ইজাজুল হক, ঢাকা
মসজিদ ইসলামি সভ্যতার আঁতুড়ঘর। মদিনার মসজিদে নববি থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রাষ্ট্রপরিচালনা করতেন। মুসলমানেরা যেখানেই বসতি স্থাপন করেছেন, সেখানেই গড়ে তুলেছেন মসজিদ। আফ্রিকাও এর ব্যতিক্রম নয়। ৫০ হিজরিতে সাহাবিদের যুগে প্রথম আফ্রিকায় মসজিদ নির্মিত হয়। এখানে আফ্রিকা মহাদেশের ঐতিহাসিক ও নান্দনিক স্থাপত্যের পাঁচটি মসজিদের কথা তুলে ধরা হলো—
১. গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স, আলজিয়ার্স, আলজেরিয়া
আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনারের মসজিদ গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স। আরবিতে একে বলা হয় জামেউল জাজায়ের। এর মিনারের উচ্চতা ৮৭০ ফুট। আফ্রিকার সবচেয়ে উঁচু ভবন এটি। ৪৩ তলাবিশিষ্ট মিনারটির ৩৭তম তলায় রয়েছে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। সেখান থেকে দেখা যায় আলজেরিয়া উপসাগর ও ভূমধ্যসাগরের বিশাল জলরাশির অপরূপ সৌন্দর্য। আয়তনের দিক থেকে এটি পৃথিবীর তৃতীয় এবং আফ্রিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ। নির্মাণে খরচ হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
মসজিদ কমপ্লেক্সের মোট আয়তন চার লাখ বর্গমিটার। একসঙ্গে ১ লাখ ৩৭ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এ মসজিদে। এখানে একটি মাদ্রাসা, ১০ লাখ বই ও ৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি লাইব্রেরি, জাদুঘর, বাণিজ্যিক ভবন, রেস্তোরাঁ, প্লাজা, পার্ক, খোলা চত্বর, সংস্কৃতি কেন্দ্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন এবং ফলের বাগান রয়েছে।
এ মসজিদের নকশা করেছেন জার্মান প্রকৌশলীরা। নির্মাণ করেছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এ মসজিদের নির্মাণসামগ্রী। চীন, আলজেরিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের দুই লাখ তিন হাজার লোক এর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ছিল। মসজিদে বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বহুবিধ ব্যবহারের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে।
২. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, কাসাব্লাংকা, মরক্কো
মরক্কোর বাণিজ্যিক রাজধানী কাসাব্লাংকায় অবস্থিত দ্বিতীয় হাসান মসজিদ বিশ্বের বড় মসজিদগুলোর একটি। আটলান্টিক মহাসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ মসজিদ নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী ও সুউচ্চ মিনারের কারণে বিখ্যাত। এটি প্রায় শতভাগ মুসলমানের দেশ মরক্কোর সবচেয়ে বড় মসজিদ এবং প্রধানতম পর্যটনকেন্দ্রও। স্থপতি মিশেল পিনশোর নকশায় ১৯৮৬ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৩ সালে মহানবী (সা.)-এর জন্মদিনে উদ্বোধন করা হয়।
ইসলামি স্থাপত্যশৈলী ও মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে মসজিদের নকশা করা হয়। মসজিদের একেকটি অংশ বিশ্বের একেকটি বিখ্যাত মসজিদের অনুকরণে নকশা করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ছয় হাজার শিল্পী ও কারিগর মসজিদের ভেতর ও বাইরের দৃষ্টিনন্দন নকশা, মোজাইক, দামি পাথর ইত্যাদি বসানোর কাজ করেন। কিছু গ্রানাইটের স্তম্ভ এবং ৫৬টি বিশাল ঝাড়বাতি ইতালি থেকে আনা হয়। অন্য সব উপাদান মরক্কোর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়। মসজিদের কিছু অংশ সমুদ্রের পানিতে ভাসমান, সেখানে স্বচ্ছ কাচের ওপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের উচ্ছলতা।
৯ হেক্টর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এ মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির ভেতরে ২৫ হাজার এবং বাইরের চত্বরে ৮০ হাজার মুসল্লি দাঁড়াতে পারেন। নারীদের জন্য রয়েছে আরও ৫ হাজার আসন। মসজিদের মূল হলঘরটি আয়তাকার, এর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার, প্রস্থ ১০০ মিটার এবং উচ্চতা ৬০ মিটার। হলঘরের বিশাল ছাদ ৭৮টি বিরাট স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ৩ হাজার ৪০০ বর্গমিটারের এ ছাদের অর্ধেক অংশ যান্ত্রিকভাবে উন্মুক্ত করার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ছাদ বন্ধ থাকলে অর্ধশতাধিক ঝাড়বাতি মসজিদে আলো ছড়িয়ে রাখে। আর উন্মুক্ত করে দিলে সূর্যের আলো ও চাঁদের জোছনা উপভোগ করতে পারেন মুসল্লিরা। ৩. আল-আজহার মসজিদ, কায়রো, মিসর
