ইজাজুল হক
ইসলাম বাজারব্যবস্থাকে স্বাভাবিক গতিতে চলার নির্দেশনা দেয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কারও হস্তক্ষেপ করার অনুমোদন নেই। তবে মজুতদারি, মধ্যস্বত্ব ও সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে শাসকের দায়িত্ব হলো, পণ্যের একটি দর নির্ধারণ করে দেওয়া। জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে এবং বাজারের শৃঙ্খলা রক্ষায় সংঘবদ্ধ চক্রকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা উচিত।
স্বাভাবিক অবস্থায় পণ্যের দামে উত্থান-পতন থাকবেই। উৎপাদন ও সরবরাহের খরচ বিবেচনায় ন্যায্যমূল্যে বেচাকেনা করতে ইসলামে বাধা নেই। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দিন।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ দ্রব্যমূল্যের গতি নির্ধারণকারী, তিনিই একমাত্র সংকীর্ণতা ও প্রশস্ততা আনয়নকারী এবং তিনি রিজিকদাতা। আমি আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করতে চাই, যেন তোমাদের কেউ আমার বিরুদ্ধে তাঁর জানমালের ব্যাপারে জুলুমের অভিযোগ তুলতে না পারে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৩১৪)
ইসলামি চিন্তাবিদ ড. ইউসুফ আল-কারজাভি বলেন, ‘এ হাদিসের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন যে, বিনা প্রয়োজনে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা জুলুম। রাসুল (সা.) জুলুমের দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পছন্দ করেন। কিন্তু বাজারে যখন অস্বাভাবিক কার্যকারণ অনুপ্রবেশ করবে; যেমন, কিছু ব্যবসায়ীর পণ্য মজুতকরণ এবং তাদের মূল্য কারসাজি, তখন কিছু ব্যক্তির স্বাধীনতার ওপর সামষ্টিক স্বার্থ প্রাধান্য লাভ করবে। এ অবস্থায় সমাজের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এবং লোভী সুবিধাভোগীদের থেকে সমাজকে রক্ষাকল্পে মূল্য নির্ধারণ করা বৈধ। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে না দেওয়ার জন্য এ নীতি স্বতঃসিদ্ধ।’ (আল-হালালু ওয়াল-হারামু ফিল-ইসলাম, পৃ: ২২৩)
এ আলোচনা থেকে বোঝা গেল, স্বাভাবিক অবস্থায় দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা বৈধ নয়। তবে যদি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে অন্যায়ভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তবে সরকারকে অবশ্যই বাজার ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘মূল্য নির্ধারণ যদি মানুষের প্রতি জুলুম করা এবং তাদের অন্যায়ভাবে এমন মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করাকে শামিল করে, যাতে তারা সন্তুষ্ট নয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য যা বৈধ করেছেন, তা থেকে শাসক নিষেধ করছেন, তাহলে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা হারাম। কিন্তু মানুষের মাঝে ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে যদি মূল্য নির্ধারণ করা হয় এবং প্রচলিত বিনিময় মূল্যের চেয়ে বেশি গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করা হয়, তাহলে তা শুধু জায়েজই নয়; বরং ওয়াজিব।’ (আল-হিসবাহ ফিল-ইসলাম, পৃ: ১৯-২০)
এ বিষয়ে উপসংহার টেনে ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘মূল্য নির্ধারণ করা ছাড়া যদি মানুষের কল্যাণ সাধন সম্ভব না হয়, তাহলে শাসক তাদের জন্য ন্যায়সংগত মূল্য নির্ধারণ করে দেবেন। কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বা কারও প্রতি অন্যায় করা যাবে না। আর মূল্য নির্ধারণ ছাড়াই যদি তাদের প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায় এবং কল্যাণ সাধিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান মূল্য নির্ধারণ করবেন না।’ (আত-তুরুকুল হুকুমিইয়াহ ফিস-সিয়াসাতিশ শারইয়্যাহ,১ / ২২২)
সুতরাং ইসলামের নীতি সুস্পষ্ট। কল্যাণকামিতাই এখানে মুখ্য। ব্যবসায়ীদের জন্য যেমন সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো বৈধ হবে না, তেমনি রাষ্ট্র কর্তৃক অন্যায্য কোনো সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়াও ঠিক হবে না। আর এটি তখনই সম্ভব, যখন সকলের অন্তরে আল্লাহর ভয়, জবাবদিহি এবং কল্যাণকামনার মনোভাব জাগরুক থাকবে।
ইসলাম বাজারব্যবস্থাকে স্বাভাবিক গতিতে চলার নির্দেশনা দেয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কারও হস্তক্ষেপ করার অনুমোদন নেই। তবে মজুতদারি, মধ্যস্বত্ব ও সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে শাসকের দায়িত্ব হলো, পণ্যের একটি দর নির্ধারণ করে দেওয়া। জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে এবং বাজারের শৃঙ্খলা রক্ষায় সংঘবদ্ধ চক্রকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা উচিত।
