ইজাজুল হক, ঢাকা
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায় ৬২৯ সালে ভারত উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়। ভারতের কেরালা রাজ্যের কোডুঙ্গাল্লুর জেলায় অবস্থিত এই প্রাচীন মসজিদের নাম চেরামন জুমা মসজিদ। এটি কেরালার সমৃদ্ধ ইতিহাসের অংশ, যা প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতির মেলবন্ধনের একটি উদাহরণ।
প্রাচীন সমুদ্রবন্দর মুজিরিসের কাছেই কোডুঙ্গাল্লুর শহর ছিল সেকালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র। চেরারাজ্য হরপ্পান আমল থেকেই মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সঙ্গে মরিচ, আদা, কাঠ ও কাপড়ের ব্যবসা করে আসছিল। কেরালার চেরা রাজবংশের সঙ্গে আরব নাবিকদের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। তাঁদের মাধ্যমেই মালাবারে খুব কম সময়ে নবী মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর আনীত ধর্ম ইসলামের কথা ছড়িয়ে পড়ে।
পেছনের গল্প হলো, মহানবী (সা.)-এর মোজেজা হিসেবে চাঁদ যখন দুই টুকরো হয়েছিল, আরব উপদ্বীপের ভেতর-বাইরের অনেকেই এটি দেখেছিলেন। সেকালের কেরালার রাজা চেরামন পেরুমল রামা ভারমা কুলাশেখারা এই মোজেজাটি স্বপ্নে দেখেছিলেন। রাজা বেশ অবাক হয়েছিলেন এবং রাজজ্যোতিষীদের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কাছে তিনি কোনো সদুত্তর পাননি।
সৌভাগ্যক্রমে ওই সময়ে একদল আরব বণিক রাজার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। রাজা তাঁদের কাছে নিজের স্বপ্নের কথা খুলে বলেন এবং তাঁরা এই ঘটনার ব্যাখ্যা করেন। রাজা নবী মুহাম্মদের (সা.) এমন মোজেজার কথা শুনে বেশ অবাক হন। এরপর ছেলে ও ভাগনেদের হাতে রাজ্য পরিচালনার ভার তুলে দিয়ে তিনি আরব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ পেতে মদিনায় যাওয়ার সংকল্প করেন।
কিছুদিন পরে রাজা চেরামন আরব বণিকদের সঙ্গে আরবের উদ্দেশে যাত্রা করলেন। কথিত আছে, শেহর মুকল্লা নামক স্থানে তিনি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই ঐতিহাসিক সাক্ষাতের কথা ইমাম বুখারি আবু সায়িদ খুদরি (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে উল্লেখ করেছেন। আবু সায়িদ বলেছেন, ‘ভারতের এক রাজা আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে আচারের কৌটা হাদিয়া দেন, যাতে আদা ছিল। নবীজি তা সাহাবিদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। আমিও তা থেকে এক টুকরো খেতে পেয়েছিলাম।’
রাজা চেরামন তখনই নবীজির হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পরে হজ আদায় করেন। নবীজির একান্ত ইচ্ছা অনুযায়ী, কেরালায় ইসলাম প্রচারের জন্য মালিক ইবনে দিনারের নেতৃত্বে একদল সাহাবিকে রাজার সঙ্গে পাঠানো হয়। পথে রাজা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি ছেলেদের নামে একটি চিঠি লেখেন। তাতে মালিক ইবনে দিনারের দলকে সব ধরনের সহযোগিতা করার অসিয়ত করেন। রাজাকে বর্তমান ওমানের সালালাহ নামক স্থানে দাফন করা হয়। মালিক ইবনে দিনার কেরালায় এসে ইসলাম প্রচারে রাজার সন্তানদের ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছিলেন।
এই ঘটনা এম হামিদুল্লাহ ‘মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ’-এ, উইলিয়াম লোগান ‘মালাবার ম্যানুয়াল’-এ, আহমদ জায়নুদ্দিন মাখদুম ‘তুহফাতুল মুজাহিদিন’-এ, বালাকৃষ্ণ পিল্লাই ‘হিস্টোরি অব কেরালা: অ্যান ইনট্রোডাকশন’-এ উল্লেখ করেছেন। তবে ‘চেরামন জুমা মসজিদ: হিস্টোরি অ্যান্ড কালচার’-এর লেখক ইতিহাস গবেষক অঞ্জলি মোহন বলেন, ‘চেরামন রাজার ইসলাম গ্রহণের গল্পটি “ধর্মীয় বানোয়াট গল্প’’ হওয়ার পক্ষে যুক্তি রয়েছে। সমালোচকেরা বলেছেন, আল-বিরুনি “তাহকিক মা লিল হিন্দ মিন মাকুলাহ মাকবুলাহ ফিল আকল আও মারদুলাহ’’সহ অন্যান্য প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থে এই ঘটনার বর্ণনা নেই। তবে এর বিপক্ষেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। ফলে ঘটনা সত্য বলে ধরে নেওয়া যায়।’
কেরালা রাজ্যের প্রাচীন সংস্কৃতি সংরক্ষণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সরকার মুজিরিস হেরিটেজ প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে চেরামন জুমা মসজিদের কাঠামোগত অখণ্ডতা রক্ষার জন্য মসজিদটির কিছুটা মেরামতও করা হয়েছে।
সূত্র: গালফ নিউজ
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায় ৬২৯ সালে ভারত উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়। ভারতের কেরালা রাজ্যের কোডুঙ্গাল্লুর জেলায় অবস্থিত এই প্রাচীন মসজিদের নাম চেরামন জুমা মসজিদ। এটি কেরালার সমৃদ্ধ ইতিহাসের অংশ, যা প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতির মেলবন্ধনের একটি উদাহরণ।