মিসরের কায়রোতে অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মসজিদটিই আল-আজহার মসজিদ হিসেবে পরিচিত। ৯৭২ সালে জাওহার আল-সিকিলির নতুন প্রতিষ্ঠিত রাজধানী কায়রোর জন্য এটি নির্মাণ করা হয় এবং রমজানের ৭ তারিখ এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। আজ-জাহরা হজরত ফাতিমা (রা.)-এর উপাধি। আজ-জাহরা থেকেই আল-আজহার শব্দের উৎপত্তি। ফাতেমি আমলে নির্মিত হওয়ায় হজরত ফাতিমার পবিত্র স্মৃতির উদ্দেশে এর নাম রাখা হয় আল-আজহার।
প্রতিষ্ঠার পর ৯৮৯ সালে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ৩৫ জন ইসলামি পণ্ডিতকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর ধীরে ধীরে মসজিদটি বিকশিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে তা অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। পুরো বিশ্বে যা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। আল-আজহার দীর্ঘদিন ধরে সুন্নি ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামি আইন অধ্যয়নের জন্য মুসলিম বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠান বিবেচিত হয়ে আসছে।
প্রতিষ্ঠার পর আইয়ুবি শাসনামলে এই বিদ্যালয় অবহেলার শিকার হয়। কারণ, শিয়া ইসমাইলিদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আইয়ুবি রাজবংশ আল-আজহারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়নি। অবশ্য মামলুক শাসনামল থেকে আজ পর্যন্ত ভালোই উন্নতি করেছে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এবং মিসরের ইসলামের প্রতীক মনে করা হয়।
৪. কায়রুয়ান জামে মসজিদ, কায়রুয়ান, তিউনিশিয়া
তিউনিসিয়ার কায়রুয়ান জামে মসজিদের আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। ৫০ হিজরি সালে সাহাবি হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর অন্যতম সামরিক কমান্ডার উকবা বিন নাফি (রহ.) ৯ হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর এটি নির্মাণ করেন। তিউনিসিয়ার কায়রুয়ান শহরও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে কায়রুয়ান জামে মসজিদকে উকবা জামে মসজিদও বলা হয়।
কায়রুয়ান মসজিদ থেকেই আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম আজান উচ্চারিত হয়েছিল বলে। শুরুতে এই মসজিদের আয়তন ছিল অনেক ছোট। অত্যন্ত সাধাসিধেভাবে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন শাসনামলে মসজিদের আয়তন ও শান-শওকত বৃদ্ধি পায়। মসজিদটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে একটি শক্তিশালী দুর্গ মসজিদটিকে বেষ্টন করে রেখেছে।
কাইরুয়ান মসজিদে পাঁচটি গম্বুজ ও নয়টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। এই মসজিদের মেহরাবের কাছে নিচু ছাদবিশিষ্ট আরেকটি কক্ষ রয়েছে। যার নাম মাকসুরা। খলিফাদের নামাজ আদায় এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এই বিশেষ কক্ষ মাকসুরা নির্মাণ করা হয়েছিল। এই কক্ষের ভেতরে দাঁড়িয়ে মসজিদে অবস্থানরত মুসল্লিদের দেখা যাওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে এক জামাতে নামাজ আদায় করা যেত।
কায়রুয়ান জামে মসজিদের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও পাথর দিয়ে। এই প্রাচীরের ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে বড় বড় স্তম্ভ। আয়তাকার এসব কারুকাজ তিন স্তরবিশিষ্ট। এর দ্বিতীয় স্তরের কারুকাজ প্রথম স্তরের চেয়ে ছোট এবং তৃতীয় স্তরেরটি দ্বিতীয় স্তরের চেয়ে ছোট। কিন্তু নিচে দাঁড়িয়ে মিনারের দিকে তাকালে তিন স্তরের কারুকাজই সমান মনে হয়। কাইরুয়ান জামে মসজিদের মিম্বর খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে এবং এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পুরোনো মিম্বর হিসেবে পরিচিত।
৫. দ্য গ্রেট মস্ক অব ডিজেনি, মালি
