ফাতিমা জাহান
ভোরবেলায় গৌতম বুদ্ধের মূর্তির সামনে কে যেন একমুঠো শিউলি ফুলের নৈবেদ্য দিয়ে গিয়েছে। জায়গাটা ঢাকা শহর থেকে মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটার দূরে। এই বিদেশ বিভুঁইয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমন্দিরে শিউলি ফুল দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গিয়েছি। দেশি একটা আমেজ দোল দিয়ে গেল।
জায়গাটা বরোবুদুর—ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে অবস্থিত। আমি বড় হয়েছি ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন জায়গার গল্প শুনে। বাবা কর্মসূত্রে একটা সময় ছিলেন সে দেশে, আর ঘুরে দেখেছেন দেশটা। ছোটবেলা থেকে তাই খুব শখ ছিল, আর কোথাও না যেতে পারলেও বরোবুদুর আমি ঠিকই যাব। বরোবুদুরের ভিউকার্ড দেখে আমার মন উড়ে বেড়াত কখনো মন্দিরে, কখনো এখানকার সবগুলো আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে বা কখনো শান্ত একেকটা পাহাড়ের গায়ে মেঘের ডুবে যাওয়ার সময়।
বরোবুদুর মন্দির নির্মিত হয় অষ্টম শতকে শৈলেন্দ্র রাজবংশের শাসনকালে। এর কিছুদিন পর রাজবংশ পূর্ব জাভায় স্থানান্তরিত হলে মন্দিরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ব্রিটিশ আমলে এই বিশালাকার মন্দিরটি পর্বতশ্রেণি আর জঙ্গলের মধ্য থেকে আবিষ্কার করেন কয়েকজন ব্রিটিশ অফিসার। এর পর এর সংস্কার করে মন্দিরটিকে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে উপযুক্ত করে তোলা হয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই সুবিস্তীর্ণ মন্দিরটির ইতিহাস খুব অল্পই জানা গেছে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা অতি নগণ্য, দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। তাই উপাসনার জন্যও ভক্তরা এত দূরে এই অজপাড়াগাঁয়ে আসেন না।
বরোবুদুরের সবচেয়ে কাছের শহর যোগজাকার্তা। সেখানেই আমি আস্তানা গেড়েছি আপাতত। সেখান থেকে শুনে এসেছি বরোবুদুরে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে হয়। ঘণ্টাখানেকের পথ, তাই রাত থাকতে থাকতে ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিয়েছি। পথ প্রায় ৪০ কিলোমিটার। যোগজাকার্তা এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ইন্দোনেশিয়ায় গরমকাল হলেও গাড়ির জানালা গলে হিম হিম ভাব উড়ে যাচ্ছে, পাহাড়ি এলাকা, এমনটাই স্বাভাবিক।
বরোবুদুর টেম্পল কমপ্লেক্সে এসে হাঁ হয়ে গেলাম। আধো অন্ধকারে বিশাল এক পিরামিড আকারের ধূসর পাথরে খোদাই করা মন্দির চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সামনে তার চেয়েও বড় উদ্যান, দৌড়ে পার হতে কম করে হলেও আধঘণ্টা লাগবে। তারপর সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে নয়তলা অবধি উঠতে হবে। কিন্তু প্রতি তলায় দেয়ালে আছে অসামান্য সুন্দর সব খোদাই করা চিত্রকর্ম। এগুলোর কোনোটিই আমার অপরিচিত নয়, আমি এদের ছবি দেখেছি অনেকবার।
