ইসলাম ডেস্ক
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইয়েমেনের এক ক্ষমতাধর নারীর গল্প বলেছেন। বিলকিস নামের এই নারী আল্লাহর নবী হজরত সোলায়মান (আ.)-এর যুগে ইয়েমেন ও আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করতেন।
আল্লাহ তাআলা বিলকিসের সাম্রাজ্যের কথা সোলায়মান (আ.)-এর অগোচরে রেখেছিলেন। পরে তাঁর গোয়েন্দা পাখি হুদহুদের মাধ্যমে যখন জানলেন, আল্লাহর অবাধ্য এক সম্রাজ্ঞী পৃথিবীর একটি বড় অঞ্চল শাসন করছেন—তখন তাঁকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেন। পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ২৪টি আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেই ঘটনা তুলে ধরেছেন। চলুন, কোরআনের ভাষ্যেই ঘটনাটির বিস্তারিত জানা যাক—
যেভাবে খোঁজ মেলে বিলকিসের সাম্রাজ্যের
জিন, পশুপাখি, মানুষসহ সব সৃষ্টিকেই আল্লাহ তাআলা হজরত সোলায়মান (আ.)-এর অনুগত করে দিয়েছিলেন। একদিন তিনি বিশাল বাহিনী নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল সোলায়মান (আ.)-এর গোয়েন্দার কাজ আঞ্জাম দেওয়া হুদহুদ পাখিও। পথে সোলায়মান (আ.) পাখিদের খোঁজ নিতে গেলে হুদহুদকে অনুপস্থিত দেখলেন। অন্যদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার, হুদহুদকে দেখছি না, নাকি সে নাই?’
অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকা অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। তাই সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘তাকে কঠিনতম শাস্তি দেব অথবা তাকে হত্যাই করব অথবা সে অবশ্যই আমাকে (অনুপস্থিতির) উপযুক্ত কারণ দেখাবে।’
একটু পরেই হুদহুদ ফিরে এল। এসে বলল, ‘আমি এমন কিছু তথ্য পেয়েছি, যা আপনার কাছে নেই। (ইয়েমেনের) সাবা থেকে আমি নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি। সেখানে দেখলাম—এক নারী রাজত্ব করছেন এবং তাঁকে সবই দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরাট সিংহাসন রয়েছে।’
হুদহুদ আরও বলে, ‘এটুকুই নয়, আরও দেখলাম, তিনি ও তাঁর প্রজারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সেজদা করছেন। শয়তান এ কাজকে তাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে এবং হেদায়েতের পথ থেকে বিরত রেখেছে। ফলে তারা হেদায়েত পায়নি।’
এমন তথ্য শুনে সোলায়মান (আ.) বিস্মিত হলেন এবং বললেন, ‘দেখি, তুমি সত্য বলেছ, না মিথ্যা বলছ।’
রানি বিলকিসকে আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে সোলায়মান (আ.) একটি চিঠি লিখলেন।
চিঠি পাওয়ার পর বিলকিসের প্রতিক্রিয়া
হুদহুদকে সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘আমার এই চিঠি নিয়ে গিয়ে তাদের দাও। এরপর তাদের কাছ থেকে একটু দূরে সরে দেখো—তাদের প্রতিক্রিয়া কী?’