প্রাচীন সভ্যতার দেশ মালির ডিজেনি মসজিদের নির্মাণশৈলী এখন পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিমুক্ত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ। মাটি, বালু ও পানির সাহায্যে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি। অবশ্য দেয়ালের গাঁথুনি শক্ত করতে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর তালগাছের কাঠ ব্যবহার হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘টোরন’। ১২০০ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে তৈরি হয় মসজিদটি। মালির সুলতান কনবরু ইসলাম গ্রহণের পর তার রাজপ্রাসাদ ভেঙে ফেলে সেখানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের পূর্ব দিকে নিজের বসবাসের জন্য অন্য একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীরা এ মসজিদের দুটি মিনার নির্মাণ করেন এবং পরে মসজিদটির চারপাশের দেয়াল নির্মাণ করা হয়।
মসজিদের দেয়ালগুলো নকশা করা। শুধু নকশা নয়, তালগাছের কাঠ মসজিদের দেয়ালে এমনভাবে গেঁথে দেওয়া হয়েছে, যাতে মাটির দেয়াল সহজে ধসে না যায়। এ ছাড়া শতাধিক মিনার সদৃশ ছোট ছোট কাঠামো রয়েছে। প্রতি বছর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মসজিদটির সংস্কারকাজ চলে। প্রচণ্ড গরমের দিনেও মসজিদের ভেতর অত্যন্ত ঠান্ডা থাকে। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৩ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৯৮৮ সালে ইউনেসকো এ মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
মসজিদের দেয়াল ও ছাদের ভার বহন করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ৯০টি মজবুত কাঠের কলাম। মসজিদের অভ্যন্তরে আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য ছাদ ও দেয়ালে রাখা হয়েছে একাধিক জানালা। তবে সমস্যা হয় বর্ষা মৌসুমে। এ সময় বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়াল ও ছাদ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদের সংস্কারকাজে অংশগ্রহণ করাকে ডিজেনির বাসিন্দার গর্বের বিষয় মনে করেন। মসজিদ সংস্কারের এমন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার নজির সম্ভবত বর্তমান বিশ্বের আর কোথাও নেই।
মসজিদ ইসলামি সভ্যতার আঁতুড়ঘর। মদিনার মসজিদে নববি থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রাষ্ট্রপরিচালনা করতেন। মুসলমানেরা যেখানেই বসতি স্থাপন করেছেন, সেখানেই গড়ে তুলেছেন মসজিদ। আফ্রিকাও এর ব্যতিক্রম নয়। ৫০ হিজরিতে সাহাবিদের যুগে প্রথম আফ্রিকায় মসজিদ নির্মিত হয়। এখানে আফ্রিকা মহাদেশের ঐতিহাসিক ও নান্দনিক স্থাপত্যের পাঁচটি মসজিদের কথা তুলে ধরা হলো—
১. গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স, আলজিয়ার্স, আলজেরিয়া
আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনারের মসজিদ গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স। আরবিতে একে বলা হয় জামেউল জাজায়ের। এর মিনারের উচ্চতা ৮৭০ ফুট। আফ্রিকার সবচেয়ে উঁচু ভবন এটি। ৪৩ তলাবিশিষ্ট মিনারটির ৩৭তম তলায় রয়েছে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। সেখান থেকে দেখা যায় আলজেরিয়া উপসাগর ও ভূমধ্যসাগরের বিশাল জলরাশির অপরূপ সৌন্দর্য। আয়তনের দিক থেকে এটি পৃথিবীর তৃতীয় এবং আফ্রিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ। নির্মাণে খরচ হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
মসজিদ কমপ্লেক্সের মোট আয়তন চার লাখ বর্গমিটার। একসঙ্গে ১ লাখ ৩৭ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এ মসজিদে। এখানে একটি মাদ্রাসা, ১০ লাখ বই ও ৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি লাইব্রেরি, জাদুঘর, বাণিজ্যিক ভবন, রেস্তোরাঁ, প্লাজা, পার্ক, খোলা চত্বর, সংস্কৃতি কেন্দ্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন এবং ফলের বাগান রয়েছে।
এ মসজিদের নকশা করেছেন জার্মান প্রকৌশলীরা। নির্মাণ করেছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এ মসজিদের নির্মাণসামগ্রী। চীন, আলজেরিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের দুই লাখ তিন হাজার লোক এর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ছিল। মসজিদে বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বহুবিধ ব্যবহারের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে।
২. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, কাসাব্লাংকা, মরক্কো
