ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
বর্ণ, গোত্র, পেশা, ভাষা ও অঞ্চলের ভিন্নতা সত্ত্বেও ইমানের ভিত্তিতে সব মুসলমান এক। সব মুসলমান সাক্ষ্য দেয়—আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। সবাই এক কিবলার দিকে নামাজ আদায় করে, একই মাসে রোজা পালন করে এবং একই স্থান ও কালে হজ সম্পাদন করে। সব মুসলমান যেন একটি দেহ। তাই পরস্পরের সুখ-দুঃখে অন্যের উপস্থিতি একান্ত কাম্য। তবে মানুষ হিসেবে মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করাও মানবিক দায়িত্ব।
ইমানের ভিত্তিতে একতা
ইসলামে বর্ণ, গোত্র, পেশা, ভাষা অথবা অঞ্চল মানুষের মৌলিক পার্থক্য নির্দেশ করে না। মৌলিক পার্থক্যের ভিত্তি হলো ইমান। ইমান গ্রহণ বা বর্জনের সূত্রে বিপরীতমুখী দুটি ধারা তৈরি হয়। এ জন্য ইমানের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু (কোরআন) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হোয়ো না।’
(সুরা আলে ইমরান: ১০৩)
মুনিনগণ পরস্পর ভাই ভাই
মুসলমান আল্লাহর একত্ববাদ, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়ত ও পরকালে বিশ্বাসী এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদর্শের অনুসারী। তারা পরস্পর ভাই ভাই। ভাই ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে—এটিই স্বাভাবিক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজরাত: ১০) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল; তার সহচরগণ অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।’ (সুরা ফাতাহ: ২৯)
সব ইমানদার যেন এক দেহ
ইমানি ভ্রাতৃত্ব কোনো ধরনের সংকীর্ণতা বা সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ নয়। পৃথিবীর এক প্রান্তের বা এক ভাষার মুসলমান ইমানের সূত্রে অন্য প্রান্তের বা অন্য ভাষায় মুসলমানের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে একই দেহের দুই অঙ্গের মতো। নোমান বিন বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সব মুসলমান একটি দেহের মতো, যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়; যদি তার মাথা অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।’ (মুসলিম: ৬৭৫৪)
পারস্পরিক বিবাদ পরিত্যাজ্য
মুসলমানদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিলে সেগুলো নিজেরাই সংশোধন করে নেওয়া উচিত। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ থাকলে নিজেদের শক্তি-সাহস দুর্বল হয়ে যায়, ফলে শত্রুপক্ষ বিজয়ী হওয়ার সুযোগ পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে; আর তাদের একদল অন্য দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করলে যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তাদের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা হুজরাত: ৯) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা আনফাল: ৪৬)
মুমিনদের ভালোবাসা ও হৃদ্যতা
মুমিনদের পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি খুবই জরুরি বিষয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনি তাদের (মুমিনদের) পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন। পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করলেও তুমি তাদের হৃদয়ে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন; নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা আনফাল: ৬৩)
অমুসলিমদের প্রতি মানবিকতা
মুসলিম-অমুসলিম সব মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামি সমাজব্যবস্থার অনন্য বৈশিষ্ট্য। যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না এবং মুসলমানদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করার অপচেষ্টা করে না, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন করতে আল্লাহ নিষেধ করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৮)
পৃথিবীর সব মুসলমান মিলে যেন একটি দেহ। ইমানি বন্ধনে আবদ্ধ একে অন্যের ভাই। ভাইয়ের সুখে খুশি হওয়া আর দুঃখে দুঃখিত হয়ে দুঃখ মোচনে যথাসাধ্য চেষ্টা করা ইমানি দাবি। কমপক্ষে ব্যথিত হৃদয় নিয়ে নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষ কথা বলা এবং তাদের মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার সামর্থ্য তো সবার রয়েছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বর্ণ, গোত্র, পেশা, ভাষা ও অঞ্চলের ভিন্নতা সত্ত্বেও ইমানের ভিত্তিতে সব মুসলমান এক। সব মুসলমান সাক্ষ্য দেয়—আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। সবাই এক কিবলার দিকে নামাজ আদায় করে, একই মাসে রোজা পালন করে এবং একই স্থান ও কালে হজ সম্পাদন করে। সব মুসলমান যেন একটি দেহ। তাই পরস্পরের সুখ-দুঃখে অন্যের উপস্থিতি একান্ত কাম্য। তবে মানুষ হিসেবে মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করাও মানবিক দায়িত্ব।
ইমানের ভিত্তিতে একতা
ইসলামে বর্ণ, গোত্র, পেশা, ভাষা অথবা অঞ্চল মানুষের মৌলিক পার্থক্য নির্দেশ করে না। মৌলিক পার্থক্যের ভিত্তি হলো ইমান। ইমান গ্রহণ বা বর্জনের সূত্রে বিপরীতমুখী দুটি ধারা তৈরি হয়। এ জন্য ইমানের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু (কোরআন) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হোয়ো না।’
(সুরা আলে ইমরান: ১০৩)
মুনিনগণ পরস্পর ভাই ভাই
মুসলমান আল্লাহর একত্ববাদ, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়ত ও পরকালে বিশ্বাসী এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদর্শের অনুসারী। তারা পরস্পর ভাই ভাই। ভাই ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে—এটিই স্বাভাবিক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজরাত: ১০) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল; তার সহচরগণ অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।’ (সুরা ফাতাহ: ২৯)
সব ইমানদার যেন এক দেহ
ইমানি ভ্রাতৃত্ব কোনো ধরনের সংকীর্ণতা বা সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ নয়। পৃথিবীর এক প্রান্তের বা এক ভাষার মুসলমান ইমানের সূত্রে অন্য প্রান্তের বা অন্য ভাষায় মুসলমানের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে একই দেহের দুই অঙ্গের মতো। নোমান বিন বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সব মুসলমান একটি দেহের মতো, যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়; যদি তার মাথা অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।’ (মুসলিম: ৬৭৫৪)
পারস্পরিক বিবাদ পরিত্যাজ্য
মুসলমানদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিলে সেগুলো নিজেরাই সংশোধন করে নেওয়া উচিত। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ থাকলে নিজেদের শক্তি-সাহস দুর্বল হয়ে যায়, ফলে শত্রুপক্ষ বিজয়ী হওয়ার সুযোগ পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে; আর তাদের একদল অন্য দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করলে যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তাদের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা হুজরাত: ৯) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা আনফাল: ৪৬)
মুমিনদের ভালোবাসা ও হৃদ্যতা
মুমিনদের পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি খুবই জরুরি বিষয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তিনি তাদের (মুমিনদের) পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন। পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করলেও তুমি তাদের হৃদয়ে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন; নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা আনফাল: ৬৩)
অমুসলিমদের প্রতি মানবিকতা
মুসলিম-অমুসলিম সব মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামি সমাজব্যবস্থার অনন্য বৈশিষ্ট্য। যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না এবং মুসলমানদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করার অপচেষ্টা করে না, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন করতে আল্লাহ নিষেধ করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৮)
পৃথিবীর সব মুসলমান মিলে যেন একটি দেহ। ইমানি বন্ধনে আবদ্ধ একে অন্যের ভাই। ভাইয়ের সুখে খুশি হওয়া আর দুঃখে দুঃখিত হয়ে দুঃখ মোচনে যথাসাধ্য চেষ্টা করা ইমানি দাবি। কমপক্ষে ব্যথিত হৃদয় নিয়ে নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষ কথা বলা এবং তাদের মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার সামর্থ্য তো সবার রয়েছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
২০ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
২০ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
২০ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
২ দিন আগে