হুদহুদ গিয়ে তা–ই করল। চিঠি পেয়ে বিলকিস মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকলেন এবং চিঠির ভাষ্য তাঁদের সামনে তুলে ধরলেন। বললেন, ‘সভাসদগণ, এই দেখেন, আমাকে সোলায়মানের পক্ষ থেকে মোহরাঙ্কিত পত্র দেওয়া হয়েছে। (তাতে লেখা আছে) অসীম দাতা অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আমার প্রতি উদ্ধত হইও না, অনুগত হয়ে আমার কাছে হাজির হও।’
মন্ত্রীদের কাছে পরামর্শ চেয়ে বিলকিস বললেন, ‘হে সভাসদগণ, আমার কর্তব্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিন। আপনাদের ছাড়া আমি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি।’
মন্ত্রীরা বললেন, ‘আমাদের শক্তি আছে এবং আমরা কঠোর যোদ্ধাও; তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনারই। কাজেই আপনি কী আদেশ করবেন, ভেবে দেখুন।’
বিলকিস হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে বললেন, ‘রাজারা যখন কোনো জনপদে ঢোকে, তখন বিপর্যয় ডেকে আনে এবং সেখানকার সম্মানিত ব্যক্তিদের অপমান করে ছাড়ে। এরাও তাই করবে।’
শান্তিচুক্তি করে আত্মসমর্পণ এড়ানোর ফন্দি আঁটেন বিলকিস। সোলায়মান (আ.)-এর কাছে উপহার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মন্ত্রীদের বললেন, ‘আমি তাঁর কাছে উপহার পাঠাচ্ছি। দেখি, দূতেরা কী জবাব নিয়ে আসে।’
বিলকিসের সিংহাসন তুলে আনার বিস্ময়কর ঘটনা
বিলকিসের প্রতিনিধি দল সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে এলে তিনি বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে অর্থ-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে এসেছ? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদের যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম। তোমরা বরং তোমাদের উপহার নিয়েই আনন্দ করো।’
কঠিন এক ধমক দিয়ে সোলায়মান (আ.) তাদের বললেন, ‘নিজ দেশে ফিরে যাও। আমি তাদের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য এক সেনাবাহিনী নিয়ে আসব। তাদের অপমানিত করে সেখান থেকে বের করে দেব। তারা লাঞ্ছিত হবেই।’
তারা ফিরে গেল এবং সোলায়মান (আ.) অহির মাধ্যমে জানতে পারলেন, হুঁশিয়ারি শুনে বিলকিস শিগগিরই তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। তাই তিনি যখন আসবেন, তখন তাঁকে আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা দেখানোর জন্য সোলায়মান (আ.) একটি পরিকল্পনা করলেন। সভাসদকে ডেকে বললেন, ‘হে সভাসদগণ, তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার আগেই তোমাদের কে তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসবে?’
এক শক্তিশালী জিন বললেন, ‘আপনি আপনার জায়গা থেকে ওঠার আগেই আমি তা আপনার কাছে এনে দেব। এ কাজে আমি অবশ্যই ক্ষমতার অধিকারী ও আস্থাভাজন।’
ঐশী জ্ঞানের অধিকারী এক আলেম বললেন, ‘আপনার পলক ফেলার আগেই তা আপনার কাছে এনে দেব।’
যেই কথা সেই কাজ, মুহূর্তেই তিনি বিলকিসের বিরাট সিংহাসন সোলায়মান (আ.)-এর সামনে হাজির করে দিলেন এবং আল্লাহর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন।
বিলকিস যেভাবে আত্মসমর্পণ করেন
নিজের সিংহাসন সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে দেখে বিলকিস নিশ্চয়ই অবাক হবেন এবং আল্লাহপ্রদত্ত ক্ষমতা দেখে তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নিয়ে আনুগত্য করবেন, তাই তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য সোলায়মান (আ.) কিছু নির্দেশনা দিলেন। বললেন, ‘তাঁর সিংহাসনের ধরন পাল্টে দাও। এরপর দেখি, সে সত্য পথের দিশা পায়, নাকি যারা পথের দিশা পায় না তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়।’
বিলকিস আত্মসমর্পণের জন্যই এলেন। তাঁকে সিংহাসনটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এটি কি আপনার সিংহাসন?’ তিনি বললেন, ‘তাই তো মনে হয়। আপনার সম্পর্কে আগেই আমাদের জানানো হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পণ করতেই এসেছি।’
রানি বিলকিসকে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়ে সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘প্রাসাদে প্রবেশ করুন।’
প্রাসাদের মেঝে দেখে তিনি সেটিকে স্বচ্ছ পানির হ্রদ মনে করলেন। ফলে বিভ্রান্ত হয়ে পায়ের গোছা থেকে কাপড় উঁচু করেন। তখন সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘এ স্বচ্ছ কাচের প্রাসাদ।’
রানি বিলকিস এসব পরীক্ষার মুখে পড়ে সোলায়মান (আ.)-এর অলৌকিক ক্ষমতা উপলব্ধি করলেন এবং আল্লাহর দরবারে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দিলেন। বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি অবশ্যই নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সোলায়মানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করছি।’
