ক্যাডার চয়েস দেওয়া বিসিএস আবেদনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিভিন্ন ক্যাডারের সুবিধা-সীমাবদ্ধতা, কাজের ধরন, পদোন্নতি, পোস্টিং বিবেচনা করে ক্যাডার চয়েস দিতে হয়। ক্যাডার চয়েস ও প্রাপ্ত নম্বর বিশ্লেষণ করেই আপনি নির্দিষ্ট কোনো ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানাচ্ছেন ৪১তম বিসিএস কৃষি ক্যাডার শেখ নাইমুর রশিদ লিখন।
যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত—
■ শূন্যপদের সংখ্যার ভিত্তিতে নয় বরং আগ্রহের ভিত্তিতে চয়েস দিতে হবে। কোনো ক্যাডারের ১টি পদ থাকলেও সেটি যদি আগ্রহের ক্যাডার হয় তবে চয়েসে রাখতে হবে।
■ যেকোনো ক্যাডার নিশ্চিত করতে সবগুলো চয়েস দেওয়া ভালো। তবে যে ক্যাডারে চাকরি করতে ইচ্ছুক নন, সেটি বাদ দিতে পারেন।
■ পররাষ্ট্র ক্যাডার চয়েসে রাখলে ১ নম্বরে রাখতে হবে, অন্যথায় বাদ দিতে হবে।
■ পুলিশ ও আনসার ক্যাডারে সার্কুলারে বর্ণিত শারীরিক যোগ্যতা না থাকলে ও মেজর শারীরিক সমস্যা থাকলে, এ দুটি ক্যাডার চয়েস লিস্ট থেকে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে।
■ যেসব ক্যাডার পেতে বেশি নম্বর লাগে, তা পছন্দের নিচের দিকে রাখলে তা পাওয়া যায় না। বরং ওই ক্যাডার পাওয়ার নম্বর থাকলেও তার আগের ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন। এলোমেলো চয়েস প্রার্থীর অদূরদর্শিতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
■ প্রতিটি ক্যাডার ও নিজস্ব পছন্দের পেছনে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। ক্যাডার চয়েস দেখে ভাইভা বোর্ড আপনার বিবেচনাবোধ ও আগ্রহ সম্পর্কে ধারণা করতে পারে।
■ যাঁরা নিজ শিক্ষাক্ষেত্রে থাকতে চান, তাঁরা কেবল টেকনিক্যাল ক্যাডারে আবেদন করবেন।
জেনারেল ক্যাডার চয়েস
■ ১ম চয়েস: পররাষ্ট্র (চয়েসে রাখলে ১ নম্বরে, অন্যথায় বাদ)
■ ২য়, ৩য় ও ৪র্থ চয়েস: প্রশাসন/ পুলিশ/কাস্টমস ও এক্সাইজ অথবা পুলিশ/প্রশাসন/কাস্টমস ও এক্সাইজ অথবা কাস্টমস ও এক্সাইজ/প্রশাসন/ পুলিশ (এ তিনটি ক্যাডার আগ্রহ অনুযায়ী আগে-পিছে দিতে পারেন)।
■ ৫ম ও ৬ষ্ঠ চয়েস: অডিট ও অ্যাকাউন্টস/ট্যাক্স অথবা ট্যাক্স/ অডিট ও অ্যাকাউন্টস।
■ পরের চয়েসগুলো: আনসার, তথ্য (ক), খাদ্য, সমবায়, বাণিজ্য, ডাক, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক, পরিবার পরিকল্পনা, তথ্য (খ), তথ্য (গ)
টেকনিক্যাল ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য
■ ১ম চয়েস: সড়ক ও জনপদ/ গণপূর্ত/রেলওয়ে প্রকৌশল/জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল/স্বাস্থ্য/কৃষি/মৎস্য/পরিসংখ্যান/পশুসম্পদ/বন।
■ ২য় চয়েস: সাধারণ শিক্ষা/কারিগরি।
বোথ ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য
■ ১ম চয়েস: পররাষ্ট্র
■ ২য়, ৩য় ও ৪র্থ চয়েস: প্রশাসন/পুলিশ/ কাস্টমস ও এক্সাইজ অথবা পুলিশ/ প্রশাসন/কাস্টমস ও এক্সাইজ অথবা কাস্টমস ও এক্সাইজ/প্রশাসন/পুলিশ
■ ৫ম ও ৬ষ্ঠ চয়েস: অডিট ও অ্যাকাউন্টস/ট্যাক্স অথবা ট্যাক্স/অডিট ও অ্যাকাউন্টস
■ ৭ম চয়েস: সড়ক ও জনপদ/গণপূর্ত /রেলওয়ে প্রকৌশল/জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল/স্বাস্থ্য/কৃষি/মৎস্য/পরিসংখ্যান/পশুসম্পদ/বন