প্রাচীন সমুদ্রবন্দর মুজিরিসের কাছেই কোডুঙ্গাল্লুর শহর ছিল সেকালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র। চেরারাজ্য হরপ্পান আমল থেকেই মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সঙ্গে মরিচ, আদা, কাঠ ও কাপড়ের ব্যবসা করে আসছিল। কেরালার চেরা রাজবংশের সঙ্গে আরব নাবিকদের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। তাঁদের মাধ্যমেই মালাবারে খুব কম সময়ে নবী মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর আনীত ধর্ম ইসলামের কথা ছড়িয়ে পড়ে।
পেছনের গল্প হলো, মহানবী (সা.)-এর মোজেজা হিসেবে চাঁদ যখন দুই টুকরো হয়েছিল, আরব উপদ্বীপের ভেতর-বাইরের অনেকেই এটি দেখেছিলেন। সেকালের কেরালার রাজা চেরামন পেরুমল রামা ভারমা কুলাশেখারা এই মোজেজাটি স্বপ্নে দেখেছিলেন। রাজা বেশ অবাক হয়েছিলেন এবং রাজজ্যোতিষীদের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কাছে তিনি কোনো সদুত্তর পাননি।
সৌভাগ্যক্রমে ওই সময়ে একদল আরব বণিক রাজার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। রাজা তাঁদের কাছে নিজের স্বপ্নের কথা খুলে বলেন এবং তাঁরা এই ঘটনার ব্যাখ্যা করেন। রাজা নবী মুহাম্মদের (সা.) এমন মোজেজার কথা শুনে বেশ অবাক হন। এরপর ছেলে ও ভাগনেদের হাতে রাজ্য পরিচালনার ভার তুলে দিয়ে তিনি আরব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ পেতে মদিনায় যাওয়ার সংকল্প করেন।
কিছুদিন পরে রাজা চেরামন আরব বণিকদের সঙ্গে আরবের উদ্দেশে যাত্রা করলেন। কথিত আছে, শেহর মুকল্লা নামক স্থানে তিনি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই ঐতিহাসিক সাক্ষাতের কথা ইমাম বুখারি আবু সায়িদ খুদরি (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে উল্লেখ করেছেন। আবু সায়িদ বলেছেন, ‘ভারতের এক রাজা আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে আচারের কৌটা হাদিয়া দেন, যাতে আদা ছিল। নবীজি তা সাহাবিদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। আমিও তা থেকে এক টুকরো খেতে পেয়েছিলাম।’
রাজা চেরামন তখনই নবীজির হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পরে হজ আদায় করেন। নবীজির একান্ত ইচ্ছা অনুযায়ী, কেরালায় ইসলাম প্রচারের জন্য মালিক ইবনে দিনারের নেতৃত্বে একদল সাহাবিকে রাজার সঙ্গে পাঠানো হয়। পথে রাজা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি ছেলেদের নামে একটি চিঠি লেখেন। তাতে মালিক ইবনে দিনারের দলকে সব ধরনের সহযোগিতা করার অসিয়ত করেন। রাজাকে বর্তমান ওমানের সালালাহ নামক স্থানে দাফন করা হয়। মালিক ইবনে দিনার কেরালায় এসে ইসলাম প্রচারে রাজার সন্তানদের ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছিলেন।
এই ঘটনা এম হামিদুল্লাহ ‘মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ’-এ, উইলিয়াম লোগান ‘মালাবার ম্যানুয়াল’-এ, আহমদ জায়নুদ্দিন মাখদুম ‘তুহফাতুল মুজাহিদিন’-এ, বালাকৃষ্ণ পিল্লাই ‘হিস্টোরি অব কেরালা: অ্যান ইনট্রোডাকশন’-এ উল্লেখ করেছেন। তবে ‘চেরামন জুমা মসজিদ: হিস্টোরি অ্যান্ড কালচার’-এর লেখক ইতিহাস গবেষক অঞ্জলি মোহন বলেন, ‘চেরামন রাজার ইসলাম গ্রহণের গল্পটি “ধর্মীয় বানোয়াট গল্প’’ হওয়ার পক্ষে যুক্তি রয়েছে। সমালোচকেরা বলেছেন, আল-বিরুনি “তাহকিক মা লিল হিন্দ মিন মাকুলাহ মাকবুলাহ ফিল আকল আও মারদুলাহ’’সহ অন্যান্য প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থে এই ঘটনার বর্ণনা নেই। তবে এর বিপক্ষেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। ফলে ঘটনা সত্য বলে ধরে নেওয়া যায়।’
কেরালা রাজ্যের প্রাচীন সংস্কৃতি সংরক্ষণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সরকার মুজিরিস হেরিটেজ প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে চেরামন জুমা মসজিদের কাঠামোগত অখণ্ডতা রক্ষার জন্য মসজিদটির কিছুটা মেরামতও করা হয়েছে।
সূত্র: গালফ নিউজ
এখানে কারণগুলো তুলে ধরা হলো—অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মজলুম ব্যক্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে তার যে দোষ রয়েছে, তা সবিস্তারে তুলে ধরার অনুমতি আছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমরা
২ ঘণ্টা আগেওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
১ দিন আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
১ দিন আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
১ দিন আগে