মন্দিরে ঢোকার আগে একটা র্যাপার মতো দেওয়া হলো কোমরে বেঁধে নেওয়ার জন্য। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মন্দিরে ঢোকার নিয়মানুযায়ী আমার পোশাক বেশ ভদ্রই, লম্বা জামা পরে এসেছি। তবু কেন এই গরমে বাড়তি বস্ত্রখণ্ড বিজড়িত হয়ে চারণ করতে হবে জানতে চাইলে বলা হলো, ‘এটা মন্দিরে রাখা গৌতম বুদ্ধের মূর্তিকে সম্মান জানানোর জন্য।’
নিচের কয়েক তলায় একদম বাইরে দেয়াল নেই। ছাদের কোণজুড়ে হয় তোরণের মতো ডিজাইন করা অথবা গৌতম বুদ্ধের আসন গ্রহণ করে বসে আছেন, প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থেকে। প্রতিটি মূর্তি একইভাবে, একই নয়ন নিবদ্ধ করে আছে। পার্থক্য শুধু তাদের হাতের মুদ্রার ভঙ্গিমায়। কয়েকটি মূর্তির মাথা বেমালুম গায়েব হয়ে গিয়েছে। মাথাগুলো বিভিন্ন সময়ে চুরি করে বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি মস্তকে কুঞ্চিত কুন্তল।
এই বুদ্ধরাজির ঠিক পেছনের দেয়ালে আছে সেই সব পাথরে খোদাই করা চিত্রকর্ম, যা তখনকার সময়ের সাধারণ মানুষের গল্প বলে। কিছু কিছু চিত্রকর্মে আবার গৌতম বুদ্ধ ও তাঁর অনুসারীদের গল্পও আছে। কিছু দেয়ালের ছাদে রাক্ষসের হাঁ করে বড় বড় দাঁত দেখানো মাথা খোদাই করা।
স্থানীয় আদিবাসী স্থাপত্যকলা ও ভারতীয় গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়ের স্থাপত্যশিল্প অনুসরণ করে নির্মিত হয়েছে উপাসনালয়টি। দেয়ালে খোদাই শিল্পকর্মের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭২, কিছু খোদাইচিত্র আছে লুকোনো, বাইরে থেকে দেখা যায় না। একেক তলা সিঁড়ি দিয়ে পার হলে একেকজন আরও আলোকিত মানুষ হবেন বলে আমার ধারণা। কারণ, প্রতি তলা প্রদক্ষিণ করে বুদ্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারপরই ওপরের তলায় উঠতে হয়। একেকটি তলাকে তাই ‘এনলাইটেনমেন্ট’ বলা হয়। এই উপাসনালয়ে বুদ্ধের মূর্তি আছে মোট ৫০৪টি।
একে একে সাততলা ওপরে উঠলে নিচের জগৎ হয়ে গেল মায়াময়। নিচে সবুজ পাহাড় আর জঙ্গলের ওপরে এক পশলা মেঘ জমেছে। এরই মাঝে অল্প অল্প আলো ছড়িয়ে সূর্য মহাশয়ের আগমন ঘটে গেল। কিন্তু সেদিকে আমার মন নেই। আমি দেখছি একেক খণ্ড মেঘ কখনো এক বুদ্ধকে ছুঁয়ে যায় তো অন্যকে ঢেকে ফেলে। বহুকাল পরিত্যক্ত, বাইরের জগতের কাছে প্রায় অজানা এই মূর্তিগুলোর সবচেয়ে কাছের বন্ধু এই মেঘদূতেরা। বুদ্ধের পুজো দিতে আসা ভক্ত কেউ নেই; তবে কে যেন কয়েকটা শিউলি ফুল রেখে গিয়ে আমাকে দেশের ভোরবেলার কথা জানিয়ে দিয়ে গেল। এখানেই দেখা হলো আমার সঙ্গে সেই পরিচিত মেঘেদের, যারা জায়গা বদলায় কিন্তু মন বদলায় না।
পরের তলায় অনেকগুলো স্তূপ সারি সারি সাজানো আছে। স্তূপের গায়ে বরফি কাটা ফোকর। স্তূপ হলো উল্টো করে রাখা ঘণ্টার মতো বিশালাকার স্থাপনা, যা সাধারণত উপাসনার জন্য নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি স্তূপের ভেতরে গৌতম বুদ্ধ আসন করে বসে ধ্যানে মগ্ন, ফোকরে চোখ দিয়ে তাঁকে দেখা যায়। হয়তো–বা বাইরের আবরণ বা স্তূপ করাই হয়েছে, যাতে অত উঁচুতে বুদ্ধের ধ্যান না ভাঙে।
