সায়েন্টিফিক অফিসার বিসিএস সমমান একটি পদ। কৃষি, মৎস্য, ভেটেরিনারি এবং সয়েল সায়েন্সসহ কৃষিবিষয়ক ক্যাডারেও এ পদে বিসিএস থেকে নিয়োগ হয়। এ পদের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন, সে-সম্পর্কে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের সায়েন্টিফিক অফিসার আবু তালেব সুরাগ।

বিসিএস ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমেও বিভিন্ন গবেষণা ইনস্টিটিউটে সায়েন্টিফিক অফিসার পদে নিয়োগ হয়ে থাকে। এ ছাড়া কিছু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যেমন বিসিএসআইআর, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বিনা, বিআরআরআই, বিজেআরআই, বিটিআরআই ইত্যাদিতে নিয়োগ হয়। সরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য এন্ট্রি লেভেলে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পোস্টে এটি অনেক আকর্ষণীয় চাকরি। পদসংখ্যা কম থাকায় এই পদে অনেকেই আবেদন করতে ভয় পান। তবে ভালো প্রস্তুতি, অ্যাকাডেমিক জ্ঞান আর থিসিস করা থাকলে এ পদে আবেদন করা উচিত।

সায়েন্টিফিক অফিসার পদের পরীক্ষা
এ পদে দুই ধাপে নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। একটি লিখিত ও অন্যটি ভাইভা। তবে অধিকসংখ্যক পরীক্ষার্থী হলে সে ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

লিখিত পরীক্ষার মানবণ্টন
লিখিত পরীক্ষা হয় সাধারণত ২০০ নম্বরে। বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি এবং বিষয়ভিত্তিক। বাংলা বিষয়ে ৪০, ইংরেজি বিষয়ে ৪০, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ৪০ নম্বরসহ ১২০ নম্বর। বাকি ৮০ নম্বর বিষয়ভিত্তিক। কেউ যদি উদ্ভিদবিদ্যা বা জীববিজ্ঞানবিষয়ক পদে আবেদন করেন, সে ক্ষেত্রে পদ অনুযায়ী ওই বিষয়নির্ভর ৮০ নম্বর থাকবে।

প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি
বিসিএস প্রস্তুতি থাকলে সাধারণত এখানে কাজটা সহজ হয়। বাংলার জন্য বাংলা ব্যাকরণ, বাংলা সাহিত্য, সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখকের সাহিত্যকর্ম, গ্রন্থ সমালোচনা, কাল্পনিক সংলাপ ইত্যাদিতে গুরুত্ব দিতে হবে। বেসিক গ্রামার মূল বই বা মৌলিক বই থেকে পড়তে হবে। আর সাহিত্য অংশের জন্য সৌমিত্র শেখরের বই বা অন্য কোনো বোর্ড বই বা মৌলিক বই থেকে পড়া উচিত। সাহিত্যের জন্য পিএসসির নির্ধারিত কবি-সাহিত্যিকদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ খ্যাতনামা সাহিত্যকর্ম সম্পর্কেও জানতে হবে।

• ইংরেজির ক্ষেত্রে গ্রামারে জোর দেওয়া জরুরি। অনেকেই গ্রামার অংশে খারাপ করে থাকেন বেসিকের অভাবে। গ্রামারের জন্য মৌলিক বই/ PC Das-এর বই, Wren and Martin-এর বই, Chowdhury & Hossain-এর ইত্যাদি বই পড়া যায়। এ ছাড়া TOEFL(Cliffs/Barron) পড়াটাও অনেক ফলপ্রসূ।
• এর বাইরে ইংরেজি সাহিত্যের বেসিক জানা জরুরি। ইংরেজি সাহিত্যের জন্য শেক্‌সপিয়ার, মিল্টন, জর্জ বার্নার্ড শ, আর্নেস্ট হেমিংওয়েসহ অন্যান্য বিখ্যাত সাহিত্যিকের জনপ্রিয় গ্রন্থগুলো পড়তে হবে। A handbook of English Literature by Sharif Hasan বইটিও অনুসরণ করা যায়।
• এই অংশেও বিসিএস প্রস্তুতি থাকলে আর আলাদা প্রস্তুতি লাগে না। Synonym, Antonym, idioms and phrases, Vocabulary, analogy ইত্যাদিতে জোর দেওয়া জরুরি। এগুলোর জন্য সাইফুর্স বা অন্য যেকোনো বই থেকে পড়া যায়।
• সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, সাম্প্রতিক অর্জন ইত্যাদি ভালোভাবে পড়তে হবে। আন্তর্জাতিক অংশে সাম্প্রতিক ও বাংলাদেশের অর্জন, যুদ্ধ, বিশ্ব অর্থনীতি ইত্যাদিতে জোর দেওয়া জরুরি। এসবের জন্য দৈনিক পত্রিকা বা পত্রিকার কলাম পড়লে সেটি অনেক সহায়ক হবে।
• আন্তর্জাতিক অংশের জন্য পত্রিকার আন্তর্জাতিক অংশ পড়তে হবে। এ ছাড়া সমসাময়িক ঘটনাবলি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে।
• বিষয়ভিত্তিক নিজ নিজ বিষয়ের মৌলিক অংশে জোর দিতে হবে। যেমন উদ্ভিদবিজ্ঞানের যাঁরা আছেন, তাঁরা জীবপ্রযুক্তি, প্রাণরসায়ন, প্ল্যান্ট ব্রিডিং, প্ল্যান্ট প্যাথোলজি, প্ল্যান্ট অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড বেসিক সয়েল সায়েন্স, ট্যাক্সোনমি, প্ল্যান্ট বায়োকেমিস্ট্রি ইত্যাদি খুব ভালোভাবে পড়তে হবে।
• ⊲ প্রাণিবিদ্যার জন্যও সেল কেমিস্ট্রি, বায়োটেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মলিকিউলার বায়োলজি, অ্যানিমেল ব্রিডিং, কর্ডেট বায়োডাইভারসিটি, নন কর্ডেট বায়োলজি, বেসিক ট্যাক্সোনমি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি। পদার্থ বা রসায়নবিজ্ঞানে ভৌতবিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়াবলি সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।

অনুলিখন: জেলি খাতুন।