আমজাদ ইউনুস
ভুল মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। সবার জীবনে ছোট-বড় ভুল হয়ে থাকে। ভুল আমাদের অপূর্ণতা দূর করে পূর্ণতা লাভে সাহায্য করে। রাসুল (সা.) মানবতার সবচেয়ে বড় শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি ভুলকে লজ্জার কারণ হিসেবে নয়; বরং শিক্ষণীয় মুহূর্ত হিসেবে গ্রহণ করতে শিখিয়েছেন। তিনি ভদ্রতা, কোমলতা, সহানুভূতি ও সৃজনশীলতার সঙ্গে মানুষের ভুলত্রুটি সংশোধন করেছেন। এখানে তেমনি কয়েকটি কৌশলের কথা তুলে ধরা হলো।
ভুলে নজর দেওয়া
রাসুল (সা.) পরম ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে সুকৌশলে ভুল সংশোধন করতেন। কখনো কখনো ভুলের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করতেন এবং তাৎক্ষণিক জবাব দেওয়া থেকে বিরত থাকতেন। কখনো কখনো ভুল শোধরাতে নীরব থাকতেন। একবার তিনি তাঁর সাহাবিদের একটি কাজে অনুমতির ইঙ্গিত দিতে তাঁদের ছেড়ে অন্য পথে হাঁটছিলেন। তাঁর অঙ্গভঙ্গির পরিবর্তন দেখে সাহাবিরা বুঝে নিলেন, তাঁদের কাজটি সঠিক নয়। যখন ভুল বড় ধরনের হতো, তখন তাঁর কথায় জোর দিতেন এবং একই কথা বারবার বলতেন।
উসামা ইবনে যায়েদ একবার রাসুল (সা.)-এর কাছে এক যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন। এক শত্রু সৈন্যের কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘সৈন্যটি চিৎকার করে বলছিল—লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সে এ আশায় কালেমা বলছিল যে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ উসামা আরও জানালেন, ‘তিনি ওই সৈন্যকে তরবারির আঘাতে হত্যা করেছেন। এ কথা শুনে নবী (সা.)-এর মুখের রং বদলে গেল। তিনি বারবার বলতে থাকলেন, ‘কীভাবে তুমি তাকে হত্যা করলে, যখন সে বলছিল—লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কোমল আচরণ
দুর্বল-অসহায়দের ভুল অতি কোমলভাবে শুধরে দিতেন মহানবী (সা.)। একদিন এক বেদুইন রাসুল (সা.)-এর মসজিদে প্রথম প্রবেশ করল। এরপর মসজিদের মেঝেতে প্রস্রাব করে দিল। রাসুল (সা.) নম্রভাবে সংশোধন করে বললেন, ‘আমরা মসজিদে প্রস্রাব করি না। এই ঘরগুলো ইবাদত ও আল্লাহর স্মরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ)
আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দেওয়া
ভুল শোধরাতে মহানবী (সা.) মানুষকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। তাদের জন্য দোয়া করতেন। রাসুল (সা.) একদিন আবু মাসুদ আনসারিকে দাস প্রহার করতে দেখে একটি কথাই বলেছিলেন, ‘তুমি তার ওপর যে ক্ষমতা রাখো, তার তুলনায় আল্লাহ তোমার ওপর অনেক বেশি ক্ষমতা রাখেন।’ আবু মাসুদ তৎক্ষণাৎ দাসটি মুক্ত করে দিলেন। (মুসলিম)
পরিচয় গোপন রাখা
শ্রোতাদের সামনে অভিনব কৌশলে ভুল সংশোধন করতেন মহানবী (সা.)। সবার উপকারে ভুল শোধরাতে সুকৌশলে সম্পৃক্ত ব্যক্তির পরিচয় গোপন রেখে কথা বলতেন। বলতেন, ‘কী হলো লোকজনের, তারা এমন এমন কাজ করছে।’ এভাবে তিনি সাধারণ ভুল করা লোকদের সতর্ক করতেন, একই সঙ্গে সুকৌশলে ভুলে জড়িত ব্যক্তিদের তওবা করে নেওয়ার ইঙ্গিত দিতেন। অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াতেন না। সাহাবিদেরও এ কাজে নিরুৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছেন, ‘যে অন্য ভাইয়ের পাপ খুঁজে বেড়ায়, আল্লাহও তার দোষ খুঁজে বের করবেন।’ (তিরমিজি)
কঠোরতা অবলম্বন
ভুল শোধরাতে কখনো কখনো রাসুল (সা.) কঠোরতা অবলম্বন করতেন। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ভুলের সংশোধন করতেন। একদিন এক সাহাবিকে গিবত করতে দেখলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কড়া কথা শুনিয়ে দিলেন এবং সতর্ক করলেন। (আল মুজামুল কবির)
মানুষের মর্যাদা রক্ষা
ভুল সংশোধনের সময় মানুষের মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতেন মহানবী (সা.)। ভুলের সমালোচনা করতেন; তবে ভুলকারীকে দোষ দিতেন না। উপহাস কিংবা খাটো করতেন না। একবার মাদকাসক্তি ছাড়তে অক্ষম এক ব্যক্তিকে লোকজন অভিশাপ দিচ্ছিল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাকে লানত দিয়ো না। আমি তার ব্যাপারে জানি, সে আল্লাহ এবং তার রাসুলকে ভালোবাসে।’ (বুখারি)
লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক
ভুল মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। সবার জীবনে ছোট-বড় ভুল হয়ে থাকে। ভুল আমাদের অপূর্ণতা দূর করে পূর্ণতা লাভে সাহায্য করে। রাসুল (সা.) মানবতার সবচেয়ে বড় শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি ভুলকে লজ্জার কারণ হিসেবে নয়; বরং শিক্ষণীয় মুহূর্ত হিসেবে গ্রহণ করতে শিখিয়েছেন। তিনি ভদ্রতা, কোমলতা, সহানুভূতি ও সৃজনশীলতার সঙ্গে মানুষের ভুলত্রুটি সংশোধন করেছেন। এখানে তেমনি কয়েকটি কৌশলের কথা তুলে ধরা হলো।
ভুলে নজর দেওয়া
রাসুল (সা.) পরম ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে সুকৌশলে ভুল সংশোধন করতেন। কখনো কখনো ভুলের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করতেন এবং তাৎক্ষণিক জবাব দেওয়া থেকে বিরত থাকতেন। কখনো কখনো ভুল শোধরাতে নীরব থাকতেন। একবার তিনি তাঁর সাহাবিদের একটি কাজে অনুমতির ইঙ্গিত দিতে তাঁদের ছেড়ে অন্য পথে হাঁটছিলেন। তাঁর অঙ্গভঙ্গির পরিবর্তন দেখে সাহাবিরা বুঝে নিলেন, তাঁদের কাজটি সঠিক নয়। যখন ভুল বড় ধরনের হতো, তখন তাঁর কথায় জোর দিতেন এবং একই কথা বারবার বলতেন।
উসামা ইবনে যায়েদ একবার রাসুল (সা.)-এর কাছে এক যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন। এক শত্রু সৈন্যের কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘সৈন্যটি চিৎকার করে বলছিল—লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সে এ আশায় কালেমা বলছিল যে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ উসামা আরও জানালেন, ‘তিনি ওই সৈন্যকে তরবারির আঘাতে হত্যা করেছেন। এ কথা শুনে নবী (সা.)-এর মুখের রং বদলে গেল। তিনি বারবার বলতে থাকলেন, ‘কীভাবে তুমি তাকে হত্যা করলে, যখন সে বলছিল—লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কোমল আচরণ
দুর্বল-অসহায়দের ভুল অতি কোমলভাবে শুধরে দিতেন মহানবী (সা.)। একদিন এক বেদুইন রাসুল (সা.)-এর মসজিদে প্রথম প্রবেশ করল। এরপর মসজিদের মেঝেতে প্রস্রাব করে দিল। রাসুল (সা.) নম্রভাবে সংশোধন করে বললেন, ‘আমরা মসজিদে প্রস্রাব করি না। এই ঘরগুলো ইবাদত ও আল্লাহর স্মরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ)
আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দেওয়া
ভুল শোধরাতে মহানবী (সা.) মানুষকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। তাদের জন্য দোয়া করতেন। রাসুল (সা.) একদিন আবু মাসুদ আনসারিকে দাস প্রহার করতে দেখে একটি কথাই বলেছিলেন, ‘তুমি তার ওপর যে ক্ষমতা রাখো, তার তুলনায় আল্লাহ তোমার ওপর অনেক বেশি ক্ষমতা রাখেন।’ আবু মাসুদ তৎক্ষণাৎ দাসটি মুক্ত করে দিলেন। (মুসলিম)
পরিচয় গোপন রাখা
শ্রোতাদের সামনে অভিনব কৌশলে ভুল সংশোধন করতেন মহানবী (সা.)। সবার উপকারে ভুল শোধরাতে সুকৌশলে সম্পৃক্ত ব্যক্তির পরিচয় গোপন রেখে কথা বলতেন। বলতেন, ‘কী হলো লোকজনের, তারা এমন এমন কাজ করছে।’ এভাবে তিনি সাধারণ ভুল করা লোকদের সতর্ক করতেন, একই সঙ্গে সুকৌশলে ভুলে জড়িত ব্যক্তিদের তওবা করে নেওয়ার ইঙ্গিত দিতেন। অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াতেন না। সাহাবিদেরও এ কাজে নিরুৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছেন, ‘যে অন্য ভাইয়ের পাপ খুঁজে বেড়ায়, আল্লাহও তার দোষ খুঁজে বের করবেন।’ (তিরমিজি)
কঠোরতা অবলম্বন
ভুল শোধরাতে কখনো কখনো রাসুল (সা.) কঠোরতা অবলম্বন করতেন। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ভুলের সংশোধন করতেন। একদিন এক সাহাবিকে গিবত করতে দেখলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কড়া কথা শুনিয়ে দিলেন এবং সতর্ক করলেন। (আল মুজামুল কবির)
মানুষের মর্যাদা রক্ষা
ভুল সংশোধনের সময় মানুষের মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতেন মহানবী (সা.)। ভুলের সমালোচনা করতেন; তবে ভুলকারীকে দোষ দিতেন না। উপহাস কিংবা খাটো করতেন না। একবার মাদকাসক্তি ছাড়তে অক্ষম এক ব্যক্তিকে লোকজন অভিশাপ দিচ্ছিল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাকে লানত দিয়ো না। আমি তার ব্যাপারে জানি, সে আল্লাহ এবং তার রাসুলকে ভালোবাসে।’ (বুখারি)
লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
১৫ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
১৫ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
১৫ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
২ দিন আগে