মরক্কোর বাণিজ্যিক রাজধানী কাসাব্লাংকায় অবস্থিত দ্বিতীয় হাসান মসজিদ বিশ্বের বড় মসজিদগুলোর একটি। আটলান্টিক মহাসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ মসজিদ নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী ও সুউচ্চ মিনারের কারণে বিখ্যাত। এটি প্রায় শতভাগ মুসলমানের দেশ মরক্কোর সবচেয়ে বড় মসজিদ এবং প্রধানতম পর্যটনকেন্দ্রও। স্থপতি মিশেল পিনশোর নকশায় ১৯৮৬ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৩ সালে মহানবী (সা.)-এর জন্মদিনে উদ্বোধন করা হয়।
ইসলামি স্থাপত্যশৈলী ও মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে মসজিদের নকশা করা হয়। মসজিদের একেকটি অংশ বিশ্বের একেকটি বিখ্যাত মসজিদের অনুকরণে নকশা করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ছয় হাজার শিল্পী ও কারিগর মসজিদের ভেতর ও বাইরের দৃষ্টিনন্দন নকশা, মোজাইক, দামি পাথর ইত্যাদি বসানোর কাজ করেন। কিছু গ্রানাইটের স্তম্ভ এবং ৫৬টি বিশাল ঝাড়বাতি ইতালি থেকে আনা হয়। অন্য সব উপাদান মরক্কোর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়। মসজিদের কিছু অংশ সমুদ্রের পানিতে ভাসমান, সেখানে স্বচ্ছ কাচের ওপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের উচ্ছলতা।
৯ হেক্টর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এ মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির ভেতরে ২৫ হাজার এবং বাইরের চত্বরে ৮০ হাজার মুসল্লি দাঁড়াতে পারেন। নারীদের জন্য রয়েছে আরও ৫ হাজার আসন। মসজিদের মূল হলঘরটি আয়তাকার, এর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার, প্রস্থ ১০০ মিটার এবং উচ্চতা ৬০ মিটার। হলঘরের বিশাল ছাদ ৭৮টি বিরাট স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ৩ হাজার ৪০০ বর্গমিটারের এ ছাদের অর্ধেক অংশ যান্ত্রিকভাবে উন্মুক্ত করার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ছাদ বন্ধ থাকলে অর্ধশতাধিক ঝাড়বাতি মসজিদে আলো ছড়িয়ে রাখে। আর উন্মুক্ত করে দিলে সূর্যের আলো ও চাঁদের জোছনা উপভোগ করতে পারেন মুসল্লিরা। ৩. আল-আজহার মসজিদ, কায়রো, মিসর
মিসরের কায়রোতে অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মসজিদটিই আল-আজহার মসজিদ হিসেবে পরিচিত। ৯৭২ সালে জাওহার আল-সিকিলির নতুন প্রতিষ্ঠিত রাজধানী কায়রোর জন্য এটি নির্মাণ করা হয় এবং রমজানের ৭ তারিখ এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। আজ-জাহরা হজরত ফাতিমা (রা.)-এর উপাধি। আজ-জাহরা থেকেই আল-আজহার শব্দের উৎপত্তি। ফাতেমি আমলে নির্মিত হওয়ায় হজরত ফাতিমার পবিত্র স্মৃতির উদ্দেশে এর নাম রাখা হয় আল-আজহার।
প্রতিষ্ঠার পর ৯৮৯ সালে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ৩৫ জন ইসলামি পণ্ডিতকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর ধীরে ধীরে মসজিদটি বিকশিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে তা অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। পুরো বিশ্বে যা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। আল-আজহার দীর্ঘদিন ধরে সুন্নি ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামি আইন অধ্যয়নের জন্য মুসলিম বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠান বিবেচিত হয়ে আসছে।
প্রতিষ্ঠার পর আইয়ুবি শাসনামলে এই বিদ্যালয় অবহেলার শিকার হয়। কারণ, শিয়া ইসমাইলিদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আইয়ুবি রাজবংশ আল-আজহারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়নি। অবশ্য মামলুক শাসনামল থেকে আজ পর্যন্ত ভালোই উন্নতি করেছে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এবং মিসরের ইসলামের প্রতীক মনে করা হয়।
৪. কায়রুয়ান জামে মসজিদ, কায়রুয়ান, তিউনিশিয়া
তিউনিসিয়ার কায়রুয়ান জামে মসজিদের আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। ৫০ হিজরি সালে সাহাবি হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর অন্যতম সামরিক কমান্ডার উকবা বিন নাফি (রহ.) ৯ হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর এটি নির্মাণ করেন। তিউনিসিয়ার কায়রুয়ান শহরও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে কায়রুয়ান জামে মসজিদকে উকবা জামে মসজিদও বলা হয়।