গল্পের শিক্ষা
এ গল্পের মূল শিক্ষা হলো, পৃথিবীতে আপনি যত ক্ষমতাধরই হোন, মহান আল্লাহর দরবারে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণই পারে আপনার পরকালীন সাফল্য নিশ্চিত করতে। সাবার রানি বিলকিস সোলায়মান (আ.)-এর হাত ধরে মহাবিশ্বের মহান অধিপতি আল্লাহ তাআলার কাছে আত্মসমর্পণ করে পরিণামদর্শী সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। ক্ষমতার অহংকারের ফাঁদে পড়ে পরকালীন সাফল্যের কথা তিনি ভুলে যাননি। এ ছাড়া গল্পে রয়েছে শেখার অনেক উপকরণ।
সূত্র: পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ২০ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াত অবলম্বনে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইয়েমেনের এক ক্ষমতাধর নারীর গল্প বলেছেন। বিলকিস নামের এই নারী আল্লাহর নবী হজরত সোলায়মান (আ.)-এর যুগে ইয়েমেন ও আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করতেন।
আল্লাহ তাআলা বিলকিসের সাম্রাজ্যের কথা সোলায়মান (আ.)-এর অগোচরে রেখেছিলেন। পরে তাঁর গোয়েন্দা পাখি হুদহুদের মাধ্যমে যখন জানলেন, আল্লাহর অবাধ্য এক সম্রাজ্ঞী পৃথিবীর একটি বড় অঞ্চল শাসন করছেন—তখন তাঁকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেন। পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ২৪টি আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেই ঘটনা তুলে ধরেছেন। চলুন, কোরআনের ভাষ্যেই ঘটনাটির বিস্তারিত জানা যাক—
যেভাবে খোঁজ মেলে বিলকিসের সাম্রাজ্যের
জিন, পশুপাখি, মানুষসহ সব সৃষ্টিকেই আল্লাহ তাআলা হজরত সোলায়মান (আ.)-এর অনুগত করে দিয়েছিলেন। একদিন তিনি বিশাল বাহিনী নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল সোলায়মান (আ.)-এর গোয়েন্দার কাজ আঞ্জাম দেওয়া হুদহুদ পাখিও। পথে সোলায়মান (আ.) পাখিদের খোঁজ নিতে গেলে হুদহুদকে অনুপস্থিত দেখলেন। অন্যদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার, হুদহুদকে দেখছি না, নাকি সে নাই?’
অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকা অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। তাই সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘তাকে কঠিনতম শাস্তি দেব অথবা তাকে হত্যাই করব অথবা সে অবশ্যই আমাকে (অনুপস্থিতির) উপযুক্ত কারণ দেখাবে।’
একটু পরেই হুদহুদ ফিরে এল। এসে বলল, ‘আমি এমন কিছু তথ্য পেয়েছি, যা আপনার কাছে নেই। (ইয়েমেনের) সাবা থেকে আমি নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি। সেখানে দেখলাম—এক নারী রাজত্ব করছেন এবং তাঁকে সবই দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরাট সিংহাসন রয়েছে।’
হুদহুদ আরও বলে, ‘এটুকুই নয়, আরও দেখলাম, তিনি ও তাঁর প্রজারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সেজদা করছেন। শয়তান এ কাজকে তাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে এবং হেদায়েতের পথ থেকে বিরত রেখেছে। ফলে তারা হেদায়েত পায়নি।’
এমন তথ্য শুনে সোলায়মান (আ.) বিস্মিত হলেন এবং বললেন, ‘দেখি, তুমি সত্য বলেছ, না মিথ্যা বলছ।’
রানি বিলকিসকে আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে সোলায়মান (আ.) একটি চিঠি লিখলেন।
চিঠি পাওয়ার পর বিলকিসের প্রতিক্রিয়া
হুদহুদকে সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘আমার এই চিঠি নিয়ে গিয়ে তাদের দাও। এরপর তাদের কাছ থেকে একটু দূরে সরে দেখো—তাদের প্রতিক্রিয়া কী?’
হুদহুদ গিয়ে তা–ই করল। চিঠি পেয়ে বিলকিস মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকলেন এবং চিঠির ভাষ্য তাঁদের সামনে তুলে ধরলেন। বললেন, ‘সভাসদগণ, এই দেখেন, আমাকে সোলায়মানের পক্ষ থেকে মোহরাঙ্কিত পত্র দেওয়া হয়েছে। (তাতে লেখা আছে) অসীম দাতা অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আমার প্রতি উদ্ধত হইও না, অনুগত হয়ে আমার কাছে হাজির হও।’
মন্ত্রীদের কাছে পরামর্শ চেয়ে বিলকিস বললেন, ‘হে সভাসদগণ, আমার কর্তব্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিন। আপনাদের ছাড়া আমি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি।’
মন্ত্রীরা বললেন, ‘আমাদের শক্তি আছে এবং আমরা কঠোর যোদ্ধাও; তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনারই। কাজেই আপনি কী আদেশ করবেন, ভেবে দেখুন।’
বিলকিস হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে বললেন, ‘রাজারা যখন কোনো জনপদে ঢোকে, তখন বিপর্যয় ডেকে আনে এবং সেখানকার সম্মানিত ব্যক্তিদের অপমান করে ছাড়ে। এরাও তাই করবে।’