■ পরের চয়েসগুলো: আনসার, তথ্য (ক), খাদ্য, সমবায়, বাণিজ্য, ডাক, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক, পরিবার পরিকল্পনা, তথ্য (খ), তথ্য (গ)
■ সর্বশেষ চয়েস: সাধারণ শিক্ষা/ কারিগরি শিক্ষা (উভয়ের প্রার্থীরা শিক্ষা ক্যাডারে যেতে চাইলে এটি ৭ম চয়েসেও দিতে পারেন)
বিভিন্ন ক্যাডার সম্পর্কে ধারণা
■ পররাষ্ট্র: বহির্বিশ্বে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করা ও দেশের হয়ে কাজের সুযোগ বেশি থাকায় পররাষ্ট্র ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীদের প্রথম পছন্দ। সহকারী সচিব হিসাবে যোগদান করে পরবর্তীকালে রাষ্ট্রদূত/পররাষ্ট্রসচিব হওয়া যায়। ইংরেজি বলায় সাবলীলতা আছে ও দেশের বাইরে দীর্ঘসময় অবস্থান যাঁদের সমস্যা নয়, তাঁরা পররাষ্ট্র ক্যাডার ১ নম্বরে রাখতে পারেন।
■ প্রশাসন ও পুলিশ: প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসাবে নিয়োগ পেয়ে পরবর্তীকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব/মুখ্য সচিব/সিনিয়র সচিব/বিভাগীয় কমিশনার/ডিসি হওয়া যায়। পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে আইজিপি/অতিরিক্ত আইজিপি হওয়ার সুযোগ আছে।
■ কাস্টমস ও এক্সাইজ, ট্যাক্স এবং অডিট ও অ্যাকাউন্টস: এ তিনটি ক্যাডারের নিয়ন্ত্রক অর্থ মন্ত্রণালয়। কাস্টমস ও এক্সাইজ ক্যাডার আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও ভ্যাট সংগ্রহ করে, ট্যাক্স ক্যাডার আয়কর সংগ্রহ করে এবং অডিট ও অ্যাকাউন্টস ক্যাডার রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব পরিচালনা করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
■ আনসার, তথ্য (ক), খাদ্য, সমবায়, বাণিজ্য, ডাক, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক, পরিবার পরিকল্পনা, তথ্য (খ), তথ্য (গ): আনসার ক্যাডারে সহকারী পরিচালক থেকে পর্যায়ক্রমে উপ-মহাপরিচালক হওয়া যায়। তথ্য ক্যাডারে মন্ত্রণালয়/জেলা তথ্য অফিস ও বেতারে পদায়ন হয়ে থাকে। বিসিএস বাণিজ্য ক্যাডারের কার্যক্রম বর্তমানে সীমিত ও এটি প্রশাসন ক্যাডারে অঙ্গীভূত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। খাদ্য ও সমবায় ক্যাডারে কর্মব্যস্ততা রয়েছে। গ্রাম, ইউনিয়ন, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা ও বাস্তবায়ন করা পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের দায়িত্ব।
■ সড়ক ও জনপথ/গণপূর্ত/রেলওয়ে প্রকৌশল/জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল/ স্বাস্থ্য/কৃষি/মৎস্য/পরিসংখ্যান/পশুসম্পদ/বন: যাঁরা নিজ কর্মক্ষেত্রে থাকতে চান তাঁদের জন্য এ ক্যাডারগুলো আদর্শ চয়েস। উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে, নিজ সেক্টরে অবদান রাখা যায়। কিছু ক্যাডারের পদোন্নতির
সুযোগ সীমিত।
■ শিক্ষা ক্যাডার: সরকারি কলেজে বা ইনস্টিটিউটে লেকচারার/ ইনস্ট্রাক্টর হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে পরবর্তীকালে অধ্যক্ষ/অধিদপ্তর-শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম