মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
আধুনিক মনোবিজ্ঞান জানায়, বাবা-মেয়ের সম্পর্ক তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। বাবাকে দেখে মেয়ে শেখে—কোন ধরনের পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্কে জড়ানো উচিত। পুরুষেরা নারীদের থেকে কেমন আচরণ পছন্দ বা অপছন্দ করে, সুখ ও দুঃখের সময় কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং পরিবারের লোকজন থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া আশা করে—এসব বিষয় মেয়েরা বাবাকে দেখে শেখে এবং ভবিষ্যতে তার জীবনে আসা অন্যান্য পুরুষের ব্যাপারে তা প্রয়োগ করে। অন্যদিকে, বাবা মেয়ের জন্য ভদ্রতা, ধৈর্য, স্নেহ ও দায়িত্ববোধ আয়ত্ত করেন। মেয়ের জন্য যথাসাধ্য একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেন, যা পরিবার ও সমাজের অন্যদের সঙ্গে তাঁর আচরণে প্রভাব ফেলে। মেয়ের সহজাত যত্নশীলতা থেকেও বাবা শিক্ষা গ্রহণ করেন। তবে বাবা যদি পিতৃত্বের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করেন, মেয়ের সামনে ভদ্রতা, ধৈর্য ও স্নেহ প্রদর্শন না করেন, তাহলে মেয়ের জীবনে, বিশেষ করে স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে তার আচরণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। (সাইকোলজি টুডে)
অন্য সব বিষয়ের মতো বাবা-মেয়ের সম্পর্কের বিষয়েও মহানবী (সা.) মানুষের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিশেষ করে কন্যা ফাতিমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে সিরাত গবেষকগণ বাবা-মেয়ের সুন্দরতম সম্পর্ক বলে অভিহিত করেছেন। এখানে মহানবী (সা.) ও ফাতিমা (রা.)-এর সম্পর্ক বিষয়ে কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো—
এক. ফাতিমা (রা.) রাসুল (সা.)-কে বড্ড বেশি ভালোবাসতেন। তাঁর ভালোবাসা নিছক কন্যাসুলভ ছিল না, বরং তাতে ছিল মাতৃত্বের ছাপ। এ জন্য তাঁকে বলা হতো ‘উম্মু আবিহা’ তথা নিজ বাবার মা। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে শিশুকন্যা ফাতিমা যেন মাতৃত্বের মমতা দিয়ে রাসুলকে আগলে রেখেছিলেন। নবুওয়তের সূচনালগ্নে একদিন রাসুল (সা.) কাবা প্রান্তরে নামাজ আদায় করছিলেন, এমন সময় কুখ্যাত পৌত্তলিক উকবা ইবনে আবি মুআইত এসে সিজদারত রাসুলের ঘাড়ের ওপর উটের নাড়িভুঁড়ি তুলে দিল। ফলে তিনি সিজদা থেকে উঠতে পারছিলেন না। কুরাইশ পৌত্তলিক গোষ্ঠীর ভয়ে কেউ তাঁকে সাহায্য করার সাহস পাচ্ছিল না। কিন্তু ৯ বছরের শিশুকন্যা ফাতিমা শত্রুদের ভয়কে জয় করে বাবার কাছে ছুটে যান এবং ঘাড় থেকে উটের নাড়িভুঁড়ি সরিয়ে দেন। এরপর অগ্নিঝরা কণ্ঠে এমন নিকৃষ্ট কর্মের নিন্দা জানান। তাঁর সাহসিকতা ও বাবার প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যায়। (হায়াতুস সাহাবা)
দুই. মৃত্যুর কিছুদিন আগে রাসুল (সা.) ফাতিমাকে কানে কানে বললেন, ‘তোমার বাবা এই পৃথিবীতে আর থাকবেন না।’ এ কথা শুনে ফাতিমা ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তখনই নবীজি বললেন, ‘তবে আমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তুমিই সবার আগে মৃত্যুবরণ করে আমার সঙ্গে মিলিত হবে।’ তখন আনন্দে ফাতিমার মুখ হাসিতে ভরে উঠল। (কানজুল উম্মাল) কল্পনা করুন, যে কন্যার কাছে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুবরণ করে বাবার সঙ্গে মিলিত হওয়া আনন্দের, তিনি তাঁর বাবাকে কতটা ভালোবাসেন।
তিন. রাসুল (সা.) ফাতিমাকে খুবই ভালোবাসতেন। কন্যার প্রতি পিতার কী রকম স্নেহ-ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থাকা উচিত, ফাতিমাকে ভালোবাসার মাধ্যমে রাসুল (সা.) তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। আয়িশা (রা.) বলেন, ফাতিমা যখন রাসুলের ঘরে আসতেন, রাসুল (সা.) তাঁকে বরণ করতে দরজার দিকে ছুটে যেতেন। এরপর তাঁর হাত ধরে চুমু দিতেন এবং নিজের আসনে বসাতেন। (আবু দাউদ) রাসুল (সা.) বলতেন, ‘ফাতিমা আমার কলিজার টুকরা। তাঁকে কেউ অসন্তুষ্ট করলে সে যেন আমাকেই অসন্তুষ্ট করল।’ (বুখারি)
চার. মেয়ের প্রতি ভালোবাসা যেন মেয়েকে বিপথগামী করতে না পারে, সে বিষয়ে মহানবী (সা.) সতর্ক ছিলেন। মেয়েকে তিনি বলতেন, কেবল নবীর কন্যা হওয়ার কারণে পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে না। সেখানে মুক্তির একমাত্র উপায় হবে আমল ও তাকওয়া। (বুখারি) আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম, মুহাম্মদের মেয়ে ফাতিমাও যদি চুরি করে, তাহলে আমি তার হাত কেটে দেব।’ (বুখারি)
লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক
আধুনিক মনোবিজ্ঞান জানায়, বাবা-মেয়ের সম্পর্ক তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। বাবাকে দেখে মেয়ে শেখে—কোন ধরনের পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্কে জড়ানো উচিত। পুরুষেরা নারীদের থেকে কেমন আচরণ পছন্দ বা অপছন্দ করে, সুখ ও দুঃখের সময় কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং পরিবারের লোকজন থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া আশা করে—এসব বিষয় মেয়েরা বাবাকে দেখে শেখে এবং ভবিষ্যতে তার জীবনে আসা অন্যান্য পুরুষের ব্যাপারে তা প্রয়োগ করে। অন্যদিকে, বাবা মেয়ের জন্য ভদ্রতা, ধৈর্য, স্নেহ ও দায়িত্ববোধ আয়ত্ত করেন। মেয়ের জন্য যথাসাধ্য একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেন, যা পরিবার ও সমাজের অন্যদের সঙ্গে তাঁর আচরণে প্রভাব ফেলে। মেয়ের সহজাত যত্নশীলতা থেকেও বাবা শিক্ষা গ্রহণ করেন। তবে বাবা যদি পিতৃত্বের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করেন, মেয়ের সামনে ভদ্রতা, ধৈর্য ও স্নেহ প্রদর্শন না করেন, তাহলে মেয়ের জীবনে, বিশেষ করে স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে তার আচরণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। (সাইকোলজি টুডে)
অন্য সব বিষয়ের মতো বাবা-মেয়ের সম্পর্কের বিষয়েও মহানবী (সা.) মানুষের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিশেষ করে কন্যা ফাতিমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে সিরাত গবেষকগণ বাবা-মেয়ের সুন্দরতম সম্পর্ক বলে অভিহিত করেছেন। এখানে মহানবী (সা.) ও ফাতিমা (রা.)-এর সম্পর্ক বিষয়ে কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো—
এক. ফাতিমা (রা.) রাসুল (সা.)-কে বড্ড বেশি ভালোবাসতেন। তাঁর ভালোবাসা নিছক কন্যাসুলভ ছিল না, বরং তাতে ছিল মাতৃত্বের ছাপ। এ জন্য তাঁকে বলা হতো ‘উম্মু আবিহা’ তথা নিজ বাবার মা। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে শিশুকন্যা ফাতিমা যেন মাতৃত্বের মমতা দিয়ে রাসুলকে আগলে রেখেছিলেন। নবুওয়তের সূচনালগ্নে একদিন রাসুল (সা.) কাবা প্রান্তরে নামাজ আদায় করছিলেন, এমন সময় কুখ্যাত পৌত্তলিক উকবা ইবনে আবি মুআইত এসে সিজদারত রাসুলের ঘাড়ের ওপর উটের নাড়িভুঁড়ি তুলে দিল। ফলে তিনি সিজদা থেকে উঠতে পারছিলেন না। কুরাইশ পৌত্তলিক গোষ্ঠীর ভয়ে কেউ তাঁকে সাহায্য করার সাহস পাচ্ছিল না। কিন্তু ৯ বছরের শিশুকন্যা ফাতিমা শত্রুদের ভয়কে জয় করে বাবার কাছে ছুটে যান এবং ঘাড় থেকে উটের নাড়িভুঁড়ি সরিয়ে দেন। এরপর অগ্নিঝরা কণ্ঠে এমন নিকৃষ্ট কর্মের নিন্দা জানান। তাঁর সাহসিকতা ও বাবার প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যায়। (হায়াতুস সাহাবা)
দুই. মৃত্যুর কিছুদিন আগে রাসুল (সা.) ফাতিমাকে কানে কানে বললেন, ‘তোমার বাবা এই পৃথিবীতে আর থাকবেন না।’ এ কথা শুনে ফাতিমা ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তখনই নবীজি বললেন, ‘তবে আমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তুমিই সবার আগে মৃত্যুবরণ করে আমার সঙ্গে মিলিত হবে।’ তখন আনন্দে ফাতিমার মুখ হাসিতে ভরে উঠল। (কানজুল উম্মাল) কল্পনা করুন, যে কন্যার কাছে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুবরণ করে বাবার সঙ্গে মিলিত হওয়া আনন্দের, তিনি তাঁর বাবাকে কতটা ভালোবাসেন।
তিন. রাসুল (সা.) ফাতিমাকে খুবই ভালোবাসতেন। কন্যার প্রতি পিতার কী রকম স্নেহ-ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থাকা উচিত, ফাতিমাকে ভালোবাসার মাধ্যমে রাসুল (সা.) তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। আয়িশা (রা.) বলেন, ফাতিমা যখন রাসুলের ঘরে আসতেন, রাসুল (সা.) তাঁকে বরণ করতে দরজার দিকে ছুটে যেতেন। এরপর তাঁর হাত ধরে চুমু দিতেন এবং নিজের আসনে বসাতেন। (আবু দাউদ) রাসুল (সা.) বলতেন, ‘ফাতিমা আমার কলিজার টুকরা। তাঁকে কেউ অসন্তুষ্ট করলে সে যেন আমাকেই অসন্তুষ্ট করল।’ (বুখারি)
চার. মেয়ের প্রতি ভালোবাসা যেন মেয়েকে বিপথগামী করতে না পারে, সে বিষয়ে মহানবী (সা.) সতর্ক ছিলেন। মেয়েকে তিনি বলতেন, কেবল নবীর কন্যা হওয়ার কারণে পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে না। সেখানে মুক্তির একমাত্র উপায় হবে আমল ও তাকওয়া। (বুখারি) আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম, মুহাম্মদের মেয়ে ফাতিমাও যদি চুরি করে, তাহলে আমি তার হাত কেটে দেব।’ (বুখারি)
লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
৫ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
৫ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
৫ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
১ দিন আগে