রিমন রহমান, রাজশাহী
এক যুগ আগের কথা। মিজানুর রহমান আর ইসমাইল হোসেনের মাথায় ঢুকল ভ্রমণের পোকা। কিন্তু মাত্র দুজনে তো আর দূরে কোথাও গিয়ে ভালো লাগবে না। স্কুল-কলেজের বন্ধুদের ধরলেন। শুনেই অনেকের ‘না’। ঘুরতে যাওয়া মানে পয়সার অপচয়। দু-একজনের হাতে অপচয় করার মতো পয়সাও নেই। মিজানুর নিজেই টাকা ধার দিলেন দুজনকে। দল হলো নয়জনের।
২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর। যাত্রা শুরু বান্দরবানের নীলগিরি আর কেওক্রাডংয়ের উদ্দেশে। দলের কেউই জানতেন না ট্রেকিং কী, কেওক্রাডং যাওয়া যায় কি না। ৩০ নভেম্বর সকালে চাঁদের গাড়িতে শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি হয়ে দলটি গেল কাইখংঝিরি। তখনো সাঙ্গুর ওপর ব্রিজ হয়নি। নৌকায় রুমা বাজারে গিয়ে চাঁদের গাড়ি করে বগা লেকের নিচে যখন তাঁরা পৌঁছালেন, তখন রাত। অন্ধকারে প্রায় ৪৫ মিনিট হেঁটে বগা লেকে ওঠা ছিল এক বিস্ময়। পরদিন চিংড়ি ঝরনা আর কেওক্রাডং ঘুরে সোজা কক্সবাজার। প্রথম ভ্রমণেই পাওয়া গিয়েছিল বান্দরবানের রেমাক্রি আর নাফাখুমের সন্ধান। কিন্তু সেবার যাওয়া হয়নি।
পরের বছরের ঠিক ২৯ নভেম্বর আবার রওনা দিলেন পাহাড়ের প্রতি। এবার আর কাউকে জোর করতে হয়নি মিজানুরকে। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলে যোগ দিলেন। একজন বেড়ে দলের সদস্যসংখ্যা এবার হলো ১০ জন। তার পর থেকে দলে উড়নচণ্ডীদের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন এই দলে আছেন ৪৪ জন। তার মধ্যে ১৯ জনই চিকিৎসক। বাকিরা ব্যবসায়ী আর শিক্ষক। প্রথম ভ্রমণের উদ্যোগ নেওয়া ডা. মিজানুর রহমান রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। আর ডা. ইসমাইল হোসেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। মিজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুরে। সেখান থেকে ভ্রমণ শুরু হলেও এখন এ দলের সদস্যরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন সারা দেশেই। ভ্রমণের সময় ঠিক হলে সবাই একত্র হন। ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ভ্রমণের জন্য চিকিৎসকেরা সচ্ছল হলেও অল্প অল্প পয়সা জমিয়ে যোগ দেন অন্যরা। শিক্ষকদের কেউ পরীক্ষার বাড়তি খাতা দেখেন, রিকশায় না উঠে হেঁটে পয়সা জমান!