শান্তিচুক্তি করে আত্মসমর্পণ এড়ানোর ফন্দি আঁটেন বিলকিস। সোলায়মান (আ.)-এর কাছে উপহার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মন্ত্রীদের বললেন, ‘আমি তাঁর কাছে উপহার পাঠাচ্ছি। দেখি, দূতেরা কী জবাব নিয়ে আসে।’
বিলকিসের সিংহাসন তুলে আনার বিস্ময়কর ঘটনা
বিলকিসের প্রতিনিধি দল সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে এলে তিনি বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে অর্থ-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে এসেছ? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদের যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম। তোমরা বরং তোমাদের উপহার নিয়েই আনন্দ করো।’
কঠিন এক ধমক দিয়ে সোলায়মান (আ.) তাদের বললেন, ‘নিজ দেশে ফিরে যাও। আমি তাদের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য এক সেনাবাহিনী নিয়ে আসব। তাদের অপমানিত করে সেখান থেকে বের করে দেব। তারা লাঞ্ছিত হবেই।’
তারা ফিরে গেল এবং সোলায়মান (আ.) অহির মাধ্যমে জানতে পারলেন, হুঁশিয়ারি শুনে বিলকিস শিগগিরই তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। তাই তিনি যখন আসবেন, তখন তাঁকে আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা দেখানোর জন্য সোলায়মান (আ.) একটি পরিকল্পনা করলেন। সভাসদকে ডেকে বললেন, ‘হে সভাসদগণ, তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার আগেই তোমাদের কে তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসবে?’
এক শক্তিশালী জিন বললেন, ‘আপনি আপনার জায়গা থেকে ওঠার আগেই আমি তা আপনার কাছে এনে দেব। এ কাজে আমি অবশ্যই ক্ষমতার অধিকারী ও আস্থাভাজন।’
ঐশী জ্ঞানের অধিকারী এক আলেম বললেন, ‘আপনার পলক ফেলার আগেই তা আপনার কাছে এনে দেব।’
যেই কথা সেই কাজ, মুহূর্তেই তিনি বিলকিসের বিরাট সিংহাসন সোলায়মান (আ.)-এর সামনে হাজির করে দিলেন এবং আল্লাহর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন।
বিলকিস যেভাবে আত্মসমর্পণ করেন
নিজের সিংহাসন সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে দেখে বিলকিস নিশ্চয়ই অবাক হবেন এবং আল্লাহপ্রদত্ত ক্ষমতা দেখে তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নিয়ে আনুগত্য করবেন, তাই তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য সোলায়মান (আ.) কিছু নির্দেশনা দিলেন। বললেন, ‘তাঁর সিংহাসনের ধরন পাল্টে দাও। এরপর দেখি, সে সত্য পথের দিশা পায়, নাকি যারা পথের দিশা পায় না তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়।’
বিলকিস আত্মসমর্পণের জন্যই এলেন। তাঁকে সিংহাসনটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এটি কি আপনার সিংহাসন?’ তিনি বললেন, ‘তাই তো মনে হয়। আপনার সম্পর্কে আগেই আমাদের জানানো হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পণ করতেই এসেছি।’
রানি বিলকিসকে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়ে সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘প্রাসাদে প্রবেশ করুন।’
প্রাসাদের মেঝে দেখে তিনি সেটিকে স্বচ্ছ পানির হ্রদ মনে করলেন। ফলে বিভ্রান্ত হয়ে পায়ের গোছা থেকে কাপড় উঁচু করেন। তখন সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘এ স্বচ্ছ কাচের প্রাসাদ।’
রানি বিলকিস এসব পরীক্ষার মুখে পড়ে সোলায়মান (আ.)-এর অলৌকিক ক্ষমতা উপলব্ধি করলেন এবং আল্লাহর দরবারে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দিলেন। বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি অবশ্যই নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সোলায়মানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করছি।’
গল্পের শিক্ষা
এ গল্পের মূল শিক্ষা হলো, পৃথিবীতে আপনি যত ক্ষমতাধরই হোন, মহান আল্লাহর দরবারে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণই পারে আপনার পরকালীন সাফল্য নিশ্চিত করতে। সাবার রানি বিলকিস সোলায়মান (আ.)-এর হাত ধরে মহাবিশ্বের মহান অধিপতি আল্লাহ তাআলার কাছে আত্মসমর্পণ করে পরিণামদর্শী সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। ক্ষমতার অহংকারের ফাঁদে পড়ে পরকালীন সাফল্যের কথা তিনি ভুলে যাননি। এ ছাড়া গল্পে রয়েছে শেখার অনেক উপকরণ।
সূত্র: পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ২০ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াত অবলম্বনে।
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
১৬ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
১৬ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
১৬ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
২ দিন আগে