দুর্গমেও অসাধারণ খাবারের স্বাদ।
ক্যাম্প থেকে বিদায় নিয়ে বাজারের দিকে রওনা হলাম। সেখানে আমাদের রাতের থাকার জায়গা। পাহাড় আর নদীঘেঁষা ছোট হরিণা বাজার। ধবধবে জোছনায় আলোকিত পুরো সীমান্ত। নদীর জলে ধুয়ে যাচ্ছে চাঁদের আলো। কী মুগ্ধ করা রাত! পাহাড় ঘেঁষে থাকা চাঁদের আলোয় রুপালি জলের ধারা। তীব্র স্রোতে ভেসে যাওয়ার এই তো সময়।
পরদিন সকাল হতেই ঠেগামুখে যাওয়ার প্রস্তুতি। যাত্রার সঙ্গী বিশেষ ইঞ্জিনচালিত বার্মিজ বোট। দেশি বোটের চেয়ে এর গতি অনেক বেশি। তীব্র স্রোতের বিপরীতে ছুটে চলে বার্মিজ বোট। সামনে যেতেই সুউচ্চ টারশিয়ান যুগের পাহাড়। শান্ত জলের ধারায় ছুটে চলেছি বার্মিজ বোটে।
পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে পাহাড়িদের বসতি। বড় হরিণা ক্যাম্পে ক্ষণিকের বিরতি। ক্যাম্পের উল্টো দিকে জিরার খামার। প্রায় এক ঘণ্টা চলার পর দেখা মেলে মিজোরাম সীমান্ত।
বিএসএফের নিরাপত্তা চৌকি। সুদূরে উঁচু পাহাড়ের সীমানা। পথে পথে মিজোদের যাতায়াত। কর্ণফুলীর পাড় ঘেঁষে অচেনা মিজো গ্রামের নান্দনিক বসতবাড়ি। ওপারে সীমান্তে মেলে নাগরিক জীবনের সব সুবিধা। মিজোরামে পাকা সড়ক, বিদ্যুৎ সবই আছে। কোথাও কোথাও ভারতীয় পতাকাবাহী নৌকায় মিজোদের যাতায়াত।
মিজোরামের সীমান্তঘেঁষা শিলচর বাজারে শনিবার হাট বসে। হাট থেকে সদাই কিনে ফিরছে মানুষ। শুধু মিজোরাই নয়, শিলচর হাটে বাংলাদেশ থেকে পাহাড়িরাও যায়। আবার বাজার শেষ করে ঠেগামুখে ফিরে আসে। ওপার থেকে মিজোগ্রামের বাসিন্দারাও এপারের ঠেগামুখ থেকে বাজার করে নিয়ে যায়। মাঝখানে কেবল একটি নদীর দূরত্ব।
ঠেগামুখ বাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। বাজারটি সরকারিকরণ হয় ২০০৩ সালে। সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০টি দোকান। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। এই দুই দিন দূর-দূরান্তের বাসিন্দারা বাজারে এসে মিলিত হয়। দুই দেশের মানুষের উপস্থিতিতে সরগরম থাকে হাট।
দোকানদার রুমা চাকমা (৩২) জানান, ‘আট বছর ধরে এখানে দোকান করছি। ভালোই বেচাকেনা হয়। সীমান্ত কাছে হওয়ায় বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য থাকে।’
রুমা আরও বলেন, ‘দুই পাড়ের মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। ঠেগামুখ বাজারে নিত্যপণ্য কিনে আবার ফিরে যাচ্ছে মিজোরামের নাগরিকেরা। বছরের পর বছর এখানে এভাবে চলে লেনদেন।’
দীর্ঘ সময় ঠেগামুখ বাজারে কাটিয়ে আবার রওনা হলাম ছোট হরিণার পথে। হরিণা ক্যাম্পে সিও-র আমন্ত্রণে দুপুরের উদরপূর্তি। নদীর বোয়াল, কাতলসহ বিভিন্ন উপাদেয় খাবার মধ্যাহ্নভোজে। শেষ বিকেলের মায়াবী আলোয় কর্ণফুলী নদীর স্রোতে ভেসে চলা। দিন শেষে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নেমে যাচ্ছে শেষ বিকেলের সূর্য। তার পূর্বাকাশে পাহাড়ে হেলান দিয়েছে পূর্ণিমার ঝকঝকে বড় চাঁদ। চাঁদের আলোয় ডুবে থাকে চিত্রপটের মতোই সুন্দর হরিণা, শ্রীনগর, নীলকণ্ঠ, মিজোরাম পাহাড় এবং ঠেগামুখ।
প্রয়োজনীয় তথ্য
বিশেষ অনুমতি ছাড়া ঠেগামুখে যাওয়া যায় না। অনুমতি পেলে প্রথমে জলযানে রাঙামাটি থেকে বরকল। সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। বরকল থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার পথ ছোট হরিণা। তবে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় সময় আরও বেশি লাগতে পারে।
ছোট হরিণায় থাকার তেমন ভালো আয়োজন নেই। থাকতে হবে দোতলা বোর্ডিংয়ে। শৌচাগারের সুবিধা নেই। তবে খাবারের ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। বাজারের বাথুয়ায় রাখাইন খাবারের ষোলোআনা স্বাদ পাওয়া যায়। ঠেগামুখে যাওয়ার আপাতত অনুমতি নেই। বার্মিজ বোটে সময় লাগবে দুই ঘণ্টা।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
২ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
২ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
২ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
২ দিন আগে