বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে বিদেশে মাস্টার্স বা পিএইচডি করার। এ জন্য তাঁদের আগেভাগেই প্রস্তুতিতে নামতে হবে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট থেকেই নিজেকে এগিয়ে রাখতে হবে। বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়াশোনার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন কানাডার লাভাল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী, মো. রমীম তানভীর রহমান।
- প্রথমেই সিজিপিএ সর্বোচ্চ রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। প্রতিটি কোর্সওয়ার্ক থেকে যতটা সম্ভব জ্ঞান অর্জন করতে হবে। প্রতিটা কোর্সওয়ার্কের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপাশি ওই কোর্সওয়ার্কের বেসিক সম্পর্কে সর্বোচ্চ জানার চেষ্টা করতে হবে। ভালো সিজিপিএ মাস্টার্স বা পিএইচডিতে ফান্ডিংসহ ভর্তির জন্য প্রধান যোগ্যতা।
- আমরা যে সাবজেক্টে ভর্তি হই না কেন, যদি স্পেশাল কোনো বিষয়ে মেজর অথবা নন-মেজর করার সুযোগ থাকে, সে ক্ষেত্রে নিজের পছন্দ এবং লক্ষ্য (মাস্টার্স বা পিএইচডিতে) অনুযায়ী বিষয় খুঁজে বের করতে হবে। ব্যাচেলর ডিগ্রিতে অনেক কোর্স করানো হয়। সেগুলোর ভেতর থেকে ভালো লাগার বিষয়কে খুঁজে বের করতে হবে। সে বিষয়ের রিয়াল ওয়ার্ল্ড অ্যাপ্লিকেশন জানতে হবে। তাহলে সে বিষয়ের প্রতি আপনার খুব শক্তিশালী একটি ভিত্তি গড়ে উঠবে এবং অনেক স্কিল এবং নলেজ বেড়ে যাবে।
- সুযোগ থাকলে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে থাকা অবস্থায় রিসার্চের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করতে হবে। হতে পারে কোনো স্যারের ল্যাবে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা সিনিয়রদের সঙ্গে কাজ করা বা রিচার্জ ইন্টার্নশিপ। স্বাধীনভাবে কোনো একটা রিসার্চ প্রজেক্ট করা। এই সময়টাতে রিচার্জ এক্সপেরিয়েন্স হলে ক্রিটিক্যাল থিংকিং, প্রবলেম সলভিং এবং ডেটা অ্যানালাইসিস করার স্কিলগুলোর জন্ম হয়।
- নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রফেসরদের সঙ্গে এবং আপনার ফিল্ডের প্রফেশনাল ফোরাম/সোসাইটিগুলোতে সদস্য হতে হবে। খ্যাতনামা প্রফেসরদের ফেসবুক/ টুইটার/ রিসার্চ ওয়েবসাইটগুলো ফলো করতে হবে। তাঁদের কোনো সাফল্যে ‘অভিনন্দন’ জানাতে পারেন। কোনো ক্রিটিক্যাল রিচার্জ কোশ্চেন থাকলে ই-মেইল করতে পারেন।
- অনার্সের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বছর থেকেই সম্ভাব্য পিএইচডি/মাস্টার্স সুপারভাইজারদের ফলো করতে পারেন। তাহলে তাঁদের ফুল ফান্ডিং মাস্টার্স বা পিএইচডি পজিশনের রিকয়ারমেন্টগুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা জন্ম নেবে। তাঁদের কী কী এক্সপেকটেশন, অ্যাডমিশন ক্রাইটেরিয়া এবং অন্যান্য অপরচুনিটি জানতে পারবেন।
- বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোনো একটি পদের দায়িত্ব পালন করা। এসব সংগঠনে যুক্ত থাকলে স্কিল ডেভেলপ হবে। এ ছাড়া এটি আপনাকে টিম প্লেয়ার হিসেবে পরিচিত করবে।
- বাংলাদেশি অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনা করছেন। তাঁদের তৈরি করা অনেক সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ রয়েছে। সেসব গ্রুপে মাঝেমধ্যেই চোখ বোলানো/ ফলো করা। বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীর কোশ্চেনগুলো নিজের কোশ্চেন মনে করে কমেন্ট বক্সের উত্তরগুলো দেখে নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপককে অথবা আপনার ফিল্ডের সিনিয়রকে, যাঁরা অলরেডি ফান্ডিং নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন, তাঁদের মেন্টর হিসেবে গ্রহণ করা। তাঁদের উপদেশ ও নির্দেশনা মেনে চলা।
- দেশের বাইরে পড়তে গেলে প্রধানত ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা দরকার। এ জন্য আপনার পছন্দের প্রফেসর/ বিভিন্ন কোম্পানির/ বিভিন্ন সোসাইটির পডকাস্ট/ কনফারেন্সগুলো দেখতে পারেন। এতে করে আপনার সাবজেক্টের জ্ঞানের পরিধি বাড়বে, পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জন হবে। আবার অনেক দেশে দ্বিতীয় একটি ভাষা প্রচলন থাকে; যেমন কানাডায় ফ্রেঞ্চ, চীনে ম্যান্ডারিন। তাই ইংরেজির পাশাপাশি অন্য যেকোনো একটি ভাষা যেমন ফ্রেঞ্চ/ম্যান্ডারিন(চায়নিজ)/স্প্যানিশ শেখা যেতে পারে। একটি ভাষা শিখে ফেলতে পারলে নিজের ভেতর একটি আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে।
অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম