মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
মানবজাতির সুদীর্ঘ ইতিহাসে পৃথিবীর বুকে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য সভ্যতা। আবার স্রষ্টার অবাধ্যতা, স্বেচ্ছাচারিতা, জুলুম, পাপাচার ইত্যাদির কারণে সেগুলোর বিনাশও ঘটেছিল। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আদ সভ্যতা সেগুলোর অন্যতম। হজরত ইসা আ.-এর আনুমানিক দুই বা তিন হাজার বছর আগে এ সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে নবী হিসেবে হজরত হুদ (আ.)-কে প্রেরণ করেছিলেন।
আদ জাতির অবস্থান
কোরআনের বর্ণনা মতে, তাদের আবাসস্থল ছিল আহকাফ এলাকা। এ এলাকাটি হেজাজ, ইয়েমেন ও ইয়ামামার মধ্যবর্তী রাব-আল-খালির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এখান থেকে অগ্রসর হয়ে তারা ইয়েমেনের পশ্চিম সমুদ্রোপকূল এবং ওমান ও হাজরামাউত থেকে ইরাক পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বিস্তৃত করেছিল।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে এ সভ্যতার নিদর্শনাবলি দুনিয়ার বুক থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু দক্ষিণ আরবের কোথাও কোথাও এখনো কিছু পুরাতন ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়—যেগুলোকে আদ জাতির নিদর্শন মনে করা হয়। হাজরামাউতে এক জায়গায় হজরত হুদ (আ.)-এর নামে একটি কবরও পরিচিত আছে। যদিও ঐতিহাসিকভাবে এ কবরটি তাঁর কবর হিসেবে প্রমাণিত নয়, কিন্তু সেখানে তা নির্মাণ করা এবং দক্ষিণ আরবের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া কম করে হলেও এতটুকু অবশ্যই প্রমাণ করে যে, আঞ্চলিক ঐতিহ্য এই এলাকাকেই আদ জাতির এলাকা বলে চিহ্নিত করে।
কোরআনে আদ জাতির বৈশিষ্ট্য
১. শারীরিক দিক দিয়ে তারা ছিল অত্যন্ত স্বাস্থ্যবান ও বলিষ্ঠ জাতি। তাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর শারীরিক গঠনশৈলীতে তোমাদেরকে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করেছি।’ (সুরা আরাফ: ৬৯)
২. সেকালে তারা ছিল নজিরবিহীন জাতি। তাদের সমকক্ষ অন্য কোনো জাতিই ছিল না। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সমকক্ষ কোনো জাতি শহরসমূহে সৃষ্টি করা হয়নি।’ (সুরা ফজর: ৮)
৩. স্থাপত্যশিল্পে তারা উন্নত ছিল। উঁচু উঁচু ভবন ও ভাস্কর্য নির্মাণ করত এবং এ জন্য তদানীন্তন বিশ্বে তারা বিখ্যাত ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি কি দেখোনি তোমার রব কী করেছেন সুউচ্চ স্তম্ভের অধিকারী ইরমের আদদের সাথে।’ (সুরা ফজর: ৬-৭) অন্য আয়াতে এসেছে, নবী হুদ (আ.) তাদের ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘তোমাদের এ কী অবস্থা, প্রতিটি উঁচু জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছ অনর্থক! আর বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছ, যেন তোমরা চিরকাল থাকবে!’ (সুরা শুআরা: ১২৮-১২৯)
৪. এ বস্তুগত উন্নতি ও শারীরিক শক্তি তাদের অহংকারী করে তুলেছিল এবং শক্তির গর্বে তারা মত্ত হয়ে উঠেছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আদ জাতি, তারা তো পৃথিবীতে সত্যের পথ থেকে সরে গিয়ে অহংকার করেছিল এবং বলেছিল, কে আছে আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।’ (সুরা ফুসসিলাত: ১৫)
৫. তাদের শাসনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ছিল কয়েকজন বড় বড় জালেমের হাতে। তাদের সামনে কেউ টুঁ-শব্দটিও উচ্চারণ করত না। শাসকগোষ্ঠী ছিল চরম স্বেচ্ছাচারী। গরিব প্রজাদের ওপর জুলুম করত। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা প্রতিটি সত্যের দুশমন জালেম হটকারীর হুকুম পালন করেছিল।’ (সুরা হুদ: ৫৯) হুদ (আ.) তাদের তিরস্কার করে বলেছিলেন, ‘...আর যখন কারও ওপর হাত ওঠাও, প্রবল স্বেচ্ছাচারী হয়ে হাত ওঠাও।' (সুরা শুআরা: ১৩০)
এ ছাড়া তারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল না। এই অবিশ্বাসই তাদেরকে অপরাধী ও স্বেচ্ছাচারী করে তুলেছিল। আল্লাহ তাআলা হজরত হুদ (আ.)-কে তাদের কাছে প্রেরণ করেন। তিনি সাধ্যের সবটুকু ব্যয় করে তাদেরকে পাপাচার ও জুলুম পরিহার করে সত্য ও ইনসাফের দিকে ফিরে আসার দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা তাঁর আহ্বান উপেক্ষা করে। ফলে তাদের ওপর নেমে আসে এক কঠিন আজাব।
যেভাবে ধ্বংস হয় আদ জাতি
পবিত্র কোরআনে আদ জাতির ওপর নেমে আসা আজাব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আদ জাতি (আল্লাহর একত্ববাদ) অস্বীকার করেছিল। এ জন্য তাদের ওপর আমার আজাব ও (পরবর্তীদের জন্য) আমার সতর্কবার্তা কেমন ছিল দেখ। আমি এক বিরামহীন অশুভ দিনে তাদের ওপর প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস পাঠালাম, যা তাদের ওপরে উঠিয়ে এমনভাবে ছুড়ে ফেলেছিল, যেন তারা সমূলে উৎপাটিত খেজুর বৃক্ষের কাণ্ড।’ (সুরা কমর: ১৮-২০)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আর আদকে কঠিন ঝঞ্ঝাবাত্যা দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে, যা তিনি সাত রাত ও আট দিন ধরে বিরামহীনভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে রেখেছিলেন। (তুমি সেখানে থাকলে) দেখতে পেতে তারা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে আছে, যেন খেজুরের পুরোনো কাণ্ড।’ (সুরা হাক্কাহ: ৬-৭)
সূত্র: তাফসিরে কুরতুবি, কাসাসুল কোরআন ও তাফহিমুল কোরআন
মানবজাতির সুদীর্ঘ ইতিহাসে পৃথিবীর বুকে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য সভ্যতা। আবার স্রষ্টার অবাধ্যতা, স্বেচ্ছাচারিতা, জুলুম, পাপাচার ইত্যাদির কারণে সেগুলোর বিনাশও ঘটেছিল। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আদ সভ্যতা সেগুলোর অন্যতম। হজরত ইসা আ.-এর আনুমানিক দুই বা তিন হাজার বছর আগে এ সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে নবী হিসেবে হজরত হুদ (আ.)-কে প্রেরণ করেছিলেন।
আদ জাতির অবস্থান
কোরআনের বর্ণনা মতে, তাদের আবাসস্থল ছিল আহকাফ এলাকা। এ এলাকাটি হেজাজ, ইয়েমেন ও ইয়ামামার মধ্যবর্তী রাব-আল-খালির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এখান থেকে অগ্রসর হয়ে তারা ইয়েমেনের পশ্চিম সমুদ্রোপকূল এবং ওমান ও হাজরামাউত থেকে ইরাক পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বিস্তৃত করেছিল।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে এ সভ্যতার নিদর্শনাবলি দুনিয়ার বুক থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু দক্ষিণ আরবের কোথাও কোথাও এখনো কিছু পুরাতন ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়—যেগুলোকে আদ জাতির নিদর্শন মনে করা হয়। হাজরামাউতে এক জায়গায় হজরত হুদ (আ.)-এর নামে একটি কবরও পরিচিত আছে। যদিও ঐতিহাসিকভাবে এ কবরটি তাঁর কবর হিসেবে প্রমাণিত নয়, কিন্তু সেখানে তা নির্মাণ করা এবং দক্ষিণ আরবের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া কম করে হলেও এতটুকু অবশ্যই প্রমাণ করে যে, আঞ্চলিক ঐতিহ্য এই এলাকাকেই আদ জাতির এলাকা বলে চিহ্নিত করে।
কোরআনে আদ জাতির বৈশিষ্ট্য
১. শারীরিক দিক দিয়ে তারা ছিল অত্যন্ত স্বাস্থ্যবান ও বলিষ্ঠ জাতি। তাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর শারীরিক গঠনশৈলীতে তোমাদেরকে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করেছি।’ (সুরা আরাফ: ৬৯)
২. সেকালে তারা ছিল নজিরবিহীন জাতি। তাদের সমকক্ষ অন্য কোনো জাতিই ছিল না। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সমকক্ষ কোনো জাতি শহরসমূহে সৃষ্টি করা হয়নি।’ (সুরা ফজর: ৮)
৩. স্থাপত্যশিল্পে তারা উন্নত ছিল। উঁচু উঁচু ভবন ও ভাস্কর্য নির্মাণ করত এবং এ জন্য তদানীন্তন বিশ্বে তারা বিখ্যাত ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি কি দেখোনি তোমার রব কী করেছেন সুউচ্চ স্তম্ভের অধিকারী ইরমের আদদের সাথে।’ (সুরা ফজর: ৬-৭) অন্য আয়াতে এসেছে, নবী হুদ (আ.) তাদের ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘তোমাদের এ কী অবস্থা, প্রতিটি উঁচু জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছ অনর্থক! আর বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছ, যেন তোমরা চিরকাল থাকবে!’ (সুরা শুআরা: ১২৮-১২৯)
৪. এ বস্তুগত উন্নতি ও শারীরিক শক্তি তাদের অহংকারী করে তুলেছিল এবং শক্তির গর্বে তারা মত্ত হয়ে উঠেছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আদ জাতি, তারা তো পৃথিবীতে সত্যের পথ থেকে সরে গিয়ে অহংকার করেছিল এবং বলেছিল, কে আছে আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।’ (সুরা ফুসসিলাত: ১৫)
৫. তাদের শাসনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ছিল কয়েকজন বড় বড় জালেমের হাতে। তাদের সামনে কেউ টুঁ-শব্দটিও উচ্চারণ করত না। শাসকগোষ্ঠী ছিল চরম স্বেচ্ছাচারী। গরিব প্রজাদের ওপর জুলুম করত। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা প্রতিটি সত্যের দুশমন জালেম হটকারীর হুকুম পালন করেছিল।’ (সুরা হুদ: ৫৯) হুদ (আ.) তাদের তিরস্কার করে বলেছিলেন, ‘...আর যখন কারও ওপর হাত ওঠাও, প্রবল স্বেচ্ছাচারী হয়ে হাত ওঠাও।' (সুরা শুআরা: ১৩০)
এ ছাড়া তারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল না। এই অবিশ্বাসই তাদেরকে অপরাধী ও স্বেচ্ছাচারী করে তুলেছিল। আল্লাহ তাআলা হজরত হুদ (আ.)-কে তাদের কাছে প্রেরণ করেন। তিনি সাধ্যের সবটুকু ব্যয় করে তাদেরকে পাপাচার ও জুলুম পরিহার করে সত্য ও ইনসাফের দিকে ফিরে আসার দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা তাঁর আহ্বান উপেক্ষা করে। ফলে তাদের ওপর নেমে আসে এক কঠিন আজাব।
যেভাবে ধ্বংস হয় আদ জাতি
পবিত্র কোরআনে আদ জাতির ওপর নেমে আসা আজাব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আদ জাতি (আল্লাহর একত্ববাদ) অস্বীকার করেছিল। এ জন্য তাদের ওপর আমার আজাব ও (পরবর্তীদের জন্য) আমার সতর্কবার্তা কেমন ছিল দেখ। আমি এক বিরামহীন অশুভ দিনে তাদের ওপর প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস পাঠালাম, যা তাদের ওপরে উঠিয়ে এমনভাবে ছুড়ে ফেলেছিল, যেন তারা সমূলে উৎপাটিত খেজুর বৃক্ষের কাণ্ড।’ (সুরা কমর: ১৮-২০)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আর আদকে কঠিন ঝঞ্ঝাবাত্যা দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে, যা তিনি সাত রাত ও আট দিন ধরে বিরামহীনভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে রেখেছিলেন। (তুমি সেখানে থাকলে) দেখতে পেতে তারা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে আছে, যেন খেজুরের পুরোনো কাণ্ড।’ (সুরা হাক্কাহ: ৬-৭)
সূত্র: তাফসিরে কুরতুবি, কাসাসুল কোরআন ও তাফহিমুল কোরআন
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
১২ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
১২ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
১২ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
১ দিন আগে