সবশেষ তলাকে বলা হয় নির্ভানা বা নির্বাণ। যেহেতু উপাসনালয়টি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানার সুযোগ নেই, তাই ধরে নেওয়াই যায় এই চূড়াটি দাঁড়িয়ে আছে নির্বাণ লাভের প্রতীক হিসেবে। আকার স্তূপের মতো। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমন্দিরের অজানা কথা প্রায় কিছুই জানা হলো না। কিছু কিছু ব্যাপার অজানা থাকলে তার প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়। যেমন, আমি গভীর ভালোবাসা পুষে রেখেছি সেই ছোটবেলা থেকে বরোবুদুরের প্রতি।
ওপর থেকে নিচে দেখলে মনে হবে, আকাশের কোনো এক দেশে ভেসে এসেছি। এক স্তর নিচে কাশফুলের মতো গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ, কোথাও আলাদা আলাদা, কোথাও পুরু গদি বানিয়ে আটকে আছে ঠিক পায়ের নিচে। আর তার নিচে সবুজ পাহাড়, আরও নিচে টিয়ে সবুজ ঘাসের বিছানা।
এখানেই বসে ভক্তরা ধ্যান করে গেছেন। নির্জনে ধ্যান করার জন্য এর চেয়ে অসাধারণ জায়গা আর নেই। এখানে বসে থাকা যায় মেঘের মুখোমুখি, কিছু না বলেও অনেক কথা বলে ফেলা যায় পাহাড়ের সঙ্গে, চোখে সূর্যের সোনালি রং মেখে পার করে দেওয়া যায় কয়েকটা দিন।
ভোরবেলায় গৌতম বুদ্ধের মূর্তির সামনে কে যেন একমুঠো শিউলি ফুলের নৈবেদ্য দিয়ে গিয়েছে। জায়গাটা ঢাকা শহর থেকে মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটার দূরে। এই বিদেশ বিভুঁইয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমন্দিরে শিউলি ফুল দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গিয়েছি। দেশি একটা আমেজ দোল দিয়ে গেল।
জায়গাটা বরোবুদুর—ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে অবস্থিত। আমি বড় হয়েছি ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন জায়গার গল্প শুনে। বাবা কর্মসূত্রে একটা সময় ছিলেন সে দেশে, আর ঘুরে দেখেছেন দেশটা। ছোটবেলা থেকে তাই খুব শখ ছিল, আর কোথাও না যেতে পারলেও বরোবুদুর আমি ঠিকই যাব। বরোবুদুরের ভিউকার্ড দেখে আমার মন উড়ে বেড়াত কখনো মন্দিরে, কখনো এখানকার সবগুলো আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে বা কখনো শান্ত একেকটা পাহাড়ের গায়ে মেঘের ডুবে যাওয়ার সময়।
বরোবুদুর মন্দির নির্মিত হয় অষ্টম শতকে শৈলেন্দ্র রাজবংশের শাসনকালে। এর কিছুদিন পর রাজবংশ পূর্ব জাভায় স্থানান্তরিত হলে মন্দিরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ব্রিটিশ আমলে এই বিশালাকার মন্দিরটি পর্বতশ্রেণি আর জঙ্গলের মধ্য থেকে আবিষ্কার করেন কয়েকজন ব্রিটিশ অফিসার। এর পর এর সংস্কার করে মন্দিরটিকে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে উপযুক্ত করে তোলা হয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই সুবিস্তীর্ণ মন্দিরটির ইতিহাস খুব অল্পই জানা গেছে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা অতি নগণ্য, দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। তাই উপাসনার জন্যও ভক্তরা এত দূরে এই অজপাড়াগাঁয়ে আসেন না।