কায়রুয়ান মসজিদ থেকেই আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম আজান উচ্চারিত হয়েছিল বলে। শুরুতে এই মসজিদের আয়তন ছিল অনেক ছোট। অত্যন্ত সাধাসিধেভাবে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন শাসনামলে মসজিদের আয়তন ও শান-শওকত বৃদ্ধি পায়। মসজিদটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে একটি শক্তিশালী দুর্গ মসজিদটিকে বেষ্টন করে রেখেছে।
কাইরুয়ান মসজিদে পাঁচটি গম্বুজ ও নয়টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। এই মসজিদের মেহরাবের কাছে নিচু ছাদবিশিষ্ট আরেকটি কক্ষ রয়েছে। যার নাম মাকসুরা। খলিফাদের নামাজ আদায় এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এই বিশেষ কক্ষ মাকসুরা নির্মাণ করা হয়েছিল। এই কক্ষের ভেতরে দাঁড়িয়ে মসজিদে অবস্থানরত মুসল্লিদের দেখা যাওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে এক জামাতে নামাজ আদায় করা যেত।
কায়রুয়ান জামে মসজিদের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও পাথর দিয়ে। এই প্রাচীরের ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে বড় বড় স্তম্ভ। আয়তাকার এসব কারুকাজ তিন স্তরবিশিষ্ট। এর দ্বিতীয় স্তরের কারুকাজ প্রথম স্তরের চেয়ে ছোট এবং তৃতীয় স্তরেরটি দ্বিতীয় স্তরের চেয়ে ছোট। কিন্তু নিচে দাঁড়িয়ে মিনারের দিকে তাকালে তিন স্তরের কারুকাজই সমান মনে হয়। কাইরুয়ান জামে মসজিদের মিম্বর খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে এবং এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পুরোনো মিম্বর হিসেবে পরিচিত।
৫. দ্য গ্রেট মস্ক অব ডিজেনি, মালি
প্রাচীন সভ্যতার দেশ মালির ডিজেনি মসজিদের নির্মাণশৈলী এখন পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিমুক্ত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ। মাটি, বালু ও পানির সাহায্যে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি। অবশ্য দেয়ালের গাঁথুনি শক্ত করতে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর তালগাছের কাঠ ব্যবহার হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘টোরন’। ১২০০ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে তৈরি হয় মসজিদটি। মালির সুলতান কনবরু ইসলাম গ্রহণের পর তার রাজপ্রাসাদ ভেঙে ফেলে সেখানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের পূর্ব দিকে নিজের বসবাসের জন্য অন্য একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীরা এ মসজিদের দুটি মিনার নির্মাণ করেন এবং পরে মসজিদটির চারপাশের দেয়াল নির্মাণ করা হয়।
মসজিদের দেয়ালগুলো নকশা করা। শুধু নকশা নয়, তালগাছের কাঠ মসজিদের দেয়ালে এমনভাবে গেঁথে দেওয়া হয়েছে, যাতে মাটির দেয়াল সহজে ধসে না যায়। এ ছাড়া শতাধিক মিনার সদৃশ ছোট ছোট কাঠামো রয়েছে। প্রতি বছর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মসজিদটির সংস্কারকাজ চলে। প্রচণ্ড গরমের দিনেও মসজিদের ভেতর অত্যন্ত ঠান্ডা থাকে। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৩ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৯৮৮ সালে ইউনেসকো এ মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
মসজিদের দেয়াল ও ছাদের ভার বহন করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ৯০টি মজবুত কাঠের কলাম। মসজিদের অভ্যন্তরে আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য ছাদ ও দেয়ালে রাখা হয়েছে একাধিক জানালা। তবে সমস্যা হয় বর্ষা মৌসুমে। এ সময় বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়াল ও ছাদ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদের সংস্কারকাজে অংশগ্রহণ করাকে ডিজেনির বাসিন্দার গর্বের বিষয় মনে করেন। মসজিদ সংস্কারের এমন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার নজির সম্ভবত বর্তমান বিশ্বের আর কোথাও নেই।
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
৫ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
৫ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
৫ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
১ দিন আগে