স্বাভাবিক অবস্থায় পণ্যের দামে উত্থান-পতন থাকবেই। উৎপাদন ও সরবরাহের খরচ বিবেচনায় ন্যায্যমূল্যে বেচাকেনা করতে ইসলামে বাধা নেই। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দিন।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ দ্রব্যমূল্যের গতি নির্ধারণকারী, তিনিই একমাত্র সংকীর্ণতা ও প্রশস্ততা আনয়নকারী এবং তিনি রিজিকদাতা। আমি আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করতে চাই, যেন তোমাদের কেউ আমার বিরুদ্ধে তাঁর জানমালের ব্যাপারে জুলুমের অভিযোগ তুলতে না পারে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৩১৪)
ইসলামি চিন্তাবিদ ড. ইউসুফ আল-কারজাভি বলেন, ‘এ হাদিসের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন যে, বিনা প্রয়োজনে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা জুলুম। রাসুল (সা.) জুলুমের দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পছন্দ করেন। কিন্তু বাজারে যখন অস্বাভাবিক কার্যকারণ অনুপ্রবেশ করবে; যেমন, কিছু ব্যবসায়ীর পণ্য মজুতকরণ এবং তাদের মূল্য কারসাজি, তখন কিছু ব্যক্তির স্বাধীনতার ওপর সামষ্টিক স্বার্থ প্রাধান্য লাভ করবে। এ অবস্থায় সমাজের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এবং লোভী সুবিধাভোগীদের থেকে সমাজকে রক্ষাকল্পে মূল্য নির্ধারণ করা বৈধ। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে না দেওয়ার জন্য এ নীতি স্বতঃসিদ্ধ।’ (আল-হালালু ওয়াল-হারামু ফিল-ইসলাম, পৃ: ২২৩)
এ আলোচনা থেকে বোঝা গেল, স্বাভাবিক অবস্থায় দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা বৈধ নয়। তবে যদি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে অন্যায়ভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তবে সরকারকে অবশ্যই বাজার ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘মূল্য নির্ধারণ যদি মানুষের প্রতি জুলুম করা এবং তাদের অন্যায়ভাবে এমন মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করাকে শামিল করে, যাতে তারা সন্তুষ্ট নয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য যা বৈধ করেছেন, তা থেকে শাসক নিষেধ করছেন, তাহলে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা হারাম। কিন্তু মানুষের মাঝে ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে যদি মূল্য নির্ধারণ করা হয় এবং প্রচলিত বিনিময় মূল্যের চেয়ে বেশি গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করা হয়, তাহলে তা শুধু জায়েজই নয়; বরং ওয়াজিব।’ (আল-হিসবাহ ফিল-ইসলাম, পৃ: ১৯-২০)
এ বিষয়ে উপসংহার টেনে ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘মূল্য নির্ধারণ করা ছাড়া যদি মানুষের কল্যাণ সাধন সম্ভব না হয়, তাহলে শাসক তাদের জন্য ন্যায়সংগত মূল্য নির্ধারণ করে দেবেন। কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বা কারও প্রতি অন্যায় করা যাবে না। আর মূল্য নির্ধারণ ছাড়াই যদি তাদের প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায় এবং কল্যাণ সাধিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান মূল্য নির্ধারণ করবেন না।’ (আত-তুরুকুল হুকুমিইয়াহ ফিস-সিয়াসাতিশ শারইয়্যাহ,১ / ২২২)
সুতরাং ইসলামের নীতি সুস্পষ্ট। কল্যাণকামিতাই এখানে মুখ্য। ব্যবসায়ীদের জন্য যেমন সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো বৈধ হবে না, তেমনি রাষ্ট্র কর্তৃক অন্যায্য কোনো সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়াও ঠিক হবে না। আর এটি তখনই সম্ভব, যখন সকলের অন্তরে আল্লাহর ভয়, জবাবদিহি এবং কল্যাণকামনার মনোভাব জাগরুক থাকবে।
সমাজের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও আন্তরিকতার সম্পর্ক থাকা চাই। পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা ও মজবুত সম্পর্ক তৈরি করতে মহানবী (সা.) ৬টি কর্তব্যের কথা বলেছেন, যা পালন
৯ ঘণ্টা আগেএখানে কারণগুলো তুলে ধরা হলো—অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মজলুম ব্যক্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তার যে দোষ রয়েছে, তা সবিস্তারে তুলে ধরার অনুমতি আছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমরা
১ দিন আগেওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
২ দিন আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
২ দিন আগে