বরোবুদুরের সবচেয়ে কাছের শহর যোগজাকার্তা। সেখানেই আমি আস্তানা গেড়েছি আপাতত। সেখান থেকে শুনে এসেছি বরোবুদুরে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে হয়। ঘণ্টাখানেকের পথ, তাই রাত থাকতে থাকতে ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিয়েছি। পথ প্রায় ৪০ কিলোমিটার। যোগজাকার্তা এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ইন্দোনেশিয়ায় গরমকাল হলেও গাড়ির জানালা গলে হিম হিম ভাব উড়ে যাচ্ছে, পাহাড়ি এলাকা, এমনটাই স্বাভাবিক।
বরোবুদুর টেম্পল কমপ্লেক্সে এসে হাঁ হয়ে গেলাম। আধো অন্ধকারে বিশাল এক পিরামিড আকারের ধূসর পাথরে খোদাই করা মন্দির চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সামনে তার চেয়েও বড় উদ্যান, দৌড়ে পার হতে কম করে হলেও আধঘণ্টা লাগবে। তারপর সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে নয়তলা অবধি উঠতে হবে। কিন্তু প্রতি তলায় দেয়ালে আছে অসামান্য সুন্দর সব খোদাই করা চিত্রকর্ম। এগুলোর কোনোটিই আমার অপরিচিত নয়, আমি এদের ছবি দেখেছি অনেকবার।
মন্দিরে ঢোকার আগে একটা র্যাপার মতো দেওয়া হলো কোমরে বেঁধে নেওয়ার জন্য। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মন্দিরে ঢোকার নিয়মানুযায়ী আমার পোশাক বেশ ভদ্রই, লম্বা জামা পরে এসেছি। তবু কেন এই গরমে বাড়তি বস্ত্রখণ্ড বিজড়িত হয়ে চারণ করতে হবে জানতে চাইলে বলা হলো, ‘এটা মন্দিরে রাখা গৌতম বুদ্ধের মূর্তিকে সম্মান জানানোর জন্য।’
নিচের কয়েক তলায় একদম বাইরে দেয়াল নেই। ছাদের কোণজুড়ে হয় তোরণের মতো ডিজাইন করা অথবা গৌতম বুদ্ধের আসন গ্রহণ করে বসে আছেন, প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থেকে। প্রতিটি মূর্তি একইভাবে, একই নয়ন নিবদ্ধ করে আছে। পার্থক্য শুধু তাদের হাতের মুদ্রার ভঙ্গিমায়। কয়েকটি মূর্তির মাথা বেমালুম গায়েব হয়ে গিয়েছে। মাথাগুলো বিভিন্ন সময়ে চুরি করে বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি মস্তকে কুঞ্চিত কুন্তল।
এই বুদ্ধরাজির ঠিক পেছনের দেয়ালে আছে সেই সব পাথরে খোদাই করা চিত্রকর্ম, যা তখনকার সময়ের সাধারণ মানুষের গল্প বলে। কিছু কিছু চিত্রকর্মে আবার গৌতম বুদ্ধ ও তাঁর অনুসারীদের গল্পও আছে। কিছু দেয়ালের ছাদে রাক্ষসের হাঁ করে বড় বড় দাঁত দেখানো মাথা খোদাই করা।
স্থানীয় আদিবাসী স্থাপত্যকলা ও ভারতীয় গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়ের স্থাপত্যশিল্প অনুসরণ করে নির্মিত হয়েছে উপাসনালয়টি। দেয়ালে খোদাই শিল্পকর্মের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭২, কিছু খোদাইচিত্র আছে লুকোনো, বাইরে থেকে দেখা যায় না। একেক তলা সিঁড়ি দিয়ে পার হলে একেকজন আরও আলোকিত মানুষ হবেন বলে আমার ধারণা। কারণ, প্রতি তলা প্রদক্ষিণ করে বুদ্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারপরই ওপরের তলায় উঠতে হয়। একেকটি তলাকে তাই ‘এনলাইটেনমেন্ট’ বলা হয়। এই উপাসনালয়ে বুদ্ধের মূর্তি আছে মোট ৫০৪টি।
একে একে সাততলা ওপরে উঠলে নিচের জগৎ হয়ে গেল মায়াময়। নিচে সবুজ পাহাড় আর জঙ্গলের ওপরে এক পশলা মেঘ জমেছে। এরই মাঝে অল্প অল্প আলো ছড়িয়ে সূর্য মহাশয়ের আগমন ঘটে গেল। কিন্তু সেদিকে আমার মন নেই। আমি দেখছি একেক খণ্ড মেঘ কখনো এক বুদ্ধকে ছুঁয়ে যায় তো অন্যকে ঢেকে ফেলে। বহুকাল পরিত্যক্ত, বাইরের জগতের কাছে প্রায় অজানা এই মূর্তিগুলোর সবচেয়ে কাছের বন্ধু এই মেঘদূতেরা। বুদ্ধের পুজো দিতে আসা ভক্ত কেউ নেই; তবে কে যেন কয়েকটা শিউলি ফুল রেখে গিয়ে আমাকে দেশের ভোরবেলার কথা জানিয়ে দিয়ে গেল। এখানেই দেখা হলো আমার সঙ্গে সেই পরিচিত মেঘেদের, যারা জায়গা বদলায় কিন্তু মন বদলায় না।
পরের তলায় অনেকগুলো স্তূপ সারি সারি সাজানো আছে। স্তূপের গায়ে বরফি কাটা ফোকর। স্তূপ হলো উল্টো করে রাখা ঘণ্টার মতো বিশালাকার স্থাপনা, যা সাধারণত উপাসনার জন্য নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি স্তূপের ভেতরে গৌতম বুদ্ধ আসন করে বসে ধ্যানে মগ্ন, ফোকরে চোখ দিয়ে তাঁকে দেখা যায়। হয়তো–বা বাইরের আবরণ বা স্তূপ করাই হয়েছে, যাতে অত উঁচুতে বুদ্ধের ধ্যান না ভাঙে।
সবশেষ তলাকে বলা হয় নির্ভানা বা নির্বাণ। যেহেতু উপাসনালয়টি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানার সুযোগ নেই, তাই ধরে নেওয়াই যায় এই চূড়াটি দাঁড়িয়ে আছে নির্বাণ লাভের প্রতীক হিসেবে। আকার স্তূপের মতো। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমন্দিরের অজানা কথা প্রায় কিছুই জানা হলো না। কিছু কিছু ব্যাপার অজানা থাকলে তার প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়। যেমন, আমি গভীর ভালোবাসা পুষে রেখেছি সেই ছোটবেলা থেকে বরোবুদুরের প্রতি।
ওপর থেকে নিচে দেখলে মনে হবে, আকাশের কোনো এক দেশে ভেসে এসেছি। এক স্তর নিচে কাশফুলের মতো গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ, কোথাও আলাদা আলাদা, কোথাও পুরু গদি বানিয়ে আটকে আছে ঠিক পায়ের নিচে। আর তার নিচে সবুজ পাহাড়, আরও নিচে টিয়ে সবুজ ঘাসের বিছানা।
এখানেই বসে ভক্তরা ধ্যান করে গেছেন। নির্জনে ধ্যান করার জন্য এর চেয়ে অসাধারণ জায়গা আর নেই। এখানে বসে থাকা যায় মেঘের মুখোমুখি, কিছু না বলেও অনেক কথা বলে ফেলা যায় পাহাড়ের সঙ্গে, চোখে সূর্যের সোনালি রং মেখে পার করে দেওয়া যায় কয়েকটা দিন।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
২ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
২ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
২ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
২ দিন আগে