দলের নাম ট্যুর মুরল্যান্ড
মুরল্যান্ড মানে উঁচু তৃণভূমি। প্রথম ভ্রমণটা ছিল তেমনই পাহাড়ে। তাই প্রথম ভ্রমণের আগেই টি-শার্ট বানিয়ে তাতে নাম লিখে দেওয়া হয় ‘ট্যুর মুরল্যান্ড’। ২০১৯ সালে লাদাখ যাওয়ার আগে রাজশাহীর আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক দলে যোগ দেন। বাড়তে থাকে ভ্রমণকারীর সংখ্যা। ২০২১ সালে ট্যুর মুরল্যান্ডের এক দশক পূর্তি উপলক্ষে কেক কাটতে এক হয়েছিলেন সবাই। তখন হুট করেই একটি কমিটি গঠন করা হয়। এর সভাপতি হন নওগাঁ মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান ডা. শরিফ চৌধুরী। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমানকে। সম্প্রতি ট্যুর মুরল্যান্ড তাদের এক দশক পূর্তি উদ্যাপন করেছে।
১২ বছরে ৩৬ ভ্রমণ
এক দশকে ৩৬টি ভ্রমণের আয়োজন করেছে ট্যুর মুরল্যান্ড। এর মধ্যে তিনটি ভ্রমণ ছিল দেশের বাইরে। প্রথম ভ্রমণে শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, কাইখংঝিরি, বগা লেক, চিংড়ি ঝরনা, কেওক্রাডং আর কক্সবাজারের সাগরসৈকত ভ্রমণের পর দ্বিতীয় বছরে যাওয়া হয়েছিল তাজিংডং, নাফাকুম আর রাঙামাটি। নাফাকুম যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙেছিল ডা. আহমেদ রায়হান শরীফের।
গামছা দিয়ে হাত বেঁধে সাত দিন শুধু পেইন কিলার খেয়েই চালিয়ে গিয়েছিলেন ভ্রমণ। ২০১৩ সালে ছিল দার্জিলিং, মিরিখ আর কালিম্পম ভ্রমণ। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হরতাল-অবরোধের মধ্যেও পঞ্চম ট্যুরে জাদিপাই আর ডাবলফলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছিলেন দলের সদস্যরা। একই বছরের অক্টোবরে সাজেক, মিরসরাই। নবম ট্যুরে ছিল হামহাম, পাথাড়িয়া পাহাড়ের চার পাহাড় আর টাঙ্গুয়ার হাওর দেখা। ১২তম ট্যুরে ২০১৮ সালে প্রথম ক্যাম্পিং ছিল সোনাদিয়া দ্বীপে। এ ট্যুরে নাফাখুম থেকে ফেরার পথে একে-৪৭ হাতে থাকা আরাকান আর্মির সামনে পড়ে যান দলের সদস্যরা। ১৩তম ট্যুর আর বিরামপুরকেন্দ্রিক থাকেনি। যুক্ত হন রাজশাহীর একদল ভ্রমণপিয়াসি চিকিৎসক। তাঁরা যান লাদাখ। ট্যুর মুরল্যান্ড পায় নতুন গতি। যেখানে প্রথম ৮ বছরে ট্যুর হয় ১২টি, সেখানে পরবর্তী ৪ বছরে ট্যুরের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬টিতে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে আলীকদম ঘুরে এসেছে দলটি।
ট্যুর মুরল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মিজানুর রহমানের মতে, ভ্রমণ করলে তাঁরা স্কুলজীবনে ফিরে যান। পাহাড়-পর্বতে ভ্রমণে গেলে খুব টাকারও দরকার হয় না। সেখানে চাইলেও টাকা খরচ করা যাবে না। খুবই অল্প পয়সায় ভ্রমণ করা যায়। ভ্রমণে যেটুকু খরচ হয়, তা নিজের ভালো থাকার জন্যই বিনিয়োগ। তবে ভ্রমণ করতে হলে আগে থেকে ওই স্থানটি সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হবে। ইন্টারনেট ঘেঁটে সবকিছু জেনে নিয়ে পরিকল্পনা করে যেতে হবে। তাঁরা ভ্রমণের সময় এমনভাবে নির্ধারণ করেন, যেন আকাশে চাঁদ থাকে। তাহলে প্রকৃতিকে আরও ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। এই স্মৃতি সব সময় মনে জ্বলজ্বল করে।
সামাজিক কর্মকাণ্ড
ঘুরতে গিয়ে শুধু ঘুরেই চলে আসেন না দলের সদস্যরা। দুর্গম পাহাড়ের বাসিন্দাদের দিয়ে আসেন বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা। বিতরণ করা হয় চশমা আর শীতবস্ত্র। সম্প্রতি বান্দরবানের আলীকদম ভ্রমণে যাওয়া দলের চিকিৎসকেরা দুছড়ি বাজার, মেনিয়াংপাড়া, খেমচংপাড়া, থংঐপাড়া ও রাঅংপাড়ায় মেডিকেল ক্যাম্প করে এসেছেন। ট্যুর মুরল্যান্ডের অর্থায়নে থংঐপাড়ায় দূরের ঝরনা থেকে বাসিন্দাদের জন্য পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামে চিকিৎসকদের ফোন নম্বর দিয়ে আসা হয়েছে। শারীরিক সমস্যায় পড়লে তাঁরা পরামর্শ নিতে ফোন করেন। রাজশাহীতে একটি পাঠাগার করার কাজ চলছে। দলের সদস্যরা খেলাধুলাও করেন।
ব্যাকপ্যাক
দেশবরেণ্য অভিযাত্রীদের এক ছাদে নিয়ে এসে ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার এক দশক পূর্তির আয়োজন করেছে ট্যুর মুরল্যান্ড। এতে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, রাজশাহী তো বটেই; দেশেই এ ধরনের আয়োজন প্রথম। অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্যাকপ্যাক’। এ আয়োজনে অংশ নেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক এবং সুমেরু ও অ্যান্টার্কটিকা অভিযাত্রী ইনাম আল হক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ডা. মামুন হুসাইন, দুবার এভারেস্ট আরোহণকারী একমাত্র বাংলাদেশি এম এ মুহিত, পর্বতারোহী, আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র গবেষক মীর শামসুল আলম বাবু, বিশ্ব পরিব্রাজক ও সুমেরু অভিযাত্রী তারেক অণু, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে বড় অবদান রাখা সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম, মোটরসাইক্লিস্ট ও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে খারদুংলা জয় করা বাইকার আবদুল মোমেন রোহিত, বাংলা চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু ডা. সাকলায়েন রাসেল, ভ্রমণকন্যার সভাপতি ডা. সাকিরা হক, আইরিশ অভিযাত্রী মিস জেসিকা, হেঁটে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করা ডা. বাবর আলী, ভ্রমণলেখক কালপুরুষ অপু কথা, পর্বতারোহী কাওছার রূপক, সালেহীন আরশাদী, ইকরামুল হাসান শাকিল, আ ন ম জাফর সাদেক, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ট্রেকার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, বাংলা চ্যানেল বিজয়ী আরেক সাঁতারু ডা. জ্যানজিবুল তারেকসহ আরও অনেকে।
এক যুগ আগের কথা। মিজানুর রহমান আর ইসমাইল হোসেনের মাথায় ঢুকল ভ্রমণের পোকা। কিন্তু মাত্র দুজনে তো আর দূরে কোথাও গিয়ে ভালো লাগবে না। স্কুল-কলেজের বন্ধুদের ধরলেন। শুনেই অনেকের ‘না’। ঘুরতে যাওয়া মানে পয়সার অপচয়। দু-একজনের হাতে অপচয় করার মতো পয়সাও নেই। মিজানুর নিজেই টাকা ধার দিলেন দুজনকে। দল হলো নয়জনের।
২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর। যাত্রা শুরু বান্দরবানের নীলগিরি আর কেওক্রাডংয়ের উদ্দেশে। দলের কেউই জানতেন না ট্রেকিং কী, কেওক্রাডং যাওয়া যায় কি না। ৩০ নভেম্বর সকালে চাঁদের গাড়িতে শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি হয়ে দলটি গেল কাইখংঝিরি। তখনো সাঙ্গুর ওপর ব্রিজ হয়নি। নৌকায় রুমা বাজারে গিয়ে চাঁদের গাড়ি করে বগা লেকের নিচে যখন তাঁরা পৌঁছালেন, তখন রাত। অন্ধকারে প্রায় ৪৫ মিনিট হেঁটে বগা লেকে ওঠা ছিল এক বিস্ময়। পরদিন চিংড়ি ঝরনা আর কেওক্রাডং ঘুরে সোজা কক্সবাজার। প্রথম ভ্রমণেই পাওয়া গিয়েছিল বান্দরবানের রেমাক্রি আর নাফাখুমের সন্ধান। কিন্তু সেবার যাওয়া হয়নি।
পরের বছরের ঠিক ২৯ নভেম্বর আবার রওনা দিলেন পাহাড়ের প্রতি। এবার আর কাউকে জোর করতে হয়নি মিজানুরকে। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলে যোগ দিলেন। একজন বেড়ে দলের সদস্যসংখ্যা এবার হলো ১০ জন। তার পর থেকে দলে উড়নচণ্ডীদের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন এই দলে আছেন ৪৪ জন। তার মধ্যে ১৯ জনই চিকিৎসক। বাকিরা ব্যবসায়ী আর শিক্ষক। প্রথম ভ্রমণের উদ্যোগ নেওয়া ডা. মিজানুর রহমান রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। আর ডা. ইসমাইল হোসেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। মিজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুরে। সেখান থেকে ভ্রমণ শুরু হলেও এখন এ দলের সদস্যরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন সারা দেশেই। ভ্রমণের সময় ঠিক হলে সবাই একত্র হন। ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ভ্রমণের জন্য চিকিৎসকেরা সচ্ছল হলেও অল্প অল্প পয়সা জমিয়ে যোগ দেন অন্যরা। শিক্ষকদের কেউ পরীক্ষার বাড়তি খাতা দেখেন, রিকশায় না উঠে হেঁটে পয়সা জমান!
দলের নাম ট্যুর মুরল্যান্ড
মুরল্যান্ড মানে উঁচু তৃণভূমি। প্রথম ভ্রমণটা ছিল তেমনই পাহাড়ে। তাই প্রথম ভ্রমণের আগেই টি-শার্ট বানিয়ে তাতে নাম লিখে দেওয়া হয় ‘ট্যুর মুরল্যান্ড’। ২০১৯ সালে লাদাখ যাওয়ার আগে রাজশাহীর আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক দলে যোগ দেন। বাড়তে থাকে ভ্রমণকারীর সংখ্যা। ২০২১ সালে ট্যুর মুরল্যান্ডের এক দশক পূর্তি উপলক্ষে কেক কাটতে এক হয়েছিলেন সবাই। তখন হুট করেই একটি কমিটি গঠন করা হয়। এর সভাপতি হন নওগাঁ মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান ডা. শরিফ চৌধুরী। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমানকে। সম্প্রতি ট্যুর মুরল্যান্ড তাদের এক দশক পূর্তি উদ্যাপন করেছে।
১২ বছরে ৩৬ ভ্রমণ
এক দশকে ৩৬টি ভ্রমণের আয়োজন করেছে ট্যুর মুরল্যান্ড। এর মধ্যে তিনটি ভ্রমণ ছিল দেশের বাইরে। প্রথম ভ্রমণে শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, কাইখংঝিরি, বগা লেক, চিংড়ি ঝরনা, কেওক্রাডং আর কক্সবাজারের সাগরসৈকত ভ্রমণের পর দ্বিতীয় বছরে যাওয়া হয়েছিল তাজিংডং, নাফাকুম আর রাঙামাটি। নাফাকুম যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙেছিল ডা. আহমেদ রায়হান শরীফের।
গামছা দিয়ে হাত বেঁধে সাত দিন শুধু পেইন কিলার খেয়েই চালিয়ে গিয়েছিলেন ভ্রমণ। ২০১৩ সালে ছিল দার্জিলিং, মিরিখ আর কালিম্পম ভ্রমণ। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হরতাল-অবরোধের মধ্যেও পঞ্চম ট্যুরে জাদিপাই আর ডাবলফলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছিলেন দলের সদস্যরা। একই বছরের অক্টোবরে সাজেক, মিরসরাই। নবম ট্যুরে ছিল হামহাম, পাথাড়িয়া পাহাড়ের চার পাহাড় আর টাঙ্গুয়ার হাওর দেখা। ১২তম ট্যুরে ২০১৮ সালে প্রথম ক্যাম্পিং ছিল সোনাদিয়া দ্বীপে। এ ট্যুরে নাফাখুম থেকে ফেরার পথে একে-৪৭ হাতে থাকা আরাকান আর্মির সামনে পড়ে যান দলের সদস্যরা। ১৩তম ট্যুর আর বিরামপুরকেন্দ্রিক থাকেনি। যুক্ত হন রাজশাহীর একদল ভ্রমণপিয়াসি চিকিৎসক। তাঁরা যান লাদাখ। ট্যুর মুরল্যান্ড পায় নতুন গতি। যেখানে প্রথম ৮ বছরে ট্যুর হয় ১২টি, সেখানে পরবর্তী ৪ বছরে ট্যুরের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬টিতে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে আলীকদম ঘুরে এসেছে দলটি।
ট্যুর মুরল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মিজানুর রহমানের মতে, ভ্রমণ করলে তাঁরা স্কুলজীবনে ফিরে যান। পাহাড়-পর্বতে ভ্রমণে গেলে খুব টাকারও দরকার হয় না। সেখানে চাইলেও টাকা খরচ করা যাবে না। খুবই অল্প পয়সায় ভ্রমণ করা যায়। ভ্রমণে যেটুকু খরচ হয়, তা নিজের ভালো থাকার জন্যই বিনিয়োগ। তবে ভ্রমণ করতে হলে আগে থেকে ওই স্থানটি সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হবে। ইন্টারনেট ঘেঁটে সবকিছু জেনে নিয়ে পরিকল্পনা করে যেতে হবে। তাঁরা ভ্রমণের সময় এমনভাবে নির্ধারণ করেন, যেন আকাশে চাঁদ থাকে। তাহলে প্রকৃতিকে আরও ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। এই স্মৃতি সব সময় মনে জ্বলজ্বল করে।
সামাজিক কর্মকাণ্ড
ঘুরতে গিয়ে শুধু ঘুরেই চলে আসেন না দলের সদস্যরা। দুর্গম পাহাড়ের বাসিন্দাদের দিয়ে আসেন বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা। বিতরণ করা হয় চশমা আর শীতবস্ত্র। সম্প্রতি বান্দরবানের আলীকদম ভ্রমণে যাওয়া দলের চিকিৎসকেরা দুছড়ি বাজার, মেনিয়াংপাড়া, খেমচংপাড়া, থংঐপাড়া ও রাঅংপাড়ায় মেডিকেল ক্যাম্প করে এসেছেন। ট্যুর মুরল্যান্ডের অর্থায়নে থংঐপাড়ায় দূরের ঝরনা থেকে বাসিন্দাদের জন্য পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামে চিকিৎসকদের ফোন নম্বর দিয়ে আসা হয়েছে। শারীরিক সমস্যায় পড়লে তাঁরা পরামর্শ নিতে ফোন করেন। রাজশাহীতে একটি পাঠাগার করার কাজ চলছে। দলের সদস্যরা খেলাধুলাও করেন।
ব্যাকপ্যাক
দেশবরেণ্য অভিযাত্রীদের এক ছাদে নিয়ে এসে ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার এক দশক পূর্তির আয়োজন করেছে ট্যুর মুরল্যান্ড। এতে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, রাজশাহী তো বটেই; দেশেই এ ধরনের আয়োজন প্রথম। অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্যাকপ্যাক’। এ আয়োজনে অংশ নেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক এবং সুমেরু ও অ্যান্টার্কটিকা অভিযাত্রী ইনাম আল হক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ডা. মামুন হুসাইন, দুবার এভারেস্ট আরোহণকারী একমাত্র বাংলাদেশি এম এ মুহিত, পর্বতারোহী, আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র গবেষক মীর শামসুল আলম বাবু, বিশ্ব পরিব্রাজক ও সুমেরু অভিযাত্রী তারেক অণু, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে বড় অবদান রাখা সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম, মোটরসাইক্লিস্ট ও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে খারদুংলা জয় করা বাইকার আবদুল মোমেন রোহিত, বাংলা চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু ডা. সাকলায়েন রাসেল, ভ্রমণকন্যার সভাপতি ডা. সাকিরা হক, আইরিশ অভিযাত্রী মিস জেসিকা, হেঁটে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করা ডা. বাবর আলী, ভ্রমণলেখক কালপুরুষ অপু কথা, পর্বতারোহী কাওছার রূপক, সালেহীন আরশাদী, ইকরামুল হাসান শাকিল, আ ন ম জাফর সাদেক, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ট্রেকার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, বাংলা চ্যানেল বিজয়ী আরেক সাঁতারু ডা. জ্যানজিবুল তারেকসহ আরও অনেকে।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
৩ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
৩ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
৩ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
৩ দিন আগে